ইমাম হুসাইন-আ.'র অন্যতম উপাধি ছিল রাশিদ
আসমাউল হুসনা' -৮৫ (রাশিদ নামের তাৎপর্য)
মহান আল্লাহ হলেন এমন এক সত্ত্বা যিনি ত্রুটিহীন, তুলনাহীন, শরিকহীন ও পবিত্র। মহান আল্লাহর মহত্ত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও গৌরব-অহংকার –এসবই নজিরবিহীন। মহান আল্লাহর সত্ত্বাকে বোঝা অসম্ভব তবে তাঁর গুণবাচক নামগুলো তাঁর মহত্ত্ব সম্পর্কে কিছু ধারণা বা পরিচিতি তুলে ধরে।
মহান আল্লাহর আসমাউল হুসনার তালিকাভুক্ত আরও এক নাম রাশিদرشید) )। পবিত্র কুরআনে এই নাম ও এই নামের উপজাত নানা নাম বহুবার এসেছে। রাশিদ শব্দের আভিধানিক অর্থ সুপথ-প্রাপ্ত, সতর্ক, বিচক্ষণ, অন্তর্দৃষ্টি ও দূরদৃষ্টি-সম্পন্ন, জ্ঞানী ইত্যাদি। আর ইসলামী পারিভাষিক অর্থে রাশিদ হলেন তিনি যিনি তার সব কাজ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে, কৌশল বা প্রজ্ঞা সহকারে ও এমন নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করেন যে তাতে কোনো ত্রুটি, ঘাটতি বা ক্ষয় ও কমতি থাকে না।মহান আল্লাহ রাশিদ বলে তিনি সব কিছুর জ্ঞান রাখেন ও সব কিছুর ওপর কর্তৃত্ব রাখেন। মহান আল্লাহই সঠিক পথ দেখানোর একমাত্র দিশারি। তিনি সঠিক পথকে সর্বোত্তম উপায়ে প্রদর্শন করেন যাতে বান্দারা কঠিন নানা সংকটের মধ্যে থেকেও বিচ্যুতি ও অজ্ঞতার শিকার না হন। সুরা বাকারার ২৫৬ নম্বর আয়াতে উল্লেখিত শব্দ 'রুশদো' বা সঠিক পথ বিচ্যুতি বা গ্বাইয়ির বিপরীত শব্দ হিসেবে বিবেচিত। বান্দাদেরকে সুপথ বা পরিপক্বতা, উন্নতি ও অগ্রগতির পথ তথা সরল পথে পরিচালনার জন্য মহান আল্লাহ রাশিদ হিসেবে ভূমিকা রাখেন বলে ওই আয়াতে তিনি বলেছেন,নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। সুরা জিন-এর প্রথম ও দ্বিতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন সম্পর্কে একদল জিন-এর স্বীকারোক্তি তুলে ধরেছেন যেখানে তারা কুরআনের বাণীর প্রভাব তুলে ধরতে গিয়ে বলেছে, আমরা বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি যা সৎপথ বা রুশ্দ্- এর পথ দেখায় মানুষকে। -অন্য কথায় মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে মানুষকে পথ দেখান বলে তিনি সুপথের ও পূর্ণতার পথের শ্রেষ্ঠ প্রদর্শক। আর এ জন্যই মুমিন বান্দা ও খোদা-পিয়াসী মানুষ আল্লাহর কাছেই রুশ্দ্ বা হেদায়াত চান। ফিরআউনের দলবলের এক ব্যক্তি মুমিন বা বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি তার জাতিকে বলেছিলেন, হে আমার জাতি আমার অনুসরণ কর যাতে তোমাদেরকে সঠিক পথ বা 'সাবিল আর রুশদ্' দেখাতে পারি।
পৃথিবীতে মানুষ পূর্ণতার পথে এগিয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। তাই প্রকৃত পরিপক্বতা হচ্ছে আধ্যাত্মিক পরিপক্বতা তথা ইমান ও নৈতিক অবস্থানের পূর্ণতা। মানুষকে স্বেচ্ছায় এই পথের নানা পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। দৈহিক দিক থেকে সব মানুষেরই বিকাশ একই ধরনের। কিন্তু আত্মিক দিক থেকে মানুষের অবস্থার হেরফের হয় ইমান ও খোদাভীতির মাত্রায় ভিন্নতার কারণে। মানুষ যদি তার বুদ্ধি-বিবেক ও চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভুল ও সঠিক পথের মধ্যে সঠিক পথটি বেছে নিতে সক্ষম হয় তাহলে সে প্রকৃত পরিপক্বতা অর্জনের ক্ষমতা অর্জন করল। কোনো চাপ বা জোরজবরদস্তির মাধ্যমে এই পথ পাওয়া যায় না বা এই গুণ অর্জন করা যায় না। আসলে এই গুণ হচ্ছে সব সুযোগ-সুবিধা ও পুঁজিকে কাজে লাগানোর জন্য যথেষ্ট বিচক্ষণতা ও যোগ্যতা অর্জন করা যাতে সব ধরনের ভুল পথ ও বিচ্যুতিকে এড়ানো সম্ভব হয়।
মানুষের মধ্যে যারা আদর্শ রাশিদ তাদের অন্যতম দৃষ্টান্ত হলেন হযরত ইব্রাহিম-আ.। তিনি তাঁর নিখুঁত যুক্তির মাধ্যমে মিথ্যা প্রভুগুলোর প্রভুত্বকে অসার বলে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন কাফির মুশরিকদের সঙ্গে সংলাপে। আর মহান আল্লাহ তাঁকে এসব বিষয়ে সচেতনতা ও পরিপক্বতার জ্ঞান দান করেছিলেন বলে কুরআনে উল্লেখ করেছেন। সুরা আনআমের ৮৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:এটি ছিল আমার যুক্তি, যা আমি ইব্রাহীমকে তাঁর সম্প্রদায়ের বিপক্ষে প্রদান করেছিলাম। আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় সমুন্নত করি। আপনার পালনকর্তা প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী। -হযরত ইব্রাহিম-আ মহান আল্লাহর সহায়তায় সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছিলেন বলে সুরা আনআমের ৭৯ নম্বর আয়াতে তাঁর এই বক্তব্য এসেছে ,আমি এক মুখী হয়ে স্বীয় আনন ঐ সত্তার দিকে করেছি, যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিক নই।
হযরত ইব্রাহিম-আ নবুওত লাভের পর ইমামতও পেয়েছিলেন আল্লাহর দিকে অগ্রযাত্রার যোগ্যতা তথা পরিপক্বতা পেয়েছিলেন বলেই। তিনি রাশিদ হিসেবে মানুষকেও সুপথ দেখাতেন। অন্যদিকে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ এটাও উল্লেখ করেছেন যে (সুরা হুদের ৯৬ ও ৯৭ নম্বর আয়াতে) ফিরআউনের অনুসারীরা মহান আল্লাহ ও মুসার নির্দেশিত সঠিক ও সুস্পষ্ট সুপথের বিপরীতে ফিরআউনের নির্দেশ মেনে নিয়েছিল। কিন্তু ওই পথ সুপথ বা মুক্তির পথ ও পরিপক্বতা বা অগ্রগতির পথ ছিল না। মহান আল্লাহ বলেছেন:আর আমি মূসা (আঃ) কে প্রেরণ করি আমার নিদর্শনাদি ও সুস্পষ্ট সনদসহ; ফিরআউন ও তার পারিষদবর্গের কাছে, তবুও তারা ফিরআউনের হুকুমে চলতে থাকে, অথচ ফিরআউনের কোন কথা ন্যায় সঙ্গত বা রাশিদ ছিল না। -আমাদেরও উচিত এমন কারো কথার অনুসরণ করা যিনি পরিপূর্ণতা বা রুশ্দ্-এর অধিকারী।
যারা মহান আল্লাহর রাশিদ নাম সম্পর্কে সচেতন তারা সব অবস্থায় পবিত্র কুরআন ও মহানবীর (সা) দেখানো পথের আলোকে নিজেদের সব কাজ ও পরিকল্পনাকে বিন্যস্ত করেন। তারা মহানবী-সা ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের কাছ থেকেই পথ-নির্দেশনা পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। উল্লেখ্য, হযরত ইমাম হুসাইন আ.এর অনেক উপাধির মধ্যে একটি উপাধি ছিল রাশিদ। তিনি ছিলেন হেদায়াতের প্রদীপ ও বেহেশতি যুবকদের অন্যতম সর্দার। তিনি মানবতাকে অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন এবং ইসলামের সঠিক পথ তুলে ধরেছেন। আর এই লক্ষ্যে তিনি নিজের পুত্র ও পরিজনসহ সব কিছু বিসর্জন দিয়ে শাহাদাত বরণ করেছিলেন।
#
পার্সটুডে/ এমএএইচ/০৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।