জানুয়ারি ০৮, ২০২৩ ১৮:৪৬ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহ হলেন এমন এক সত্ত্বা যিনি ত্রুটিহীন, তুলনাহীন, শরিকহীন ও পবিত্র। মহান আল্লাহর মহত্ত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও গৌরব-অহংকার –এসবই নজিরবিহীন।

মহান আল্লাহ হলেন এমন এক সত্ত্বা যিনি ত্রুটিহীন, তুলনাহীন, শরিকহীন ও পবিত্র। মহান আল্লাহর মহত্ত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও গৌরব-অহংকার –এসবই নজিরবিহীন। মহান আল্লাহর সত্ত্বাকে বোঝা অসম্ভব তবে তাঁর গুণবাচক নামগুলো তাঁর মহত্ত্ব সম্পর্কে কিছু ধারণা বা পরিচিতি তুলে ধরে। আসলে সব সুন্দর নাম কেবলই মহান আল্লাহর। মানুষ দুনিয়ার বুকে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি। তবে আল্লাহর যোগ্য প্রতিনিধি হতে হলে তাঁর নামগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা রাখতে হবে। এইসব পবিত্র নাম কেবল একটি শব্দ নয় বরং ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। বিভিন্ন সময়ে বিচিত্রময় এইসব নামের প্রকাশ ও বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে। 

আল্লাহর আসমাউল হুসনার তালিকাভুক্ত আরও এক নাম হাদি। হাদি শব্দের অর্থ যিনি সত্যকে দেখান বা সুপথ প্রদর্শনকারী। সুরা আসরার ৯৭ নম্বর আয়াতের একাংশে মহান আল্লাহ বলেছেন: আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, সেই তো সঠিক পথ প্রাপ্ত এবং যাকে পথ ভ্রষ্ট করেন, তাদের জন্যে আপনি আল্লাহ ছাড়া কোন সাহায্যকারী পাবেন না।

মহান আল্লাহ এমন এক হাদি যিনি সব সৃষ্টিকেই পথ দেখান যাতে তারা পূর্ণতা পেতে পারে। মহান আল্লাহ সুরা ত্বাহার ৫০ নম্বর আয়াতে বলছেন: মূসা বললেনঃ আমাদের পালনকর্তা তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার যোগ্য আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর তাদেরকে পূর্ণতার দিকে পথপ্রদর্শন করেছেন। -এ ধরনের হেদায়াত হচ্ছে সর্বজনীন ও সব কিছুর প্রকৃতির মধ্যেই তা দিয়ে দিয়েছেন মহান আল্লাহ। যে নবজাতক শিশু মাত্র জন্ম নিয়েছে সেও মহান আল্লাহর দেয়া প্রকৃতিগত হেদায়াতের কারণে মায়ের স্তন পান করতে শিখে! অন্যদিকে মহান আল্লাহ নবী-রাসুল পাঠিয়ে ও মহান ইমামদের মাধ্যমে এবং বিবেক বুদ্ধি দানের মাধ্যমে মানুষকে সত্য-মিথ্যা, উপযোগী ও অনুপযোগী বিষয় সম্পর্কে পথ দেখান। মানুষ ভুল পথ বেছে নেয়ার স্বাধীনতা পাওয়া সত্ত্বেও যদি সঠিক পথ আঁকড়ে ধরে তাহলেই মহান আল্লাহ তাকে পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ দেন। নবী-রাসুলগণ ও ইমামগণ ব্যক্তি আর সমাজকে সংশোধনের পথ দেখান। তাঁরা মানুষকে আল্লাহর আনুগত্যের, আল্লাহর পথে দান করার, ন্যায় বিচার করার, বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও স্নেহশীল হওয়ার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার ও মানুষের পারস্পরিক অধিকার রক্ষার পথ দেখানোসহ নানা জরুরি বিষয়ে পথ দেখান। 

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবন-বিধানের হেদায়াত পেতে হলে তার প্রাথমিক পরিবেশ মানুষকেই তৈরি করতে হয় এবং খুলে দিতে হয় হৃদয়ের কান ও চোখ। অন্য কথায় যে সত্য-সন্ধানী হয় না মহান আল্লাহ তাকে সত্যের পথ দেখান না। 

মানুষের গড়া মতাদর্শ নয়, 'কেবল মহান আল্লাহর দেখানো পথই হল সুপথ'। (সুরা বাকারা-১২০)। নবী-রাসুল, ইমাম ও অলি-আওলিয়া যে পথ দেখান তাও আল্লাহর পক্ষ হতেই দেখান। মহান আল্লাহ সুরা সাজদার ২৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন: 

তাঁরা সবর করত বিধায় আমি তাঁদের মধ্য থেকে নেতা বা ইমাম মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার আদেশে মানুষকে পথ প্রদর্শন করত। তাঁরা আমার আয়াতসমূহে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল।– তাই মহানবী-সা. নিজেও হলেন খোদায়ি হেদায়াতের মাধ্যম। সুরা কাসাস-এর ৫৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: হে নবী! আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আল্লাহ তা’আলাই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই ভাল জানেন।

আল হাদি 

 

মানুষের মধ্যে আমরা যদি কাউকে তথা নবী-রাসুল ও ইমামকে বলি হাদি, আলিম, ক্বাদির, কারিম, জাওয়াদ.. ইত্যাদি তা এই অর্থে যে তাঁরা হলেন মহান আল্লাহর এইসব নামের প্রকাশ মাত্র। 

পবিত্র কুরআন মানুষের হেদায়াত বা সুপথ লাভ ও তাদের সৌভাগ্য অর্জনের জন্য নাজিল হয়েছে। কিন্তু মানুষ কুরআনের নির্দেশ তথা মহান আল্লাহর নির্দেশ মান্য করতেও পারে আবার অমান্য করার স্বাধীনতাও তার রয়েছে। পবিত্র কুরআনের ভাষায় কুরআন কেবল তাদেরকেই পথ দেখায় যারা আল্লাহকে ভয় করে। (সুরা বাকারা, ২) পবিত্র কুরআন এমন এক আসমানী গ্রন্থ যাতে কোনো ভুল বা সন্দেহ পর্যন্ত নেই। যারা খোদাভীরু তারা এমনিতেই সুপথ পায় উপরন্তু খোদাভিরুতার পুরস্কার হিসেবে তারা পবিত্র কুরআনের মাধ্যমেও বর্ধিত হেদায়াত বা সুপথ পান। আর খোদাভীরু বা মুত্তাকি হওয়ার শর্ত হল অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস, নামাজ কায়েম করা, আল্লাহর দেয়া রিজিক থেকে দান করা, কুরআন ও অতীতের খোদায়ি র্ধ্মগ্রন্থগুলোর প্রতি বিশ্বাস রাখা এবং পরকাল ও বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখা। এমন ব্যক্তিরাই আল্লাহর পক্ষ থেকে সুপথ পায় এবং তাঁরাই সফল বলে পবিত্র কুরআন উল্লেখ করেছে। (সুরা বাকারার প্রথমদিকের কয়েকটি আয়াত দ্র.)

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন তিনি যাকে ইচ্ছা পথ দেখান ও যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত বা গুমরাহ করেন। (বাকারা) - মনে রাখতে হবে যে, এখানে 'বিভ্রান্ত' করা বলতে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও পথ-নির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে। আর এই বঞ্চনাও এমন কিছু বাধার কারণে ঘটে থাকে যা মানুষ নিজেই ডেকে আনে নানা ধরনের অন্যায়, পাপ কাজ ও বিচ্যুতির কারণে। এইসব বাধা সৃষ্টি হতে না দিলে মানুষ অবশ্যই আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ার অধিকারী হবে। 

যে বিশ্বাসীদের অন্তরে মহান আল্লাহর হাদি নামের আলোর প্রতিফলন ঘটে তারা কেবল আল্লাহর কাছেই সুপথ চান ও কেবল খোদায়ি পথ-নির্দেশনাই তাঁরা গ্রহণ করেন। তাঁরা মহান আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে খোদায়ি হেদায়াত লাভের পথ প্রশস্ত করেন এবং এর ফলে তাঁরা উত্তরোত্তর আরও বেশি হেদায়াত, খোদাভীতি ও আল্লাহর অনুগ্রহ পেতে থাকেন।

অন্যদিকে এ ধরনের বিশ্বাসী বা মুমিন ব্যক্তিরা নিজের সাধ্য ও যোগ্যতার আলোকে অন্যদেরও সুপথ দেখাতে থাকেন এবং নবী-রাসুলদের অনুকরণে যৌক্তিক, প্রজ্ঞাময়, প্রামাণ্য, সুন্দর ও সচেতনতামূলক আকর্ষণীয় বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর দিকে চলার আহ্বান জানান। #

পার্সটুডে/ এমএএইচ/০৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ