পরিবারের সদস্যদের আন্তরিক সমাবেশ মসজিদে এতেকাফের চেয়েও বেশি পূণ্যময়: হাদিস
সুখের নীড় - পর্ব ২৭ ( পরিবারের চ্যালেঞ্জ, মূল্যবোধ ও আর্থিক পরিকল্পনা )
মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র, আন্তরিক, ক্ষমাশীল ও সহানুভূতিশীল হোন। যদি মানুষের প্রতি সহৃদয় হোন দেখবেন যে মানুষেরা আপনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আপনার চারপাশে জড়ো হচ্ছে।
মহানবীর (সা) জীবনে এইসব গুণ ছিল বলেই তিনি সহজেই মানুষদের আকৃষ্ট করতে পারতেন। আজ আমরা অনুষ্ঠানের প্রথম দিকে ইরানি পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিয়ে কিছু কথা বলব। পরিবার ইরানি সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে আধুনিকতা ইরানি পরিবারগুলোর জন্য প্রধান হুমকি। আধুনিকতার এমন কিছু দিক রয়েছে যেসব পরিবারের জন্য ধ্বংস ডেকে আনছে। ইরানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দেশের পরিবারগুলোকে রক্ষা করতে হলে শক্তিশালী ইরানি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আর প্রথাগুলোকে ব্যবহার করতে হবে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইরানি সংস্কৃতি ধরে রাখা সম্ভব নয়। তাই ইরানি সংস্কৃতি ও পরিবার হচ্ছে পরস্পরের পরিপূরক ও অপরিহার্য অংশ। ইরানিদের পরিবার ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে টিকে আছে বলেই ইরানিরা ইরানিত্ব বজায় রাখতে পেরেছে। অবশ্য আধুনিক যুগে ইরানি পরিবারগুলোর চলার পথে এসেছে ভিন্নতা। কিন্তু এর মানে পরিবারের বিলুপ্তি নয়।
ইরানের শিক্ষা ব্যবস্থা ও পারিবারিক মূল্যবোধের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। ইরানি পরিবারগুলো হচ্ছে মানবীয় মূল্যবোধ, দয়া ও ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার কেন্দ্রস্থল। পরিবারগুলোকে তালাক, সন্তানহীনতা ও দাম্পত্য কলহের মত নানা সমস্যা থেকে মুক্ত করার ওপর এবং সন্তানদেরকে নানা দক্ষতা শেখানোর ওপরও জোর দেয়া হচ্ছে। তাই এমন কথা বলা যায় না যে ইরানিরা পরিবার ব্যবস্থার গুরুত্ব সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়েছেন বা ইরানে পরিবারগুলো বিলুপ্ত হওয়ার পথে! বরং ইরানিরা পরিবার ও পারিবারিক মূল্যবোধগুলো রক্ষার ওপর বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় যদি ঐতিহ্যবাহী ইরানি ও ইসলামী পারিবারিক মূল্যবোধের বিরোধী কিছু থেকে থাকে তাহলে তা বেশিরভাগ ইরানির কাছেই গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। ইরানি চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদরা পরিবার ও পারিবারিক মূল্যবোধগুলো রক্ষার ব্যাপারে বেশ সচেতন। তারা পারিবারিক মূল্যবোধ রক্ষার ও পরিবারগুলোকে সুখের নীড়ে পরিণত করার তথা প্রকৃত পরিবার ব্যবস্থার দিকে ফিরে যাওয়ার কথা বলছেন বেশ জোর দিয়ে। তাই নতুন শতাব্দিতে ইরানি পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল হবে বলেই মনে হচ্ছে।
শ্রোতা ভাইবোনেরা, আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা আদর্শ পরিবার ও ইসলামী পারিবারিক মূল্যবোধ সম্পর্কে কিছু কথা বলব। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী -আ. বলেছেন, আপনি যদি আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে সম্মান করেন তাহলে আপনি তার আস্থা অর্জন করবেন এবং এরই সূত্রে আপনি তার আনুগত্যও পাবেন। ফলে উভয়ই প্রশান্তি, প্রফুল্লতা ও সাফল্য অর্জন করবেন।আদর্শ মুসলিম পরিবারের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল এমন পরিবারের সদস্যরা পরস্পরের প্রতি সহৃদয় থাকেন। মহানবী-সা. বলেছেন, পরিবারের সদস্যরা যদি পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে একত্রে বসেন তাহলে তার সাওয়াব মসজিদে এতেকাফ করার চেয়েও বেশি।
আদর্শ মুসলিম পরিবারের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হল এমন পরিবারের সদস্যরা যখন পরস্পরের সঙ্গে কথা বলবেন তখন তাতে থাকবে সততা, স্পষ্টতা ও আন্তরিকতা।আদর্শ মুসলিম পরিবারের সদস্যরা পরস্পরকে ভালো কাজে উৎসাহ দেন ও মন্দ কাজে নিরুৎসাহিত করেন। পারিবারিক প্রেক্ষাপটে কয়েকটি ভালো কাজ হল আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা ও তাদের খোঁজখবর নেয়া, বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য সচেষ্ট থাকা এবং ধর্মীয় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে দাওয়াত দেয়া।একটি পরিবারের যখন এইসব বৈশিষ্ট্য থাকবে তখন সেখানে সামান্য ও অর্থহীন বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ থাকবে কম বরং তারা পরস্পরকে সব সময় কল্যাণ ও সুন্দর বিষয়ের দিকে পথ প্রদর্শন করবে!
আদর্শ মুসলিম পরিবারে কেউ কাউকে কোনো বিষয়ে উপদেশ দেয়ার আগে তাকে আগে কাজের মাধ্যমে ওই বিষয়ের অগ্রপথিক হতে হবে। আপনি যদি আচার-আচরণে সুশীল হন তখন অন্যরা স্বাভাবিকভাবেই আপনার অনুসারী হবেন। আপনি নিজে যদি সুশীল না হয়ে পরিবারের অন্যদের সুশীল হওয়ার উপদেশ দেন তাতে কাজ হবে না। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)'র মতে পরিবারে অতিরিক্ত মাত্রায় উপদেশ প্রদান অন্যদের মধ্যে বিরক্তি সৃষ্টি করে এবং এতে অন্যরা আপনার অনুগতও হবেন না।আদর্শ মুসলিম পরিবারের সদস্যরা সব সময় জ্ঞান অর্জন ও ধর্মীয় জ্ঞান বৃদ্ধিতে সক্রিয় হন যাতে তারা পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যেতে পারেন। এমন পরিবারের সদস্যরা সব কাজ করেন সচেতনতা নিয়ে এবং পরিবারের অন্যদেরও জীবন ও পরিবার বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের পথে উৎসাহ দেন। এক্ষেত্রে জ্ঞানী ও ধার্মিক ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা উচিত যাতে আপনার পরিবারের সবার ঈমান জোরালো হয় এবং তারা জীবন সম্পর্কে অনেক ভালো দক্ষতা অর্জন করেন।
অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে আমরা সফল দাম্পত্য জীবনের জন্য জরুরি কয়েকটি বিষয় তুলে ধরব: দাম্পত্য জীবনে সফল হতে হলে পারিবারিক সব বিষয়ে পরিকল্পনা থাকতে হবে। আগামীকালও যাতে আপনি আপনার স্ত্রী বা স্বামীর কাছে ভালো বা আকর্ষণীয় থাকেন সে জন্য আজ যা যা করার দরকার সেসবই করতে হবে পরিকল্পনা-মাফিক। এভাবে আগামী ৫ বছরের জন্যও স্ত্রী বা স্বামীর ভালো সহযোগী হতে পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। অর্থনৈতিক বিষয়ে, সাশ্রয়ের বিষয়ে, জীবিকা বা আয়-উপার্জনের বিষয়ে, বিলাসিতামুক্ত বা সাদামাটা জীবন যাপনের বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়নে স্বামী বা স্ত্রীর সহযোগিতা আপনার জন্য জরুরি। মনে করুন দুই বছর পর আপনার বার্ষিক আয় হবে দশ লাখ টাকা, তাই আপনার উচিত নয় বিশ লাখ টাকা খরচের পরিকল্পনা নেয়া। তবে আপনি যদি ১২ লাখ টাকা খরচের পরিকল্পনা নেন সেটা খুব উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হবে না এবং আপনি সতর্ক হয়ে জীবন যাপন করলে ওই অর্থ সাশ্রয় বা সংগ্রহ করা কঠিন হবে না।
আপনার ও আপনার জীবনসঙ্গীর সামর্থ্য বা সাধ্যের আলোকে পরিকল্পনা করুন। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোকে স্বল্প-সময়ের পরিকল্পনায় ভাগ করে নিন। ধরুন তিন বছরে যা যা অর্জনের পরিকল্পনা রয়েছে সেই লক্ষ্যের আলোকে প্রতি বছরে ও প্রতি মাসে আপনাকে যা যা করতে হবে তা ঠিক করে নিন। এভাবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হয়ে যাবে। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/০৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।