জানুয়ারি ১৩, ২০২৩ ১৬:৪১ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যকথার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। ভিটামিন ডি এর ঘাটতির ফলে যেসব রোগ্যব্যাধী হয় তা এবং করণীয় নিয়ে আজ আমরা কথা বলব চতুর্থ পর্বের আলোচনায়।

আর এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাদের সঙ্গে অতিথি হিসেবে আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বা বিএসএমএমইউ এর এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ এর সহযোগী অধ্যাপাক ডা.শাহজাদা সেলিম। বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক টেক্সিলা আমেরিকান ইউনিভার্সিটি এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক।

সাক্ষাৎকারে যাওয়ার আগে ভিটামিন ডি সম্পর্কে দুটো কথা বলে রাখি। মানুষের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদানের মধ্যে অন্যতম হলো ভিটামিন 'ডি'। ভিটামিন 'ডি' অস্থি ও দাঁতের কাঠামো গঠন করে। অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়ায়, রক্ত প্রবাহে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ভিটামিন ডি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এর অভাবে নানাধরণের রোগ হতে পারে এবং তা কখনও কখনও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

অধ্যাপক ডা.শাহজাদা সেলিম, রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম, চতুর্থ পর্বের আলোচনার শুরুতে  জানতে চাইব শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এর যে অভাবে কি ধরনের সমস্যা হতে পারে-মানে কি রোগ হতে পারে?

রিকেট রোগ

অধ্যাপক ডা.শাহজাদা সেলিম: এই রোগটিকে রিকেট বলে। ভিটামিন ডি'র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো-এরমধ্যে যে ক্যালসিয়াম থাকে সেটিকে হাড়ের ভেতর নিয়ে যায়। আর হাড়ের যে গাঠনিক ভিত্তি- ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট-এই দুটোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।

যখন একটি শিশুর বয়স এক বা দেড় বছর হয় এই সময়টাতে তার ভিটামিন ডি'র ঘাটতি থাকতে পারে। হাড়ের ভেতরের ফাউন্ডেশন সৃষ্টি করতে বাধা তৈরি করে। সেক্ষেত্রে হাতের এবং পায়ের যে লম্বা হাড়গুলো থাকে-তা দুর্বল হয়ে বেঁকে  যায়। আর এই রোগটিকে বলে রিকেট। তবে বর্তমানে রিকেট রোগ পৃথিবীতে থেকে খুম কমে যাচেছ। এখন পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে- শিশুরা মায়ের বুকের দুধের বাইরে যে দুধটি খাবে সেখানে ভিটামিন ডি ফোরটি ফাইড করে দেয়া হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে এখন আর রিকেট রোগ নেই বললেই চলে। বাংলাদেশেও কিন্তু ২০/৩০ বছরে রিকেট রোগী আমরা খুব বেশি দেখিনি। কারণ এখন মানুষ অনেকটা সচেতন হয়েছে। তবে যদি কারও হয়ে থাকে তাহলে তার কাঠামোগত যে অস্বাভাবিকতা সেটা সারা জীবন থেকে যাবে। চিকিৎসা করলে কিছুটা উন্নতি হলেও ঘাটতি থেকে যাবে।

হাড়ক্ষয় রোগ

বয়স্কদের ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন যদি ভিটামিন ডি'র ঘাটতি থাকে সেক্ষেত্রে তার হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। একে হাড়ক্ষয় রোগ বলে। ফলে হাড়ক্ষয় রোগ বা Osteoporosis হতে পারে ভিটামিন ডি এর অভাবে। অস্টিওপোরোসিস বা অস্টিওপোরেসিস হল ক্যালসিয়াম এর অভাব জনিত একটা রোগ। অস্থির বৃদ্ধির জন্য চাই ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার। বয়স্ক পুরুষ ও মহিলাদের সাধারণত এ রোগটা হয়ে থাকে। যেসব বয়স্ক পুরুষ বহুদিন যাবত স্টেরয়েড ঔষুধ সেবন করেন তাদের এবং মহিলাদের মেনোপস হবার পর এই রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়া যারা অলস জীবন যাপন করে, পরিশ্রম কম করে তাদের এই রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে। আর যারা অনেক দিন ধরে আর্থ্রাইটিসে ভুগে তাদের ও এই রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অস্টিওপরোসিস এমন একটি রোগ যেখানে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং হাড় ভাঙা র ঝুঁকি বেড়ে যায়।

রেডিও তেহরান: আচ্ছা অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম, অধ্যাপক ডা.শাহজাদা সেলিম আপনি বলছিলেন যে, ভিটামিন ডি এর অভাবে মারাত্মক মারাত্মক রোগ হতে পারে। এমনকি কোনো কোনো রোগকে ঝুঁকিপূর্ণও বলা যায়। তো ভিটামিন ডি কম যেমন হতে পারে এর আধিক্য অর্থাৎ বেশি কি হতে পারে? আর হলে কি ধরনের সমস্যা হয়?

অধ্যাপক ডা.শাহজাদা সেলিম: খুবই লজিক্যাল একটি প্রশ্ন করেছেন। ভিটামিন ডি এর ঘাটতি যেহেতু হতে পারে। সেক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্তও হতে পারে। আমরা আগে বলেছি ভিটামিন ডি খুব ধীরে ধীরে কাজ করে। ফলে এই বিষয়টি দীঘদিন পর প্রকাশ পাবে। Vitamin D intoxication যেটাকে বলে বাস্তব ক্ষেত্রে সেটি খুব বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ধরুণ কোনো একটি রোগীকে ভিটামিন ডি খেতে দিলাম। যদি তার ভিটামিন ডি এর মাত্রা কম থাকে তাহলে কিন্তু ভালো হবে।

তবে যেহেতু ভিটামিন ডি এর পরীক্ষাটি একটু ব্যয়বহুল এবং দুই থেকে তিনটি মেথডে করা হয়।

রেডিও তেহরান: আচ্ছা অধ্যাপক ডা. শাহাজাদা সেলিম- ভিটামিন ডি ডিফিসিয়েন্সি বা ঘাটতি আছে এই পরীক্ষা করার জন্য রোগীরা কার কাছে যাবে-কোন ডাক্তারের কাছে যাবে?

এন্ডোক্রাইনোলজি এবং মেটাবলিজম(Endocrinology and Metabolism

অধ্যাপক ডা.শাহজাদা সেলিম: দেখুন এই ভিটামিন ডি ঘাটতির বিষয়টি একটি মেটাবলিক ডিসঅর্ডার। এন্ডোক্রাইনোলজি এবং মেটাবলিজম(Endocrinology and Metabolism) এ দুটো একসাথে কাজ করে। যেমন ধরুন একজন রোগীর বিষন্নতা আছে। সেক্ষেত্রে তিনি কিন্তু একজন সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে যাবেন। আমরা এখন বাংলাদেশে যেটা করছি সেটি হচ্ছে বিভিন্ন গ্রুপকে নিয়ে একসাথে কাজ করছি। অন্যদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ফলে শুধুমাত্র এই একটি কারণে তাকে অন্য কোনো চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। আবার কার্ডিওলোজির চিকিৎসকদের সাথেও কিন্তু আমাদের একটা গভীর সম্পর্ক আছে। প্রশিক্ষণের সাথে সাথে কারও ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন হলে সেটি দেবার পদ্ধতিটা আমরা তাদের শিখিয়ে দিচ্ছি। রোগ শনাক্তকরণের পদ্ধতিটাও শিখিয়ে দিচ্ছি। যাতে সব গ্রুপই ভিটামিন ডি এর বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে পারে। অন্য চিকিৎসকের কাছে রেফার করার দরকার হচ্ছে না। যদি সেটা করা হতো রোগীর জন্য বাড়তি সময় ও অর্থব্যয়ের বিষয়টি যোগ হবে। মোটামুটিভাবে এ বিষয়টি নিয়ে আমরা সবাই মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করছি ফলে রোগীরা খুব বেশি ঝামেলায় পড়ছে না।

রেডিও তেহরান: অনুষঙ্গ ধরেই জানতে চাইছি- ভিটামিনের অভাবজনিত চিকিৎসা, পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যয় সম্পর্কে আপনি বলুন।

অধ্যাপক ডা.শাহজাদা সেলিম: ভিটামিন ডি টেস্ট করার পদ্ধতিটি আমাদের দেশে অনেক দিন থেকে আছে তেমনটি নয়। উন্নত দেশগুলোতে অনেক আগে থেকেই আছে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষাটি সব দেশেই ব্যয়বহুল।

তো অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম, ভিটামিন ডি নিয়ে সৃষ্ট রোগ সম্পর্কিত আলোচনার চতুর্থ পর্বে রেডিও তেহরানকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

অধ্যাপক ডা.শাহজাদা সেলিম: আপনাকেও ধন্যবাদ।#

সাক্ষাৎকার গ্রহণ, উপস্থাপনা ও অনুষ্ঠানটি নির্মাণ করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৩

ট্যাগ