জুলাই ০৬, ২০২২ ১৮:১৮ Asia/Dhaka

আমিরুল মুমিনিন হজরত আলী (আ.) বলেছেন, নিজেকে যে চিনতে পারলো সে সবচেয়ে বড় জ্ঞান অর্জন করলো। নিজেকে চেনার বিপরীত দিক হলো নিজের সম্পর্কে অজ্ঞতা।

হজরত আলী (আ.)'র দৃষ্টিতে, মানুষের সবচেয়ে বড় অজ্ঞতা হচ্ছে নিজেকে চিনতে না পারা। সুঅভ্যাস গড়ার ক্ষেত্রেও নিজেকে চেনা ও জানা জরুরি। গত আসরে আমরা নিজেকে চেনার উপায় নিয়ে খানিকটা কথা বলেছি। আজ এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধাগুলো নিয়ে কথা বলব।

আমরা অনেক সময় নিজের মুখোমুখি হতেও ভয় পাই। হয়তো এই বাক্যটি কারো কারো মনে বিস্ময়ের উদ্রেক করেছে, কিন্তু আসলেই আমরা অনেক সময় নিজেকে নিজের কাঠগড়াতে দাঁড় করাতেও আগ্রহবোধ করি না।  আমরা নিজের মনের ভেতরে আজীবন যা লালন করেছি তা নিজের কাছেই ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে কখনো কখনো। অনেক ক্ষেত্রে অতীত তিক্ত অভিজ্ঞতা স্মরণ করলে তা মানসিক পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নিজেকে চেনা বা জানার পথে আরেকটি বাধা হলো কাজের অতিরিক্ত চাপ। আমরা কখনো কখনো কাজের মাঝে এতো বেশি ডুবে যাই যে, চিন্তা করার অবকাশ পাই না, তখন আমরা এ ক্ষেত্রে নানা অজুহাত খোঁজার চেষ্টা করি। কোনো বিষয়ে গভীর মনোযোগ দেওয়ার অথভা চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগানোর অবস্থা আমাদের থাকে না। নিজেকে চেনা-জানার জন্য কোনো ধরণের সময় ব্যয় করতে আমাদের ইচ্ছে হয় না।  

সাধারণত যেকোনো বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তায় মগ্ন হওয়া একটা কঠিন কাজ, এতে অনেক শক্তি ক্ষয় হয়। এছাড়া আমাদের ব্রেনের গঠন-কাঠামোটাই এমন যে, এটি বেশি শক্তি ক্ষয় করার পক্ষে নয়। এ কারণে খুব কম মানুষই গভীর চিন্তায় মগ্ন হতে সক্ষম হন। নিঃসন্দেহে নিজেকে চেনা বা জানার পথে এটিও একটি বাধা। অনেকেই মনে করেন, নিজেকে নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে গেলে জীবনের চলমান স্বাভাবিক গতি বিঘ্নিত হতে পারে। এ ধরণের ব্যক্তিরা দৈনন্দিন চিন্তা-ভাবনার বাইরে গিয়ে নিজেকে নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে চান না। তবে কেউ যদি এসব বাধা এড়িয়ে নিজেকে চিনতে ও বুঝতে চান তাহলে তাকে কী করতে হবে? এ ক্ষেত্রে প্রথমেই যে কাজটি করতে হবে তাহলো, বই পড়তে হবে। আত্মপরিচিতি সংক্রান্ত ভালো বই পড়তে হবে। এ সংক্রান্ত ভালো বই পড়লে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত হবে এবং চিন্তা করার উপায় শেখা সম্ভব হবে।

নিজেকে চেনার ক্ষেত্রে অন্যের প্রতিক্রিয়াও খুব কাজে আসে। আমরা সাধারণত ভালোমতো না ভেবেই বলে থাকি, নিজেকে চিনতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন সব দিক থেকে যায় যা নিজের কাছে ধরা পড়ে না। এ ক্ষেত্রে একজন ভালো বন্ধু এবং নিজের খুব কাছের মানুষগুলো সহযোগিতা করতে পারে। নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী বা স্ত্রী এবং ভালো কোনো বন্ধুর সহযোগিতা নিতে পারি আমরা। তাদেরকে আমার কিছু ভালো ও কিছু মন্দ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবহিত করার অনুরোধ জানাতে পারি। এরপর আপনি যখন নিজের ভালো ও মন্দ দিকগুলো জানতে পারবেন তখন নিজেই বিস্মিত হবেন। কারণ এর আগে আপনি হয়তো কখনোই এই দিকগুলো নিয়ে চিন্তা করেননি, আপনার কাছে তা কখনোই হয়তো ধরা দেয়নি। যাইহোক, এই দু'টি ধাপ পেরোনোর পর নিরিবিলি বসে চিন্তা করার জন্য আপনাকে সময় বের করতে হবে।

একাকী চিন্তা করার সময় নিজেকে প্রশ্ন করুন- আপনি কোথায় অবস্থান করছেন এবং কেন এই পৃথিবীতে আপনার আগমন ঘটেছে? বাহ্যত এগুলো খুবই সহজ প্রশ্ন, কিন্তু এই সহজ প্রশ্নগুলোই নিজেকে চিনতে খুব কাজে দেবে। আপনাকে নিজের সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবতে হবে। নিজের প্রতিদিনের আচার-আচরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অবশ্য এমনটা ভাবলে চলবে না যে, নিজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারলেই নিজেকে চেনা হয়ে যায়। আপনাকে নিজের পছন্দ-অপছন্দ, মেধা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও জীবন প্রণালী সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। এর ফলেই কেবল নিজের সম্পর্কে একটা পূর্ণাঙ্গ উপলব্ধি অর্জিত হবে। আসলে কোনো কিছুর প্রতি টান বা আকর্ষণ একটি আত্মিক বিষয়। কোনো কাজের প্রতি যখন আমাদের আকর্ষণ সৃষ্টি হয় তখন আমরা ক্লান্তি অুনভব ছাড়াই রাত-দিন এর পেছনে সময় দিতে পারি। আমরা ভুলেই যাই, কখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার হয়ে গেছে।  

কিন্তু আপনি কীভাবে বুঝবেন কোন কাজ আপনাকে খুব বেশি টানে? আপনি কোন কাজ করতে বেশি পছন্দ করেন? আপনি যদি আপনার আকর্ষণের জায়গা সম্পর্কে খানিকটা ধারণা পেতে চান তাহলে বুঝার চেষ্টা করুন আপনি কোন কাজ করতে গেলে সময়ের বয়ে চলাটা বুঝতে পারেন না অর্থাৎ ঘন ঘন ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকান না? নিজেকে আরও কয়েকটি প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি যদি অনেক টাকার মালিক হতেন তাহলে কোন কোন কাজের পেছনে ঐ টাকা খরচ করতেন? আপনি যে পাঁচজন ব্যক্তিকে ঠিক এই মুহূর্তে নিজের কাছে পেতে চান তাদের নাম বলার চেষ্টা করুন। চিন্তা করে দেখুন আপনার পছন্দের এসব ব্যক্তির বেশিরভাগই কোন পেশার- তারা কি শিল্পী, পদার্থবিদ, ক্রীড়াবিদ বা অন্য কিছু? অবশ্য নিজের পছন্দ সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ক্ষেত্রেও নানা বাধা কাজ করে। লোকলজ্জার ভয়সহ নানা কারণে আমরা নিজেদের পছন্দের বিষয় লুকিয়ে রাখি। এটা একটা পর্যায়ে এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছায় যে, আমরা নিজেদের পছন্দের দিকগুলোকে ভুলতে বসি।

নিজের প্রতিভা সম্পর্কেও জানতে হবে। কোন কাজটি স্বল্প সময়ে ও কম পরিশ্রমে করতে পারি আমি, তা নিজের কাছে স্পষ্ট হবে। নিজের প্রতিভা সম্পর্কে ধারণা পেতে নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে পারেন। এর একটা হলো- কোন কাজগুলো আপনি সহজে সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পারেন? এমন কোনো প্রতিভা কি আছে যা এখনও প্রকাশ করেননি? কোন ধরণের কাজ আপনাকে উৎসাহ ও শক্তি যোগায়? নিজেকে চেনা ও জানার ক্ষেত্রে বিশ্বাস এবং মূল্যবোধও দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ কারণে নিজের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ সম্পর্কেও ভালোভাবে জানতে হবে। এর ফলে নিজেকে সংশোধন করা সহজ হবে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/আবুসাঈদ/ ০৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ