ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩ ২১:৩৯ Asia/Dhaka

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসির সাম্প্রতিককালে তিন দিনব্যাপী চীন সফর ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী। চীন-ইরান সহযোগিতা শক্তিশালী হলে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট সমাধানে দেশ দুটি গঠনমূলক কার্যকর ভূমিকাও রাখতে পারবে বলে মনে করেন ইরান প্রবাসী বাংলাদেশি বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, গবেষক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার মো.মুনীর হুসাইন খান। রেডিও তেহরানের আলাপনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, পাশ্চাত্য ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা  মোকাবেলা করে ইরান টিকে আছে। অত্র অঞ্চল  ও বিশ্বে এক নয়া শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আর এ কারণেই পাশ্চাত্য বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও তাদের আধিপত্য মোকাবেলা করার জন্য রাশিয়া ও চীন ইরানকে সহায়ক ও বিশ্বস্ত অংশীদার বলে মনে করে।

পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। এটি প্রযোজনা ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব মো. মুনীর হুসাইন খান রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

মুনীর হুসাইন খান: আপনাকেও ধন্যবাদ।

রেডিও তেহরান: ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি মঙ্গলবার থেকে তিন দিনব্যাপী চীন সফর করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে- তার এই সফরের বিশেষ গুরুত্ব কী?

প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসির চীন সফর

মো. মুনীর হুসাইন খান: ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসির  সাম্প্রতিককালে তিন দিনব্যাপী চীন সফরের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। এটি ছিল একটি যুগান্তকারী সফর। কারণ এই সফরের মধ্য দিয়ে ইরান ও চীনের মধ্যকার কৌশলগত দীর্ঘ ২৫ বছর মেয়াদি সহযোগিতামূলক চুক্তি বাস্তবায়নের এক মহা সুযোগ চলে এসেছে। আর এ সুযোগ বাস্তবাযিত হলে ইরান ও চীন উভয়ই বিভিন্নভাবে উপকৃত হবে যা পশ্চিমারা বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় না। কারণ পশ্চিমারা ইরান রাশিয়া ও চীনকে সীমাবদ্ধ করে রাখতে চায়। যেকোনো অজুহাতে এই তিন দেশের ওপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। এ সফরের মধ্য দিয়ে এ ধরনের চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরান ও চীনের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত হবে এবং অভিজ্ঞতার আদান প্রদানও ঘটবে। আর্থ-সামাজিক,সাংস্কৃতিক , নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষামূলক উন্নয়ন সাধিত হবে। পশ্চিমারা চায় ইরান-চীনের মতো বিভিন্ন দেশের মধ্যকার পারস্পরিক সহযোগীতার বিস্তার ও প্রসার না ঘটুক। এ ধরনের পারস্পরিক সহযোগীতার ক্ষেত্র প্রস্তুত হলে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ বিশেষ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ একা ও কোণঠাসা হয়ে পড়বে। আসলে প্রেসিডেন্ট রায়িসির চীন সফর ইরানকে একা একঘরে ও কোণঠাসা করে রাখার মার্কিন পরিকল্পনার ওপর মারাত্মক আঘাত বলেই আমি মনে করি।

রেডিও তেহরান: সফরের প্রথম দিনেই চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট রায়িসির বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক ও সহযোগিতা শক্তিশালী হলে তা আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কিভাবে এই সহায়ক ভূমিকা পালন করবে- বিষয়টি আপনি একটু ব্যাখ্যা করবেন?

মো.মুনীর হুসাইন খান: দেখুন ইরানসহ পশ্চিম এশিয়ার নিরাপত্তার অবস্থা আরও ভালো হবে। পশ্চিমাদের উসকানিতে যে সন্ত্রাসবাদ পশ্চিম এশিয়ায় স্থিতিশীলতায় ব্যঘাত ঘটায় তা অনেকাংশ প্রশমিত হয়ে ইরানসহ গোটা পশ্চিম এশিয়ায় নিরাপত্তামূলক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জোরদার হবে বলে আমি আশা করি।

দেখুন, মধ্যপ্রাচ্য হচ্ছে পৃথিবীর প্রাণকেন্দ্র স্বরূপ। এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও নিরাপত্তাকে বলা যায় বিশ্বের স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা। গুটিকয়েক সাম্রাজ্যবাদী দেশ এই অঞ্চল এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সংকট তৈরি করে তা থেকে বিস্তর ফায়তা লুটে নেয়। আসলে এ অঞ্চলে সংকট তৈরি করাতেই তাদের স্বার্থ নিহিত রয়েছে। তাই ইরান-চীন সম্পর্ক ও সহযোগিতা শক্তিশালী হলে পশ্চিম এশিয়া থেকে সন্ত্রাসবাদ বিলুপ্ত হবার পথ সুগম হবে। ফলে এ অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসলে সমগ্র বিশ্ব নিরাপদ ও স্থিতিশীল হবে। যদিও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তা কখনই চাইবে না। চীন-ইরান সহযোগিতা শক্তিশালী হলে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট সমাধানে দেশ দুটি গঠনমূলক কার্যকর ভূমিকাও রাখতে পারবে।

রেডিও তেহরান: দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠকে ২৫ বছর মেয়াদী কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এই কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি বাস্তবায়ন হলে তাতে ইরান কিভাবে লাভবান হতে পারে?

মো. মুনীর হুসাইন খান: দেখুন, দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠকে ২৫ বছর মেয়াদী কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে যা আপনি বললেন। এই কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি বাস্তবায়িত হলে ইরান ও চীন উভয় দেশই লাভবান হবে। আমরা এখানে ইরানের লাভের দিকটা নিয়ে আলোচনা করব। প্রথম অর্থনৈতিক লাভ।  এরফলে ইরানে শিল্প ও অর্থনৈতিক সেক্টরে চীনের বিনিয়োগ বাড়বে। চীন-ইরান বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। কারিগরি, শিক্ষা, পর্যটন, পরিবেশ সুরক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ-ত্রাণ, সংস্কৃতি ও খেলাধুলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক সহযোগিতা হবে দুইদেশের মধ্যে। কারণ এসব বিষয়ে দুদেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরফলে মার্কিন ও পশ্চিমা আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আরো খর্ব ও অকার্যকার হয়ে পড়বে। রাজনৈতিক নিরাপত্তা  ও কৌশলগত লাভ আছে এই সফরে। বিশ্ব এবং অত্র অঞ্চলে ইরানের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব আরও শক্তিশালী হবে পশ্চিমারা ইরানের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা ও কৌশলগত সমস্যা ও সংকট তৈরি করে সেগুলোর প্রশমনে ইরান আরও সুসংহত হবে ও বলিষ্ট পদক্ষেপ নিতে পারবে।

রেডিও তেহরান: রাশিয়ার মধ্যকার চলমান সংঘাতের মধ্যে ইরানের প্রেসিডেন্ট চীন সফর করছেন। পাশ্চাত্যের দেশগুলো এই সফরের ওপর নজর রাখছে। পাশ্চাত্যের এই অবস্থান কেন?

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ

মো.মুনীর হুসাইন খান: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা সৃষ্ট রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের মধ্যেই ইরানের প্রেসিডেন্ট রায়িসি ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী চীন সফর করলেন। এই সংকটের আগেই ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে নিরাপত্তা, ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিদ্যমান যেমন আছে একইভাবে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে ২৫ বছরের কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে এই সংকটের আগে। আর সব বিবেচনায় বলা যায় ইরান পশ্চিম এশিয়ার একটি শক্তিশালী দেশ। ইরান পাশ্চাত্য ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা  মোকাবেলা করে টিকে আছে। অত্র অঞ্চল  ও বিশ্বে এক নয়া শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আর এ কারণেই পাশ্চাত্য বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও তাদের আধিপত্য মোকাবেলা করার জন্য রাশিয়া ও চীন ইরানকে সহায়ক ও বিশ্বস্ত অংশীদার বলে মনে করে। তাই ইউক্রেন সংকটের আগে ইরান-রাশিয়া ও চীন নিয়ে গঠিত পশ্চিমাবিরোধী কৌশলগত নিরাপত্তা সহযোগিতামূলক অক্ষ যে তৈরি হচ্ছে এটি তারা ঠিকই টের পেয়েছিল। আর ইরানের প্রেসিডেন্ট রায়িসির এই সফরের পর ইরান-চীনের মধ্যকার ২৫ বছর মেয়াদী কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি বাস্তবায়নের পাশাপাশি ইরান, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদবিরোধী কৌশলগত ও নিরাপত্তামূলক সহযোগিতা আরও শক্তিশালী হবে বলেই রায়িসির এই সফরের শ্যেন দৃষ্টি রেখেছে।

রেডিও তেহরান: তো মো. মুনীর হুসাইন খান ইরানের সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসির চীন সফরের গুরুত্ব নিয়ে রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে কথা বলার জন্য আপনাকে আবারও অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

মো.মুনীর হুসাইন খান: আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেইসাথে শ্রোতিমন্ডলিকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ