আসমাউল হুসনা (পর্ব-৭৩)
মানুষ দুনিয়ার বুকে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি। তবে আল্লাহর যোগ্য প্রতিনিধি হতে হলে তাঁর নামগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা রাখতে হবে।
মহান আল্লাহর পবিত্র নামগুলো কেবল একটি শব্দ নয় বরং ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। বিভিন্ন সময়ে এইসব নামের প্রকাশ ও বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে। মহান আল্লাহর আসমাউল হুসনার তালিকাভুক্ত এমনই এক নাম হল মালীকুল মূলক। এর অর্থ সম্পদ ও রাজত্বের মালিক। সৃষ্টিকুলের সব কিছু ও সব মানুষ মহান আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। মানুষসহ সৃষ্টিকুলের সব কিছুর ওপর, যেমন মানুষের সম্পদ ও ভূমিসহ অন্য সব কিছুর ওপর রয়েছে মহান আল্লাহর কর্তৃত্ব। মূলক শব্দটি পবিত্র কুরআনে মোট ২৪ বার এসেছে।
সুরা আনআম-এর ৭৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,,
তিনিই সঠিকভাবে নভোমন্ডল সৃষ্টি করেছেন। যেদিন তিনি বলবেন: হয়ে যা, অতঃপর হয়ে যাবে। তাঁর কথা সত্য। যেদিন শিঙ্গায় ফুঁৎকার করা হবে, সেদিন মূলক তাঁরই তথা সেদিন তাঁরই আধিপত্য হবে। তিনি অদৃশ্য বিষয়ে এবং প্রত্যক্ষ বিষয়ে জ্ঞাত। তিনিই প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
-সুরা গ্বাফির-এর ১৬ নম্বর আয়াতেও মহান আল্লাহ বলেছেন:
যেদিন তারা বের হয়ে পড়বে, আল্লাহর কাছে তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। আজ মূলক বা রাজত্ব কার? এক প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহর।
মালিক শব্দটি মূলক-এরই আধিক্যবাচক রূপ। এর মাধ্যমে কোনো কিছুর ওপর প্রবল পরাক্রান্ত শক্তির একক আধিপত্যকে বোঝানো হয়। সুরা ক্বামার-এর ৫৪ ও ৫৫ নম্বর আয়তে খোদাভীরুদের পুরস্কার দেয়া প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেছেন,
খোদাভীরুরা থাকবে জান্নাতে ও নির্ঝরিণীতে। যোগ্য আসনে, মালিকিন মুক্তাদির তথা সর্বাধিপতি সম্রাটের সান্নিধ্যে।
কোনো কিছুর অধিকারীকে বলা হয় মালিক। কাজের ওপর কর্তৃত্ব বোঝাতেও মালিক শব্দ ব্যবহার করা হয়। যোগ্য ও শক্তিশালী যে ব্যক্তি নানা নীতি ও ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সমাজকে চালান তাকেও মালিক বলা হয়। সুরা বাক্বারার ২৪৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:
মূসার পরে তুমি কি বনী ইসরাঈলের একটি দলকে দেখনি, যখন তারা বলেছে নিজেদের নবীর কাছে যে, আমাদের জন্য একজন বাদশাহ বা মালিক নির্ধারিত করে দিন যাতে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি। নবী বললেন, তোমাদের প্রতিও কি এমন ধারণা করা যায় যে, লড়াইর হুকুম যদি হয়, তাহলে তখন তোমরা লড়বে না? তারা বলল, আমাদের কি হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর পথে লড়াই করব না অথচ আমরা বিতাড়িত হয়েছি নিজেদের ঘর-বাড়ী ও সন্তান-সন্ততি থেকে। অতঃপর যখন লড়াইয়ের নির্দেশ হলো, তখন সামান্য কয়েকজন ছাড়া তাদের সবাই ঘুরে দাঁড়ালো। আর আল্লাহ তা’আলা জালেমদের ভাল করেই জানেন।
মালীকুল মূলক হচ্ছেন এমন কেউ যিনি রাজত্ব ও সম্পদের মালিক। সবাই তাঁর শাসনাধীন ও সব কিছুর ওপর তাঁর কর্তৃত্ব রয়েছে। বিশ্ব জগতের প্রভু একমাত্র আল্লাহরই রয়েছে এমন সব বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহই শূন্য থেকে সব কিছুকে অস্তিত্বে এনেছেন। তাই নিজেরই সৃষ্ট সব কিছুর ওপর একমাত্র তাঁরই রয়েছে মালিকানা ও কর্তৃত্ব।
মহান আল্লাহ সুরা আল্ই ইমরানের ২৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন:
বলুন ইয়া আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী বা মালীকুল মূলক। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য বা মুলুক দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল। -
অন্য কথায় যিনি মালীকুল মূলক তাঁরই ইচ্ছা বাস্তবায়ন অবশ্যম্ভাবী বা অপরিহার্য। আর তিনি যেভাবে চান তাঁর ইচ্ছা ঠিক সেভাবেই বাস্তবায়ন হয়। কেউই তাঁর হুকুম অমান্য করতে বা ঠেকাতে পারে না।
লক্ষণীয় বিষয় হল যিনি স্রস্টা ও যে সৃষ্ট তার মধ্যে রয়েছে সৃষ্টিগত সম্পর্ক। ফলে সৃষ্টির ওপর স্রস্টার কর্তৃত্ব খুবই স্বাভাবিক। আর আল্লাহ সব কিছুর প্রকৃত মালিক বলে তিনি যাকে খুশি তাকে রাজত্ব বা কর্তৃত্ব দিতেও পারেন। যেমন আল্লাহ হযরত সুলাইমানকে বিশাল রাজত্ব ও কর্তৃত্ব দান করেছিলেন। একইভাবে আল্লাহ চাইলে রাজত্ব কেড়েও নিতে পারেন। তিনি কাউকে সম্মানিত করেন ইচ্ছা অনুযায়ী ও কাউকে অসম্মানিতও করতে পারেন নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী। তবে এর অর্থ এ নয় যে আল্লাহ অন্যায্য খেয়াল খুশির আলোকে এমন করে থাকেন। মহান আল্লাহ ন্যায়বিচারক ও প্রজ্ঞাবান বা মহাকৌশলী। তিনি কোনো কাজই অর্থহীন উদ্দেশ্যে বা খামখেয়ালিপনার বশে করেন না। সুরা সোয়াদ-এর ২৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: আমরা আকাশ ও জমিন ও এর মধ্যে যা কিছু আছে তা অনর্থক সৃষ্টি করিনি।
যারা মহান আল্লাহকে সব কিছুর প্রকৃত মালিক ও সব রাজত্বের প্রকৃত অধিকারী এবং সব কিছুর ওপর কর্তৃত্বের অধিকারী বলে মনে রাখেন তারা সহজেই কোনো প্রলোভন বা শয়তানের ধোঁকার শিকার হন না এবং পার্থিব ক্ষমতার অধিকারী কোনো প্রবল পরাক্রান্ত জালিমের শক্তিকেও মোটেই ভয় পান না। #
পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ১৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।