নভেম্বর ২৯, ২০২২ ২০:৪৪ Asia/Dhaka

আমরা দৈনিক ও সাপ্তাহিক রুটিন তৈরির ওপর জোর দিয়েছি। অবশ্য কেউ কেউ মনে করেন দৈনিক রুটিনই যথেষ্ট, সাপ্তাহিক রুটিনের কোনো প্রয়োজন নেই। দৈনিক রুটিন করে প্রতিদিনের কাজ ঐ দিন সম্পন্ন করলেই হলো। কিন্তু সময় ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, সাপ্তাহিক রুটিনও ব্যক্তির জন্য জরুরি।

সপ্তাহের প্রথমেই ঐ সপ্তাহের কর্মসূচি বা রুটিন তৈরি করতে পারলে কাজ অনেক সুচারুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। আপনি দূরে কোথাও সফরে যাচ্ছেন তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিকল্পনা করলে হবে না। এ জন্য কয়েক দিন আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া দরকার। এছাড়া কিছু কাজ আছে প্রস্তুতিটা আরও দীর্ঘ মেয়াদি হতে হয়। আপনি যদি বিদেশ সফরে যেতে চান তাহলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে যেতে পারবেন না। এ জন্য অন্তত আপনাকে পাসপোর্ট বানাতে হবে। পাসপোর্ট আগে থেকে তৈরি করা থাকলে ভিসার জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হতে পারে। সফল মানুষদের সাফল্যের একটা রহস্য হচ্ছে- তারা রুটিন মাফিক কাজ করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সকাল বেলায় সম্পন্ন করে ফেলেন। আপনিও এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রতিদিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো প্রতিদিন সকালে সম্পন্ন করুন। দেখবেন এর ফলে মনে প্রশান্তি পাবেন। সকাল সকাল গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো শেষ করতে পারলে সময় ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ হবে।

আসলে সকালে আমাদের কর্মক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতা অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। আর রাতে ভালো ঘুমের পর আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবেও বেশ ফুরফুরে মেজাজে থাকি। তাই এই সময়ে যে কোনো জরুরি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা সঠিকভাবে নেওয়া সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, সকাল ৮টার মধ্যে নির্দিষ্ট কয়েকটি কাজ নিয়মিত করলে জীবনটা অনেক সহজ হয়ে ওঠে। এজন্য ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে, সকালের ধর্মীয় প্রার্থনা বা নামাজ শেষ করে যদি সকাল ৬টা থেকে দিন শুরু করা যায় তাহলে দেখবেন আপনার হাতে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনি চাইলেই ব্যায়াম করতে পারবেন। যে কয়েকটি কাজ সকাল ৮টার মধ্যে করা জরুরি তার একটি হলো ব্যায়াম। আপনি হাঁটা, ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ বা অন্য কোনো ব্যায়াম করতে পারেন। আবার ঘরের টুকিটাকি কাজ করলেও ব্যায়ামের কাজটা অনেকটা সম্পন্ন হয়ে যায়। যেমন বিছানা গোছাতে পারেন, বাড়িতে বাগান থাকলে তাতে কাজ করতে পারেন, ঘরের ফার্নিচার মোছার কাজ করতে পারেন, মেঝে পরিষ্কার করতে পারেন। রান্নাঘরে সময় দিতে পারেন। এর ফলে শারীরিক পরিশ্রম হবে যা ব্যায়ামের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।

ব্যায়ামের পর দিনের কাজের পরিকল্পনা বা রুটিনটা সুচারুভাবে তৈরি করে ফেলুন। একটি ডায়েরিতে ঐ দিনের তালিকা করে রাখলে কাজ করা সহজ হবে। আর কাজের চাপে কোনো কিছু ভুলে গেলেও লেখা থাকলে কাজ মিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কাজের ফাঁকে যে বিশ্রাম নিতে হবে তাও লিখে রাখুন। অনেকের কাছে এটাকে হাস্যকর মনে হলেও বাস্তবতা হচ্ছে আমরা যখন কাজের মধ্যে ডুবে থাকি তখন অনেক সময় খাওয়ার কথাও ভুলে যাই, ছোট ছোট সব বিষয় উল্লেখ করেই তালিকা তৈরি করুন। সময় মতো খাবার খাওয়া জরুরি। তালিকায় এ বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিন। টেবিল-চেয়ারে বসে কাজ করা যদি আপনার চাকরির অংশ হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই একটানা ডেস্কে বসে না থেকে মাঝে মধ্যে উঠে একটু হেঁটে নিন। ফোনে কথা বলার সময় একটু হেঁটে নিতে পারেন। হাত ও ঘাড়ের ব্যায়ামের জন্যও দিনের তালিকায় কিছু সময় বরাদ্দ করুন। এর ফলে ক্লান্তি যেমন  দূর হবে তেমনি শরীরও সুস্থ থাকবে।

সকাল আটটার আগে সকালের নাস্তা সেরে ফেলুন। কোনো সন্দেহ নেই সকালের নাস্তা দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার। কিন্তু দেরি করে ঘুম থেকে ওঠায় আমাদের অনেকেরই সকালে নাস্তা না করে কাজে দৌড়াতে হয়। আর কাজের ঝামেলায় অনেক দিনই নাস্তা করার সময় হয় না। রাতের পর দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকায় আমাদের শরীরে বিরূপ প্রভাব পড়ে। সকালে স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে কাজের উদ্দেশে বের হলে আপনি সারাদিন শক্তি পাবেন, আপনার অন্য কাজগুলোও ভালোভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন। অফিসে যাওয়ার আগে একটু বেশি সময় নিয়ে প্রস্তুত হন। তাড়াহুড়ো করে অফিস বা ক্লাস ধরতে হলে অনেক সময় যেনতেন ভাবে দৌড়ে বেরিয়ে যাই আমরা। এটা ঠিক নয়। এই অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে বাঁচতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিন।  সকালে একটু আগে ঘুম থেকে উঠতে পারলে এ ক্ষেত্রেও আপনাকে সময় স্বল্পতার সম্মুখীন হতে হবে না।

অফিসে বা বাইরে যাওয়ার আগে পরিপাটি হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি আমরা সবাই। কিন্তু আগে থেকে প্রস্তুতি না নিলে সেই ইচ্ছাটা অনেক সময়ই অপূর্ণ রয়ে যায়।  অফিসে আপনার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক থাকতে পারে, বাইরের কোনো অফিসের কর্মকর্তা আসতে পারেন আপনার অফিসে। এ কারণে পরিপাটি থাকা জরুরি। অফিসের বা ব্যবসার কাজে যেসব বৈঠক করার প্রয়োজন সেগুলো সকালে করুন। সম্ভব হলে পড়াশোনা ও কেনাকাটার কাজও করে ফেলুন সকাল সকাল।  আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে একাগ্রতার অভাব সময় ব্যবস্থাপনা সুচারুভাবে সম্পন্ন করা যায় না। আমাদের সবার ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটেছে যে, আমরা কাজ করছি হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো, এরপর কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। যে কাজটা করছিলাম তা থেকে মনোযোগ অন্যত্র চলে গেল। আগের একাগ্রতা আর থাকল না। এমনও ঘটে যে, যে কাজটি করছিলাম সেটার কথা ভুলেই গেলাম। অনেক সময়ই দেখা যায়, আপনি মনোযোগ দিয়ে একটি কাজ করছিলেন, হঠাৎ ফেসবুকে একটি নোটিফিকেশন এলো। আপনি সেটি দেখতে গিয়ে ফেসবুকেই রয়ে গেলেন অনেকটা সময়। এভাবে অনেক সময় নষ্ট হয় আমাদের। একাগ্রতাও নষ্ট হয়।

সর্বোত্তম যে কৌশলটি একাগ্রতা ও সময় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জরুরি তাহলো যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার আগে একাগ্রতা নষ্টকারী সব উপাদান দূরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইলটা অন্যের কাছে রেখে দিন, জরুরি ফোন এলে আপনাকে জানাতে বলুন। জরুরি না হলে পরে ফোন করবেন এই কথা জানিয়ে দিতে বলুন। ফেসবুক, মেইল ইত্যাদি একদম বন্ধ করে রাখুন যাতে এগুলো জ্বালাতন করতে না পারে। তবে কাজ শেষে অবশ্যই ফোন ও অন্য যোগাযোগ মাধ্যমগুলো একবার ঘুরে আসুন। কারণ সেখানে আপনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আসতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় আপনি বিস্ময়কর সাফল্য পাবেন। মোট কথা শুধু মাত্র একটি কাজের উপরই একই সময় মনোযোগ দিন।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ