জুলাই ০৬, ২০২২ ১৭:৩২ Asia/Dhaka

আজ আমরা এই প্রদেশ ছেড়ে যাবো উত্তর খোরাসান প্রদেশের দিকে। ইরানের উত্তর-পূর্বদিকে অবস্থিত এই প্রদেশটি।

গোলেস্তান প্রদেশের সঙ্গে লাগোয়া এই প্রদেশ ঘুরে দেখতে আপনাদেরও আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। উত্তর খোরাসান প্রদেশের মূল শহরের নাম বজনুর্দ। দুই হাজার চার সালে প্রদেশটি সরকারের অনুমোদনক্রমে এবং খোরাসান প্রদেশকে তিনটি প্রদেশে বিভক্ত করার পর উত্তর খোরাসান প্রদেশ গড়ে উঠেছিল। উত্তর খোরাসান প্রদেশের উত্তর দিকে রয়েছে তুর্কমেনিস্তান, পূর্ব ও দক্ষিণে খোরাসান রাজাভি প্রদেশ, দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে সেমনান প্রদেশ এবং পশ্চিম দিক থেকে গোলেস্তান প্রদেশ অবস্থিত। এই প্রদেশে আবিষ্কৃত নিদর্শনগুলি পর্যালোচনা করে পুরাতাত্ত্বিকগণ শহরটি যে বেশ প্রাচীন সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। পাহলাভন নামে যে প্রাচীন কমপ্লেক্সটি এবং হায়দারন জজরোম টিলা নামে  পরিচিত প্রাচীন স্থানটি বারো হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো।

এই প্রদেশটি বৃহত্তম খোরাসান এবং প্রাচীন ইরানের একটি অংশ। ইতিহাসের কাল পরিক্রমায় এই অঞ্চলজুড়ে বিচিত্র উপজাতি ও গোত্রের বসবাস ছিল। সে কারণে প্রাচীন এই এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই বৈচিত্র্যময় এবং প্রাচীন সংস্কৃতি রয়েছে। এই প্রদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গোত্র হলো তাত, কেরমাঞ্জ মানে কুর্দি, তুর্কি, তুর্কমেন, বালুচি ইত্যাদি। সুতরাং বিচিত্র গোত্র এবং ভাষার কারণে এখানকার সংস্কৃতি ও শিল্প পর্যটকদের কাছে বেশ উজ্জ্বল হয়ে ধরা দিয়েছে। দর্শকরা এবং ভ্রমণকারীরা এখানকার নান্দনিক ঐতিহ্য দেখে ব্যাপক আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। উত্তর খোরাসান প্রদেশে ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক বহু নিদর্শন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কোনো কোনো নিদর্শন একেবারেই অনন্য সাধারণ। বিশেষ করে এখানকার বন-বনানী এ প্রদেশের সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় বিশেষ বৃক্ষ ও উদ্ভিদ যেমন বেড়ে উঠেছে তেমনি এশিয় ও সারাবিশ্বের মধ্যেই দুর্লভ ও বিচিত্র প্রাণীর নিরাপদ আবাসে পরিণত হয়েছে।

আবহাওয়ার বৈচিত্র্যগত দিক থেকেও উত্তর খোরাসান প্রদেশটি একটু ভিন্ন। সাধারণত এই প্রদেশের আবহাওয়া পার্বত্য নাতিশীতোষ্ণই থাকে। তবে পুরো প্রদেশের বিভিন্ন প্রান্তের আবহাওয়ায় কিছুটা বৈচিত্র থাকে। এ কারণে এ এলাকায় বিচিত্র উদ্ভিদের উপস্থিতি যেমন লক্ষ্য করা যায় তেমনি বহু প্রজাতির প্রাণী ও পশুরও অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। অন্তত এক হাজার চার শ প্রজাতির পশু ও উদ্ভিদ এই উত্তর খোরাসানে সনাক্ত করা হয়েছে। এগারো শ প্রজাতির উদ্ভিদ আর তিন শ পঁয়ষট্টি প্রজাতির সংরক্ষিত পশু ও প্রাণী এখানে রয়েছে। এই প্রদেশের পরিবেশ ও আবহাওয়াগত বৈচিত্রের কারণে আরও বহু প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী এখনও সনাক্ত করার অপেক্ষায় রয়েছে।

এই প্রদেশের বিচিত্র শিল্প এবং খনি প্রাদেশিক অর্থনীতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস হিসেবে পরিগণিত। এখানে রয়েছে পেট্রো-কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, অসংখ্য শিল্প কল-কারখানা, খাদ্য শিল্প, কৃষিশিল্প ইত্যাদি। আঞ্চলিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে এইসব শিল্পের ভূমিকা অপরিসীম। উত্তর খোরাসান প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো গম, যব, কিশমিশ, আঙুর, গোল আলু, চেরি, আপেল, পেঁয়াজ, ডাল, লাল লাল মটরশুটি, পিচফল, অ্যালমন্ড বাদাম, আখরোট, এপ্রিকট ইত্যাদি।

বিভিন্ন জাতি ও গোত্রের উপস্থিতির কারণে প্রদেশের হস্তশিল্পের ওপর উল্লেখযোগ্য বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে দারুণ প্রভাব ফেলেছে। এই প্রদেশে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প যেমন গেলিম কার্পেট বোণা, জিলো বুনন, ঐতিহ্যবাহী পাদুকা মোচার পাপোশ, সুঁই-সূতার কাজ, প্রাচীন রীতিতে রং করার কাজ, স্থানীয় কাপড় সেলাই শিল্প, পশুর পশম দিয়ে তৈরি কার্পেট জাতীয় হস্তশিল্প, মৃৎশিল্প এবং অন্যান্য অনেক শিল্পের কাজ হয়ে থাকে। তুর্কমেন কার্পেট এবং পাটি, গেলিম কার্পেট এবং জাজিম, সিল্কের তৈরি রাতের তাঁবু, কানটুপি, সূচিকর্ম করা শাল, পশম সূচিকর্ম ইত্যাদি এই প্রদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হস্তশিল্পের অন্তর্ভুক্ত। এসব শিল্প পর্যটকদের আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জেনে রাখা ভালো যে এমব্রয়ডারি করা হেডব্যান্ড এবং তুলতুলে কানটুপি তৈরি উত্তর খোরাসান প্রদেশের এই দুটি হস্তশিল্প ইরানের জাতীয় হস্তশিল্পের তালিকায় নিবন্ধিত হয়েছে।

উত্তর খোরাসান পশু পালনের জন্যে খুবই উপযুক্ত। কার্পেটের মূল উপাদান যে পশম,তা ঐ উত্তর খোরাসান থেকে প্রচুর পরিমান পাওয়া যায়। কার্পেট শিল্প ছাড়াও মাশহাদে পাথরের তৈরী শিল্প সামগ্রী প্রচুর তৈরী হয়। পাথরের তৈরী এসব শিল্প বেশ নাম করা। কারণ এগুলোর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পাথর শিল্প সামগ্রীর মধ্যে টেবিল,পেয়ালা,কাপ,থালা-বাসন যেমন রয়েছে,তেমনি রয়েছে বাসার ডেকোরেশনের জন্যে বিচিত্র রকমের শো-পিস। এসব পাথর শিল্প মর্মর,নাসূয,কালোপাথর,হলুদ-সবুজ-লাল এবং সাদা পাথর ইত্যাদি রকমারী পাথর দিয়ে তৈরী করা হয়। তবে কালো পাথরই এসব কাজে বেশী ব্যবহৃত হয়। নাসুজ এমন এক ধরনের পাথর,যা আগুনে পুড়লেও নষ্ট হয়না।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ