নভেম্বর ০১, ২০২২ ২১:৫৪ Asia/Dhaka

আমরা সারাদিন যেসব কাজ করে থাকি সেগুলো হয়তো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বা গুরুত্ব অনুযায়ী করি না। কোন কাজটা আগে করা দরকার আর কোনটা পরে অনেক সময় এইসব নিয়ে গোলমাল পাকিয়ে বসি।

আমাদের সবারই উচিত সেই সব কাজকে খুঁজে বের করা যেগুলো আমাদেরকে দ্রুত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। এরপর সেই তালিকা অনুযায়ী সেগুলোতে বেশি শ্রম দিতে হবে, এর ফলে আমরা দ্রুত সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌঁছাতে সক্ষম হবো। অগুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় ব্যয় ও অপচয় রোধ করতে পারবো। একটানা কাজ করলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে। এ কারণে কাজের ফাঁকে নিয়মিত বিশ্রাম নিতে হবে, ব্রেনকেও বিশ্রাম দিতে হবে। এ কারণে আপনার প্রতিদিনের কাজের তালিকাকে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে বিশ্রামের জন্যও সময় নির্ধারিত থাকে। এর ফলে কাজ যেমন দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করা যাবে তেমনি কাজের মানও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে আপনি 'পমোডোরো' কৌশল অনুসরণ করতে পারেন। 

পমোডোরো কৌশল হচ্ছে এমন একটি সময় ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি যা ১৯৮০ এর দশকের শেষদিকে ফ্রান্সেসকো সিরিলো উদ্ভাবন করেন। এই পদ্ধতিতে একটি টাইমার ব্যবহার করে যেকোনো কাজকে ছোট ছোট সময়ের ভগ্নাংশে ভাগ করে কাজটি সম্পন্ন করা হয়। সাধারণত সময়ের প্রতি ভগ্নাংশের দৈর্ঘ্য ২৫ মিনিট হয় এবং প্রতি ২৫ মিনিট পর পর ছোট বিরতি থাকে। সময়ের এই প্রতি ভগ্নাংশকে পমোডরো বলা হয় যা ইতালীয় একটি শব্দ যার অর্থ টমেটো। এই পদ্ধতি অনুযায়ী টাইমারের সাহায্য নিয়ে প্রতি ২৫ মিনিট কাজ করার পর তিন থেকে পাঁচ মিনিট বিরতি নিতে হয়। এরপর এভাবে চারটি ২৫ মিনিট অর্থাৎ ১০০ মিনিট কাজ করার পর দীর্ঘ বিরতি নিতে হয়। এই দীর্ঘ বিরতিটা ১৫ থেকে ৩০ মিনিট হতে হবে। এরপর শূন্য থেকে পুণরায় গণনা শুরু করতে হয় এবং একই প্রক্রিয়ায় স্বল্প বিরতি ও দীর্ঘ বিরতির কৌশল অবলম্বন করতে হয়। এভাবে চলতে থাকবে। এর ফলে কাজে গতি আসে, মান বাড়ে। 


সময় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরও একটি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। এর নাম হচ্ছে ফোর-ডি ফর্মুলা। এই পদ্ধতিতে অনেক জরুরি কাজগুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে জরুরি কাজটা খুঁজে বের করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ফোর-ডি পদ্ধতির চারটি ডি অনুসরণ করতে হবে। প্রথম ডি হলো ডিলিট ইট। অর্থাৎ যে কাজটি অগুরুত্বপূর্ণ তা কার্যতালিকা থেকে মুছে ফেলুন। মনে রাখতে হবে, মাত্র ২০ শতাংশ কাজের মধ্যে ৮০ শতাংশ ফলাফল লুকিয়ে আছে। সেই ২০ শতাংশ কাজ আগে করতে হবে। ফোর ডি ফর্মুলার দ্বিতীয় ডি হলো- ডেলিগেট ইট। অর্থাৎ কিছু কাজ অন্যের কাছে অর্পণ করুন, অন্যের দায়িত্বে ছেড়ে দিন। যে কাজটি অন্যকে দিয়ে করানো যাবে ঐ কাজটি অন্যকে দিয়ে করান। এ ক্ষেত্রে কোনো সংকোচ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে সহকর্মীদের সহযোগিতা নিতে পারেন। এর ফলে আপনার ওপর চাপ কমবে। আপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

 তৃতীয় ডি হলো ডিফার ইট। কিছু কাজ আছে যেগুলো সময়সাপেক্ষ এবং এই মুহূর্তে না করে সেগুলো পরে করলেও চলে। এ ধরণের কাজ নিয়ে এখনি মাথা ঘামানোর দরকার নেই।  ফোর-ডি ফর্মুলার চতুর্থ ডি হচ্ছে ডু ইট নাও। কিছু কাজ আছে অতি জরুরি। এ ধরণের কাজ এখনই করা দরকার। এ ক্ষেত্রে সেই কাজগুলো এখনই করে ফেলুন। অন্য সময়ের জন্য ফেলে রাখবেন না। এ ধরণের কাজ যত দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে ততই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমবে। জরুরি কাজগুলো অসম্পন্ন থাকলে তা সব সময় মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে যা স্বাভাবিক কর্মতৎপরতায় ব্যাঘাত ঘটায়। অনেকের ধারণা একই সময়ে একাধিক কাজ করতে পারলে সময় ব্যবস্থাপনা সহজ হয়ে উঠবে। বাস্তবে এই ধারণা সঠিক নয়। একই সময়ে একাধিক কাজে মনোযোগ দেওয়া হলে উৎপাদন অর্থাৎ শ্রম অনুযায়ী ফলনের মাত্রা কম হয়। এ কারণে একটি কাজে পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে পারলে বেশি লাভবান হওয়া যায়, সময়ের সর্বাধিক সদ্ব্যবহার করা যায়। 

সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন- দিনের শুরু থেকেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সময় ব্যয় করুন। সকালের নামাজ পড়ে দিন শুরু করুন। কয়েক মিনিটে সকালের নাস্তা খান এবং আপনার চিন্তা-ভাবনার মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলুন। আপনার কাছে আসলে কী গুরুত্বপূর্ণ তা মনে রাখুন। সেই কাজগুলোও করুন পরিকল্পনা অনুযায়ী ভেবে-চিন্তে। আবার প্রত্যেক দিন শেষে আগামীকালের জন্যও একটি পরিকল্পনা করে রাখুন। তাহলে পরের দিনটি শুরু করতে আপনার জন্য সহজ হবে এবং সময়ও সাশ্রয় হবে। টেলিফোনে আগে থেকে যোগাযোগ না করে  কারো কাছে যাবেন না। কারণ এমন হতে পারে আপনি যার কাছে যাচ্ছেন সে বাড়িতে বা অফিসে নাও থাকতে পারে। এছাড়া আপনাকে সময় নাও দিতে পারে। সব সময় কাগজ, কলম বা ছোট নোট সাথে রাখুন। 


আপনার পছন্দের কিছু করে অবসর সময়ের সদ্ব্যবহার করুন। অবসরে এমন কিছু করুন যা আপনার পরবর্তী কাজের জন্য সহায়ক হবে। এমন কাজে অবসর সময় ব্যয় করবেন না যা আপনার মানসিক ও শারীরিক সমস্যা বা জটিলতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। যেকোনো কাজ করার সময় প্রয়োজনীয় সকল উপাদান হাতের কাছে নিয়ে নেবেন। এর ফলে কাজে ব্যাঘাত ঘটবে না, মনোযোগ ধরে রেখে কাজটি সম্পন্ন করতে পারবেন। আপনার সময়ক্ষেপণ হতে পারে এমন চিন্তাশূন্য এবং আত্মকেন্দ্রিক লোক এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। এমন  লোকদের সঙ্গে মিশবেন যারা আপনাকে এবং আপনার সময়কে গুরুত্ব দেয়। চিঠি বা টেলিফোনে সেরে নেয়া যায় এমন কাজের জন্য ব্যক্তিগত ভাবে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, এতেও সময় বাঁচবে। কারো সাথে সাক্ষাতের প্রয়োজন হলে সম্ভব হলে আগে থেকে অ্যাপয়েনমেন্ট নিয়ে এরপর সাক্ষাতে যাবেন।# 

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ