ধর্মীয় জীবন-যাপন পরিবারের সুখের নীড় গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য
সুখের নীড় - পর্ব ২৯ ( পরিবারকে শক্তিশালী করার উপায় )
পরিবারকে শক্তিশালী করার জন্য পরিবার ব্যবস্থা যে একটি পবিত্র ব্যবস্থা সে বিষয়টি মনে রাখতে হবে। ব্যক্তি স্বার্থের চেয়েও পরিবারকে দিতে হবে প্রাধান্য।
পরিবারকে শক্তিশালী করতে চাইলে পারিবারিক মূল্যবোধগুলোকে জানতে হবে ও সেসবের বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে হবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আচরণে ও সন্তানদের প্রতিপালনে।মানুষ শক্তিশালী পরিবার গঠন করে সমাজ ও ব্যক্তি জীবনকে উন্নত করতে সক্ষম। পরিবারে স্বামী ও স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের ভিত্তি হল পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। মানুষ কখনও কখনও ভুল করে। ভুলের জন্য প্রিয়জনের কাছে আন্তরিক চিত্তে ক্ষমা চাওয়া উচিত। তা না হলে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে ও তা বাড়তে পারে। পরিবার বা দাম্পত্য জীবনকে কেবল ভোগ-বিলাসের দৃষ্টিতে দেখা ঠিক নয়। ভোগের মধ্যে নয় ত্যাগের মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সুখ। অন্যদিকে ক্ষমতা বা বল প্রদর্শন নয় বরং ক্ষমাশীলতার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত মানবীয় আনন্দ।
পরিবারকে শক্তিশালী করার জন্য প্রাধান্য দিতে হবে মানবীয় গুণাবলীকে। অনেকেই বিয়ে করার সময় বাহ্যিক রূপ ও সম্পদ-এসব বিষয়কে প্রাধান্য দেন। অথচ প্রাধান্য দেয়া উচিত সততা, ধার্মিকতা ও ন্যায়-বিচারবোধ, দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা এবং দয়া ও ক্ষমাশীলতার মত মহতী গুণগুলোকে। জীবনের এ সংক্রান্ত সুযোগগুলোকে কাজে লাগানো উচিত। এক গল্প আছে যে: এক ব্যক্তিকে সর্বশক্তিমান প্রভু তিনটি প্রার্থনা পূরণের সুযোগ দেন। ওই ব্যক্তি প্রথমেই বললেন, আমার স্ত্রীকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী করে দেয়া হোক্। দেখা গেল তার স্ত্রী অনন্য রূপসী হয়ে পড়েছেন এবং তিনি যেখানেই যান তাকে এক নজর দেখতে মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে! এই মহা-ঝামেলা দেখে তখন ওই ব্যক্তি তার দ্বিতীয় প্রার্থনায় বললেন, আমার স্ত্রীকে কুৎসিততম করে দেয়া হোক। তাই করা হল। কিন্তু এবার তার মন খুবই খারাপ হয়ে গেল এবং সেই ব্যক্তি ভাবলেন স্ত্রীর সবচেয়ে আগের অবস্থাই তো ভালো ছিল! এবার তৃতীয় প্রার্থনা অনুযায়ী সেই আগের অবস্থা ফিরিয়ে দেয়া হল। ফলে তিনটি মহাসুযোগ পেয়েও ওই ব্যক্তি নতুন ও ভালো কিছুই অর্জন করতে পারলেন না। অথচ তিনি আত্মশুদ্ধি, আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির মত কিছু চাইতে পারতেন।
পরিবারকে উন্নত ও নৈতিক এবং আত্মিক দিক থেকে সমৃদ্ধ করার অন্যতম এক উপায় হল হালাল জীবিকা অর্জন। পরিবারের জীবিকা যদি হালাল না হয় তাহলে সেখানে সুসন্তান গড়ে উঠবে না। হারাম পন্থায় অর্জিত সম্পদ ও অর্থে আত্মিক প্রশান্তি আসে না তা যত বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও অর্থই হোক না কেন। অন্যদিকে কষ্টার্জিত অল্প সম্পদেও রয়েছে আত্মিক প্রশান্তি ও অনেক বেশি বরকত। হারাম অর্থ ও সম্পদ মানুষের মধ্যে বয়ে আনে অনেক অনৈতিক স্বভাব ও সহিংসতা। দূরদর্শী তথা বুদ্ধিমান ও ধার্মিক ব্যক্তি তার ইহকালীন বাহ্যিক সুখ ও সুবিধার জন্য পরকালকে বিক্রি করে দেন না। যারা হালাল জীবিকা অর্জনে অভ্যস্ত তারা একদিকে যেমন কৃপণতা থেকে মুক্ত থাকেন তেমনি তারা অন্যের সম্পদ দেখে ঈর্ষায় ভোগেন না, অপব্যয় ও অপচয় থেকেও তারা দূরে থাকেন। তারা সঠিক ও সুচারু অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিবারকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন।মোট কথা পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা শক্তিশালী করার সঙ্গে হালাল রোজগারের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। রিজিক যত বেশি হালাল হবে পরিবারের নানা ক্ষেত্রে ততই বরকত বাড়তে থাকবে।
ইসলাম পরনির্ভরতা, বেকারত্ব ও অলসতাকে ঘৃণা করে। পরিবারের ব্যয় ও খরচ নির্বাহের জন্য চেষ্টা প্রচেষ্টাকে ইসলাম ইবাদত বলে উল্লেখ করেছে। অর্থ-সম্পদ থাকা সত্ত্বেও পরিবারকে যথেষ্ট মাত্রায় খাদ্য ও নানা জরুরি উপকরণ থেকে বঞ্চিত করাকে ইসলাম অপছন্দনীয় ও নিষিদ্ধ কাজ বলে নিন্দা জানায়। পরিবারের জন্য হালাল রিজিক অর্জনের চেষ্টা জিহাদের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং জিহাদের চেয়েও তাতে বেশি সাওয়াব রয়েছে বলে ইসলামী বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে। যারা হারাম খাদ্যে অভ্যস্ত হয় তাদের হৃদয় অন্ধ হয়ে পড়ে। ইমাম হুসাইন (আ) আশুরার দিন ইয়াজিদ বাহিনীকে বলেছিলেন: তোমরা আমার সত্যের আহ্বান গ্রহণ করছ না ও আমার বিরোধিতা করছ এ কারণে যে তোমাদের পেটগুলো হারামে পরিপূর্ণ এবং এ কারণে তোমাদের হৃদয়ে মোহর পড়ে গেছে।
ধর্মীয় জীবন-যাপন পরিবারের সুখের নীড় গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য। পবিত্র কুরআনে মহানবীর (সা) কোনো কোনো স্ত্রীর প্রতি তিরস্কার করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে তারা যেন মহানবীর সঙ্গে দাম্পত্য জীবন লাভের মত সৌভাগ্য অর্জনের বিষয়টিকে অবহেলা না করেন। পবিত্র কুরআনের সুরা তাহরিমের ৬ নম্বর আয়াতে স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের সুশিক্ষা দেয়ার ওপর জোর দিয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন, হে ঈমানদাররা, নিজেকে ও নিজের পরিবারকে দোযখের সেই আগুন থেকে রক্ষা কর যার জ্বালানী হচ্ছে মানুষ ও পাথর। - তাই প্রত্যেক মুমিন বান্দাহকে আত্মসংযমের চর্চা তথা পাপ বর্জন ও উদ্ধত প্রবৃত্তির নির্দেশ বা প্ররোচনাগুলোকে এড়ানোর মত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নির্দেশ হতে হবে জীবনের অবিচ্ছেদ্য কর্মসূচি। জীবনের সব অঙ্গনকে করতে হবে পবিত্র। পরিবারের সদস্যদেরকে কেবল ভরন-পোষণ দিলেই চলবে না। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল সুশিক্ষার মাধ্যমে তাদের আত্মাকে উন্নত করা।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/০৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।