নভেম্বর ১৬, ২০২২ ২০:১১ Asia/Dhaka

পবিত্র কুরআনে এমন কিছু বর্ণনা এসেছে যেখানে বলা হয়েছে মানুষ মৃত্যুর পর তাদের ভুল বুঝতে পেরে আবারও আল্লাহর কাছে সময় ও সুযোগ প্রার্থনা করবে। কিন্তু আল্লাহ তা প্রত্যাখ্যান করবেন।

কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, এ ধরণের মানুষেরা খামখেয়ালিপূর্ণ নিষ্ফল জীবনযাপনের পর যখন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে তখন তারা আরও বেশি সময় বেঁচে থাকার আকুতি জানাবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার পর আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। সময়ের সদ্ব্যবহার করতে কুরআন বার বার মানুষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। শুধু তাই নয়, যারা সময়ের অপব্যবহার করছে তাদের জন্য শাস্তি অপেক্ষা করছে বলেও জানিয়ে দিয়েছে পবিত্র কুরআন। সময়ের সদ্ব্যবহারকে ঈমানের একটি মৌলিক ভিত্তি হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে।

সময়ের সদ্ব্যবহারের উপায় জানা বা শেখা কঠিন কোনো বিষয় নয়। একবার এই উপায় ও কৌশল আয়ত্ত করতে পারলে সারাজীবন তা থেকে উপকৃত হওয়া যায়। সময় ব্যবস্থাপনায় সাফল্যের জন্য সময় বিশ্লেষণের কৌশল ও শিল্প রপ্ত করা জরুরি। মানুষের জীবন সংক্ষিপ্ত। এই সংক্ষিপ্ত সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে নিজের জীবনাচারকে এক সপ্তাহ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করুন। সাধারণ নিয়মে দিন শুরু করে প্রতিদিন কী কী কাজ করছেন তা লিখে ফেলুন। এভাবে এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড লিপিবদ্ধ করুন। এরপর বিশ্লেষণ করে বের করুন প্রতিদিন অযথা কতটুকু সময় ব্যয় করেছেন আপনি। অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় কাজে আপনার যতটুকু সময় ব্যয় হয়েছে তা বের করার চেষ্টা করুন। যেমন ধরুন, আজ আপনার দুপুরের খাবার খেতে আধাঘণ্টা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু খাবারের টেবিলে বসে বন্ধুদের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা ধরে গল্প করেছেন, আড্ডা দিয়েছেন। এতে আপনার কোনো লাভ হয়নি বরং এক ঘণ্টা দেরিতে বাসায় পৌঁছেছেন আপনি। নিজের প্রতিদিনের কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনি দেখতে পাবেন নিজের অজান্তেই এমন কিছু ক্ষেত্রে সময় ব্যয় করছেন যা এই প্রথম বুঝতে পারলেন।    

যারা অকাজে সময় ব্যয়ের পক্ষে নন তারা সময়ের গুরুত্ব অন্যদের চেয়ে বেশি বোঝেন। আপনি যখন কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই কোনো কাজ শুরু করেন তখন স্বাভাবিকভাবেই তা থেকে ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। পরিকল্পনাহীন কাজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করেও কাঙিক্ষত ফল পাওয়া সম্ভব হয় না। ধরুন, আপনি একটি চুক্তি লিখতে কোথাও যাচ্ছেন। সেখানে যাওয়ার লক্ষ্যটা হলো চুক্তিটা ভালোভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখে সইয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করা। কিন্তু আপনি যদি সেখানে গিয়ে অন্য কোনো কথা ও কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অথবা পরিচিত লোক পেয়ে আড্ডায় মেতে উঠেন তাহলে আপনার লক্ষ্যটা পূর্ণ না হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে। আপনি যে কাজের জন্য গেছেন সেটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন। সেই কাজটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন। কাজের ফলাফল প্রাপ্তির ওপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি প্রতিদিনের প্রতিটি কাজের জন্য একটা সময়সীমা নির্ধারণ করুন। আমরা সবাই কমবেশি এটা জানি যে, আমাদের কোন কাজের জন্য মোটামুটি কতটা সময় প্রয়োজন। এর ভিত্তিতে প্রতিটি কাজের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে নেওয়া ভালো যাতে আমরা আমাদের সমস্ত কাজ সঠিক সময়ে সম্পন্ন করতে পারি।

আমাদেরকে নিয়মিত নানা প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হয়। কেনাকাটার জন্য আমাদেরকে একটা তালিকা নির্ধারণ করতে হবে। যেসব পণ্য কিনব সেসবের তালিকা এবং অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা ধরে নিতে পারি কেনাকাটায় আধা ঘণ্টা ব্যয় হবে। বাজারে গিয়ে আমাদেরকে এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কেনাকাটা সম্পন্ন করতে হবে। এরপর আমরা বলতে পারব নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্য হাসিল করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া, সাপ্তাহিক একটা রুটিনের পাশাপাশি দৈনন্দিন একটা রুটিনও বানিয়ে নিতে হবে যা কাজের গতি ও শৃঙ্খলা বাড়াতে সহযোগিতা করবে। সাপ্তাহিক রুটিনে সপ্তাহের শুরুতেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো লিখে ফেলুন। এরপর দৈনন্দিন রুটিন তৈরি করুন। কোন কাজে আপনি কত ঘণ্টা সময় দেবেন, সে বিষয়টি আপনার দৈনন্দিন রুটিনে লিখে রাখুন। নির্ধারিত সময়ে ঐ কাজ ছাড়া অন্য কাজ করবেন না। তালিকা মেনে কাজ না করলে ভালো ফলাফল আসবে না। এরপরও কোনো কিছু খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আসলে রুটিন একটু এদিক-সেদিক করার সুযোগ তো আছেই। এতে আপনি তুলনামূলক কম সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবেন যা আপনাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবে।

নিজের রুটিন মেনে চললে অনেক কিছু করার পরও আপনার হাতে অনেক সময় থাকবে, যা আপনি অন্য কোনো কাজে বা আপনার ভালোলাগার কোনো কিছুতে ব্যয় করতে পারবেন। সাধারণত সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোই সাপ্তাহিক বা দৈনন্দিন রুটিনে স্থান পায়। কাজেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ ভুলে যাওয়া বা কোনো কাজকে ছোট বা নগণ্য করে দেখার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। এতে দৈনন্দিন জীবনে কাজের অর্জন বাড়বে এবং আপনি সাফল্যের মুখ দেখতে পাবেন খুবই সহজে। জীবনে সাপ্তাহিক ও দৈনন্দিন রুটিন মেনে চললে যে শুধু কাজের চাপ কমে তা নয়, এটা মানুষের দুশ্চিন্তা কমায়, জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে এবং সাফল্যের পথ দেখায়। কারণ রুটিন মেনে চললে মানুষ সময়মত খেতে পারে, ব্যায়াম করতে পারে ও সময়মত ঘুমাতে পারে। সময়মত ঘুম থেকেও উঠতে পারে। এতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যসহ শারীরিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। কাজেই এসব মানুষ সময়মত অফিসে যেতে পারে এবং সর্বোপরি সময়ের কাজ সময়ে করতে পারে। আর এটি না পারার কারণে প্রতিদিন এ পৃথিবীতে বহু মানুষকে ঝামেলায় পড়তে হয়।

নিজেই নিজেকে ভালোলাগার কাজে পুরস্কৃত করুন। রুটিন মেনে চলে নিজ পছন্দের স্বাধীন জীবন উপভোগ করুন। আর এটির জন্য রুটিন মেনে না চললে একদিন আপনার সবচেয়ে ভালোলাগার কাজটিও বিরক্তিপূর্ণ ও হতাশায় পরিণত হবে। রুটিন মেনে নিজেকে সেটা থেকে মুক্তি দিন। সময় ব্যবস্থাপনায় রুটিন মেনে কাজ করার গুরুত্ব অপরিসীম।  

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ