ডিসেম্বর ১১, ২০২২ ১২:৩৪ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা! আজ ১১ ডিসেম্বর রোববারের কথাবার্তার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ দুটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন বিএনপির ৭ এমপি-মানবজমিন
  • বিএনপির ১০ দফা: বিপরীতমুখী অবস্থানে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীরা-প্রথম আলো
  • যে চরম সত্যের মুখোমুখি আমরা-ইত্তেফাক
  • মির্জা ফখরুল-আব্বাসসহ চারজনের জামিন আবেদন-যুগান্তর
  • বিশ্লেষণ-পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের দিনে লোকসান ৮ কোটি টাকা-কালের কণ্ঠ
  • জাতীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’র সঙ্গে ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ অন্তর্ভুক্তি চেয়ে রিট- বাংলাদেশ প্রতিদিন

কোলকাতার শিরোনাম:

  • টেটের শুরুতেই অশান্তি, বোলপুর, ধূপগুড়িতে বিক্ষোভ! ৬ জেলায় নিয়ন্ত্রণে ইন্টারনেট -সংবাদ প্রতিদিন
  • অসুস্থ অনশনরত তিন মেডিক্যাল পড়ুয়া, নির্বাচন কবে হবে তা জানেন না কেউই-আজকাল
  • শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন আড়াল করার প্রবণতা বাড়ছে!-আনন্দবাজার পত্রিকা

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু'টি খবরের বিশ্লেষণে যাচ্ছি- 

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১. গতকাল ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেখানে দলের সাত এমপি পদত্যাগ করেছেন। সবকিছু মিলে এই সমাবেশ থেকে বিএনপির অর্জনটা কী?

২. আগে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না করার নীতি থেকে সরে আসতে পারে মস্কো- এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এমন ইঙ্গিত দেয়ার কারণ কী এবং তার পরিণতি কী?

জনাব সিরাজুল ইসলাম আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর

স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন বিএনপির ৭ এমপি-মানবজমিন

বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির সাত সংসদ সদস্য। আজ বেলা ১১টার পর পদত্যাগ পত্র জমা দিতে জাতীয় সংসদ ভবনে সশরীরে প্রবেশ করেন বিএনপির দলীয় ৫ জন সংসদ সদস্য। সংসদ ভবনে প্রবেশের সময় বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, গতকাল সংসদ বন্ধ থাকায় আমরা ইমেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলাম স্পিকারের কাছে। আজ আমরা সশরীরে পদত্যাগপত্র জমা দিতে এসেছি।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন—বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম ও সংরক্ষিত নারী আসনের রুমিন ফারহানা। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ দেশের বাইরে থাকায় এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আবদুস সাত্তার ভূঞা অসুস্থ থাকায় তারা উপস্থিত থাকতে পারেননি।

নির্বাচিত কলাম ভেতর বাহির: ১০ই ডিসেম্বর কার জয়, কার পরাজয়? ডা. জাহেদ উর রহমান-মানবজমিন

বিএনপি বিভাগীয় জনসমাবেশগুলোর ঘোষণা দেয় তখন কিছু আপাত উদ্ভট কৌশল  নেয় সরকার। বিএনপি জনসভায় জনসমাগম কমানোর জন্য প্রত্যেকটি জনসভার দুই দিন আগে থেকে পরিবহন এবং ক্ষেত্রবিশেষে নৌ ধর্মঘট ডাকা হয়। জনসভার সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয় যেন সে জনসভাগুলোর প্রচার ঠিকমতো না হয়। কিন্তু কোনোটিতেই উপচে পড়া ভিড় ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে এই কথাটাও আমরা মনে রাখবো প্রতিটি জনসভা হয়েছে অসাধারণ শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল।

১০ই ডিসেম্বরকে ঘিরে কী হবে, না হবে সেটা নিয়ে দীর্ঘদিন আলাপ চলেছে। দেশের সবগুলো বিভাগে বিভাগীয় জনসভাগুলোর শেষটি ঢাকায় নির্ধারিত হয়েছিল বেশ আগেই দশ ডিসেম্বর। কিন্তু হঠাৎ করে পাল্টে যায় দৃশ্যপট- বিএনপি’র একজন নেতা জনাব আমানল্লাহ্‌ আমানের বক্তব্যে। আমান বলে বসেন ১০ই ডিসেম্বরের পর থেকে দেশ চলবে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের কথায়। মুহূর্তেই তার দল থেকে আমানের এই বক্তব্য প্রত্যাহার করা হয় এবং জানা যায় জনাব আমানকে সতর্ক করা হয় এই বিষয়ে। কিন্তু কথা থেমে থাকে না, কথা চলতে থাকে।

এরপর ছড়িয়ে পড়ে বেগম জিয়া ১০ই ডিসেম্বরের সমাবেশে যোগ দেবেন এমন আলাপ।  নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে এমন জমজমাট পরিস্থিতি মিডিয়া লুফে নেয়ার কথা, নিয়েছেও। মিডিয়াই নানাভাবে প্রশ্ন করতে শুরু করেছিল- কী হতে যাচ্ছে ১০ই ডিসেম্বর। এই  লেখাটা যখন লিখছি তখন ১০ই ডিসেম্বরের জনসভা চলছে। ঢাকার গোলাপবাগ মাঠে জনসভা হওয়ার আগে কী কী হয়েছে এগুলো আমাদের স্মৃতিতে একেবারেই তাজা। নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভা করার বিএনপি’র দাবি সরকার মেনে নেয়নি।

গোপীবাগে বিএনপির গণসমাবেশ

 সরকার একেবারে জনসভা করতে দেবে না- এই পর্যায়ে এখন আর নেই। বলা বাহুল্য এটা সরকারের কিছুটা গণতান্ত্রিক হয়ে ওঠা না, এটা বরং সরকারের ওপরে প্রচণ্ড আন্তর্জাতিক চাপের ফলাফল।

বিএনপিকে সরকার সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতি দিয়েছিল। অবশ্য রাস্তায় গাড়ি পার্ক না করা, রাস্তায় মাইক না লাগানো, মিছিল করে জনসভায় না আসা, বিএনপি নিজ দায়িত্বে সিসিটিভি ক্যামেরা আর্চওয়ে স্থাপন করা, সর্বোপরি কোনোরকম ব্যাখ্যা ছাড়া সমাবেশ বাতিল করার ক্ষমতা হাতে রাখার মতো উদ্ভট এবং হাস্যকর শর্তসহ মোট ২৬ শর্ত যুক্ত করে দেয় এই অনুমতির সঙ্গে। বিএনপি রাজি হয়নি। এরপর দুই পক্ষের চাপান-উতোর চললো। কিন্তু সহসাই পরিস্থিতি সহিংস হয়ে উঠলো। সাতই ডিসেম্বর পুলিশ বিএনপি’র পল্টন কার্যালয়ের সামনে ক্র্যাকডাউনে নামে। আহত হন অনেকেই আর নিহত হন একজন। বিএনপি’র কার্যালয় এর ভেতরে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। ৫০০ জনের বেশি আটক করে, লণ্ডভণ্ড করে অফিসের নানা সামগ্রী এবং নিয়ে যায় বিএনপি অফিসের কম্পিউটারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র।

 তালাবদ্ধ করে কার্যালয়টি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় পুলিশ। তারপর পরিস্থিতি একটু হলেও উত্তরণের আশা দেখা গেল যখন আমরা দেখলাম কমলাপুর স্টেডিয়াম কিংবা বাঙলা কলেজ মাঠের মধ্যে কোনো একটি স্থানকে বেছে নিতে দুই পক্ষই আলোচনা করছে। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবেই সেদিন গভীর রাতে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব মির্জা আব্বাসকে। সর্বশেষ বিএনপি’র পক্ষ থেকে গোলাপবাগ মাঠ চাওয়ার প্রেক্ষাপটে সেটি দিতে সরকার শেষ পর্যন্ত রাজি হয় এবং জনসভাটি সেখানে হলো।  বিএনপি’র জনসভাকে কেন্দ্র করে যা যা ঘটছে সবকিছুই ঘটছে বিশ্বকাপের প্রচণ্ড ডামাডোলের মধ্যে। নিজেরা যেমনই ফুটবল খেলুক না কেন বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে এই জাতির উন্মাদনা এখন বৈশ্বিক পর্যায়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়েও বিএনপি’র এই জনসভাকে কেন্দ্র করে ঘটা ঘটনাগুলো নাগরিকদের মধ্যে আলোচিত হচ্ছে। গোলাপবাগ মাঠে জনসভা করায় কার জয় হলো কিংবা কার পরাজয় সেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।  বিশেষ করে আমাদের এই অঞ্চলের রাজনীতিতে জয়-পরাজয় শব্দগুলো খুব ব্যবহৃত হয়। 

কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনীতি আর রাজনীতির জায়গায় নেই, এটা একটা স্রেফ যুদ্ধের পরিস্থিতিতে চলে গেছে। তাই জয়-পরাজয়ের হিসাব খুব ঘটা করে হওয়ারই কথা। জয়-পরাজয় বিষয়ে মন্তব্য এর মধ্যেই চলে এসেছে ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তির কাছ থেকে। জনসভার আগের দিন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের মহানগর নাট্যমঞ্চে একটি সমাবেশে বলেছেন- ‘নয়াপল্টনে সমাবেশ করবোই।’ আজ তারা গোলাপবাগে। তাহলে পরাজয় কার হলো? আমাদের না বিএনপি’র? আন্দোলনে অর্ধেক পরাজয় এখানেই হয়ে গেছে। জনাব কাদেরের চোখে বিএনপি’র অর্ধেক পরাজয় হয়ে গেছে।  কেউ যদি সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেন তাহলে কি মনে হবে বিএনপি ‘অর্ধেক পরাজিত’ হয়েছে? এই যুদ্ধে আওয়ামী লীগের  অর্ধেক বিজয়ও কি হয়েছে, নাকি আদৌ কোনো বিজয় হয়েছে? সামপ্রতিক ‘যুদ্ধে’ আওয়ামী লীগের আসলে কী হয়েছে, সেটা বোঝার জন্য আমরা একটু পেছন থেকে দেখতে শুরু করি।  চার মাস আগে থেকেই বিএনপি যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়কে সামনে রেখে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে জনসভা করতে শুরু করে তখন থেকেই ক্ষমতাসীন দল তাতে প্রচণ্ড বাধা তৈরি করে।

 কখনো কখনো পুলিশ আবার কখনো ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা সেই জনসভাগুলোতে চরম বাধা তৈরি করে, হামলা করে। অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে সাতজন বিএনপি নেতা-কর্মী। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীনরা চরম আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আছে। সেই চাপের মুখে থেকে পরবর্তীতে বিভাগীয় জনসমাবেশগুলোতে আর আগের মতো হামলা করে চরম বাধা তৈরি করতে চেষ্টা করেনি। এরপর যখন বিএনপি বিভাগীয় জনসমাবেশগুলোর ঘোষণা দেয় তখন কিছু আপাত উদ্ভট কৌশল  নেয় সরকার। বিএনপি জনসভায় জনসমাগম কমানোর জন্য প্রত্যেকটি জনসভার দুই দিন আগে থেকে পরিবহন এবং ক্ষেত্রবিশেষে নৌ ধর্মঘট ডাকা হয়। জনসভার সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয় যেন সে জনসভাগুলোর প্রচার ঠিকমতো না হয়। কিন্তু কোনোটিতেই উপচে পড়া ভিড় ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে এই কথাটাও আমরা মনে রাখবো প্রতিটি জনসভা হয়েছে অসাধারণ শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল। ঢাকায় বিএনপি চেয়েছিল তার বিভাগীয় সমাবেশের সর্বশেষটি করার। এবং যে জায়গায় তারা এটি করতে চেয়েছিল সেখানে এই বছরেই গত কয়েক মাসে ১১টি সমাবেশ হয়েছে। কোনোটিতেই কোনো সমস্যা হয়নি। কিছুটা জনদুর্ভোগ হয়েছে বটে।

এটা এমনকি সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে হলেও হয়। সাপ্তাহিক কার্যদিবসে যুবলীগ, মহিলা লীগ এবং ছাত্রলীগের পরপর তিনটি অনুষ্ঠান সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে হওয়ার পরও তার আশপাশে অনেকগুলো রাস্তা বন্ধ করার কারণে সারা ঢাকায় বিরাট সমস্যা তৈরি হয়েছিল। বিএনপি’র ক্ষেত্রে অন্তত একটা যুক্তি ছিল, তারা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে জনসমাবেশটি করতে চেয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে- বিভাগীয় জনসভায় কোনো সমস্যা না করলেও, পল্টনে এতগুলো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলেও সরকার কেন বিএনপিকে এবার আর পল্টনে জনসমাবেশ করতে দেয়নি। মিডিয়াতে আসা সংবাদে দেখা গেছে সরকার বলছে তাদের কাছে খবর আছে বিএনপি তাদের ঢাকার সমাবেশটি করার পর রাস্তায় বসে পড়তে পারতো। বসে পড়ে তারা সরকারের পদত্যাগ দাবি করতে পারতো। সরকারের মরিয়া আচরণ দেখে এটা খুব স্পষ্ট হলো এই ব্যাপারটি সরকার খুব শক্তভাবে বিশ্বাস করেছে।  বিভাগীয় জনসমাবেশগুলো থেকেই দেখা যাচ্ছে সরকার আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে আগের মতো আর বলপ্রয়োগ করতে পেরে উঠছে না।

 বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে তার একটা সীমা আরোপিত হয়ে গেছে। ওদিকে বিএনপি পল্টনের রাস্তায় বসে পড়ে সরকারের পদত্যাগ চাইতে পারে- এটা সরকারকে চরমভাবে ভীত করে তুলেছে। এটা যেমন দেখেছে জনগণ, তেমনি দেখেছে সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপিও।  এইসব ঘটনাই ঘটেছে ১০ই ডিসেম্বর আসার আগেই। একটা চরম কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার যদি তার বল প্রয়োগের ক্ষেত্রে আগের মতো আর বাধাহীন না থাকে, যদি সে তার ভয় জনগণ এবং বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির কাছে প্রকাশ্য করে দেয় তাহলে সেটাকে তার বিরাট পরাজয় বলেই বিশ্বাস করি আমি। গোলাপবাগ মাঠে জনসভা করে বিএনপি’র অর্ধেক পরাজয় হয়েছে বলছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু আমি তো দেখছি ১০ই ডিসেম্বর আসার আগেই যেন ‘পূর্ণ পরাজয়’ ঘটেছে ক্ষমতাসীনদের। কর্মকাণ্ডে এমনটাই বলে দেয়।

বিশ্লেষণ-বিএনপির ১০ দফা: বিপরীতমুখী অবস্থানে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীরা-প্রথম আলো

রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে গতকাল শনিবার ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে বিএনপি যে ১০ দফা দাবি পেশ করেছে, তা একেবারেই নতুন নয়। বরং দলটি অনেক দিন ধরেই এসব দাবি জানিয়ে আসছে। এবার তারা দাবিগুলো সুনির্দিষ্ট করল।

বিএনপির দাবির ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অবস্থান পুরোপুরি বিপরীতমুখী। আওয়ামী লীগ স্পষ্টতই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনমুখী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির নেতারা এখন থেকেই মানুষের কাছে ভোট চাইছেন। অন্যদিকে বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, দাবি আদায় না হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

বিএনপি কীভাবে তাদের দাবি আদায় করবে? ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ কি বিএনপির দাবি মেনে নেবে? এসব প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় পতাকা

নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে প্রায় এক যুগ ধরে রাজপথে আছে বিএনপি। কিন্তু এই সময় তারা কোনো ফল অর্জন করতে পারেনি। আগামী দিনেও যে দলটি সহজে কিছু পেয়ে যাবে, এমনটা বিএনপির নেতা-কর্মীরাও বিশ্বাস করেন না।

এবার আসা যাক, বিএনপির ১০ দফা দাবিতে কী আছে? দলটির প্রথম ও প্রধান দাবি হলো—বর্তমান অনির্বাচিত, অবৈধ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ভোটবিহীন, গণতন্ত্র হরণকারী, লুটেরা ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

দ্বিতীয় দাবি—১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮ খ, গ ও ঘ—এর আলোকে দলনিরপেক্ষ একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। বিএনপির বাকি দাবিগুলো মূলত সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার, মানবাধিকার, সুশাসন, আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত।

এবার বিএনপি তাদের ১০ দফা দাবি আদায়ে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের জোটসঙ্গীসহ সমমনাদের নিয়ে বিএনপিকে কোণঠাসা করতে চাইবে।

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট চলছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। নিত্যপণ্যের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি ও ডলার–সংকট সবাইকে ভাবাচ্ছে। এই সংকটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মুখোমুখি অবস্থান দেশকে কোথায় নিয়ে যায়, তা ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মতামত-মধ্যরাতে গ্রেপ্তার, সংবিধানের কিছু অংশ এখন কি তালাবদ্ধ-শাহদীন মালিক-প্রথম আলো

শুক্রবারে একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় শুয়েই বিবিসির ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ইংরেজি খবর রেডিওতে শুনছিলাম। খবর থেকে জানলাম, গত রাত তিনটার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং মির্জা আব্বাসকে তাঁদের বাসা থেকে সাদা পোশাকের পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর আমাদের দেশের টিভি সংবাদেও এই খবর শুনলাম।

সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদের মৌলিক অধিকারে বলা আছে, কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা তাঁর সঙ্গে ‘নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর’ ব্যবহার করা যাইবে না। এই অধিকার নিরঙ্কুশ। অর্থাৎ কোনো আইনের বা বিশেষ অবস্থার যুক্তি দিয়ে যন্ত্রণাদায়ক, নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর ব্যবহার জায়েজ করার কোনো সুযোগ কোনো ব্যক্তি বা বাহিনীর নেই। প্রায় সত্তর বা সত্তরোর্ধ এই দুই নেতাকে রাত তিনটার পর গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাইক্রোবাসে তুলে থানা অথবা ডিবি অফিসে নিয়ে গিয়ে তাঁদের নিশ্চয়ই মশারি খাটিয়ে, লেপ–বালিশ দিয়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়নি। 

সেই সঙ্গে তাঁদের সাময়িক অসুবিধার জন্য ক্ষমা চাওয়াও নিশ্চয়ই হয়নি। অতএব, রাত তিনটার পরে তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া এবং পুলিশি হেফাজতে বসিয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা নিশ্চয়ই সংবিধান অনুয়ায়ী ‘নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর’ ব্যবহার। চোর–ডাকাতদের সঙ্গেও অনুরূপ ব্যবহার করা সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ।

আইন বিশেষজ্ঞ-শাহদীন মালিক

পাঠক হয়তো প্রশ্ন তুলতে পারেন এই মর্মে যে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়, কিন্তু তা–ই বলে খুনি ও সন্ত্রাসীদের কি দু-চার ঘা দেওয়া যাবে না? সাংবিধানিক উত্তর হলো, এই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিষ্ঠুর, যন্ত্রণাদায়ক ও অমানুষিক ব্যবহার করতে পারবে না।

সংবিধানের ৩৫(৪) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘কোনো অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাইবে না।’ অর্থাৎ, পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে এমন কিছু জিজ্ঞেস করতে পারবে না, যার উত্তর দিলে আমি নিজেই ফেঁসে যাব। যেমন ইয়াবা কারবারি সন্দেহে কোনো ব্যক্তিকে পুলিশ করল, ‘এই ব্যাটা, ইয়াবার ব্যাগ কোথায় রেখেছিস?’ উত্তরে ইয়াবা কারবারি যদি বলেন যে আমার অমুক ঘরে অমুক সোফার কুশনের মধ্যে আছে, তাহলে তো তিনি ফেঁসে গেলেন, অর্থাৎ নিজের বিরুদ্ধে নিজেই সাক্ষ্য দিলেন। পুলিশ তাঁর কথামতো কুশন থেকে ইয়াবা বের করে তাঁর অপরাধ প্রমাণে সেটা সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করবে। 

পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের দিনে লোকসান ৮ কোটি টাকা-কালের কণ্ঠ

ইউক্রেন ও রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম চড়ে রেকর্ড ভেঙেছে। যার প্রভাব বাংলাদেশের বাজারেও পড়ছে। ভর্তুকি কমাতে এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এর পরও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দৈনিক প্রায় আট কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে।

এই অঙ্ক প্রতি মাসে প্রায় ২৪০ কোটি টাকা।

বিপিসিকে লোকসানে ফেলেছে মূলত ডিজেলের দাম। বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৭০-৭২ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ডিজেলের চাহিদা ৪৮-৪৯ লাখ মেট্রিক টন। এখন দৈনিক গড়ে ডিজেল বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেট্রিক টন।

বিপিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সুবিধাটি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি ডলারে ১০-১২ টাকার যে অবমূল্যায়ন হয়েছে, এতে বিপিসির ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এতে এখনো লোকসানের মধ্যে আছে সংস্থাটি।

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

গ্রেপ্তার শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ শ্যামল আদক

টেন্ডার দুর্নীতির অভিযোগ, পুলিশের জালে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ হলদিয়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান-সংবাদ প্রতিদিনের এ খবরে লেখা হয়েছে, এবার দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ শ্যামল আদক। হলদিয়া পুরসভার পুরপ্রধান থাকাকালীন অটো-টোটোর স্ট্যান্ডের টেন্ডারে দুর্নীতি করার অভিযোগ উঠেছিল শ্যামল আদকের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে ইতিমধ্যে হাজতে রয়েছেন কাউন্সিলর সত্যব্রত দাস। 

টেট পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ

দৈনিকটির অপর এক খবরের শিরোনাম এরকম বিস্তারিত খবরে লেখা হয়েছে, টেট বানচালের আশঙ্কা পর্ষদ সভাপতির, প্রশ্নফাঁসের ‘বিভ্রান্তিকর’ অভিযোগ শুভেন্দুর। প্রায় ৬ বছর পর রাজ্যে ফের প্রাথমিক টেট। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে নেওয়া হবে পরীক্ষা। যাতে কোনও বিঘ্ন না ঘটে, সে কারণে সতর্ক পর্ষদ। তা সত্ত্বেও পরীক্ষা বানচালের চেষ্টা হতে পারে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল। তার মাত্র কয়েকঘণ্টার মধ্যে বিস্ফোরক রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রশ্নফাঁস হচ্ছে। অন্য এক খবরে লেখা হয়েছে, প্রাথমিক টেটে প্রশ্নফাঁস রুখতে কড়া প্রশাসন, ৭ জেলায় ‘বন্ধ’ ইন্টারনেট পরিষেবা।

অসুস্থ অনশনরত তিন মেডিক্যাল পড়ুয়া, নির্বাচন কবে হবে তা জানেন না কেউই-আজকাল

পেরিয়ে গিয়েছে ৪৮ ঘন্টা। চলছে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে অনশন। কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে। ইতিমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনশন তিন মেডিক্যাল পড়ুয়া। সাবির হুসেইন, রণবীর সরকার এবং ঋতম মুখার্জি। আন্দোলনরত পড়ুয়াদের তরফে অনিকেত কর জানিয়েছেন, শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়ায় তিনজনেরই শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়েছে।

অনিকেত বলেন, 'অসুস্থ হলেও আগামী ২২ ডিসেম্বর কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচন করানোর দাবিতে তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।'

ভারতের প্রধান বিচারপতি  ডিওয়াই চন্দ্রচূড়

শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন আড়াল করার প্রবণতা বাড়ছে! উদ্বিগ্ন প্রধান বিচারপতি-আনন্দবাজার পত্রিকা: বিস্তারিত খবরে লেখা হয়েছে, শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা আড়াল করার প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। তিনি বলেছেন, ‘‘নির্যাতিত শিশু এবং নির্যাতনকারী যদি একই পরিবারের সদস্যও হন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে হবে। পারিবারিক সম্মান যে বৃহত্তর ঘটনার ঊর্ধ্বে নয়, সে বিষয়ে প্রচার চালাতে হবে সরকারকে।’’ এক আলোচনাসভায় প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা গোপন করার এই প্রবণতা দুর্ভাগ্যজনক। নীরবতার এই সংস্কৃতি অপরাধীদের উৎসাহিত করবে। যে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, সরকারকে তাদের এবং তাদের পরিবারের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।’’ অনেক ক্ষেত্রেই ভয় বা অসম্মানের আশঙ্কায় নির্যাতিত শিশুর পরিবার ঘটনা গোপন করেন। যদিও আইন বলছে, শিশুর উপরে যৌন নির্যাতন হতে দেখেও গোপন করে যাওয়ার চেষ্টা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১১