মে ২৮, ২০২২ ১৭:৫৭ Asia/Dhaka

সব সুন্দর নাম কেবলই মহান আল্লাহর। মানুষ দুনিয়ার বুকে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি। তবে আল্লাহর যোগ্য প্রতিনিধি হতে হলে তাঁর নামগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা রাখতে হবে।

এইসব পবিত্র নাম কেবল একটি শব্দ নয় বরং ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। বিভিন্ন সময়ে বিচিত্রময় এইসব নামের প্রকাশ ও বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে।

 মহান আল্লাহর এমনই এক নাম হল মুন্তাক্বিম। এর অর্থ প্রতিশোধ গ্রহণকারী। আরবিতে প্রতিশোধ গ্রহণকে বলা হয় ইন্তিকাম। পবিত্র কুরআনে এই শব্দ ও এর মূল অক্ষরগুলোযুক্ত সমগোত্রীয় শব্দ এসেছে মোট ১৭ বার। এর মধ্যে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে চার বার নিজেকে 'জুন্তিক্বাম' বা 'প্রতিশোধ গ্রহণকারী' বলে উল্লেখ করেছেন।

মহান আল্লাহর নামের দুই ধরনের বিশেষ শ্রেণীর কথা আমরা অতীতের আলোচনায় বলেছিলাম। যেমন, ক্বাহ্‌হার মহান আল্লাহর জ্বালালি নাম তথা শক্তিমত্তা, শান-শওকত ও পরাক্রমের ঔজ্জ্বল্যে ভরপুর নামগুলোর অন্যতম। মুন্তাক্বিম বা প্রতিশোধ গ্রহণকারী কিংবা আজিজ বা পরাক্রান্ত এ ধরনেরই এক নাম। অন্যদিকে মহান আল্লাহর জামালি নাম তথা দয়া, প্রেম ও করুণার মত প্রশান্ত-সৌন্দর্যজ্ঞাপক নামগুলো হল রাহমান, রাহিম ও গাফ্‌ফার বা সাত্তার, লাত্বিফ ইত্যাদি। অবশ্য বাবার ক্রোধ বা রাগের মধ্যেও যেমন সন্তানের প্রতি ভালোবাসা ও স্নেহ লুকিয়ে আছে তেমনি মহান আল্লাহর জ্বালালি নামগুলোর মধ্যেও দয়া ও করুণার সৌন্দর্য মিশে আছে।

মু'মিন ব্যক্তি মহান আল্লাহর জামালি নামগুলো হৃদয়ঙ্গম করে তাঁর অনুগ্রহ সম্পর্কে আশাবাদী হয় এবং মহান আল্লাহর জ্বালালি নামগুলো উপলব্ধি করে তাঁর গৌরব ও শানশওকত সম্পর্কে ভীত-বিহ্বল হয়। সুরা আল্‌ই ইমরান-এর তৃতীয় আয়াতে, সুরা মায়িদার ৯৫ নম্বর আয়াতে, সুরা ইব্রাহিম-এর ৪৭ নম্বর আয়াতে এবং সুরা জুমার-এর ৩৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ নিজেকে তাঁর 'আজিজ' তথা 'অপরাজেয়' বা 'পরাক্রমশীল' নামের পর 'জুন্তিক্বাম' বা 'প্রতিশোধ গ্রহণকারী' বলে উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ সব কিছুর ওপর কর্তৃত্বশীল ও সর্বশক্তিমান বলে তিনি প্রতিশোধ গ্রহণেও সর্বশ্রেষ্ঠ।

প্রতিশোধ প্রবণতা মানুষের একটি আদিম বৈশিষ্ট্য যা সব যুগের মানুষের মধ্যে দেখা যায়। অনেক পশুর মধ্যেও এ ধরনের প্রবণতা রয়েছে।  অবশ্য বেশিরভাগ মানুষের প্রতিশোধ প্রবণতা প্রায়ই ভাবাবেগ-কেন্দ্রিক, বুদ্ধিবৃত্তিক নয়। প্রতিশোধ কখনও কখনও সামাজিক হলে তার ভিত্তি হয় বুদ্ধিবৃত্তিক। নৈরাজ্য ঠেকানোর জন্য এ জাতীয় প্রতিশোধ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়ে। যেমন মানুষের কল্যাণ ও স্বার্থ রক্ষার জন্য, বিশেষ করে জালিমের কাছ থেকে মজলুমের অধিকার রক্ষার জন্য মহান আল্লাহ যেসব বিধি-বিধান দিয়েছেন তার সীমা রক্ষার লক্ষ্যে এ ধরনের প্রতিশোধ গ্রহণ জরুরি। অতীতে যারা নবী-রাসুলদের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেছিল বা নানা সামাজিক পাপ ও জুলুমে জড়িত হয়েছিল মহান আল্লাহ তাদের কঠোর শাস্তি দিয়েছেন।

তবে মহান আল্লাহ পরকালে কাফির ও পাপীদের যেসব শাস্তি দিবেন তা সামাজিক শাস্তি বা সামাজিক প্রতিশোধ নয়। কারণ পরকালে আর পার্থিব স্টাইলের সমাজ থাকবে না বলে সেখানে মানুষের পাপ করার বা বিদ্রোহের ক্ষমতাও থাকবে না। পরকালে বা বিচার দিবসে যেসব শাস্তি মানুষ পাবে তা তাদের মন্দ কাজ ও আচরণেরই প্রতিফল। কোনো ছাত্র যদি ভালোভাবে পড়াশুনা না করায় পরিণামে পরীক্ষায় খারাপ ফল পায় তা যেমন প্রতিশোধের বিষয় নয় বরং নিজেরই কৃতকর্মের ফল পরকালের শাস্তিও ঠিক সে রকম। মহান আল্লাহ ন্যায়বিচারক। তাই যারা খারাপ কাজ করে, ন্যায়বিচারের দাবি অনুযায়ী তার প্রতিফল পাওয়াটাই হচ্ছে ন্যায়বিচার। এক্ষেত্রে শাস্তি শব্দ রূপক অর্থে বলা হয় মাত্র। বান্দাহ নিজেই যখন খোদার রহমতকে দুরে ঠেলে দিয়ে স্বেচ্ছায় পাপের পথ বেছে নেয় সে আসলে নিজেই নিজেকে শাস্তি দেয়।

আসলে পরকালীন জীবন হচ্ছে পার্থিব জীবনেরই নানা কাজের বাস্তব প্রতিফলন। যারা দুনিয়াতে পাপ করে বা নোংরা কাজ করে পরকালে তাদের চেহারাও বিশ্রী হয়ে যাবে। যেমন, দুনিয়াতে যারা দম্ভ দেখিয়ে চলত ও অহংকার করত পরকালে তারা পিপড়ার মত আবির্ভূত হবে যাতে তাদের দম্ভ চূর্ণ হয়।

যারা মহান আল্লাহর ইন্তিকাম নাম সম্পর্কে সচেতন তারা আল্লাহর শত্রুদের তৎপরতার প্রতিশোধ গ্রহণে সচেষ্ট থাকেন। তবে মানুষের কুপ্রবৃত্তিও তার আত্মার সবচেয়ে বড় শত্রু। তাই কুপ্রবৃত্তিকে তার বেয়াড়াপনার জন্য কঠোর শাস্তি দিয়ে থাকেন মুমিন যাতে সে আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য থেকে দুরে থাকার দুঃসাহস না দেখায়। মানুষ যদি এই কু-প্রবৃত্তিকে দমিয়ে রাখতে পারে তাহলে সে মুক্ত মানবের মত খোদা-সচেতন বা পরহেজগার হতে পারে।

পরিপূর্ণ মানুষ তথা মহামানবেরা মহান আল্লাহর সব নামের পরিপূর্ণ প্রকাশ। তাঁরা  মহান আল্লাহর মুন্তাক্বিম নামেরও প্রকাশ। ইমাম মাহদি-আ. জালিমদের কাছ থেকে মজলুমদের জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন বলে মহানবী-সা. উল্লেখ করেছেন। মহানবীর ওই বক্তব্যের আলোকে আল্লাহর যেসব সৎ ও মুমিন বান্দা'র রক্ত ঝরানো হয়েছে অন্যায়ভাবে বা তাঁদের শহীদ করা হয়েছে তাঁদের রক্তের বদলা নিতে চান ইমাম মাহদি-আ.।  ইতিহাসের নানা পর্যায়ে যেসব জুলুম করা হয়েছে বলদর্পিতদের কাছ থেকে সেসবের বদলা নিতে মুন্তাক্বিম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন হযরত ইমাম মাহদি-আ.। ইমাম মাহদি-আ. সৎকর্মশীলদের সহায়তা নিয়ে গোটা বিশ্বে ন্যায়বিচারভিত্তিক আদর্শ বিশ্ব-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবেন।#

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।