মার্চ ২৫, ২০২৩ ১৪:৫৬ Asia/Dhaka

শ্রোতাবন্ধুরা! ফার্সি নববর্ষ নওরোজের শুভেচ্ছা নিন। আশা করি আপনারা যে যেখানেই আছেন ভালো এবং সুস্থ আছেন। নওরোজ উপলক্ষে আমাদের আজকের আয়োজন একটু ভিন্ন রকমের। সেজন্য আর প্রচলিত ভূমিকায় যাচ্ছি না। আপনারা অনুষ্ঠান শুনলেই বুঝতে পারবেন সব।

[ বিশেষ অনুষ্ঠান: নওরোজ। রচনা ও নির্দেশনা: নাসির মাহমুদ

অংশগ্রহণে: আখতার জাহান, গাজী আব্দুর রশীদ, আশরাফুর রহমান ও নাসির মাহমুদ ]

***

নাসির: আবার এলো যে সন্ধ্যা …. হো হো…. হো হো হো…

রাশিদ: চলো না ঘুরে আসি অজানাতে ….না না --- ভাই, গানটা এখন কইলাম একটু অন্যভাবে গাইতে অইবো ..

নাসির: অন্যভাবে মানেটা কী? খুইলা কন তো দেহি। আর কেনই বা অন্যভাবে গাইতে অইবো?

রাশিদ: আহ হা … ঈদ এসেছে না, ঈদ বলে কতা?

নাসির: ঈদ?

রাশিদ: হ্যাঁ, আরে নাসির ভাই! ঈ..দ, ঈদে নওরোজ …

নাসির. ও …আইচ্ছা … ইরানি নববর্ষের ঈদ তো, তাই না?

রাশিদ. আবার জিগায় ..

নাসির. তাইলে গানডা কেমনে গাইতে অইবো?

রাশিদ. এইভাবে …

আ-বার এসেছে নওরোজ

স-বা… র জীবনে

রাশিদ. আরে ধরেন না, একলগে ধরেন, একলগে গাই …

-এই তো মিলি আপা, আশরাফ ভাইও চইলা আইছে। আশরাফ ভাই,আপা আপনারাও আসেন গান গাই!

৩. মিলি: মানে কী? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না …

নাসির: আমরা নববর্ষের গান গাচ্ছি, আপনারাও আমগো লগে গাইবেন …

৩. ও .. তাই, আমি তো গান পারি না ভাই

আশরাফ: এই ন্যাকামো শুরু হইছে

রাশিদ. ঠিকই পারবেন .. আমরা যহন গামু না! সুর আপনার কণ্ঠে হড়হড় কইরা চইলা আইবো দেইখেন। আশরাফ ভাই ধরেন।

নাসির+ রাশিদ: আ-বার এসেছে নওরোজ

স-বা… র জীবনে (২ বার)

চলো না ঘুরে আসি সবুজ বনে

যেখানে পাখি ডাকে আ-ন-মনে …

আ-বার এসেছে নওরোজ

স-বা… র জীবনে (২ বার)

৩. মূল গানটা যেন কার?

আশরাফ: আ রে এই গান মরহুম লাকি আকন্দের না? এই প্রশ্নের জন্য আপনার জরিমানা হওয়া উচিত …

রাশিদ: আল্লাহ লাকি আকন্দের বেহেশত নসিব করুন …

৩. আচ্ছা গানের ভেতর সবুজ বনে ঘুরে আসার কথা বললেন যে …

আশরাফ: বারে ইরানের নওরোজ তো বসন্তেই আসে। পার্কের দেশ ইরান, বন-বনানির দেশ ইরান তাই বনেই তো যাবো, আপনি কোথায় যেতে চান?

রাশিদ: হ্যাঁ! এটা ইরানিদের ঐতিহ্য। নওরোজ এলেই সবুজের প্রেমে হাবুডুবু খায় ইরান।

নাসির: তার আগে কী খায়?

(হাসির ইফেক্ট)

৩. নাড়া খায়, নাড়া … (হাসির ইফেক্ট)

আশরাফ: আরেহ! খনে থেকনি আছে না? ওইটার কথা কয় আর কি!

রাশিদ: ও…. খনে থেকনি …

নাসির: খনে মানে কী?

৩. ঘর

রাশিদ: থেকনি মানে?

৩. ঝাকুনি

রাশিদ: তাইলে কী দাঁড়াইলো

৩. ঘর ঝাকুনি … ও আইচ্ছা। ঘর ঝাড়মোছ করা… বুইচ্ছি বুইচ্ছি

নাসির: উনি সবসময় একটু দেরিতে বোঝেন… সমস্যা নাই ..

৩. খোঁচা মারা হচ্ছে, না? তবে খোঁচা মারেন আর যাই করেন, একটা কথা কিন্তু সত্য।

রাশিদ: কী কথা …

৩. ইসলাম তো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অঙ্গ বলেছে।

আশরাফ: হ্যাঁ! সে দিক থেকে ইরানিরা কিন্তু ইসলামের এই বিধানটা ভালোভাবেই পালন করে।

৩. মজার ব্যাপার কি জানেন?

নাসির: কী ...

৩. নওরোজের সময় ঘর পরিষ্কার করা বা সাজানোর কাজটা একটা উৎসবের মতো লাগে ... সে যাই হোক! আপনারা ইরানিদের নওরোজে ইরানি শিল্পীর গান না গেয়ে বাংলা গান গাচ্ছেন যে?

নাসির: হুমমম আমি জানতাম। এজন্যই রেডি কইরা রাখছি।

আশরাফ: কী রেডি করছেন ..

নাসির: কী রেডি করছি সেটা বলার আগে মিলি আপাকে বলছি: নওরোজ উৎসব শুধু ইরানেই পালিত হয় না,

রাশিদ: হ্যাঁ, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, তুরস্ক এবং ইরাকেও জাতীয় পর্যায়ে পালিত হয়।

আশরাফ: এ উৎসব কম-বেশি পালিত হচ্ছে জর্জিয়া,পাকিস্তান এবং ভারতেও।

রাশিদ: কিন্তু কে রেডি করে রাখছেন সেটা তো কইলেন না।

নাসির: ইরানি শিল্পীর গান রেডি করে রেখেছি। গানটি নির্বাচন করেছেন আমাদের প্রযোজিকা মিস নেদা রাহিক। আর গানটি শুনে শুনে গানের কথাগুলো উদ্ধার করেছেন আমাদের পরিচালক মুজতাবা ইব্রাহিমি।

৩. বাব্বাহ! ইরানি শিল্পীরা কিন্তু নওরোজ উপলক্ষে দারুণ সব গান করেন। আমি খুউব উপভোগ করি। কিন্তু …

রাশিদ: কিন্তু আবার কী ?

৩. ইরানি শিল্পীদের ফার্সি গান আমাদের বাংলাভাষী শ্রোতা ভাইবোনেরা কি বুঝবে?

আশরাফ: আরে নাসির মাহমুদ ভাই আছে না? অনুবাদ করে দেবেন।

৩. তাহলে তো আর কথাই নেই।

রাশিদ: তাহলে হয়ে যাক

নাসির: হ্যাঁ হয়ে যাক …

নওরোজ ঈদ, নববর্ষের ঈদ

বর্ষশুরুর উদ্দীপনায় সরব

নওরোজ ঈদ, নববর্ষের ঈদ

অনুগ্রহের রীতি-রেওয়াজের উৎসব

খোলামেলা উজ্বল দৃষ্টি,

হাসিগুলো প্রাণখোলা মিষ্টি  

সপ্ত সিনে টেবিলগুলো সুসজ্জিত

ফুটন্ত সব রঙ-বেরঙের কুঁড়িগুলো

নওরোজ ঈদ, নববর্ষের ঈদ

বর্ষশুরুর উদ্দীপনায় সরব

নওরোজ ঈদ, নববর্ষের ঈদ

অনুগ্রহের রীতি-রেওয়াজের উৎসব

খোলামেলা উজ্বল দৃষ্টি,

হাসিগুলো প্রাণখোলা মিষ্টি  

সপ্ত সিনে টেবিলগুলো সুসজ্জিত

ফুটন্ত সব রঙ-বেরঙের কুঁড়িগুলো

রাশিদ: মা-শা-আল্লাহ! কী দারুণ.. কীরকম প্রাণবন্ত! অনুগ্রহের রীতি-রেওয়াজ ..

আশরাফ: আসলেই .. নওরোজ এলে সবাই অন্যরকম ভালো মানুষ হয়ে ওঠে,

রাশিদ: অন্য সময় ভালো মানুষ থাকে না বুঝি …

(হা হা হা)

৩. অন্য সময় এভাবে পরস্পরের কাছে আসা হয়ে ওঠে না তো… তাই

রাশিদ: আসলেই …

আশরাফ: তার আগে কন, গানটা লেকচে কে?

নাসির: গানটা লিখেছেন ইরানের বিখ্যাত গীতিকার শাহিন মালিকি। আর গেয়েছেন: বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রদফার রিয়হী।

৩. যেমন লেখা তেমনি গাওয়া…

আশরাফ: আপা যেন কী কইতে চাইছিলেন?

৩. বলছিলাম, আপনারা তো ইরানিদের ভেতরের খবর জানেন না ..

আশরাফ: জানবো কীভাবে..

রাশিদ: আমরা তো আর ইরানি জামাই না   

৩. ঠিক বলেছেন, আমি যেহেতু ইরানি বধু তাই আমি জানি

আশরাফ: কী জানেন, বইলা ফালান,  

রাশিদ: হ্যাঁ বইলা ফালান …

৩. ইরানিরা নওরোজের এক মাস আগে থেকে নওরোজের প্রস্তুতি নেয়। ঘর সাজায়, পরিষ্কার করে, অনেকেই ঘরের সোফাসেট, ডাইনিং, চেয়ার হাবিজাবি সব পাল্টায় ..

আশারাফ: আপা আপা!  

৩. জি … ভাই!

আশারাফ:  হাবিজাবি পাল্টায় মানে কী

(হা হা হা)

৩. হাবিজাবি মানে হলো হা-তে হাঁড়িপাতিল সেট, বি মানে হলো … বি মানে হলো … বুঝে নেন

(হা হা হা )

৩.  জা মানে জামা-কাপড় আর বি হলো বিশেষ বিশেষ জিনিস-যেগুলোর শেষ নেই। সংসারী মানষেরা জানে সেটা …

(হা হা হা)

রাশিদ:  যেমন ভাইয়ের প্রশ্ন তেমন আপার উত্তর … তয় আমরাও তো দীর্ঘদিন ধইরাই ইরানে আছি, না? কম তো দেহি নাই। আপনি কিন্তু ঠিকই কইছেন আপা! এমনিতেই ইরানিরা পরিচ্ছন্ন এবং সৌন্দর্যপ্রিয় জাতি। আর এই নওরোজ যহন আহে পরিচ্ছন্নতা তখন এক রকমের আনুষ্ঠানিক রূপ নেয়। হের লাইগা নওরোজ আইলে ইরানি গো কারও ঘরবাড়ি ময়লা থাকার সুযোগ থাকে না।

আশরাফ: ঠিক, দূষিত থাকার সুযোগ নাই। নওরোজ আইলে ইরানে কিন্তু 'ঝাড়ু সপ্তা' চলে … হা হা হা

৩. ঝাড়ু সপ্তা না, ঝাড়ু সপ্তা না, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সপ্তা। ফার্সিতে কয় ' হাপ্তেয়ে পকসজি'

নাসির: আমার একটা জোক মনে পড়ছে …

৩. কই ফালান .. কই ফালান…

নাসির:  জোকটা খুব সিরিয়াস।

৩. বাপ রে ..

নাসির: জানেন তো! একটু হেলামি করলে সারাটা জীবন আফসোস করলেও কোনো লাভ নাই?

১+২+৩: হুমম ঠিক ঠিক কইচেন

নাসির: হেল্লাইগা এই কয়েকটা দিন খুউব সাবধানে থাকতে অইবো, পুরোপুরি চোখ-কান সব খোলা রাখতে অইবো, সতর্ক থাকতে অইবো এবং …..

১+২+৩. এবং …

নাসির: যতটা সম্ভব আপনার ঘর ​​থেকে দূরে থাকতে অইবো।

১+২+৩: কেন? কেন? সাংঘাতিক ব্যাপার তো!

নাসির: কেন? কারণ অইলো-যে কোনো মুহূর্তে আপনার জামা কাপড় ঘরের ধুলাবালি পরিষ্কারের ন্যাকড়ায় পরিণত হয়ে যেতে পারে।

(হা হা হা)

৩. এই আপনার সিরিয়াস জোক।

নাসির: সিরিয়াস না বললে কেউ মনোযোগ দেবে না তো..!

৩. নওরোজে কেবল ঘরবাড়ি কেন, অফিস আদালতও পরিষ্কার করার ধুম পড়ে যায় নওরোজে।

রাশিদ: হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছেন।

আশরাফ: ঠিক ঠিক, তো আর কী করে আপা..

৩. সাত-সিন দিয়ে টেবিল সাজায়

আশরাফ: দারুণ ব্যাপার তো…

রাশিদ: একটু খুইলা কন আপা ..

৩. আমরা যে গানের কথামুখটা শুনলাম সেখানে কিন্তু এই হাফত-সিনের কথাটা আছে।

নাসির: হ্যাঁ হ্যাঁ, আছে

রাশিদ: আমাদের শ্রোতাবন্ধুরা কিন্তু এই অনুষ্ঠান শুনছেন এখন … অনেকেই হয়তো জানেন না, একটু খুলে বললে তারাও বুঝতে পারবেন-বুইজছেন না?

৩. হ্যাঁ হ্যাঁ, বুঝেছি বুঝেছি। তবে এটা নাসির মাহমুদ ভাই একটু খোলাসা করে বললেই ভালো হবে।

আশরাফ: ঠিকই কইছেন আপা! নাসির ভাই, প্লিজ …

নাসির: ফার্সি হাফত মানে সাত-বা-সপ্ত এটা তো সবারই জানা। সংখ্যা আর কি! ১২৩৪৫৬-৭। আর সিন হলো ফার্সি একটা বর্ণ। এই বর্ণটা আরবি এবং উর্দুতেও আছে। ইসলাম লেখতে যে সিন' সেই সিন। তো এই সিন দিয়ে শুরু সাতটি বস্তু সুন্দর একটা কাপড়ের ওপর রাখা হয়।

রাশিদ: যেমন যেমন?

নাসির: যেমন-ফার্সি ভাষায় আপেলকে বলা হয় সিব। এই সিব সিন দিয়ে শুরু।

রাশিদ: আচ্ছা …

আশরাফ: তাহলে তো সেইক্কেও হয়…

নাসির: অবশ্যই.. সেইক্কে মানে মুদ্রা বা কয়েন.. হবেই তো

৩. সামানুও হয়…

আশরাফ: সামানু আবার কী জিনিস ..?

নাসির: সামানু হলো গমের চারা দিয়ে তৈরি করা এক ধরনের খাবার।

৩. হ্যাঁ অনেক জটিল প্রক্রিয়া

আশরাফ: তাই … এমনিতে খেতে কেমন

৩. অন..নেক মজা

রাশিদ: কেমনে বুজুম অনেক মজা

(হাহাহা)

৩. বুঝছি তো.. সরাসরি বললেই তো হয় …

নাসির: আপা! আপনার কিন্তু খবর আছে।

৩. কেন?

নাসির: সকল শ্রোতা কিন্তু শুনছে …

৩. স্বাগত জানাই সবাইকে … শ্রোতাবন্ধুরা! আপনারা যারাই যখনই ইরান সফরে আসবেন, সামানুর দাওয়াত রইলো।

রাশিদ:  ইরানে আমরা যারা আছি তাগো দাওয়াত কবে আপা!

(হাহাহা)

৩. আপনাদের জন্য দরোজা উন্মুক্ত, যখন খুশি তখন … অ্যা .. হ

আশরাফ: আচ্ছা সাবজেহও তো হয় তাহলে ..

নাসির: অবশ্যই। তবে সাবজেহ'র মানে তো অনেকে নাও বুঝতে পারে, তাই না?

৩.  সাবজেহ" অর্থাৎ গম বা ডালের সবুজ চারা। সবার বাসায় বাসায় নওরোজের সপ্তাখানেক আগে একটা পাত্রে বিশেষ নিয়মে গম বা ডাল ভিজিয়ে রাখা হয়। সেগুলো চারা দেয়। এই সবুজ চারা ঘরের পরিবেশকে প্রাণবন্ত করে তোলে, আ হা! …

নাসির: "সেনজেদ" নামের একটা বিশেষ ফলও আছে। এটিও সিন দিয়ে শুরু। সিন দিয়ে "সোমাক্ব" নামের একটা বিশেষ মশলাও আছে।

৩. সিরও আছে নাসির ভাই!

নাসির: জি! সিরও আছে। সির মানে রসুন-সিন দিয়ে শুরু এই শব্দটিও। এভাবে সের্কে বা সিরকাও রাখা যেতে পারে সপ্ত-সিনের টেবিলে।

রাশিদ: আচ্ছা সবই তো বুইজলাম কিন্তু এইডা তো বুইজতে পারলাম না এগুলা  ক্যান্ রাখা হয়?

নাসির: হ্যাঁ, এই কৌতূহল আমারও ছিল এক সময়। পরে জানতে পারলাম যে, ইরানিরা মনে করে এইসব সামগ্রী হল নতুন-জীবন, প্রবৃদ্ধি, ফলবান হওয়া, প্রাচুর্য লাভ করা, সৌন্দর্য, সুস্থতা, ভালবাসা, আনন্দ ইত্যাদির প্রতীক।

৩. নওরোজের টেবিলে কিন্তু আরও অনেক জিনিস রাখা হয়।

আশরাফ: যেমন:

৩. যেমন ডিম, আয়না, পানি, লাল রংয়ের ছোট ছোট মাছ ইত্যাদি।

নাসির: আসলটাই তো বলা হলো না

৩. কোনটা?

নাসির: কুরআন শরিফ

৩. হ্যাঁ, হ্যাঁ কুরআন শরিফও রাখা হয়। সত্যি বলতে কি জানেন?

আশরাফ: কী আপা!

৩. সাত-সিনের টেবিল দেখলে না… মনটা ফুরফুরে হয়ে যায় … হা হা হা

নাসির: আপনি তো এখনও না দেখেই ফুরফুরা।

(হা হা হা)

নওরোজের গানে কিন্তু সে কথাও এসেছে, খেয়াল করেছেন?

খোলামেলা উজ্বল দৃষ্টি,

হাসিগুলো প্রাণখোলা মিষ্টি  

আশরাফ: আচ্ছা গানের কথা যহন আইসাই গেল, বাকি গানডা শুইনলে ভালো হইতো না?

রাশিদ: হ্যাঁ.. মন্দ বলেন নি আশরাফ ভাই

৩. ঠিক আছে তাহলে আর দেরি কেন?

(গানের অডিওর ২য় অংশ)

পৃথিবীটাই সজ্জিত রঙিন ফুলে ফুলে

প্রেমিকের দল সর্বত্র আজ বনমালি

ভালোবাসা আর বৃষ্টির উৎসবে

পৃথিবীটা হলো বুঝি গ্রিন হাউস

ঈদ, নওরোজ আর বসন্ত

ঠোঁট মেলে হাসছে ফুলকুঁড়ি

বুলবুলি গাইছে গান পরাণ খুলে

জুঁই বিলাচ্ছে সুঘ্রাণ বন্ধুর দেখা পেয়ে

….

বসন্ত আহা! হৃদয়টা কতই না উদার

বসন্ত আমাদের শুভেচ্ছা এবং সালাম জানায়

ঘরে ঘরে  আমাদের আসে সুখ-আনন্দ

হৃদয়ের কাছে হৃদয় আসে বিনা বাহানায়

নওরোজ ঈদ, নববর্ষের ঈদ

বর্ষশুরুর উদ্দীপনায় সরব

নওরোজ ঈদ, নববর্ষের ঈদ

অনুগ্রহের রীতি-রেওয়াজের উৎসব

খোলামেলা উজ্বল দৃষ্টি,

হাসিগুলো প্রাণখোলা মিষ্টি  

সপ্ত সিনে টেবিলগুলো সুসজ্জিত

ফুটন্ত সব রঙ-বেরঙের কুঁড়িগুলো …

রাশিদ: বাহ বাহ! সে কী গান, সে কী কথা … বসন্ত আমাদের শুভেচ্ছা জানায়, সালাম জানায়।

আশরাফ: যতই সালাম আর শুভেচ্ছা জানাক না কেন, ঈদি ছাড়া কি আর ঈদ জমে?

রাশিদ: হ্যাঁ, এটা ঠিক কিএচন। ঈদের বখশিস ছাড়া আসলে ঈদ জমেই না।

নাসির: আমি কি আরেকটা কৌতুক শোনাবো?

৩. ওরকম সিরিয়াস কৌতুক নাকি আবার?

নাসির: ঈ..দি মানে ঈদ বখশিসের কৌতুক

রাশিদ: তাহলে তো শোনাই যায় …

আশরাফ: বলেন বলেন …

নাসির: এক পোলায় হের বাবারে না, ভীষণ ভয় পায়…

৩. বাবারা তো ভয়ংকরই হয়…

রাশিদ: এই কথাটা কিন্তু মানতে পারলাম না।

আশরাফ: কীভাবে মানবো, এটা তো মানার কথা না।

নাসির: আমার কৌতুক কিন্তু চাপা পইড়া চ্যাপ্টা হইয়া গেচে

রাশিদ: ঠিক আছে, মিলি আপার সাথে পরে হবে, আগে কৌতুক শুনি ..

আশরাফ: হ্যাঁ আগে কৌতুক শুনি ..

নাসির: কইছিলাম বাবারে ভীষণ ভয় পায় ছেলে। তো কেমনে বাবারে ঈদের বখশিসের কথা বলবে, বুইজবার পারছিলো না ..

৩. তো কী করলো?

নাসির: করছে কী? ঈদি নিয়ে ফার্সি একটা গান আছে না- 'এইদিয়ে মান ইয়দেত নারে'?

রাশিদ: হ্যাঁ হ্যাঁ  

আশরাফ: দারুণ মজার গান

নাসির: ওই গানডারে হ্যায় মোবাইলের রিং-টোন বানাইছে ..

( সবাই--হা হা হা)

রাশিদ: দারুণ বুদ্ধি তো পোলার … এইদিয়ে মান ইয়দেত নারে' মানে ঈদের বখশিস দিতে ভুলো না … হা হা হা

৩. তারপর?

নাসির: তো হেয় বাসায় এলে ফ্রেন্ডদেরকে মেসেজ দিয়ে বলে দেয় ঘন ঘন যেন হ্যারে কল দেয়..

রাশিদ: বড়ই ট্যালেন্ট পোলা হা হা হা

৩. হা হা হা .. বুইজচি বুইজচি .. যখনই কল আসে তখনই রিংটোনে বাজে 'এইদিয়ে মান ইয়দেত নারে'

নাসির: আর বাবার সামনে দিয়া পোলায় মোবাইল নিয়া ঘুইরা বেড়ায় … মোবাইলে বাজে এইদিয়ে মান ইয়দেত নারে.. ওর আর মুখ দিয়ে বলা লাগে না। তয় বাবাও কইলাম একদম সেইরাম …

রাশিদ: বাবা কিছুই কয় না?

নাসির: নাহ

৩. আহা রে বেচারা …

আশরাফ: তো পোলাটা কী করলো শেষে

নাসির: পোলায় আর কী করবো! মুখ ফুইটা বলতেই হলো: বাবা! বাবা! বাবা গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দেয়: হ্যাঁ বল কী বলবি!

ছেলে বলে: বাবা! এবারের ঈদে কত টাকা বখশিস দেবে আমাকে?

বাবা বলেনঃ কেন?

ছেলে বলে: না.. কিছু না, এমনিই জিগাইলাম আর কি! আগেভাগে টাকার পরিমাণটা জানলে হিসাব করতে সুবিধা হইতো আর কি। কী করতে পারবো … না পারবো .. ওই টাকা দিয়ে … পরিকল্পনা করা যেত আর কি!

রাশিদ: বাবা কী কইলেন?

নাসির: বাবা কইলেন: কাছে আয়। ছেলে গেল। বাবা কইলেন: জিনিসপত্রের দাম এই বছর কী পরিমাণ বাড়ছে জানিস?

ছেলে বললো: জি জানি! তাইলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় কর।

ছেলে বললো: কেন? কেন শুকরিয়া বাবা?

বাবা কইলেন: এই মাঙগার বছরে এখনও আমি তোকে যে লাত্থি দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেই নি, সেইজন্যে…

(হা হা হা )

৩. আ হা হা রে.. আহ হা .. বেচারা। আপনারা হাসচেন, আমার তো খারাপই লাগছে।

রাশিদ: তয় আমি কিন্তু ঈদে না..? কেউ কোনো উপহার টুপহার দিলে আমার খুব একটা ভালা লাগে না। এসব আমারে খুশি করে না...

আশরাফ: তাইলে কীসে খুশি হন আপনে..

রাশিদ: শুধুমাত্র ট্যাহা। ট্যাহা পাইলে খুশি লাগে। ঈদ ঈদ লাগে। বছরের যহনই ট্যাহা পা্ই তহনই আমার ঈদ ঈদ লাগে।

৩. হ .. আপনি তো টেহা ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না।

রাশিদ: হুনেন .. আপনারে বা আমাগো তো টেহা-পয়সা আল্লায় মোটামুটি দিচে, তাই না?

আশরাফ: হেইডা ঠিক কইচেন। 'না' বলবো না।

রাশিদ: হেল্লাইগ্যা টেহা কী জিনিস বুজবেন না … যারা রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে, পাতা কুড়ায়, কাগজ কুড়ায়, দিনশেষে রাস্তায় কিংবা পার্কে ঘুমায় … হেরা বোজে টেহা কী জিনিস …

৩. ধুর রশিদ ভাই! আপনি মনটাই খারাপ করে দিলেন, কেমন একটা আনন্দের অনুষ্ঠান..

রাশিদ: মাটি কইরা দিচি নাহ?

আশরাফ: আরে না..রে ভাই! আমনে তো কইলাম আসল জায়গায় হাত দিছেন। আমাগো সবার উচিত হইলো টেহাপয়সার অভাবে যারা ঈদের আনন্দ করতে পারে না, হেগোরে সাহায্য করা।

রাশিদ: অ্যা… এতোক্ষণে বুঝতে পারছেন … নওরোজে কিন্তু ঈদি সবাইরে দেন আর না দেন… গরীব মানুষগুলারে অবশ্যই দেওনের কাম। জানেন আমনের একটা পুরান জামাও যদি হেরা পায় কীরকম খুশি অয়? ওই পুরাণ জামাডাই তাদের জন্য নতুন। ওই জামাডা গায়ে দিয়া চাঁন্দের মতো হাসে। একটু … ভালো খাবার খেতে পারলে কী যে খুশি অয় … ওই খুশি টাকা দিয়ে পাওয়া যায় না …

(প্যাথোস)

৩. কান্নার সুরে … আপনে তো কান্দাইয়াই ছাড়লেন

আশরাফ: এই কান্না আনন্দে পরিণত হোক … হেইডাই চাই।

৩. কেমনে?

রাশিদ: কান্না ঘুচানোর মাধ্যমে

আশরাফ: ঠিক বলেছেন ..

নাসির: হ্যাঁ .. যার যেটুকু সামর্থ্য আছে সেটুকু দিয়েই বঞ্চিতদের মুখে হাসি ফোটাতে হবে।

রাশিদ: হ্যাঁ তা করতে পারলেই নওরোজের ঈদ-আনন্দ সত্যিকারের আনন্দ হয়ে উঠবে। সুতরাং আসুন আমরা সবাই… অবহেলিত, বঞ্চিতদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেই।

নাসির: নওরোজের কিন্তু আরেকটি ঐতিহ্য আছে।

৩. কী?

নাসির: এটা আপনিই ভালো বলতে পারবেন। বাবা-মা. আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের খোঁজ খবর নেয়া, তাই না?

৩. হ্যাঁ হ্যাঁ .. যাদের বাবা-মা বেঁচে আছে তাদের সামর্থ্য থাকলে বাবা-মা'কে নিয়ে নওরোজে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যায়।

আশরাফ: আর যাদের বাবা-মা বেঁচে নেই?

৩. তাদের কবর জিয়ারত করতে যায় বাসার সবাই …

নাসির: কী দারুণ একটা সংস্কৃতি। আর এই সংস্কৃতিটা নওরোজে মানে বসন্তে পালন করা হয়। সে কারণে বসন্তটা যেন বিচিত্র কল্যাণ আধার নিয়ে আসে।

রাশিদ: আচ্ছা নাসির ভাই!  বসন্ত নিয়ে একটা গান আছে না? বাহর বাহর…

নাসির: হ্যাঁ

৩. গানটা একটু শুনবো ..

আশরাফ: কিন্তু সময় তো নেই …

রাশিদ: একটুসখানি …

নাসির: ঠিক আছে। আমরা তাহলে গানটির অংশবিশেষ শুনতে শুনতেই না হয় শ্রোতাবন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিই।

সবাই: হ্যাঁ তাই হোক …

( বাহর বাহর …)

(মিউজিক)

পার্সটুডে/এনএম/২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ