এপ্রিল ১৩, ২০২৩ ১৮:৩৭ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহ'র আসমায়ুল হুসনার তালিকাভুক্ত আরেকটি নাম সুব্‌হান। আরবি  সাব্বাহ শব্দটি থেকে এসেছে সুব্‌হান শব্দ। এর অর্থ পবিত্র ও সব ধরনের ত্রুটি আর ঘাটতিমুক্ত।

মহান আল্লাহ সব ধরনের ত্রুটি, ঘাটতি ও এমনকি সৃষ্টিকুলের সঙ্গে সম্পর্কিত সব ধরনের কল্পনা, সাদৃশ্য, চিত্রময়তা ও মূর্ততা হতেও মুক্ত। মহান আল্লাহর সব নাম ও গুণও যে কোনো ধরনের সীমাবদ্ধতা, নির্ভরশীলতা ও সৃষ্টির সঙ্গে সাদৃশ্য থেকে পবিত্র। সুরা সাফ্‌ফাতের ১৫৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ সম্পর্কে ওরা যেসব বর্ণনা দেয় তা থেকে তিনি পবিত্র বা সুব্‌হান। 

যে কোনো বর্ণনা বর্ণিত বিষয় বা বস্তুকে সীমাবদ্ধ করে। তাই মহান আল্লাহও বর্ণনার ঊর্ধ্বে। যে আল্লাহ বর্ণনার মধ্যে সীমিত তিনি আল্লাহই হতে পারেন না। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী-আ. নাহজুল বালাগ্বায় বর্ণিত প্রথম খুতবায় বলেছেন, 

আল্লাহর পরিচিতি বা মা‘রেফাতেই  ধর্ম বা দ্বীনের ভিত্তি” । এ মা‘রেফাতের পরিপূর্ণতা আসে তাঁকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেয়ায়; সাক্ষ্যের পরিপূর্ণতা হয় তাঁর একত্বের বিশ্বাসে; বিশ্বাসের পরিপূর্ণতা হয় তাঁকে পরম পবিত্ররূপে নিরীক্ষণ করার জন্য আমল করায়; আমলের পরিপূর্ণতা অর্জিত হয় তাঁর প্রতি কোন সিফাত বা গুণ আরোপ না করায়। কারণ কোন কিছুতে গুণ আরোপিত হলে এটাই প্রমাণিত হয় যে,আরোপিত বিষয় থেকে গুণ পৃথক এবং যার ওপর গুণ আরোপিত হয় সে নিজে সেই গুণ থেকে পৃথক। যারা আল্লাহতে সত্তা বহির্ভূত কোন সিফাত বা গুণ আরোপ করে তারা তাঁর সদৃশতার স্বীকৃতি দেয়; যারা তাঁর সদৃশতা স্বীকার করে তারা দ্বৈতবাদের স্বীকৃতি দেয়; যারা তাঁর দ্বৈতের স্বীকৃতি দেয় তারা তাঁকে খণ্ডভাবে দেখে; যারা তাকে খণ্ডভাবে দেখে তারা তাঁকে ভুল বুঝে; যারা তাঁকে ভুল বুঝে তারা তাঁকে চিনতে অক্ষম; যারা তাঁকে চিনতে অক্ষম তারা তাঁর ত্রুটি স্বীকার করে; যারা তাঁর ত্রুটি স্বীকার করে তারা তাঁকে সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ করে। 

অবশ্য কোনো বিষয়ের ব্যাখ্যা করতে হলে বর্ণনার কোনো বিকল্প নেই। মহান আল্লাহ বর্ণনাতীত -এই কথাটাও এক ধরনের বর্ণনা। আর এ জন্যই সুরা সাফ্‌ফাতের ১৬০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ সম্পর্কে ওরা যেসব বর্ণনা দেয় মহান আল্লাহ সেসব থেকে পবিত্র বা সুব্‌হান। -কেবল আল্লাহর বিশুদ্ধ দাসরাই আল্লাহ সম্পর্কে যা বর্ণনা করেন তা সত্য। কারণ তারা আল্লাহ সম্পর্কে সেসব বর্ণনাই দেন যা আল্লাহ নিজের সম্পর্কে বলেছেন তাঁর বাণীতে।

চার তাসবিহ'র প্রথমেই রয়েছে সুবাহান আল্লাহ

 

 

সুব্‌হান শব্দের আরেকটি অর্থ হচ্ছে সাঁতার কাটা। সাব্বাহ অর্থ পানি ও বাতাসের মধ্যে দ্রুত যাওয়া ও স'বাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে দ্রুত সন্তরণকারী। আর তাই সুব্‌হান হচ্ছেন এমন কেউ যার কাছে দ্রুত যাওয়া যায় ও সহজেই তাঁর আনুগত্য করা যায়। যেমন, মাছ খুব দ্রুত পানিতে সাঁতার কাটে।  মহান আল্লাহর রহমতের দরিয়াতেও সবাই খুব সহজেই সাঁতার কেটে আল্লাহর কাছে পৌঁছতে পারে। আর এ জন্যই তাসবিহ্‌ বা আল্লাহর প্রশংসা করা বা গুণগান করা আল্লাহর সঙ্গে প্রেমময় সম্পর্কের সুন্দরতম প্রকাশ।  তাসবিহ্‌ অর্থ খুব দ্রুত আল্লাহর ইবাদতের দিকে অগ্রসর হওয়া। পবিত্র কুরআনের সুরা আসরার ৪৪ নম্বর আয়াতের বক্তব্য অনুযায়ী আকাশ ও গ্রহ-তারা থেকে শুরু করে বিশ্বের সব কিছুই, গাছের প্রতিটি পাতা ও এমনকি ক্ষুদ্র অণু-পরমাণুও এবং প্রত্যেক জীব-জন্তু মহান আল্লাহর প্রশংসায় শরিক বা মশগুল।  মহান আল্লাহ এ আয়াতে বলেছেন: 

সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যাকিছু আছে সমস্ত কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এবং এমন কিছু নেই যা তার সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা, মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। নিশ্চয় তিনি অতি সহনশীল, ক্ষমা-পরায়ণ। 

অন্য কথায় সবাই কোনো না কোনোভাবে মহান আল্লাহর প্রশংসা করছে, তবে কেবল ইমানের আলোয় আলোকিত হৃদয়ের অধিকারীরাই তাদের তাসবিহ বা আল্লাহর গুণগানের শব্দ হৃদয়ের কান দিয়ে শুনতে পায়। সাধারণ অর্থে আল্লাহর জিক্‌র করা বা স্মরণ করাকেও তাসবিহ্‌ বলা হয়। এই স্মরণ মুখের ভাষার মাধ্যমেও হতে পারে আবার হৃদয় দিয়েও হতে পারে। 

পবিত্র কুরআনে যে জিক্‌র বা তাসবিহ্‌'র ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে তা হল সুব্‌হান আল্লাহ।  এ জিক্‌র মহানবীর (সা) জন্য ওয়াজিব করা হয়েছে। নামাজের রুকু ও সিজদার জিক্‌র- হিসেবেও সুব্‌হান আল্লাহ পড়তে হয়। তাই এই তাসবিহ'র গুরুত্ব অন্য সব জিকিরের চেয়েও বেশি। তাসবিহাতে আরবাহ বা চার তাসবিহ'র মধ্যেও এই তাসবিহ রয়েছে সর্বাগ্রে। 

তাসবিহাতে আরবাহ বা চার তাসবিহ হল: সুব্‌হান আল্লাহ ওয়া আলহামদুলিল্লাহ ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবার। -এর অর্থ হল মহান আল্লাহ পবিত্র এবং সব প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই জন্য নির্ধারিত, আর আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য বা মাবুদ নেই এবং আল্লাহ তার চেয়েও অনেক বড় যা তাঁর সম্পর্কে বলা হয় বা বর্ণনা করা হয়

তাসবিহাতে আরবাহ বা চার তাসবিহ'র মধ্যে এই তাসবিহ তথা সুব্‌হান আল্লাহ থাকার অর্থ হল প্রশংসাকারীকে সব কিছুর আগে মহান আল্লাহর মধ্যে যে কোনো ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাও নেই সে বিষয়টি মনে করিয়ে দেয়া। মহান আল্লাহ সব কিছুর চেয়ে বড়- 'আল্লাহু আকবার'-তাসবিহ্‌ বা জিক্‌র-এর এই অর্থকে অনেকেই ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করেন। কারণ তাদের মতে এখানে 'সব কিছু' শব্দটি উল্লেখ করে মহান আল্লাহকে তুলনা করা হচ্ছে সৃষ্টিকুলের সব কিছু বা যে কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনায় এনে! কারণ আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছুই হল সৃষ্ট বস্তু বা সত্ত্বা এবং সেসব যত বড়ই হোক না কেন সীমাবদ্ধ সত্ত্বা মাত্র! অন্য কথায় মহান আল্লাহকে এ ধরনের বড় ভাবা থেকেও পবিত্র মনে করতে হবে।

আর মহান আল্লাহ পবিত্র ও ত্রুটিহীন ও সীমাহীন বলেই প্রশংসার যোগ্য এবং এ প্রশংসা তথা সুব্‌হান আল্লাহ নামক প্রশংসা বা তাসবিহ্'র পরই এসেছে আলহামদুলিল্লাহ নামক প্রশংসা/ যার অর্থ সব প্রশংসা তো কেবল তাঁরই- যাতে মহান আল্লাহর ওই পবিত্রতার ও ত্রুটিহীনতার জন্যও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।