সুঅভ্যাস গড়ার উপায় নিয়ে ধারাবাহিক অনুষ্ঠান
সুন্দর জীবন (পর্ব- ১৪)
সুঅভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও বিকাশের একটি উপায় হলো- সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা। নিঃসন্দেহে, সময় এবং সুযোগ মানুষের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ এবং অনন্য সম্পদ। সময় ও সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার করে মানুষ সর্বক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক সাফল্য অর্জন সম্ভব।
পবিত্র কুরআনে সময়কে এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, এটি যেন মানুষের সব সাফল্যের জননী। স্বয়ং মহান আল্লাহ সময়ের শপথ করেছেন। তিনি বলেছেন: ওয়াল আস্র। অর্থাৎ সময়ের শপথ। কারণ আস্র মানে হচ্ছে সময়। মুফাস্সিররা এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, মহান আল্লাহ এখানে সময়ের কথাই বলেছেন। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সময়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বোঝানোর জন্যই পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন সূরায় সময়ের কসম করেছেন। মহান আল্লাহ কোন তুচ্ছ বিষয়কে নিয়ে শপথ করেন না।
আল্লাহ সময়কে নিয়ে শপথ করার মাধ্যমে সময়ের ব্যাপক গুরুত্ব ও তাৎপর্যকেই স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। এছাড়া পবিত্র কুরআনে সময় নষ্ট করাকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে। কারণ এটি জীবনের সর্বোচ্চ পুঁজিকে ধ্বংস করে দেয় এবং সুস্থ জীবনযাপনের পথ রুদ্ধ করে। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) সময়কে গুরুত্ব দিতে এবং একে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে বারবার তাগিদ করেছেন। এমনকি তিনি সর্তক করে দিয়েছেন এই বলে যে, প্রতিটি মানুষকে কিয়ামতের দিন সময়ের হিসাব দিতে হবে। আহলে বাইতের ইমাম হজরত জাফর সাদেক (আ.) সময় সম্পর্কে বলেছেন, বুদ্ধিমান মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে সময়কে উপলব্ধি করে নিজের দায়িত্বের বিষয়ে সচেতন থাকা। যুগের চাহিদা উপলব্ধি করা এবং ভুল কাজ পরিহার করা। জীবনের যেকোনো পর্যায়ে সফলতা পেতে চাইলে সময় ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সময় ব্যবস্থাপনার মানে হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট কাজগুলো শেষ করার লক্ষ্যে বরাদ্দকৃত সময় ভাগ করে নেওয়া এবং প্রতিটি সেকেন্ডের সর্বোত্তম ব্যবহার করা। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি মেনে চললে সফলভাবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব। প্রতিদিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ থাকে। ফলে এই সময়ের মধ্যেই কাজগুলো শেষ করতে হয়। তবে যখন কাজের পরিমাণ বেশি হয়, তখন কাজগুলোকে ভাগ করে নিতে হয় গুরুত্ব অনুসারে। আর এ সবকিছু মিলিয়েই হলো সময় ব্যবস্থাপনা বা টাইম ম্যানেজমেন্ট। বুঝতে হবে সব কাজের সমান গুরুত্ব থাকে না। কর্মক্ষেত্রে এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে হাতে থাকা কাজগুলো সাজিয়ে নিতে হবে। এরপর সে অনুসারে কাজগুলো করতে শুরু করুন। এছাড়া মনে রাখতে হবে সকল কাজের পেছনেই কোনো না কোনো লক্ষ্য থাকে। এর মধ্যে কিছু আছে স্বল্পমেয়াদী এবং কিছু আছে দীর্ঘমেয়াদি।
সময় ব্যবস্থাপনার অন্যতম একটি ধাপ হলো স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যগুলোকে আলাদা করে নেওয়া এবং সে অনুসারে কাজ করা। সময় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কাজের তালিকা থেকে গুরুত্বহীন কাজগুলো ছেঁটে ফেলা। প্রতিদিন আমরা এমন অনেক কাজই করি যেগুলো আসলে না করলেও চলে। এমন কাজগুলোর পেছনে সময় কমিয়ে দিতে হবে। বর্তমানে অনেকেই প্রতিদিন দিন ও রাতের অনেকটা সময় ব্যয় করেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেছনে। এসব মাধ্যমগুলো এতোটাই আসক্তি তৈরি করে যে মূল কাজের কথাও ভুলে যেতে হয়। তাই কাজের সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো। সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমাদেরকে এমনভাবে চলতে হবে যে, আমরা আমাদের প্রতিটি মুহূর্তের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করব।
আমরা যদি সময়কে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারি তাহলে আমাদের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব হবে, ব্যক্তি সাফল্য থেকেই ধাপে ধাপে পরিবার, সমাজ ও দেশের সাফল্য নিশ্চিত হবে। মহান কিছু করতে চাইলে সময়ের মূল্য দিতে হবে। জীবনে বড় কিছু করতে হলেও তা শুরু করতে হবে উপযুক্ত সময়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়কে কোন কাজে না লাগানোর অর্থ হচ্ছে সময় হত্যা করা। সে সময় যত অল্পই হোক না কেন। পবিত্র ইসলামের মৌলিক শিক্ষাই হলো যখন যে কাজ তখন সেটি করা। নামাজের সময় হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তা আদায় করতে বলা হয়েছে। এর মাধ্যমেও বিলম্বিত না করে যে কাজ যখন করা উচিত ঠিক তখনি করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি কাজের সময়সূচী লিখিতভাবে সামনে রাখতে পারলে ভালো। কোনো কাজই একেবারে প্রান্তিক সময়ের জন্য রেখে দেয়া ঠিক নয়। কারণ,তখন কাজটি করার সুযোগ নাও পাওয়া যেতে পারে।
আমরা প্রতিদিন যেসব কাজ করি তা বিশ্লেষণ করলেই এর গুরুত্ব আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কাজের তালিকা বিশ্লেষণ করলে আমরা নিজেরাই বুঝতে পারি এমন অনেক কিছুই প্রতিদিন করছি যা একেবারেই ঝেড়ে ফেলা যায়। সময় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তাহলো প্রয়োজনে না শব্দটির ব্যবহার শেখা। যেমন ধরুন আপনি অফিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট নিয়ে মনোযোগের সঙ্গে কাজ করছেন এমন সময় আপনার এক বন্ধু ফোন করে বললো, এখনই আয় আমরা কফি শপে বসে আছি। আড্ডা হবে। এ অবস্থায় আপনার পক্ষ থেকে বন্ধুদেরকে ‘না’ বলে দেওয়াটাই উত্তম হবে। আপনাকে বুঝতে হবে আপনি যে কাজ করছেন তা আড্ডার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কাজটি থেকে মনোযোগ উঠে গেলে তাতে আবারও মনোযোগ দেওয়া কঠিন হবে। অনেকে বাইরের লোকদের সঙ্গে সময় কাটাতে গিয়ে নিজের পরিবারের সদস্যদের আর সময় দেওয়ার সুযোগ পান না। এর ফলে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়।
পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।