এপ্রিল ১৫, ২০২৩ ১৫:১৩ Asia/Dhaka

রোজার উদ্দেশ্য হল খোদাভীতি তথা খোদা-সচেতনতা অর্জনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা।

পাপ থেকে তওবা করা মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম পন্থা। মহান আল্লাহ অনুতপ্ত তওবাকারীকে খুবই ভালোবাসেন বলে কুরআনে উল্লেখ করেছেন।

কোনো এক ব্যক্তির পরিবার সাগর পথে নৌকায় ভ্রমণ করতে গিয়ে নৌকা ভেঙ্গে যাওয়ায় পরিবারের প্রায় সব সদস্য প্রাণ হারায়। কেবল ওই ব্যক্তির গিন্নি একটি ভাঙ্গা তক্তা ধরে ভেসে থেকে একটি দ্বীপে পৌঁছে। ওই দ্বীপে ছিল এক যুবক দস্যু যে সব ধরনের পাপে অভ্যস্ত ছিল। সে এই নারীকে দেখে বলল: তুমি কি মানুষ না জিন? ওই নারী বলল: আমি নারী। দস্যুটি ওই নারীর সঙ্গে যৌনাচারে লিপ্ত হতে চাইলে অসহায় সেই নারী খুবই পেরেশান ও উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। ওই দস্যু তখন প্রশ্ন করে: কেনো ভয় পাচ্ছ? নারী আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে বলল: আল্লাহকে ভয় পাচ্ছি। দস্যুটি বলল: তুমি কি আগে এমন কাজ করনি? ওই নারী মহান আল্লাহর সম্মানের শপথ করে বলল আমি কখনও ব্যভিচার করিনি। দস্যু যুবকটির যেন বিবেক খুলে গেলো মুহূর্তের মধ্যে।

দস্যু যুবকটি তখন ওই নারীকে বলল: তুমি কখনও ব্যভিচার না করেই আল্লাহকে এভাবে ভয় করছ! তাহলে আমার অবস্থার কারণে আল্লাহর ভয়ে আমার তো আরো অনেক বেশি ভীত হওয়া উচিত! এরপর সে নিজ ঘরের ও পরিবারের দিকে ফিরতে ফিরতে তওবার কথা ভাবতে লাগল। পথে দরবেশ শ্রেণীর এক ব্যক্তি এই যুবককে বলল: আল্লাহর কাছে আমার জন্য একটু মেঘ প্রার্থনা কর! যুবকটি বলল: আল্লাহর কাছে আমার ভালো কাজের কোনো রেকর্ড নাই যে তাঁর কাছে কিছু চাইব! তখন ওই সাধক বললেন: ঠিক আছে, আমি দোয়া করছি, তুমি শুধু আমিন বলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেঘ চলে এসে চলন্ত এই দুজনের ওপর ছায়া দিতে থাকলে ওই সাধক ভিন্ন পথের মুখে এসে বিদায় নিতে গিয়ে দেখলেন মেঘটি এখন কেবলই যুবককে ছায়া দিচ্ছে।  তখন ওই সাধক যুবকটিকে বললেন, তুমি আমার চেয়েও ভালো মানুষ, তুমি আমিন বলাতেই আমার দোয়া কবুল হয়েছিল! ব্যাপারটা কি বলো তো! যুবকটি তখন সেই পবিত্র চরিত্রের খোদাভীরু নারীর ঘটনাটি বলল। সাধক বললেন: তোমার মধ্যেও আপাদমস্তক আল্লাহর ভয় চলে আসায় তোমার পাপগুলো আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন, তবে ভবিষ্যতের কাজকর্মের বিষয়ে সতর্ক থেকো। 

মহান আল্লাহর নবী-রাসুলদের মিশনের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল মানুষকে খোদাভীরু তথা খোদা-সচেতন করা। মহান আল্লাহ কুরআনে বলেছেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকী বা খোদা-সচেতনদের ভালোবাসেন। এ ছাড়াও মহান আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের ভালো কাজই কবুল করেন বলে উল্লেখ করেছেন। মানুষের মধ্যে মুত্তাকীরাই শ্রেষ্ঠ বলেও তিনি কুরআনে উল্লেখ করেছেন। অনেক সাধারণ বংশের বা দরিদ্র শ্রেণীর মানুষও মুত্তাকী হওয়ার কারণে উচ্চ বংশের বা ধনী ব্যক্তির চেয়েও আল্লাহর বেশি প্রিয়পাত্র হন। স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে যে বেশি খোদা-সচেতন আল্লাহর কাছে তার মর্যাদাই হবে বেশি এবং আল্লাহর কাছে বংশের কোনো গুরুত্ব নেই। আল্লাহ মুত্তাকীদের বেশি ভালোবাসেন এ কারণে যে তারা নিজ পছন্দের ওপর আল্লাহর পছন্দ ও নির্দেশকে গুরুত্ব দেন।

জোলায়খা খোদা-সচেতন ছিল না বলেই প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হয়েও দারিদ্রের শিকার হয়। একদিন দুর্ভিক্ষের সময় ইউসুফ নবীর যাওয়ার পথে সে দাঁড়িয়ে ছিল ভিক্ষা পাওয়ার আশায়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইউসুফ নবী দলবল ও গাড়ি বহর নিয়ে যখন তার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন জুলাই-খা বলতে বাধ্য হল: পবিত্র তিনি যিনি পাপের কারণে শাসনকর্তাদের করেন দাস ও খোদার আনুগত্যের কারণে দাসদের করেন বাদশাহ!

ইউসুফ নবী রূপ-শ্রীহীন বিগত-যৌবনা জুলাইখাকে দেখে প্রশ্ন করেন, তুমিই কি সেই জুলাই-খা? জুলাই-খা বলল: হ্যাঁ, আমি সম্পদ ও রূপের ধোঁকায় পড়েছিলাম! কারণ আমি ছিলাম মিশরের সবচেয়ে সুন্দরী ও ধনী নারী! এখন আমার কাছে সে দু'টির কোনোটিই নেই!

মহানবী (সা)ও গভীর খোদা-সচেতনতা বা তাকওয়ার কারণে হযরত বেলাল, আম্মার ইয়াসির ও সালমান ফার্সির মত সাবেক দাসদের খুব সম্মান দিতেন এবং তাদের স্নেহ করতেন।

খোদা-সচেতন বা মুত্তাকী হওয়ার পথ হল আল্লাহর বিধি-বিধান তথা হালাল ও হারাম মেনে চলা, আল্লাহকে সব সময় হাজির নাযির জানা এবং বিপদে আপদে ধৈর্য ধরাসহ আরও অনেক মহত গুণের অধিকারী হওয়া। খোদাভীরু ব্যক্তি জানেন যে রিজিক দেন আল্লাহ , আর আল্লাহর রাজ্য থেকে পালানো বা বের হওয়া সম্ভব নয়, এমন কোনো স্থান নেই যেখানে আল্লাহ তাকে দেখছেন না; যেদিন মৃত্যুর ফেরেশতা প্রাণ নিতে আসবেন সেদিন তাঁকে বাধা দেয়াও সম্ভব নয়  এবং যেদিন দোযখের প্রহরী পাপের কারণে দোযখে নিক্ষেপ করবেন পাপীকে সেদিনও সেই প্রহরীকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই এইসব অক্ষমতার কারণেই মানুষের উচিত পাপ বর্জন করা। পাপ বর্জনের এক বড় উপায় হল রোজা রাখা। কারণ রোজার মাধ্যমে মানুষ পাপ-প্রবৃত্তি এবং কামনা-বাসনাকে দমন করতে শেখেন। এক মাস ধরে বৈধ পানাহার ও বৈধ নানা চাহিদা মেটানোকে দমিয়ে রাখার অনুশীলন করতে করতে মুমিন মানুষ এরপর সারা বছরে যে কোনো ধরনের পাপ বর্জন করার ক্ষমতা অর্জন করেন।

ইসলাম মানুষকে পার্থিব প্রয়োজনীয় বিষয় ব্যবহার করতে বলে, কিন্তু দুনিয়া-পূজারি হতে তথা দুনিয়ার প্রেমিক হতে নিষেধ করে। দুনিয়াপুজারিরা কখনও তাকওয়া বা খোদাসচেতনতার অধিকারী হতে পারে না বলে ইসলামের মহান নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করে গেছেন। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ