মার্চ ৩০, ২০২৩ ১৭:২৮ Asia/Dhaka

গত কয়েক পর্বে আমরা পবিত্র কুরআনের বর্ণনার আলোকে রোজা রাখার উদ্দেশ্য তথা মুত্তাকী বা খোদা-সচেতনতার অধিকারী ব্যক্তির নানা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

রোজা রাখলেই কোনো ব্যক্তি মুত্তাকী হয়ে যাবে এমন গ্যারান্টি আল্লাহ দেননি। তিনি এটা বোঝাতে চেয়েছেন যে মানুষেরা আশাবাদী হতে পারে যে তাদের অনেকেই রোজা রাখার ফলে মুত্তাকী হতে পারেন। আল্লাহ তো সুনিশ্চিতভাবে জানেন কোন্‌ উম্মতের কত ব্যক্তি খোদা-সচেতন হবেন। অনেকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে রোজাদার হলেও আল্লাহ তাদের অন্তরে থাকা লোক-দেখানো মনোভাব ও নিষ্ঠার অভাব সম্পর্কে জানেন। তাই আল্লাহ এটা বলেছেন যে রোজা ফরজ করা হয়েছে মুসলমানদের জন্য। মুসলমানরা আশা করতে পারে যে রোজা রাখার ফলে তাদের কেউ কেউ খোদা সম্পর্কে সদাসচেতন হবেন।  - আর এমন ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়া ও আখিরাতে অনেক পুরস্কার ও সম্মান।

কেউ যখন মুত্তাকী হয় তখন তিনি ইসলামের বর্ণিত অদৃশ্য সব বিষয়ে বিশ্বাস রাখেন, নামাজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং আল্লাহর দেয়া রিজিক হতে দান-খায়রাত করেন। এ ছাড়াও আখিরাতের প্রতি তথা বিচার দিবসের প্রতি সুনিশ্চিত বিশ্বাস রাখেন। আখিরাতের প্রতি সাধারণ বিশ্বাস বা ঈমান রাখা খুবই ভালো ও জরুরি। কিন্তু সুনিশ্চিত বিশ্বাস বা ইয়াক্বিন হচ্ছে আরও উচ্চ পর্যায়ের ও মহান আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়। ইয়াক্বিনের অধিকারী ব্যক্তি যেন নিজ চোখে বেহেশতের সুখ ও দোযখের শাস্তি  দেখতে পান। তাই তার পক্ষে কোনো অন্যায় বা হারাম কাজ কখনও জেনেশুনে করা সম্ভব হয় না। মুত্তাকী হতে হলে আখিরাতের বিষয়ে এমন নিশ্চিত বিশ্বাসই অর্জন করতে হবে। আর রোজা সেই সুযোগই এনে দেয়।  আর যিনি পরকাল ও বিচার-দিবসের প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস অর্জন করেন তিনি ধর্মীয় অন্যান্য বিষয়ের সত্যতার ব্যাপারেও নিশ্চিত বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হন।

রোজা রাখার সুবিধা হল রোজাদার বৈধ অনেক কিছুই বর্জনের অভ্যাসে যখন অভ্যস্ত হন তখন হারাম কাজ বর্জন তো তার জন্য আরও অনেক সহজ হয়ে যায়। আখিরাত ও বিচার-দিবসের প্রতি সুনিশ্চিত বিশ্বাস মানুষকে সদা-সচেতন এবং সব ধরনের পাপাচার থেকে দূরে রাখার জন্য যথেষ্ট। পবিত্র কুরআনে বার বার এই দিনটির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মহান আল্লাহ।

মহান আল্লাহর স্মরণ মানুষকে অন্যায় থেকে দূরে রাখে। মহান আল্লাহকে ভালোভাবে চিনলে ও জানলে মানুষ আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করবে। মহানবীর এক হাদিসে বলা হয়েছে : একমাত্র আমি ও আলী আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি চিনি ও জানি।

মহান আল্লাহকে চেনা ও জানার এক ভালো উপায় হল আসমাউল হুসনা সম্পর্কে জানা। সুন্দর এই নামগুলোর মাধ্যমে আল্লাহকে ডাকতে বলেছেন স্বয়ং তিনি অর্থাৎ আল্লাহ পাক নিজেই। মহান আল্লাহ রাহমান ও রাহিম। তাই আমাদেরকেও রাহমান ও রাহিমের রঙ্গে রঙ্গিন হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল তথা গফুর ও গাফফার। তাই আমাদেরকেও গফুর ও গাফফার হতে হবে আমাদের সাধ্য অনুযায়ী। মহান আল্লাহ সাত্তার তথা পাপ ও দোষ গোপনকারী। তাই আমাদেরকেও অন্যদের দোষ ও পাপ গোপন রাখার গুণ অর্জন করতে হবে। এভাবে আমরা মহান আল্লাহর অনুসারী হতে পারি বাস্তব জীবনে।

মানুষ হচ্ছে দুনিয়াতে আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি। তাই প্রতিনিধিকে অবশ্যই মূল কর্তার অনেক গুণের অনুসারী হতে হবে। মহানবী (সা) বলেছেন, মহান আল্লাহর ৯৯ টি নাম বা গুণের প্রতিফলন যার কাজ কর্মে দেখা যাবে সে বেহেশতে যাবে।

মহান আল্লাহর সবচেয়ে বিখ্যাত ও বহুল প্রচলিত শ্রেষ্ঠ এবং পরিপূর্ণ নাম হল আল্লাহ। আল ইলাহ'র সংক্ষিপ্ত রূপ হল আল্লাহ। ইলাহ মানে উপাস্য। আরবিতে আল শব্দটি বিশিষ্টতা বোঝাতে কোনো শব্দের আগে ব্যবহার করা হয়। মহান আল্লাহর সব নামের প্রতিফলন রয়েছে এই মহান নামের মধ্যে। মহান আল্লাহর ৯৯ নামের সমন্বয় বা সমাহার হয়েছে 'আল্লাহ' নামের মধ্যে।

সুরা আনফালের দ্বিতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা নিজ পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। - এখন আমাদের ভেবে দেখা উচিত সারা দিনে আল্লাহর নাম আমরা যতবারই শুনি ততবার বা একবারও কি আমাদের মন কেঁপে ওঠে? আসলে আল্লাহকে ভালোভাবে চিনিনা ও জানিনা বলেই আমাদের এই অবস্থা!

হাদিসে কুদসিতে এরশাদ হয়েছে: মহান আল্লাহ বলেছেন, হে আদমের সন্তান তুমি কতবারই না বলছ আল্লাহ, অথচ তোমার অন্তরে রয়েছে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু। তোমার ঠোট বলছে আল্লাহ আল্লাহ। অথচ তোমার অন্তরে রয়েছে অন্যের জন্য ভয় ও অন্যের ওপর তুমি ভরসা রাখ। তুমি যদি আমাকে চেনো বা জানো তাহলে তোমার হৃদয়ে আমাকে ছাড়া আর কারও দরকার হবে না। আমাকে ছাড়া অন্য কাউকেই জীবনে তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হবে না।

মহান আল্লাহ যেন আমাদেরকে সব সময় তাঁর প্রতি সচেতন হওয়ার তথা মুত্তাকী হওয়ার তৌফিক দান করেন। #

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/ ৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ