'রাজনীতিতে সংযত ও সহিষ্ণু আচরণ প্রয়োজন'
'দেশপ্রেমিকরা সব বিদেশে থাকে'
সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা! আজ ২৫ ডিসেম্বর কথাবার্তার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ দুটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশের শিরোনাম:
- দুই পরাশক্তির পাল্টাপাল্টির রেষ এবার ঢাকা ছাড়িয়ে মস্কোয়-প্রথম আলো
- দায়িত্ব বেড়ে গেলো: কাদের-মানবজমিন
- আজ সকালে ঢাকার বাতাস সবচেয়ে দূষিত-কালের কণ্ঠ
- সাংবাদিকদের সঙ্গে অশালীন আচরণ ‘সংবাদ লিখতে ওসির অনুমতি নিতে হবে, থানা থেকে বের হয়ে যান’-ইত্তেফাক
- এতবার পার্টির দায়িত্বে থাকা ঠিক না, বিশ্বব্যাপী দুঃসময় জন্য মানা করিনি-ডেইলি স্টার
- রাজনীতিতে সংযত ও সহিষ্ণু আচরণ প্রয়োজন-যুগান্তর
- দেশপ্রেমিকরা সব বিদেশে থাকে- বাংলাদেশ প্রতিদিন
কোলকাতার শিরোনাম:
- ভারতের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে আমরা প্রস্তুত: চিনা বিদেশমন্ত্রী-আজকাল
- ‘মাস্ক পরুন, সজাগ থাকুন’, বছর শেষের ‘মন কি বাতে’ প্রধানমন্ত্রীর মুখেও করোনা সতর্কতা-সংবাদ প্রতিদিন
- ২২ বছর ধরে শুধুই হার, ভারতের বিরুদ্ধে একটিও টেস্ট জিততে পারেনি বাংলাদেশ!- আনন্দবাাজর পত্রিকা
শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু'টি খবরের বিশ্লেষণে যাচ্ছি-
কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:
১. নির্বাচন ব্যবস্থায় আওয়ামী লীগই শৃঙ্খলা এনেছে- এ দাবি করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কীভাবে দেখছেন এ বক্তব্যকে?
২. পরমাণু সমঝোতা নিয়ে চুক্তির জন্য জানালা চিরদিন খোলা থাকবে না। একথা বলেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাহলে কী পরমাণু সমঝোতা পুনর্বহালের সম্ভাবনা কমে গেল?
জনাব সিরাজুল ইসলাম আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর
দুই পরাশক্তির পাল্টাপাল্টির রেষ এবার ঢাকা ছাড়িয়ে মস্কোয়-প্রথম আলো
ঢাকায় গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি আর বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে সীমিত থাকল না। এবার তার রেষ মস্কো পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিষয় তুলে মস্কোয় বসে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা মস্কোর স্থানীয় সময় অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার নিয়মিত ব্রিফিং করেন। ব্রিফিংয়ে তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের চেষ্টা শিরোনামে বিবৃতি দেন।
তাঁর বিবৃতিতে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাজ্যের বার্ষিক মানবাধিকার-গণতন্ত্রবিষয়ক প্রতিবেদন, আফগানিস্তানে যুক্তরাজ্যের সেনাবাহিনীর অপরাধের তদন্ত, তুরস্কে খুন হওয়া রুশ রাষ্ট্রদূতের মৃত্যুবার্ষিকীসহ অন্যান্য বিষয়ও উঠে আসে। এই বিবৃতি আজ রোববার সকালে প্রচার করেছে ঢাকার রুশ দূতাবাস।
করোনার নতুন ধরন চার গুণ বেশি সংক্রামক: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর-প্রথম আলো
করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণে চীনসহ বিভিন্ন দেশে করোনা রোগী বাড়ছে। বিএফ–৭ নামের এ নতুন ধরন অমিক্রনের চেয়েও চার গুণ বেশি সংক্রামক বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ধরন কম সময়ের মধ্যে রোগীকে আক্রান্ত করে।
আজ রোববার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, চীনে বিএফ–৫–এর নতুন ধরন বিএফ–৭ শনাক্ত হয়েছে। ধরনটি অমিক্রনের চেয়ে শক্তিশালী। কম সময়ে বেশি মানুষকে এই ধরন আক্রান্ত করতে পারে। যাঁরা টিকা নেননি, তাঁদের দ্রুত টিকা নিতে হবে। ইত্তেফাক লিখেছে, করোনা সংক্রমণ: বন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং বাড়ানোর নির্দেশ।
সাংবাদিকদের সঙ্গে অশালীন আচরণ সংবাদ লিখতে ওসির অনুমতি নিতে হবে, থানা থেকে বের হয়ে যান’-ইত্তেফাক
সাংবাদিকদের সাথে অশালীন আচরণের অভিযোগ উঠেছে জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।রোববার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে বকশীগঞ্জে একটি ডাকাতির ঘটনায় বক্তব্য নিতে থানায় গেলে সাংবাদিকদের সাথে ওসি অশালীন আচরণ করেন। এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের থানা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। হঠাৎ তার এমন আচরণে হতভম্ব হয়ে পড়েন উপস্থিত সাংবাদিকরা।
ওসি তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘সংবাদ লিখতে হলে ওসির অনুমতি নিতে হবে। আমি আপনাদের সাথে কথা বলতে রাজি না। আপানারা থানা থেকে বের হয়ে যান। আপনাদের আমি কোনও বক্তব্য দেবো না। যা পারেন করেন।’
এক পর্যায়ে ওসি তরিকুল ইসলাম দেখে নেওয়ার হুমকি দেন বলে জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সভা করেছে বকশীগঞ্জে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দেওয়ানগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুুলিশ সুপার রাকিবুল হাসান রাসেল বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা শুধু সাংবাদিক কেনো সাধারণ মানুষের সাথেও অসদাচরণ করতে পারেন না। বিষয়টি আমি দেখবো।
ডেইলি স্টার পত্রিকার খবর-আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই এতবার আমার মনে হয় একটা পার্টির দায়িত্বে থাকা ঠিক না। তারপরেও যেহেতু এখন সারা বিশ্বব্যাপী একটা দুঃসময় জন্যই আমি হয়তো মানা করিনি কিন্তু আমার বয়স হয়েছে এটা মনে রাখতে হবে।
আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কমিটি গঠনের পরে আজ রোববার দুপুরে গণভবনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
দায়িত্ব বেড়ে গেলো: কাদের-মানবজমিন
তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় দায়িত্ব আরও বেড়ে গেলো বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন , এটা আমার সৌভাগ্য যে আবার আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পেয়েছি এবং এটা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত। স্বাধীনতা পর তিনবার দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি, দায়িত্ব আরও বেড়ে গেলো।তিনি বলেন, গতকালের জাতীয় সম্মেলন ছিল সুশৃঙ্খল স্বতঃস্ফূর্ত। আমাদের পার্টি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ সেটাই গতকাল আমাদের সম্মেলনে উপস্থিতিতে প্রমাণিত হয়েছে।তিনি বলেন, কাউন্সিলরদের চোখের ভাষা, মনের ভাষা তিনি বোঝেন। আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই সম্মেলনের নেতৃত্ব নির্বাচিত করেছি। পুরনোরা বেশিরভাগই পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। এদিকে আনন্দবাাজার পত্রিকায় লেখা হয়েছে, চিন ফেরত আগরার এক যুবক করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। রবিবার তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। সিল করা হয়েছে যুবকের বাড়ি। পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে তাঁকে।
রাজনীতিতে সংযত ও সহিষ্ণু আচরণ প্রয়োজন-যুগান্তর
বর্তমানে ক্রমাগত রাজনীতির বৈরিতা, বিরোধিতা ও পরস্পরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি এ দেশের জনগণকে অসহিষ্ণু, অসংযত আচরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিষয়টি একটু গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার।
প্রত্যেক ব্যক্তিই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দর্শন দ্বারা প্রভাবিত-এটা আমাদের দেশে শুধু নয়, বিশ্বজুড়ে।আমাদের একে অপরের প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে কিয়েভের বাড়ি বানানোর সময় জমি ব্যবহারের সূত্রটি খুবই প্রয়োজন; অর্থাৎ আমরা যেন অন্যের প্রতি ন্যূনতম ৬০ শতাংশ ভালো ব্যবহার করি, কথাবার্তা ও আচরণ উভয় ক্ষেত্রেই। বক্তৃতা আর কথাবার্তায় আমরা পরস্পরের প্রতি এতটাই অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছি যে, প্রায় শতভাগ বক্তার বক্তব্যজুড়ে শুধু প্রতিপক্ষকে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করছি।
একবার ভেবেও দেখি না এই অসহিষ্ণু কথাবার্তা ও তার প্রভাব আমাদের সমাজের মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষে মানুষে বিভেদের মাত্রা এতটাই বেড়ে গেছে যে, আজকাল আমরা একদল আরেক দলের সব সমাজকল্যাণমূলক এবং সমাজের প্রচলিত ধর্মীয় অনুশীলন/অনুশাসনগুলোও একসঙ্গে পালন করছি না অথবা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পালনে পিছপা হচ্ছি।
অর্থাৎ আমাদের পরস্পরের মধ্যে সহিষ্ণুতা আর বেঁচে নেই। এ কথা তো সত্য, পরমত আর নীতির প্রতি সমর্থন না থাকলেও সহিষ্ণুতা থাকতে হবে। এ সহিষ্ণুতা না থাকলে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়। তাই সমাজকে সার্থক আর অর্থবহ করতে হবে। আর রাষ্ট্রকে আরও দৃঢ় ভিত্তিস্তম্ভের ওপর দাঁড় করাতে পরস্পরের মতামতের ওপর শ্রদ্ধাবোধ ও সহিষ্ণুতা অবশ্যই থাকতে হবে।
আধুনিক মিডিয়ার যুগে আপনি মানেন আর নাই মানেন, পরমতসহিষ্ণুতা, ভালো আচরণের কোনোই বিকল্প নেই। কারণ আপনি কখন, কোথায়, কাকে কী বলেছেন, তা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে হাজারও মিডিয়ার মাধ্যমে। এক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কথা উল্লেখযোগ্য। আচার-আচরণের এমনই দুরবস্থা হয়েছে এখন যে, কেউ কেউ নিজ দলের সদস্যদেরই অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এ অকথ্য ভাষার গালাগালি অবশ্যই বর্জনীয় ও নিন্দনীয়। কারণ আপনি যে দলেরই হোন না কেন, আপনার দেওয়া গালাগালি আপনার ঘরের ছেলেমেয়েরা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দেখছেন।
আপনি যা-ই ভাবেন না কেন আর যে যুক্তিই দিন না কেন, আপনার ঘরের লোকজন আপনার সব কথাবার্তা/বক্তৃতা শুনতে চান না। আর আপনার দলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও মনে মনে ঘৃণা করেন, আপনাকে অপছন্দ করেন। দলের হাইকমান্ড নিশ্চয় বিষয়টি ভালো চোখে দেখে না।
সমাজের সব প্রতিষ্ঠানে একক আধিপত্য বিস্তারে আগ্রহী না হয়ে অধিকাংশে আধিপত্য বিস্তারে মনোযোগ দেওয়া রাজনীতিকদের ব্রত হওয়া উচিত। একটি রাষ্ট্র বা সমাজের সব মানুষ একবাক্যে সবকিছু মেনে নেবে, এটা ঠিক নয়। নিজ ও দলের মতামতকে তুলে ধরুন, গঠনমূলক সমালোচনা করুন এবং সমালোচনা মেনে নিন। আর আপনি আর আপনার দল যে সমালোচনা মেনে নেন ও গঠনমূলক সমালোচনা করেন, তার প্রমাণও দিন।
এ দেশটা আমাদের সবার, কারও একার নয়। বাস্তবতা এমন যে, ঘরে ঘরে, এলাকায় এলাকায়, সমাজ বা রাষ্ট্রে এখন প্রবল মতপার্থক্য গড়ে উঠেছে। সভা-সমাবেশ ও বক্তৃতার পর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা পরস্পরের সঙ্গে আগের মতো আর বসেন না, বসতে চান না-নেই চা খাওয়ার ও আড্ডা মারার মতো ঘটনা। ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে, পরস্পরের প্রতি প্রবল অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছি আমরা। এটা শুভ লক্ষণ নয়। জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর এ ঘোরতর দুর্বল দিকগুলোর সুযোগ নিয়ে যে কোনো অপশক্তি আমাদের আরও অসহিষ্ণু করে তুলতে পারে।
পরস্পরের প্রতি বাক্য বিনিময়ে আমাদের আরও সুন্দর, মানানসই ও শ্রদ্ধাপূর্ণ বাক্য চয়ন করা আবশ্যক। সব দল সব সময় ক্ষমতায় থাকে না-থাকার কথাও নয়। তাই আমরা কেউ যেন ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতার বাইরের দলের মত ও নীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ না হই; আর যারা ক্ষমতার বাইরে আছি, তারাও যেন ক্ষমতাসীনদের প্রতিনিয়ত একহাত নেওয়ার অজুহাতে যা ইচ্ছা তা না বলি। আমাদের মনে রাখতে হবে, দলমতনির্বিশেষে আমরা যে সমাজ বা রাষ্ট্রে বসবাস করি, তার সুষম বিকাশ, বিন্যাস ও মানবতার উৎকর্ষসাধনে আমাদের সবার চেষ্টা যেন হয় এক ও অভিন্ন।
দেশপ্রেমিকরা সব বিদেশে থাকে-বাংলাদেশ প্রতিদিন
প্রভাষ আমিনের এ কলামে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ ছড়িয়ে আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সংখ্যাটাও কম নয়- কোটির ওপরে। নানা কারণে, এমনকি অকারণেও মানুষ বিদেশে যায়। মুখে যে যাই বলুন বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে যায় মূলত ভাগ্য বদলাতে, উন্নত জীবনের আশায়। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকেই আছেন কাজের খোঁজে যান, আবার ফিরেও আসেন। অনেকে একেবারে চলে যান। অল্পকিছু আছেন যারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সমর্পণ করে নতুন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। দেশের নিম্নবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ জমিজমা বিক্রি করে বিদেশে যান ভাগ্য বদলানোর আশায়। তারা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠান। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে অর্থনীতি সচল থাকে, রিজার্ভ বাড়ে। তবে উচ্চমধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তের পরিবারের সদস্যরা উন্নত জীবনের আশায় উন্নত বিশ্বে যান এবং তারা দেশের সব সম্পদ বিক্রি করে সেই অর্থ পাচার করে কানাডা-আমেরিকায় সম্পদ কেনেন। যারা বাংলাদেশের জাতীয়তা সমর্পণ করে ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট গ্রহণ করেন, সেই উদ্বাস্তুরা আজকের লেখার বিষয় নয়। যারা কারণে, অকারণে, বাধ্য হয়ে, বাধ্য হওয়ার ভান করে স্থায়ী বা অস্থায়ী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করেন তাদের নিয়েই আজকের লেখা। অনেকেই প্রবাসীদের, বিশেষ করে যারা স্থায়ীভাবে বিদেশে বসবাস করেন তাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু আমি কোনোভাবেই এ প্রশ্নের সঙ্গে একমত নই। বরং আমার অভিজ্ঞতা ভিন্ন। দেশপ্রেমের পরীক্ষায় পাস করতে ১০০ পেতে হয়, ৯৯ পেলেও অকৃতকার্য। দেশপ্রেম আসলে একটা স্বতঃস্ফূর্ত বিষয়। আমরা এই যে বেঁচে আছি, শ্বাস নিচ্ছি; আমরা কিন্তু বাতাসের গুরুত্বটা টের পাচ্ছি না। কিন্তু যখনই শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তখনই একটু অক্সিজেনের জন্য হাঁসফাঁস করি। দেশপ্রেমটাও তেমন। আমরা দেশে থাকি। প্রতিদিন চারপাশের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, লুটপাট দেখে ক্ষুব্ধ হই; ভোটের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলি। তবুও এ দেশটাই আমাদের প্রিয়। এত শঠতা, এত যে ব্যথা; তবু যেন তা মধুতে মাখা।
বলছিলাম যারা কারণে বা অকারণে, বাধ্য হয়ে বা বাধ্য হওয়ার ভান করে, স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বিদেশে থাকছেন; তাদের কথা। ব্যক্তিগতভাবে মিশে, কথা বলে দেখেছি; তাদের প্রায় সবাই অন্তরে বাংলাদেশকে ধারণ করেন। সারাক্ষণ বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবেন। এমনকি আমরা যারা দেশে থাকি তাদের চেয়েও বেশি দেশের খবর রাখেন। কথা বলে মনে হয়েছে দেশে থাকতে না পারার বেদনা সারাক্ষণ পোড়ায় তাদের। সারাক্ষণ দেশ নিয়ে ভাবনাচিন্তায় দেশে থাকতে না পারার বেদনার ক্ষত ঢাকতে চান তারা। তাদের শরীরটা থাকে নিউইয়র্কে, হৃদয়টা ঢাকায়। প্রবাসী ভাই-বোনদের দেশের প্রতি এই টান, এই দরদ আমাকে মুগ্ধ করে, অভিভূত করে। আমি নিজের দেশপ্রেমটা তাদের কাছ থেকে ঝালাই করে নেই। আসলে দূরে গেলেই টানটা টের পাওয়া যায়। দেশের বাইরে কোথাও গেলে দুই/তিন দিন পর থেকেই অন্তর পোড়াতে থাকে কখন ফিরব। ঢাকায় নামার পর বিমানবন্দর থেকেই নানা অনিয়ম, দুর্ভোগ, যানজট, কালো ধোঁয়ায় আবার বিরক্ত হই। তবু বুক ভরে শ্বাস নেই চেনা বাতাসে, আহা প্রিয় বাংলাদেশ।
বলছিলাম যারা বাধ্য হয়ে বা বাধ্য হওয়ার ভান করে দেশের বাইরে গেছেন তাদের কথা। ইদানীং দেশের বাইরে থাকা কয়েকজনের কথা শুনে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ আর বাসযোগ্য নেই। এখানে নিরাপত্তা নেই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, গণতন্ত্র নেই, ভোটাধিকার নেই, ফ্যাসিবাদের কবলে বাংলাদেশ।
এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:
একে একে হাত ছাড়ছেন অনুগামীরা, কংগ্রেসত্যাগী আজাদ এখন কাশ্মীরে ‘নিঃসঙ্গ’-সংবাদ প্রতিদিনের এ খবরে লেখা হয়েছে, গুলাম নবি আজাদ (Ghulam Nabi Azad)। মাস চারেক আগেও জাতীয় রাজনীতির প্রথম সারির মুখ ছিলেন। অথচ এই চারমাসের ব্যবধানে তাঁর নাম প্রায় ভুলতে বসেছে রাজনৈতিক মহল। জাতীয় রাজনীতির আঙিনায় তো বটেই, কাশ্মীরের রাজনীতিতেও ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছেন ‘আজাদ সাহাব।’ একে একে তাঁর সঙ্গ ছাড়ছেন অনুগামীরাও। স্রেফ গত এক সপ্তাহে আজাদের নতুন দল ছেড়ে কংগ্রেসে ফেরার প্রস্তুতি শুরু করেছেন শতাধিক নেতা। তাঁরা প্রত্যেকেই বলছেন আজাদের সঙ্গে দল ছাড়াটা তাঁদের মারাত্মক ভুল ছিল।
আগস্টে কংগ্রেস (Congress) নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক চিঠি লিখে দল ছাড়ান আজাদ। তারপর কাশ্মীরে নিজের আলাদা রাজনৈতিক দল গড়েন তিনি। নাম দিয়েছিলেন ডেমোক্র্যাটিক আজাদ পার্টি (DAP)। জম্মু এবং কাশ্মীরের বেশ কিছু কংগ্রেস নেতা যোগ দিয়েছিলেন আজাদের সঙ্গে। নিজে কাশ্মীর ঘুরে ঘুরে জনসমর্থন জোগাড় করার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু তাতে বিশেষ সাফল্য আসেনি। আজাদ এখন নিঃসঙ্গ। দলের অন্দরে তাঁর বিরুদ্ধে বাড়ছে বিদ্রোহীর সংখ্যা। একে একে দল ছাড়ছেন অনুগামীরাও।
ছর শেষে ফের আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনা (Coronavirus)। লকডাউনের আতঙ্কে ভুগছে সাধারণ মানুষ। এর মাঝেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) বছরের শেষ ‘মন কি বাত’-এ অনুষ্ঠানেও উঠে এল করোনার কথা। খোদ প্রধানমন্ত্রী আমজনতাকে মাস্ক পরতে, নিয়মিত হ্যান্ড স্যানেটাইজার ব্যবহার করে হাত ধোওয়ার পরামর্শ দিলেন।রবিবার ছিল প্রধানমন্ত্রীর ৯৬তম মন কি বাত (Mann ki Baat)। বছর শেষের মন কি বাতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী। মোদির কথায়, “বিশ্বের বেশকিছু দেশে করোনা বাড়়ছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পরুন, হাত পরিস্কার করুন।” তাঁর আরও সংযোজন, “করোনার বিরুদ্ধে মোকাবিলার জন্য আয়ুর্বেদে বিশ্বাস রাখুন। উৎসবে আনন্দে মাতুন কিন্তু সতর্ক থাকুন।” উল্লেখ্য, ওমিক্রনের নয়া প্রজাতি BF.7-এর সংক্রমণ নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। প্রথমবারের মতো এবারও আতঙ্কের উৎস সেই চিন (China)। সেখানে দিনে লাখো মানুষের সংক্রমণের তথ্য মিলছে।
ভারতের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে আমরা প্রস্তুত: চিনা বিদেশমন্ত্রী-আজকাল
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের জোরদার উন্নতির জন্য কাজ করতে চিন প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনি বলেন, চিন সম্পর্কের স্থিতিশীল ও সুষ্ঠু বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারতের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে চিনা বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘চিন ও ভারত কূটনৈতিক এবং সামরিক চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রেখেছে। উভয় দেশই সীমান্ত এলাকায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা চিন-ভারত সম্পর্কের স্থিতিশীলতা ও দৃঢ়তার জন্য ভারতের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত।’
প্রসঙ্গত, লাদাখের প্রত্যন্ত গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় ও চিনা সৈন্যদের সংঘর্ষের আড়াই বছর পর আজও দুটি দেশ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন রেখেছে। এরই মাঝে গত ৯ ডিসেম্বর অরুণাচলের তাওয়াংয়ে দুই দেশের সেনারা সংঘাতে জড়ান। এই আবহে চিনা বিদেশমন্ত্রীর এই মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৫