মে ২৭, ২০২৩ ১৯:৩৬ Asia/Dhaka

পৃথিবীর সবচেয়ে কমন রোগগুলোর মধ্যে একটি ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ। আান্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ, ২০২১ সালের এটলাসের ১০ম সংস্করণ) হিসাব মতে, বর্তমানে বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫৪ কোটি। ডায়াবেটিস যেহেতু বহুলাংশেই (৭০ শতাংশ পর্যন্ত) প্রতিরোধযোগ্য, ফলে এখনই যদি এ রোগের প্রতিরোধ না করা হয়, তাহলে এই সংখ্যা ২০৪৫ সাল নাগাদ প্রায় ৭৮ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গতবছর অর্থাৎ ২০২২ সালে বাংলা দেশে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিল। বাংলাদেশে দিন দিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস এখন মহামারি হয়ে উঠছে। সারা বিশ্বে এটি একটি আতঙ্কের নাম হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। তো এই ডায়াবেটিস, বহুমূত্র বা মধুমেহ রোগটি নিয়ে আমরা কয়েক পর্বে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করব। আর আমাদের সঙ্গে অতিথি হিসেবে থাকছেন মেডিসিন ও ডায়বেটিস  বিশেষজ্ঞ ডা. আবু কামরান রাহুল।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ, উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব ডা. আবু কামরান রাহুল রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

ডা. আবু কামরান রাহুল: আপনাকেও ধন্যবাদ।

রেডিও তেহরান: ডা. আবু কামরান রাহুল, আলোচনার শুরুতেই সবার অতি পরিচিত রোগ ডায়াবেটিস কি সেটি যদি খুব সহজ করে বুঝিয়ে বলেন?

ডা. রাহুল: ডায়াবেটিস মেলাইটাস বা বহুমূত্র  রোগ একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট মেটাবলিক ডিসওর্ডার বা বিপাক জনিত রোগ। আমাদের পেটের ভিতর অগ্নাশয় বা প্যানক্রিয়াস নামক একটি গ্রন্থি থেকে ইনসুলিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয় যা রক্তের গ্লুকোজ দেহের বিভিন্ন কোষের মধ্যে পৌছিয়ে শক্তি উৎপন্ন করতে সহায়তা করে। কোন কারণে যদি অগ্নাশয় থেকে যথেষ্ট পরিমাণ ইনসুলিন নিঃসৃত  না হতে পারে কিংবা ইনসুলিন অকার্যকর হয়ে যায় তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ।

রেডিও তেহরান: ডা. রাহুল আপনি ডায়াবেটিসকে মেটাবলিক ডিসঅর্ডার বললেন, বললেন ইনসুলিনের কথা। এই দুটো বিষয় যদি খুব সহজ করে একটু বলেন তাহলে সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

ডা. রাহুল: মেটাবলিক ডিজঅর্ডার হচ্ছে বিপাক জনিত রোগ। আর বিপাক হচ্ছে খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তর করা।

আমরা যখন গ্রহণ করি, শর্করা, আমিষ বা স্নেহ জাতীয় খাবার তা আমাদের পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রে পরিপাক হয়ে রক্তে পৌঁছায় এবং রক্ত থেকে মেটাবলিজম বা বিপাক এর মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন কোষে খাবার পৌঁছায় এবং শক্তি উৎপন্ন করে, যার ফলশ্রুতিতে আমরা সক্রিয়ভাবে কাজকর্ম  করতে পারি।

আর শর্করা জাতীয় খাবার (যেমন ভাত) পরিপাক হয়ে রক্তে গ্লুকোজ উৎপন্ন করে এবং ইনসুলিন নামক হরমোন যা অগ্নাশয় থেকে নিঃসৃত  হয়ে রক্তের গ্লুকোজ কে দেহের কোষেট মধ্যে পৌছিয়ে শক্তি উৎপন্ন করে।

এখন যদি ইনসুলিন নামক হরমোন অগ্নাশয় থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ না আসে কিংবা ইনসুলিন এর ক্ষমতা ও কার্যকর হয়ে যায় তাহলে গ্লুকোজ মেটাবলিজম ঠিক মত হবে না এবং ডায়াবেটিস এর লক্ষণ দেখা দিবে।

পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা, ডায়াবেটিস নিয়ে বিশেষজ্ঞ ডা. আবু কামরান রাহুলের আলোচনা শুনছেন। ফিরছি শিগগিরি। আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: ডা. রাহুল আপনি ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক ডিসঅর্ডার এবং ইনসুলিনের বিষয়টি সুন্দর করে বললেন। এবারে জানতে চাইব -কেন ডায়াবেটিস হয় সেটি যদি একটু পয়েন্ট আকারে বলেন?

ডা. রাহুল: ধন্যবাদ, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন।  ডায়াবেটিসের মূলত চারটি ধরন রয়েছে।

১. টাইপ-১ ডায়াবেটিস

২. টাইপ-২ ডায়াবেটিস

৩. গর্ভাকালীন ডায়াবেটিস

৪. অন্যান্য নির্দিষ্ট কারণ ভিত্তিক :

-অগ্নাশয়ের বিভিন্ন রোগ

-দীর্ঘদিন স্টেরোয়েড জাতীয় ঔষধ সেবন

-সংক্রামক ব্যাধি

-জেনেটিক কারণে ইনসুলিন তৈরি কম হওয়া বা তার কার্যকারীতা নষ্ট হওয়া

বর্তমানে ৯০ ভাগের উপরে ডায়াবেটিস হচ্ছে টাইপ-২

এখন এই টাইপ-২ ডায়াবেটিস কি জন্য হয় এর কারনগুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় :

১. জেনেটিক বা বংশগত প্রভাব

২. পরিবেশগত প্রভাব বা জীবন অভ্যাস।

যদি পয়েন্ট আকারে বলি:

১. বংশে ডায়াবেটিস:

কারো বংশে ডায়াবেটিস থাকলে সেটার প্রভাব অনেক বেশি হয়, নিকট আত্বীয়ের ডায়াবেটিস, মা-বাবা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, চাচা-ফুফু, মামা-খালা, দাদা-দাদী ও নানা-নানী এদের ডায়াবেটিস থাকলে যেকোনো ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। 

২. বয়স: বয়স বৃদ্ধের সাথে ডায়াবেটিসের ঝুকি বেড়ে যায়। সাদারণত ৪০ বছর বা তারপরে ডায়াবেটিস দেখা দেয়। তবে ৩০ বৎসরের নিচে এই ধরনের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।

৩. ওজনাধিক্য / স্থুলতা: যাদের ওজন ও কোমরের পরিধি বেশী

৪. শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম : যারা শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করে না।

৫. গর্ভাবস্থা: গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস হতে পারে।

৬. মা ডায়াবেটিক : গর্ভকালীন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে সন্তানের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়

৭. ঔষধ সেবন : দীর্ঘদিন বিশেষ কোনো ঔষধ সেবন করলে ডায়াবেটিস হতে পারে।

রেডিও তেহরান: ডা. রাহুল, ডায়াবেটিস যে হয়েছে সেটি কীভাবে বুঝতে পারা যাবে। অর্থাৎ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো কী?

ডা. রাহুল: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন লক্ষণ ছাড়াই ডায়াবেটিস হতে পারে।

উল্লেখযোগ্য কিছু উপসর্গ হলো :

১. অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা

২. অতিরিক্ত পিপাসা লাগা

৩. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া

৪. যথেষ্ট হওয়া সত্বেও ওজন কমে যাওয়া

৫.  ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করা

৬.  খোশ-পাঁচরা, ফোঁড়া প্রভৃতি চর্মরোগ দেখা দেয়া।

৭. এছাড়া ও

চোখে ঝাপসা দেখা, ঘন ঘন চশমা বদল, পা জ্বালাপোড়া করা, কাটা-ছেঁড়া সহজে না শুকানো।

রেডিও তেহরান: ডা. রাহুল আমাদের হাতে আজ আর সময় নেই, ডায়াবেটিস নিয়ে রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে আবারও অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। 

ডা, রাহুল: আপনাকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৭

 

 

ট্যাগ