মে ১৭, ২০২৩ ২৩:৩০ Asia/Dhaka

শ্রোতা ভাই ও বোনেরা, যৌবনকালের নানা সুবিধার দিক ও এসবকে কাজে লাগানো এবং এ সম্পর্কে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছি আমরা গত দুই পর্বে। আজ আমরা যৌবনে আত্ম-গঠন ও আত্মবিশ্বাস সৃষ্টির বিষয়ে আলোকপাত করব।

হে দুরন্ত পথিকের দল! এসো গাই মুক্ত তারুণ্যের দুর্বার জয়গান 
যে তারুণ্য দেশে দেশে এনে দেয় অমিত শক্তির অনন্য তুফান! 

যে তারুণ্য জ্বালায় দেশে-দেশে বীরত্ব ও ত্যাগের শিখা অনির্বাণ 
ঘন-অন্ধকারের কালিমা চিরে জ্বালায় জ্ঞানের প্রদীপ্ত অগ্নি-বাণ!  

হে অগ্র-পথিকের দল! জ্ঞানের প্রদীপ জ্বেলে হও আগুয়ান 
জেনে নাও বিধান আর সাম্যদাতার চিরঞ্জীব ঐশী সংবিধান! 
হেরার প্রদীপ্ত মিছিলের তরুণ সঙ্গীরা হাতে নিয়ে আল্‌কুরআন 
দুর্বার বেগে হেনে নব-নবীনের অনন্য শক্তির প্রবল মুষ্ট্যাঘাত 
হতাশার রাত টুটে আনবেই আনবে মুক্তির সোনালী প্রভাত।  


যৌবনকাল হচ্ছে জীবনের বসন্তের মত। জীবন-বৃক্ষের ফুল ও অন্যান্য অংশের যেসব চাহিদা রয়েছে সেসব সময়মত মেটানো না হলে উন্নত জীবন গড়া খুব কঠিন বা অসম্ভব হয়ে উঠবে। জীবনে সৌভাগ্য অর্জনের ভিত্তিগুলো রচনার সোনালি সময়ই হল যৌবনকাল। সাফল্যের নানা ফুল ফোটাতে হলে এ সময়ই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ সময়। ইবাদত, আত্ম-গঠন, সংগ্রাম, শিক্ষা অর্জন, সামাজিক ও ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে নানা দায়িত্ব গ্রহণ এবং উন্নত নৈতিক ও চারিত্রিক গুণাবলীসহ নানা যোগ্যতার বিকাশের সবচেয়ে ভালো সময় হল যৌবনকাল। আত্মগঠনের রয়েছে নানা দিক। যেমন, জ্ঞান-গবেষণা ও চিন্তাগত ক্ষেত্রে আত্ম-গঠন এবং শারীরিক, ধর্মীয় ও নৈতিক দিক থেকে নানা গুণ বা যোগ্যতা অর্জন।  

জাতীয় অগ্রগতি অনেকাংশেই যুব সমাজের অগ্রগতির ওপর নির্ভরশীল। যুব সমাজের প্রাথমিক কাজ হল নিজেদের গুরুত্ব বোঝা এবং এরই আলোকে তাদের উচিত সুপ্ত নানা যোগ্যতা বিকাশে সচেষ্ট হওয়া ও নেতিবাচক দিক বা স্বভাবগুলো বর্জন করা। পবিত্র কুরআনের সুরা মায়েদার ১০৫ নম্বর আয়াতের প্রথমাংশে বলা হয়েছে: হে মুমিনগণ, নিজেদের  প্রতি যত্নশীল বা নিজেদের সুরক্ষায় সক্রিয় হও তোমরা।  - অন্য কথায় এখানে  নিজেকে জানার পাশাপাশি নানা দিক থেকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার এবং প্রতিকূলতাগুলোর মোকাবেলায় নিজেকে রক্ষার দিকেও ইঙ্গিত রয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন । 

শারীরিক দিক থেকে যুব সমাজ বেশি শক্তিশালী। এ ছাড়াও তারা বেশ সৃষ্টিশীল ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার অধিকারী। আর এ কারণেই তারা আত্মবিশ্বাসী হতে পারে যথেষ্ট মাত্রায়। অন্য কথায় দৃঢ়চেতা যুবক যুবতিদের অভিধানে ব্যর্থতা, অসম্ভব বা অক্ষমতা জাতীয় কোনো শব্দ নেই। দৃঢ় আত্মবিশ্বাস ও সংকল্পের সুবাদে তারা উন্নতির সব চূড়াগুলোয় পৌঁছে যেতে সক্ষম। আত্মবিশ্বাস তাদের মধ্যে যোগায় স্বাধীনতা ও স্বনির্ভরতার চেতনা। আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ হয়ে পড়ে অলস ও বেকার।

বলা হয় আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ) বলেছেন, কোনো কাজকে জটিল বা কষ্টকর মনে হলে দৃঢ়-চিত্ত হও যাতে ওই কাজ বশীভূত হয় এবং জীবনের নানা ঘটনার বিষয়ে কৌশলী হয়ে সেসবকে সহজ করতে হবে।  

যৌবনে মানুষের মধ্যে যৌন-প্রবৃত্তিসহ জৈবিক প্রবৃত্তিগুলো খুব তীব্র হয়ে থাকে। তাই এ সময়ে অসংযমী হল মানুষের বিপথগামিতার আশঙ্কা থাকে। যারা আত্মিক পবিত্রতার গুরুত্ব বোঝেন তারা যৌন-প্রবৃত্তির দাস হওয়ার মত নোংরা অবস্থা ও ব্যভিচারের মত অপবিত্রতা ও পাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হন। 

কুখ্যাত খোদাদ্রোহী ও মহাপাপী ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার এক ছেলেকে শিক্ষা দীক্ষা দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ওমর আল মাকসুম নামের এক ব্যক্তিকে। এই শিক্ষক ছিলেন একজন মুমিন ব্যক্তি এবং মহানবীর (সা) আহলে বাইতের অনুসারী। ফলে মুয়াবিয়া ও তার সন্তানের জুলুম ও নৃশংসতাকে তিনি মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন। এই শিক্ষকের প্রভাবে ইয়াজিদের ছেলেও হয়ে ওঠে প্রকৃত মুমিন ও সৎ-সাহসি। ফলে তার ২০ বছর বয়সে পিতা ইয়াজিদ মারা গেলে ক্ষমতা লাভের সুযোগ পেয়েও দ্বিতীয় মুয়াবিয়া নামে খ্যাত এই ব্যক্তি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং নিজের দাদা ও পিতার কর্মকাণ্ডগুলোকে অত্যন্ত জঘন্য ও লজ্জাজনক কাজ হিসেবে উল্লেখ করে অবৈধ খেলাফত, ক্ষমতা ও ভোগ-বিলাসের লোভনীয়, পাপ-পঙ্কিল ও চাকচিক্যময় নোংরা জীবন থেকে নিজেকে দুরে রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

আত্মগঠন ও আত্ম-সংশোধন-পিয়াসী যুবক বা যুবতী আত্মিক দিক থেকে পবিত্র হতে আগ্রহী হয়। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ বা পবিত্র হয়। (সুরা আ'লা,১৪) সুরা শামছ-এর ৯ নম্বর আয়াতেও বলা হয়েছে: যে নিজেকে শুদ্ধ করে সে-ই সফলকাম হয়। 

তওবা করা সুন্দর কাজ, আর যৌবনেই তওবা করা বেশি সুন্দর

 

চারিত্রিক দিক থেকে পবিত্র থাকা সব বয়সেই জরুরি। তবে যৌবনে এর সৌন্দর্য আরও বেশি আকর্ষণীয়। মহানবী (সা) বলেছেন, তওবা করা সুন্দর কাজ, আর যৌবনেই তওবা করা বেশি সুন্দর। -আসলে যুবক-যুবতীদের আত্মিক সৌন্দর্য তওবার মাধ্যমে দ্বিগুণ বেড়ে যায় এবং এর ফলে তারা আল্লাহর বেশি প্রিয় হন।    

যারা যৌবনকালে নিজেদের শুদ্ধ ও পবিত্র করতে পারে না বার্ধক্যে তা অর্জন করা তাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ যুব বয়সে আত্মা বেশ কোমল ও ধর্মমুখি হয়ে থাকে এবং পাপের প্রতি আকর্ষণও দুর্বল থাকে। কিন্তু বয়স যখন বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে তখন হৃদয়ে পাপের শেকড়গুলো জোরালো হয়ে পড়ে, ফলে সেসব উপড়ে ফেলা তখন বেশ কঠিন বা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও কার মৃত্যু কখন হবে তা কেউ জানে না। তাই বার্ধক্যের অপেক্ষায় থেকে নিজেকে পবিত্র বা শুদ্ধ করার চিন্তা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ