ডিসেম্বর ১৪, ২০২২ ১৫:৩৪ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহর আসমাউল হুসনার তালিকাভুক্ত আরও এক নাম নুর। নুর অর্থ যা আলোকিত ও আলো দান করে। নুর বা আলো অস্পষ্ট ও অন্ধকারে থাকা বিষয়কে প্রকাশ করে।

আলো না থাকার অর্থ অন্ধকার ও অজ্ঞতা। মহান আল্লাহ খালিক বা স্রস্টা। তিনি নিখিল বিশ্বের সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং জীবন্ত সব কিছু মহান আল্লাহর হুকুমেই জীবিত। তিনিই সব সৃষ্টিকে রিজিক দান করে থাকেন। তিনিই বিশ্ব চরাচরে স্পষ্টতা বা ঔজ্জ্বল্য দানকারী একমাত্র সত্ত্বা। আল্লাহ যদি এক মুহূর্তের জন্য সৃষ্টিকুলের প্রতি দয়ার দৃষ্টি দেয়া বন্ধ করে দেন তাহলে সব কিছুই অন্ধকারে ডুবে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। পবিত্র কুরআনে নুর শব্দটি ৪০ বারেরও বেশি এসেছে। মহান আল্লাহ সুরা নূরের ৩৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন, আল্লাহ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের জ্যোতি বা আলো।

মহান আল্লাহ নিজেই আলোর স্রস্টা। তাই কোনো কিছুই আল্লাহকে উজ্জ্বল বা জ্যোতির্ময় করে না। আল্লাহর সদৃশ কিছুই নেই। তাই আলোও আল্লাহর সমতুল্য কিছু নয়। আল্লাহ নিজেকে নুর বলে উল্লেখ করলেও তা অনুভবযোগ্য আলো নয়। 

মহান আল্লাহর নুরের ভিন্নতা বিষয়ক একটি দোয়ায় বলা হয়েছে: হে আলোর আলো বা নুরের নুর, হে আলো প্রজ্জ্বলনকারী আলো, হে আলোর স্রস্টা আলো, হে আলোর সঞ্চালক বা পরিচালক আলো, হে আলো পরিমাপকারী আলো, হে সব আলোর আলো, হে সব আলোর আগের আলো, হে সব আলোর পরের আলো, হে সব আলোর ঊর্ধ্বের আলো, হে এমন এক আলো যে আলোর সমতুল্য নেই কোনো আলো। 

আলো একদিকে ঔজ্জ্বল্য বিলিয়ে দেয় অন্যদিকে যা কিছু তার অবস্থা ও স্বভাব বা ধর্মের সঙ্গে মানানসই নয় সেসবকে দুর করে দেয় নিজের কাছ থেকে। বিশিষ্ট সুফি সাধক মহিউদ্দিন আরাবির মতে আলোর রয়েছে নানা স্তর। আল্লাহ আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের জ্যোতি বলতে এক অর্থে আলো বিকিরণের কথা বলা হয়েছে। এই আলো সমৃদ্ধি ও বিশ্ব জগতের হেদায়াতের আলো। আর অন্য অর্থে এই আলো হচ্ছে সমস্ত অজ্ঞতা ও মূর্খতার অন্ধকার দূরকারী।

মহান আল্লাহ নিজেই আলোর স্রস্টা

 

 মহান আল্লাহ সুরা আনআম-এর ১২২ নম্বর আয়াতে বলেছেন: আর যে মৃত ছিল অতঃপর আমি তাকে জীবিত করেছি এবং তাকে এমন একটি আলো দিয়েছি, যা নিয়ে সে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে। সে কি ঐ ব্যক্তির সমতুল্য হতে পারে, যে অন্ধকারে রয়েছে-সেখান থেকে বের হতে পারছে না? এমনিভাবে কাফেরদের দৃষ্টিতে তাদের কাজকর্মকে সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে। -এখানে আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া হেদায়াতের আলোর কথাই বলা হয়েছে। মহান আল্লাহর সঙ্গে যেই সৃষ্টির সম্পর্ক যত বেশি তার মধ্যে এই আলোও তত বেশি। অন্যদিকে মহান আল্লাহর নবী-রাসুল ও ইমামরাও আল্লাহর হেদায়াতের নুর বা প্রদীপ। পবিত্র ইসলাম ধর্মও নুর। পবিত্র কুরআন ও হাদিস এবং ইসলামী জ্ঞানও হচ্ছে নুর বা সুপথ পাওয়ার আলো। মানবতার শেষ ত্রাণকর্তা ইমাম মাহদিও নুরের প্রতীক ও নুরে মুহাম্মদির শেষ তারকা। মহানবী-সা হচ্ছেন আল্লাহর হেদায়াতের সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নুর। 

মানুষের অন্তরে যদি খোদায়ি নুরের প্রতিফলন না ঘটে তাহলে তার অন্তরের চোখ অন্ধ থাকে বলে সে সত্যের আলোকে গ্রহণ করতে পারে না ও সুপথ ধরে এগুতে পারে না। 
মানুষের জন্য খোদায়ি হেদায়াতের সর্বশেষ আলো হলেন হযরত ইমাম মাহদি-আ.। সব খোদায়ি ধর্মে ইমাম মাহদির কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং সবাই তাঁর প্রতীক্ষায় রয়েছেন। মানবীয় পূর্ণতা ও সৌভাগ্য পেতে হলে ইমাম মাহদির হেদায়াতের আলো লাভ জরুরি। এই আলোর উৎস হল পরিপূর্ণ ও নিরঙ্কুশ খোদায়ি নুর। ইমাম মাহদির নুর মহান আল্লাহরই নুর ও সৌন্দর্যের প্রকাশ। যারা মজলুম ও দুর্বল করে রাখা মানুষদের আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক সম্পদ লুট করছে তাদের সবাইকে লাঞ্ছনা ও পরাজয়ের স্বাদ আস্বাদন করিয়ে বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার, সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবেন হযরত ইমাম মাহদি-আ। তাঁর ওই বিশ্বরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অন্য সব ধর্মের ওপর ইসলামের বিজয় লাভের যে প্রতিশ্রুতি মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে দিয়েছেন তা বাস্তব রূপ নেবে। -বাজনা  

সুরা মায়েদার ১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: হে আহলে-কিতাবগণ! তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমন করেছেন! কিতাবের যেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে, তিনি তার মধ্য থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন। তোমাদের কাছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জ্বল গ্রন্থ। - এখানে এই উজ্জ্বল জ্যোতি বা নুর বলতে পবিত্র কুরআনকে বোঝানো হয়েছে বলে বেশিরভাগ তাফসিরকারক মনে করেন।  এর কারণ একই সুরার ১৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: এর দ্বারা আল্লাহ যারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন। অবশ্য বিকৃত হয়ে যাওয়ার আগে তাওরাত ও ইঞ্জিলসহ অতীতের খোদায়ি গ্রন্থগুলোও ছিল খোদায়ি হেদায়াতের নুর। সুরা মায়েদার ৪৪ নম্বর আয়াতের প্রথম ভাগে বলা হয়েছে: আমি তওরাত অবতীর্ণ করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। আল্লাহর আজ্ঞাবহ পয়গম্বর, দরবেশ ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে ফয়সালা দিতেন।

যারা মহান আল্লাহর নুর নামের বিষয়ে সচেতন তারা বিবেক-বুদ্ধি, কুরআন ও ইসলামী শরিয়তের বিধি-বিধানের আলো ব্যবহার করে সব সন্দেহ ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিরসন করেন এবং অজ্ঞতার আঁধার ও পাপ বর্জন করে চলেন।  একইসঙ্গে তারা সুপথ দেখান অন্যদেরকেও। মুমিনরা ঈমানের নুর ও সৎকর্মের আলোর কারণে বেহেশতের অধিকারী হবেন। তারা যখন ইমান ও সৎকর্মের পুরস্কার হিসেবে প্রতিশ্রুত বেহেশতের দিকে যেতে থাকবেন তখন বলবেন: হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সবকিছুর উপর সর্ব শক্তিমান। (সুরা তাহরিম-৮: হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে তওবা কর-আন্তরিক তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। সেদিন আল্লাহ নবী এবং তাঁর বিশ্বাসী সহচরদেরকে অপদস্থ করবেন না। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানদিকে ছুটাছুটি করবে। তারা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সবকিছুর উপর সর্ব শক্তিমান।  )   #

পার্সটুডে/ এমএএইচ/১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ