অক্টোবর ৩০, ২০২২ ২০:১৯ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা! আজ ৩০ অক্টোবর রোববারের কথাবার্তার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ দুটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারাল বাংলাদেশ-কালের কণ্ঠ
  • বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমছে, রিজার্ভ চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংক-প্রথম আলো
  • ইভিএমের অডিট কার্ডে ফলাফল পরিবর্তন সম্ভব-মানবজমিন
  • মন্তব্য প্রতিবেদন: চারদিকে সব খন্দকার মোশতাকের দল, ঘনীভূত হচ্ছে ষড়যন্ত্র- যুগান্তর
  • সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিটি বাহিনীকে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী-ইত্তেফাক
  • সীমান্তে উত্তেজনা, কক্সবাজারে বিজিবি-বিজিপি বৈঠক-বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভারতের শিরোনাম:

  • গভীর রাতে হামলা দুষ্কৃতীদের! বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে ভাঙা হল গান্ধীমূর্তি-সংবাদ প্রতিদিন
  • নিলামে উঠছে সারদার স্থাবর সম্পত্তি–আনন্দবাজার পত্রিকা
  • হ্যালোউইনের পার্টিতে তুমুল ভিড়, সোলে পদপিষ্ট হয়ে মৃত ১৫১, আহত শতাধিক-আজকাল

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু'টি খবরের বিশ্লেষণে যাচ্ছি- 

জনাব সিরাজুল ইসলাম কথাবার্তার বিশ্লেষণে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। 

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১. বিএনপির আন্দোলনে বাধা দিতে নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী- একথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কীভাবে দেখছেন এ বক্তব্যকে?

২. সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে। আঞ্চলিক রাজনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর

বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করলে সংসদ ভেঙে যাবে না: ওবায়দুল কাদের-ইত্তেফাক/প্রথম আলো

বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলে সংসদ ভেঙে যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, তারা পদত্যাগ করলে সংসদের কিছু যাবে আসবে না। ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে নেত্রী দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে উপ-কমিটি করা হবে। আওয়ামী লীগ কোনো পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করে না। বিএনপির সঙ্গে পাল্টাপাল্টির কোনো বিষয় নেই। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন এবং অন্যান্য সম্মেলন নিয়মিত প্রক্রিয়া।

বিএনপি আগুন সন্ত্রাস সৃষ্টি করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সহযোগিতা ছাড়া বিএনপির সভা-সমাবেশ এখনো অচল। বিএনপি এখনো জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বড় পৃষ্ঠপোষক। বিএনপির কোনো সভা সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করেনি আওয়ামী লীগ। পরিবহনের লোকজন বিএনপিকে ভয় পায়। তাই তারা ধর্মঘট ডাকে। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার দয়ায় মুক্তি পেয়ে বেগম জিয়া বাসায় আছেন। বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য তাদের দলের নেতাকর্মীরা কোনো সভা সমাবেশ করতে পারেনি।

শেখ হাসিনা ঢাকার বাইরে সমাবেশ করবেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, মাসে দুটি করে সম্মেলনে তিনি সশরীরে উপস্থিত থাকবেন। করোনার কারণে তিনি এতদিন সশরীরে যেতে পারেননি। তিনি ভার্চুয়ালে সব কাজ সম্পন্ন করেছেন।

ব্যক্তিগত আক্রমণ করলে সামাল দিতে পারবেন না, কাদেরকে ফখরুল-প্রথম আলো

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণ করলে সামাল দিতে পারবেন না।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশে করে বলেছিলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল টাকার বস্তার ওপর শুয়ে আছেন। ফখরুল এখন চাঙা হয়ে গেছেন। টাকা পাচ্ছেন তো। টাকারে টাকা! আরব আমিরাতের টাকা, দুবাইয়ের টাকা। এই তো এল টাকা। ফখরুল মহাখুশি।’

ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, কার কোথায় কত বাড়িঘর আছে। কত টাকা সরিয়েছেন। কীভাবে সরিয়েছেন। কীভাবে নিয়ে গেছেন। সব এই দেশের মানুষ জানে এবং তা প্রকাশিত হবে।

বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘আমরা নিজের উপার্জনের টাকা পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে রাজনীতি করি। দ্য ইজ ভেরি আনফরচুনেট। আমরা এমনটা আশা করি না যে এত বড় রাজনৈতিক দলের একজন সাধারণ সম্পাদক তাঁর মুখ থেকে এ ধরনের অশালীন বক্তব্য আসবে।’

সব রাজনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে ওবায়দুল কাদের এমন মন্তব্য করেছেন বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমাকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেছেন। সে আক্রমণে তিনি বলেছেন আমরা নাকি দুবাই থেকে টাকা পাই। আর আমি নাকি টাকার ওপর শুয়ে আছি। আমি ওবায়দুল কাদেরকে এটুকু বলতে চাই অযথা বেশি ঘাটাবেন না। ঘাটাতে গেলে কেঁচো বের হয়ে আসবে। আপনারা কী করেন, না করেন, গোটা বাংলাদেশের মানুষ জানে। কীভাবে অর্থ উপার্জন করেন সবাই জানে।’

অর্থনীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন তুলে ধরছি। টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক- ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, মতামত

রিজার্ভ কমার দায় ও দুর্ভিক্ষের আগাম ঘোষণা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘...বিদেশি অর্থায়নে অনেক ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়। সে কারণে আমাদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে, সম্পূর্ণ আমাদের টাকা দিয়ে, অর্থাৎ বাংলাদেশের যে রিজার্ভ, সেই রিজার্ভের টাকা দিয়ে একটা ফান্ড তৈরি করেছি। ....সেই ফান্ড থেকেই আমরা এই বন্দরের ড্রেজিং কাজটা শুরু করেছি।’

জাইকার প্রতিবেদনমতে, হিমালয়ান মিহি পলিবাহিত বৃহৎ নদীগুলোর মোহনার মাত্র সাড়ে ১০ মিটার গভীর চ্যানেলে নিয়মিত ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর অসম্ভব। অর্থাৎ পায়রা বন্দরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ প্রদানের সিদ্ধান্তকে কোনোভাবেই যৌক্তিক বলা যাবে না। পায়রা বন্দর নিজেই অকার্যকর থেকে যাবে বলে সরকারও ভুল জায়গায় গভীর সমুদ্রবন্দরের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে। তদুপরি এই বন্দর ডলারে আয় করবে না বলে এখানে রিজার্ভ ঋণ পরিকল্পনা সঠিক ছিল না। ডলারে আয় করবে না, এমন প্রকল্পে রিজার্ভ ঋণে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও আপত্তি ছিল। শুধু ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে নয়; বরং সরকার রপ্তানি সহায়তা ফান্ড হিসেবেও ঋণ দিয়েছে সরকার। বহু ব্যবসায়ী ঋণপত্র বা এলসির আমদানির ওভার ইনভয়েসিং করে অর্থ পাচার করে বলে সরকারকে অনেকেই সতর্কও করেছিল, কেননা সব ব্যবসায়ী সৎ নন। উপরন্তু আছে আমলাতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও পাচার। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের স্বল্পমেয়াদি রিজার্ভ ঋণ কেন ফেরত আসছে না, এর উত্তর নেই। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম আশঙ্কা করছেন, উল্লেখযোগ্য অংশ পাচার হয়েছে। অর্থাৎ রিজার্ভ থেকে বাছবিচারহীন অবকাঠামো (আইডিএফ) ও রপ্তানি (ইডিএফ) সহায়তা ঋণ দিয়ে দেশের রিজার্ভকে সংকটাপন্ন করার ঝুঁকি নেওয়া হয়েছিল।

করোনাকালে আমদানি অনেক বেশি কমে গিয়ে, হুন্ডি বন্ধ হয়ে বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি উত্তরোত্তর বেড়েছিল। ডিসেম্বর ২০২০ শেষে বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি ৪২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া কি শক্তিশালী অর্থনীতির চিত্র, নাকি বিনিয়োগ ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির স্থবিরতা, আমদানি-রপ্তানিসহ সার্বিক অর্থনীতিরই স্থবিরতা—এ আলোচনা প্রাসঙ্গিক থাকলেও পলিসি পর্যায়ে গুরুত্ব পায়নি সে সময়। বাস্তবে, বৈদেশিক রিজার্ভ কখনোই অলস নয়। বড় রিজার্ভের বিপরীতে অর্থ প্রত্যাবাসন সহজ হয় বলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়।

বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার এবং দেশের ঋণমান (ক্রেডিট রেটিং) নির্ধারণে রিজার্ভের গুরুত্ব অপরিসীম। বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে জোগান হয়। বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার যৌক্তিক পর্যায়ে ধরে রাখতে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রায় তারল্য বাড়ানো হয়, ফলে বিনিময় হার দীর্ঘদিন ধরেই স্থিতিশীল। সুতরাং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আসলে অলস পড়ে থাকে না, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্থানীয় ও বৈদেশিক মুদ্রাপ্রবাহের ইকোসিস্টেমকে সচল রাখে। তাই রিজার্ভের অর্থের নীতিবিরুদ্ধ বিকল্প ব্যবহারের সুযোগ ছিল না।

কিছুটা বর্ধিত রিজার্ভ হাতে রেখে সম্ভাব্য যেকোনো নতুন সংকট মোকাবিলার দূরদর্শী ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা আমরা দেখিনি। যে ডলার রিজার্ভ ভুল পরিকল্পনায়, ভুল হাতে ঋণ দিয়ে আটকে আছে, সেই ডলারের জন্যই আজকে আমরা আইএমএফ, এডিবি, জাইকার দ্বারে দ্বারে ঘুরছি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনেমতে, ২০২১ সালের আমদানি দায় (মূলত বেসরকারি, তবে সরকারি প্রকল্পসংশ্লিষ্ট আমদানিও আছে) পরিশোধ পিছিয়ে দেওয়ার (এলসি ডেফার্ড) ফলে মোট আমদানি দায়ের ৩০ শতাংশই স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণে পরিণত হয়ে গেছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত সৃষ্ট, মোট ১৭ বিলিয়ন বৈদেশিক ঋণের ৫৭ শতাংশই এভাবে কিউমুলেটেড হয়েছে। ফলে ২০২২ সালে এসে বিদেশি ঋণের মোট সরকারি ও বেসরকারি দেনা অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে। স্বল্পমেয়াদি দায়ের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ঋণ মিলে বর্তমানে বিদেশি ঋণের কিস্তির মোট দেনা ২৩ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। 

এর মধ্যে বেসরকারি খাতের দায় প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার, বাকি পাঁচ বিলিয়ন ডলারের কিস্তির দায় সরকারের। বেসরকারি কোম্পানিগুলো নিজেরা বিদেশ থেকে যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই করোনাকালে ঋণের কিস্তি না দিয়ে পুনঃ তফসিল করেছে, এতে বিলম্বিত দেনার স্থিতি বেড়েছে। করোনাকালে বেসরকারি পেমেন্ট বন্ধ না থাকলেও ডলার-সংকটে পড়ে এখন সরকার নিজেই বেসরকারি বিল-পেমেন্ট বন্ধ করেছে। এখন বেসরকারিরা বলছে, সরকার পেমেন্ট দিচ্ছে না বলে তারা বিদেশি ঋণে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে (ডিফল্টার)। সব মিলে বিদেশি ঋণের সরকারি-বেসরকারি ঋণ পরিশোধের পরিস্থিতি খুব বাজে।

বর্তমানে রিজার্ভ ৩৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার (২৬ অক্টোবর)। ইডিএফ ঋণ প্রায় ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ বিমান, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়া শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এ জন্য মোট দেওয়া হয়েছে প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের হিসাবে এই অর্থ রিজার্ভ থেকে বিয়োগ করলে প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের দেনা আছে চার বিলিয়ন ডলার, অপরাপর দায় ও আমদানির জন্য এশিয়ান ক্লিয়ারিং হাউসে দেনা আরও দুই বিলিয়ন ডলার।

সঙ্গে আছে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি বাবদ দেনা আরও পাঁচ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসেবে এই মুহূর্তে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ আছে মাত্র ১৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে যোগ হবে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়, কিন্তু সেটা আমদানি ব্যয়ে খরচ হয়ে পড়বে বলে রিজার্ভে তেমন যোগ হবে না। বাংলাদেশ বিগত অর্থবছরে ৩৩ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যঘাটতি প্রত্যক্ষ করেছে, অর্থাৎ আমাদের রপ্তানির চেয়ে আমদানি বিল ৩৩ বিলিয়ন ডলার বেশি ছিল। 

ফলে প্রবাসী আয় হিসেবে বছরে আসা ২০ বিলিয়ন ডলারও কিন্তু ঋণাত্মক বাণিজ্যঘাটতি (আমদানি বিয়োগ রপ্তানি) ও বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধের পরে রিজার্ভে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। স্বাভাবিক সময়ের হিসাবে বর্তমান রিজার্ভ মাত্র আড়াই মাসের আমদানি বিলের সমান কিংবা কিছু বেশি। সামনে দুর্ভিক্ষ হতে পারে—   এমন ঘোষণার প্রেক্ষাপটটা সম্ভবত এখানেই লুকিয়ে আছে।

তর্ক সাপেক্ষে একটা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল কাজ দুটো, হার্ড ফরেন কারেন্সির, অর্থাৎ ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা স্থিতিশীল রাখা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। বাংলাদেশ এই মুহূর্তে দুটোর কোনোটাই করতে পারছে না। একদিকে দেশের মূল্যস্ফীতি ১৩ বছরে সর্বোচ্চ, অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ক্রমাগত পড়ছে। ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা স্থিতিশীল রাখতে হলে সরকারকে উচ্চ মান রিজার্ভ ধরে রাখতে হবে, দায়দেনা পরিশোধের পরে যেটা সম্ভব হচ্ছে না।

সরকারের হাতে সম্ভাব্য বিকল্প দুটি, আরও অধিক হারে এলসি বন্ধ করা এবং আরও বেশি বৈদেশিক ঋণ করা। এলসি ক্রমাগত বন্ধ হলে রিজার্ভ কমার হার কমবে, কিন্তু অর্থনীতিতে নতুন বহুমুখী সংকট শুরু হবে। আরও বেশি বৈদেশিক ঋণ নিলে দেনাও বাড়বে। রপ্তানি খাতের কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিসহ জরুরি আমদানি বন্ধ করতে হবে। ইতিমধ্যেই সরকার রিজার্ভ বাঁচাতে প্রাথমিক জ্বালানি আমদানি কমিয়েছে, এতে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে পরিকল্পিত লোডশেডিং হচ্ছে। চলমান ভয়াবহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংকট জনজীবন, কর্মসংস্থান, শিল্প উৎপাদনসহ সার্বিক অর্থনীতিতে বিপর্যয় তৈরি করেছে।

সরকার ফেব্রুয়ারি থেকেই এলসি নিষ্পত্তি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এতে আমদানি ব্যয় কিছুটা কমেছে, তবে খোলাবাজারে ডলার-সংকট বেড়েছে। অর্থাৎ বাজারে ডলার ছাড়তে হচ্ছে বলে ঋণপত্র বন্ধ করেও রিজার্ভ হ্রাসের সমস্যা থামছে না। রিজার্ভ হ্রাসের ঝুঁকির মধ্যেও সরকারকে খাদ্যনিরাপত্তা ও জ্বালানিনিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখতে খাদ্যপণ্য, সার, ডিজেল, গ্যাসসহ জ্বালানি ও অপরাপর জরুরি আমদানি চালিয়ে যেতে হবে।

দুর্ভিক্ষ হতে পারে—এমন ঘোষণার পেছনে দুটি বিষয় কাজ করে থাকতে পারে। একটি হচ্ছে, সম্ভাব্য বৈশ্বিক মন্দায় আগামী দিনে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় হ্রাসের সম্ভাব্য ঝুঁকি। অন্যটি হচ্ছে, ওপেকভুক্ত দেশের জ্বালানি উৎপাদন কমিয়ে আনাসহ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি। যেহেতু সরকার আগেই রিজার্ভের ডলার ভুল জায়গায় ও ভুল হাতে খরচ করে রেখেছে, একই সঙ্গে তার অধিক পরিমাণ বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ আছে, তাই সরকারের মধ্যে ভয় ঢুকে গেছে।

এ অবস্থায় রিজার্ভ ধরে রাখতে সরকারকে হয়তো খাদ্য, সার, কাঁচামালসহ বহু জরুরি আমদানির এলসিও বাতিল করা মতো কঠিন সব সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। সেই কারণে আগেভাগেই দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকারের নিজস্ব ভুল পরিকল্পনার সংকটকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্বমন্দার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে মাত্র। বাংলাদেশের আজকের সংকট আমাদের ওপর শতভাগ আরোপিত নয়; বরং আমরা নিজেরাই চলমান ডলার-সংকটের একটা বড় অংশের নির্মাতা।

আর মানবজমিনের একটি শিরোনাম এরকম-বাংলাদেশের রিজার্ভ আসলে কতো?

যুগান্তর লিখেছে, বাংলাদেশ নিয়ে আইএমএফের সাধারণ হিসাব জমা-১৬৫ কোটি, বকেয়া ঋণ ৪৬ কোটি ডলার। প্রথম আলোর অপর এক প্রতিবেদনের শিরোনাম-বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমছে, রিজার্ভ চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দৈনিকটি আরো লিখেছে,  বিশ্ব বাজারে চাল ও গমের দাম কমছে , বাড়ছে দেশে।

এবার ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, মানুষের কান্না শুনুন, গণতন্ত্রকে বাঁচান’, বিচারব্যবস্থার কাছে আরজি মুখ্যমন্ত্রীর-সংবাদ প্রতিদিন

ফের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামা রক্ষার দাবিতে সরব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সরব হলেন ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ নিয়েও। তাঁর আশঙ্কা, দেশ ক্রমশ রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকে এগিয়ে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র বিচারব্যবস্থাই দেশবাসী, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে পারে বলে মত মুখ্যমন্ত্রীর। রবিবার বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে ওয়েস্ট বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ জিউরিডিক্যাল সায়েন্সেস-এর ১৪তম সমাবর্তনে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) প্রধান বিচারপতি তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য উদয় উমেশ ললিত, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব-সহ বহু বিশিষ্ট জন। ছিলেন রাজ্যের তিন মন্ত্রী। সেই মঞ্চ থেকেই বিচারব্যবস্থার কাছে গণতন্ত্রকে রক্ষার আবেদন জানালেন মমতা। পাশাপাশি গর্জে উঠলেন মিডিয়া ট্রায়ালের বিরুদ্ধে ।

এদিন বিচারপতিদের সামনেই মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ করে বলেন, “বিচারের আগেই মিডিয়া ট্রায়াল হচ্ছে। মিডিয়া বিচারব্যবস্থাকে গাইড করছে।” তাঁর কথায়, “সংবাদমাধ্যম বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তারা কাউকে অপরাধী বলে দাগিয়ে দিতে পারে না। আমার সম্মান নষ্ট করে দিতে পারে না এরা। মানুষের সম্মানই বড়। আমাদের সম্মান চলে গেলে সব চলে যায়।” বিচারব্যবস্থার কাছে মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ, “যাঁরা নেতৃত্বে আছেন, যাঁরা ভবিষ্যতে যাবেন এই জায়গায়, আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো রক্ষা করুন। অযথা মানুষকে হেনস্তা করা হচ্ছে।”

গভীর রাতে হামলা দুষ্কৃতীদের! বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে ভাঙা হল গান্ধীমূর্তি-সংবাদ প্রতিদিন

বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে (Madhya Pradesh) মহাত্মা গান্ধীর (Mahatma Gandhi) মূর্তিতে ভাঙচুর চালাল অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল খান্ডোয়া জেলার গ্রামটিতে। ইতিমধ্যেই দায়ের হয়েছে এফআইআর। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে এমনটাই জানা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে দেশের বাইরে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তিতে ভাঙচুর চালানোর ঘটনা ঘটেছে।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৩০