আল্লাহ কখনও বাহ্যিক কল্যাণকর কিছু হতে মানুষকে বঞ্চিত করেন মানুষের স্বার্থেই!
আসমাউল হুসনা (পর্ব-৭৭, মহান আল্লাহর জমে'এ ও মনে'এ নামের তাৎপর্য)
মানুষ দুনিয়ার বুকে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি। তবে আল্লাহর যোগ্য প্রতিনিধি ও আল্লাহ-প্রেমিক হতে হলে তাঁর নামগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে রাখতে হবে ব্যাপক ধারণা।
মহান আল্লাহর পবিত্র নামগুলো কেবল এক-একটি শব্দ নয় বরং ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। বিভিন্ন সময়ে এইসব নামের প্রকাশ ও বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে। মহান আল্লাহর আসমাউল হুসনার তালিকাভুক্ত এমনই দুই নাম হল জ'মেএ্ جامع ও ম'নেএ্ مانع ।
সবাই যখন মরে যাবে ও যখন সব কিছু নেতিয়ে পড়বে এবং নিরবতা ছড়িয়ে পড়বে নিশ্চল বিশ্ব চরাচরে তখন মহান আল্লাহ আবারও মৃত সব মানুষকে করবেন জীবন্ত ও সবাইকে জড়ো করবেন একসঙ্গে। আর এ জন্যই মহান আল্লাহর অন্যতম নাম হল জ'মেএ্ তথা জড়োকারী। মহান আল্লাহর অন্য এক নাম ম'নেএ্ অর্থ বাধা দানকারী বা যিনি কোনো কিছুর ঘটা কিংবা সম্পন্ন হওয়াকে ঠেকিয়ে দেন বা বানচাল করেন। একত্রিতকারী বা জড়োকারী অর্থে পবিত্র কুরআনে জ'মেএ্ নাম দুই বার এসেছে। সুরা আল-ই ইমরানের ৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি মানুষকে একদিন অবশ্যই একত্রিত করবে; এতে কোনই সন্দেহ নেই।
এ ছাড়াও সুরা নিসার ১৪০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ নিজের জ'মেএ্ নাম উল্লেখ করে বলেছেন: আল্লাহ দোযখের মাঝে মুনাফিক ও কাফেরদেরকে একই জায়গায় সমবেত করবেন। বিচার দিবসে মহান আল্লাহ সব মানুষকে একত্র করবেন যাতে কারা ছিল বাধ্য বা আল্লাহর অনুগত ও কারা ছিল অবাধ্য সেই বিচার তিনি করতে পারেন। সেদিন সবার আসল রূপ প্রকাশ হয়ে পড়বে। মহান আল্লাহর সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে কারা সফল ও কারা ব্যর্থ সেদিন তা স্পষ্ট হবে। সেদিন অনেক মুমিনও আফসোস করবেন এই ভেবে যে হায়! কেনো আরও বেশি সৎকর্ম করিনি! আরও বেশি সৎকর্ম করলে আজ আরও বেশি নেয়ামত ও পুরস্কারের অধিকারী হতাম!
সুরা তাগ্বাবুনের নয় নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: সেদিন অর্থাৎ, সমাবেশের দিন আল্লাহ তোমাদেরকে বিচারের জন্য সমবেত করবেন। এ দিন ক্ষতি অনুভবের বা হার-জিত অনুভবের দিন। যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ইমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তার পাপগুলো মোচন করবেন এবং তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশ দিয়ে বয়ে যাবে নির্ঝরিণীগুলো, তারা সেখানে চিরকাল বসবাস করবে। এটাই মহাসাফল্য।
সুরা কাহাফের ৯৯ নম্বর আয়াতের আলোকে মহান আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা হযরত ইসরাফিল শিঙ্গায় ফু দেয়ার পর বিচার দিবসে সব যুগের সব মানুষ হবে একত্রিত। ইসরাফিল প্রথমবার ফু দেয়ার পর সব প্রাণী ও জীব মারা যাবে এবং পার্থিব বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে। এরপর দ্বিতীয়বার যখন ফু দেবেন এই ফেরেশতা তখন সব জীব আবারও জীবন্ত হবে ও সব মানুষ একত্র হবে।
মহান আল্লাহর জ'মেএ্ নামের আলোয় যেসব মুমিনের হৃদয় আলোকিত তারা বেদাআত ও শির্কসহ সব ধরনের পাপ থেকে দুরে থাকেন এবং খাঁটি একত্ববাদী হিসেবে সব ধরনের ভালো কাজ করেন ও সব ভালো গুণ অর্জনে সচেষ্ট হন। বিচার দিবসে যাতে অন্য মানুষদের সামনে লজ্জিত হতে না হয় ও মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুত বেহেশতের অধিবাসী হতে পারেন সে জন্য তারা সচেষ্ট থাকেন।
প্রখ্যাত আরেফ মহিউদ্দিন আরাবির মতে যারা মহান আল্লাহর জ'মেএ্ নামের রঙে রঙিন তারা পছন্দনীয় সব গুণের অধিকারী হন এবং মহান আল্লাহর সব নামেরই কল্যাণ লাভ করেন উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। তারা এমন হন না যে দয়ালু হয়েও দানের ক্ষেত্রে উদার নন কিংবা ন্যায়বিচারকামী হয়েও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্বল।
মহান আল্লাহর ম'নেএ্ নামের অর্থ বাধা দানকারী বা যিনি কোনো কিছুর ঘটা কিংবা সম্পন্ন হওয়াকে ঠেকিয়ে দেন বা বানচাল করেন। এই নাম আল্লাহর অন্যতম জালালি নাম তথা শক্তিমত্তা ও পরাক্রমের ঔজ্জ্বল্যে ভরপুর নামগুলোর অন্যতম।
মানুষ কখনও কখনও আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত অনেক কিছু অর্জন করতে চায়। কিন্তু মহান আল্লাহ তা ঠেকিয়ে দেন। এর কারণ মহান আল্লাহর কৌশল ও রহমতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আসলে মানুষের কল্যাণের জন্যই মহান আল্লাহ কখনও কখনও বাহ্যিক কল্যাণকর অনেক কিছু হতে মানুষকে বঞ্চিত করেন। আর এই বঞ্চনাতেই রয়েছে মানুষের জন্য আরও অনেক বেশি কল্যাণ। এ ধরনের বঞ্চনার কারণে মানুষ অনেক বেশি নেয়ামতের অধিকারী হয় ও অনেক বিপদ ও দুর্যোগ থেকে রক্ষা পায়। অন্য কথায় মহান আল্লাহর নাম ম'নেএ্ মানুষকে অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ও বিপদ-আপদকেই ঠেকিয়ে দেয়।
মহান আল্লাহর নাম ম'নেএ্-এর আলোয় আলোকিত হৃদয়ের অধিকারী বিশ্বাসীরা এটা ভালোভাবেই বুঝেন ও মনে রাখেন যে আল্লাহ কাউকে কিছু দিতে চাইলে তাতে কেউই কোনো বাধা হতে পারে না এবং আল্লাহ কাউকে কিছু দিতে না চাইলে বা কেড়ে নিতে চাইলে তাও কেউ ঠেকাতে সক্ষম নয়। তাই তারা যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য মহান আল্লাহরই শরণাপন্ন হন। মহান আল্লাহর ফয়সালার প্রতি সন্তুষ্টি ও বিশ্বাস যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি ও বাহ্যিক বঞ্চনা বা অতৃপ্তির মধ্যেও তাদেরকে রাখে প্রশান্ত এবং মহান আল্লাহর প্রতি ক্রমেই তাদের ইমান ও সন্তুষ্টিও বাড়তে থাকে। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ভাগ্য বা রিজিক বরাদ্দের প্রতি সন্তুষ্টির কারণে আল্লাহর দরবারেও তাদের মর্যাদা বাড়তে থাকে।
অন্য কথায় মুমিন এই বিশ্বাস রাখেন যে মহান আল্লাহ বান্দাকে যা দেন তা যেমন মহান আল্লাহর হিকমাত তথা কৌশল ও প্রজ্ঞা-ভিত্তিক তেমনি মহান আল্লাহ বান্দাকে যা হতে বঞ্চিত করেন তাও আল্লাহর প্রজ্ঞা ও কৌশল-ভিত্তিক। তাই তারা ভালো কোনো কিছু পেলে যেমন খুশিতে আত্মহারা হয়ে এই অর্জনে মহান আল্লাহর ভূমিকাকে ভুলে যান না তেমনি বিপদ-আপদ আসলেও মহান আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হন না। আর এ জন্যই তারা সব সময়ই প্রশান্ত হৃদয়ের অধিকারী। #
পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।