মে ২৩, ২০২৩ ১৪:২০ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর খুব বেশি দেরি নেই। দেশব্যাপী আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা গুঞ্জন। তো দেশটির আগামী নির্বাচন এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আমরা কথা বলেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমানের সঙ্গে।

রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে যেকথা বলেছেন সেটি কীভাবে কার্যকর হয় তা জনগণ দেখবে। জনগণের নির্ধারণই গণতন্ত্রের প্রধান নিয়ামক হওয়ার কথা।

তিনি বলেন, 'ওয়েস্ট মিনিস্টার' ফর্ম অফ গভর্ণমেন্ট এ নতুন করে কোনো সরকার গঠনের সুযোগ নেই। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার হবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের কাঠানো অনুসারে নতুন করে অন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করে নির্বাচনের আপাতত কোনো সুযোগ নেই।

বিস্তারিত সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন সিরাজুল ইসলাম। উপস্থাপনা ও প্রযোজনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক গোলাম রহমান, সাক্ষাৎকারের শুরুতেই যে বিষয়টি জানতে  চাইব-  সেটি হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। আসলে ব্যাপারটা কী এত সহজ-সরলভাবে দেখার সুযোগ আছে?

অধ্যাপক গোলাম রহমান: ধন্যবাদ। আমার মনে হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে কথাটি বলেছেন-এর আগেও কিন্তু একইভাবে তিনি একই কথা বলেছেন। তিনি বলেছিলেন জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। জনগণ ভোট দিলে তারা ক্ষমতায় থাকবেন না দিলে চলে যাবেন। কথাটা তিনি খুব সহজ করে বলার চেষ্টা করেছেন। তবে কথাটা সহজ নাকি কঠিন সেটি নির্ভর করবে পরবর্তী কার্যক্রম কী হবে তার ওপর। আওয়ামী কীভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে দেখবেন, কীভাবে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন সে সবের ওপর নির্ভর করবে। সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে যেকথা বলেছেন সেটি কীভাবে কার্যকর হয় সেটি জনগণ দেখবে। তবে একথা ঠিক যে গণতান্ত্রিক চর্চায় যেকোনো নির্বাচনে ভোট দেয়া জনগণের দায়িত্ব আর রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। আর জনগণের ম্যান্ডেটের ওপর রাজনৈতিক দলগুলো  নির্ভর করবেন। নিশ্চয়ই তারা জনগণের মতামত, কথা এবং ভোটের ওপর গুরুত্ব দেবেন। আর জনগণের নির্ধারণই গণতন্ত্রের প্রধান নিয়ামক হওয়ার কথা।

রেডিও তেহরান: জ্বি অধ্যাপক গোলাম রহমান, অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এমন প্রশ্ন করছেন, যদি নির্বাচনে বিজয়ের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নিজের এবং তার দলের বিশেষ আকাঙ্ক্ষা না থাকে তাহলে তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ইচ্ছুক না কেন? পর্যবেক্ষকদের এই বক্তব্যকে আপনি কিভাবে দেখেন?

অধ্যাপক গোলাম রহমান: দেখুন, এখানে বিষয়টি হচ্ছে পর্যবেক্ষকরা বিভিন্নভাবে নির্বাচন কতখানি অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য হচ্ছে সেটি দেখবেন এবং দৃষ্টি দেবেন। তবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যে ব্যবস্থা সেটি হচ্ছে 'ওয়েস্ট মিনিস্টার' ফর্ম অফ গভর্ণমেন্ট। ওয়েস্ট মিনিস্টার ফর্ম অব ডেমোক্রেসি। এরফলে নতুন করে কোনো সরকার গঠনের সুযোগ নেই। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার হবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর সেটি হচ্ছে যারা ক্ষমতাসীন তারাই শুধুমাত্র পরিচালনা করবেন। তবে এখানে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। নির্বাচন কমিশন তাদের নিজেদের দায়িত্ব বজায় রেখে তারা নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন। আর এটাই নির্বাচন করার যে দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ব সেটি নির্বাচন কমিশনকে এককভাবে দেয়া আছে। একইসাথে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এবং নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী  জনগনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। এরফলে দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে। নাগরিকগণ নিশ্চিতভাবে ভোটের সুযোগ পাবে এ বিষয়টি ঠিক করতে হবে এবং ফলাফল যেন মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের কাঠানো অনুসারে নতুন করে অন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করে নির্বাচনের আপাতত কোনো সুযোগ নেই।

রেডিও তেহরান: জনাব গোলাম রহমান, এই প্রশ্নের পাল্টা প্রশ্ন হিসাবে অনেকে একথা বলে থাকেন সংবিধান জনগণের জন্য আর গণতন্ত্রের মূল কথাই হচ্ছে জনগণের চাওয়া পাওয়া। সেক্ষেত্রে যদি জনগণের চাওয়ার পাওয়ার প্রশ্ন থাকে, নিরনেপক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্ন থাকে তাহলে  সেখানে সংবিধান কি পরিবর্তন করা যায় না?

অধ্যাপক গোলাম রহমান: হ্যাঁ এমন কথা আছে। তবে এটি বিরোধী দলের কথা। আবার একই পরিমাণ লোকের বিপক্ষে যুক্তি আছে বিশেষ করে এই প্রশ্নে। বিশ্বের কয়টি দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা আছে এবং তাদের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। ঐতিহাসিক দিক থেকে একটা সময় আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন ছিল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিল। কিন্ত ওয়েস্ট মিনিস্টার ফর্ম অব গভর্মনেন্টে তো এই ধারণা নেই। এইজন্য সংবিধান সংশোধনের প্রশ্নই এখানে অবান্তর। এখন এটি হতে পারে স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ যদি বিরোধী দল সংখ্যাগরিষ্ঠ হন তাহলে পরবর্তীকালে তারা সংবিধান পরিবর্তন করতে পারবেন। এটা তাদের ওপর নির্ভর করবে।

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে অধ্যাপক গোলাম রহমানের সাক্ষাৎকার শুনছেন। ফিরছি শিগগিরিই আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: আবারও ফিরে এলাম সাক্ষাৎকারে। জনাব গোলাম রহমান,  ১৫ মে যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে তিনি বলেছেন, যেসব দেশ বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে সেসব দেশ থেকে কোনো পণ্য কেনা হবে না। এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য কতটা সঠিক হবে?

অধ্যাপক গোলাম রহমান: দেখুন, এটা সরকারি সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে বলা আছে যে সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শক্রতা নয়। ফলে কারও প্রতি বিরূপ মনোভাব না রেখে আমরা সবার বন্ধুত্ব কামনা করি। এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত দৃষ্টিভঙ্গি। সেখানে যদি কোনো রাষ্ট্র বা কেউ রুষ্ট হয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয় সেখানে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু সেটা কতখানি উচিত অনুচিত তা নির্ভর করবে পরবর্তীকালে তাদের কার্যক্রম এবং ব্যবহারের ওপর। সুতরাং আচার আচারণকে লক্ষ্য করে এগুতে হবে।

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক গোলাম রহমান, আমরা সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। সবশেষে আপনার কাছে জানতে চাইব,  সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রাস্ফীতির সাথে তাল মিলিয়ে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তাতে কি সমাজের বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্য আরো বাড়বে না? বেতন বাড়ানোর সাথে বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির একটা সম্পর্ক কিন্তু রয়েছে। আপনি কি বলবেন?

অধ্যাপক গোলাম রহমান: হ্যাঁ, এটা খুবই জরুরি একটা বিষয়। বিশ্বজুড়ে কভিডের যে বড় সংকট গেল তাতে করে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। তারপর সাম্প্রতিক রাশিয়া –ইউক্রেন যুদ্ধ। এর কারণেও বিশ্বের অনেক দেশে অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। বাংলাদেশের মতো সতেরো কোটি মানুষের দেশে সবাই কিন্তু খেয়ে পরে বেঁচে আছে এটা একটা বড় ব্যাপার।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যেহেতু জিনিষপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি ঘটছে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে অর্থনৈতিক চাপ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতনের সাথে মুদ্রাস্ফীতির সাথে সমন্বয় করে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব রেখেছে সরকার। আমার মনে হয় এটা খুবই যুক্তিসঙ্গত। তবে হ্যাঁ এর প্রভাব কিন্তু খোলা বাজারে পড়বে। অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে বিষয়টিকে অস্বীকার করা যাবে না। এরফলে অধিকাংশ মানুষের রোজগার বাড়ার সুযোগ নেই। আর তাদেরকে অর্থনৈতিক চাপে পড়তে হবে।

তো অধ্যাপক গোলাম রহমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে কথা বলার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

অধ্যাপক গোলাম রহমান: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৩

 

ট্যাগ