জুন ১৫, ২০২৩ ২৩:৫২ Asia/Dhaka

তৃতীয়বারের মতো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রজব তাইয়্যেব এরদোগান। সাম্প্রতিক সময়ে এ নির্বাচনের দিকে চোখ ছিল বিশ্বের। নির্বাচন রান অফ পর্যন্ত গড়িয়েছিল-যেটি সম্ভবত রেকর্ড। তো তুরস্কের সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নিয়ে আজ আমরা কথা বলেছি বিশিষ্ট লেখক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক আমিনুল ইসলাম শান্ত'র সঙ্গে।

জনাব আমিনুল ইসলাম শান্ত, রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান:  তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান আবারো তুমুল প্রতিদ্বন্দিতার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে। তবে নির্বাচন রান অফ পর্যন্ত গড়িয়েছে এটি সম্ভবত রেকর্ড। বিষয়গুলোকে কিভাবে দেখছেন?

আমিনুল ইসলাম শান্ত: ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি যেভাবে প্রশ্ন ও ব্যাখ্যা করলেন যে তুরস্কের নির্বাচন রান অফ পর্যন্ত গড়িয়েছে। এটা গোটা বিশ্বের জন্য অনেক বেশি আগ্রহের একটি বিষয় ছিল। কারণ এখানকার ইলেকটোরাল সিস্টেমে প্রথম দফায় যদি  কোনো প্রার্থী শতকরা ৫০ ভাগ ভোট না পান তাহলে দুই সপ্তাহ পর পুনরায় দুই নিকটতম প্রতিন্দ্বন্দ্বীর মধ্যে দুই সপ্তাহ পর পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যেটাকে রান অফ বলা হয়।

এই রান অফ ভোটে যাওয়ার আগের প্রেক্ষাপটটা একটু তুলে ধরতে যাই। প্রথম পর্বের নির্বাচনে প্রসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন চারজন। এরমধ্যে থেকে একজন প্রার্থী নির্বাচনের মাত্র দুদিন আগে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। তারপরও নির্বাচন কমিশন দুদিনের মধ্যে নতুন ব্যালট ছাপাতে পারেনি। ফলে ঐ প্রত্যাহার করে নেয়া প্রার্থীও অনেক ভোট পেয়েছেন। এটি হয়তো ভুল বশত। এরফলে বেশ কিছু ভোট নষ্ট হয়েছে।

রেডিও তেহরান: জনাব শান্ত, তৃতীয় স্থানে থাকা প্রার্থী সিনান ওগানের বিষয়টি সম্পর্কে আপনি কি বলবেন? সে কি বিশেষ কোনো ফ্যাক্টর ছিল?

আমিনুল ইসলাম শান্ত: জ্বি, আরেকজন প্রার্থী যিনি তৃতীয় স্থানে ছিলেন-তিনি সিনান ওগান। প্রথম দফায় তিনি বেশ ভোট পেয়েছিলেন। মূলত এই সিনান ওগানের ভোটটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শতকরা পাঁচ ভাগেরও বেশি ভোট পেয়েছিলেন সেই ভোটটি প্রথম দফায় যে দুইজনের একজনও নির্বাচিত হতে পারেননি-তার একটি বড় কারণ ছিল। দ্বিতীয় দফায় অর্থাৎ রান অফে এসে সিনান ওগান শেষ পর্যন্ত প্রেস কনফারেন্স করে এরদোগানকে সমর্থন দিলেন। তিনি সমর্থন জানাবেন এটা ধারনা করা যাচ্ছিল। কারণ সিনান ওগান জাতীয়তাবাদী মানুষ। তিনি জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনা লালন করেন। আর সেই চিন্তা চেতনা থেকে মূলত বলা যায় তার যে দল ছিল এন এইচ পি এই দলটি এরদোগানের যে এলায়েন্স তার প্রধান শরীক। বিশেষ কোনো কারণে  ২০১৭ সালে তাকে হয় দল থেকে বহিষ্কার করা হয় অথবা তিনি নিজেই নিজেকে সরিয়ে নেন।তবে তিনি অন্য কোনো দলে যোগ দেননি। এর অর্থ দাঁড়াল সিনান ওগানের মূলত ভোটার যারা পাঁচ শতাংশের বেশি যারা প্রথম দফায় ভোট দিয়েছিলেন তারা মূলত জাতীয়তাবাদী চিন্তা চেতনার এবং সন্ত্রাসবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির। এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এরদোগানের চিন্তা এবং তাদের দলের সাথে ঐক্যমত্য হয়েছে। যে কারণে দ্বিতীয় দফায় এসে অনায়াসে তার সমর্থকদের ভোট  এরদোগান পেয়েছেন। তো প্রথম দফায় ভোট নিষ্পত্তি না হয়ে দ্বিতীয় দফায় গড়ানোর পেছনে অর্থাৎ রান অফ এর জন্য সিনান ওগানের ভোট ফ্যাক্টর ছিল বলে আমি মনে করি।

শ্রোতাবন্ধুরা! আপনারা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক আমিনুল ইসলাম শান্তের আলোচনা শুনছেন। ফিরছি শিগগিরি, আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: আবার ফিরে এলাম আলোচনায়,  জনাব আমিনুল ইসলাম শান্ত, প্রেসিডেন্ট এরদোগান নির্বাচনের সময় ঘোষণা দিয়েছেন, স্বাধীন সার্বভৌম পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করবেন তিনি। । পশ্চিমাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্বাধীন সার্বভৌম পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করা কী তার জন্য খুব সহজ হবে বলে মনে হয় আপনার?

আমিনুল ইসলাম শান্ত: জ্বি, প্রেসিডেন্ট এরদোগানের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের আগ্রহ অনেক বেশি। এমনকি আমেরিকার অনেক পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক বলেন, যে এরদোগানের পররাষ্ট্রনীতি কনফিউজিং। তার পররাষ্ট্রনীতি অনেকে ধরতে পারে না। একদিকে রাশিয়ার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ও মৈত্রী ভাব। রাশিয়া থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনেছেন। অন্যদিকে সিরিয়া ইস্যুতে রাশিয়ার বিপক্ষে তার অবস্থান। এভাবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তার ফরেন পলিসির ব্যালেন্স অব পাওয়ার। 

রেডিও তেহরান: এবারের নির্বাচনে এরদোগানের বিপক্ষে পশ্চিমারা অবস্থান নিয়েছে বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট। এটা কি এরদোগানের কূটনীতি ও ও পররাষ্ট্রনীতির কারণে?

আমিনুল ইসলাম শান্ত: দেখুন, একদিকে এরদোগানের ডিপ্লমেসি অন্যদিকে পররাষ্ট্রনীতি- এ দুটো কারণে পশ্চিমাদের চক্ষুশূল তিনি সব সময়ের জন্য। এবারের নির্বাচনে এরদোগানকে হারানোর জন্য পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো এবং সেই সব দেশের মিডিয়া উঠেপড়ে লেগেছিল। নেতিবাচক প্রতিবেদন এরদোগান সম্পর্কে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো প্রচার করেছে। এসব কারণে এরদোগান এক পর্যায়ে বলতে বাধ্য হয়েছেন, তুরস্কের ভাগ্য নির্ধারণ করবে তুরস্কের জনগণ-পশ্চিমারা নয়। একইসাথে পশ্চিমাদের তিনি সব সময় তিরস্কার করেছেন। যদিও তুরস্ক ন্যাটো সদস্য। একদিকে তিনি ন্যাটো সদস্য অন্যদিকে তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে চায় কিন্তু সেটি ইউরোপিয় ইউনিয়ন আজও দেয়নি একমাত্র কারণ এরদোগান তুরস্কের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বলে। এভাবেই এরদোগানের প্রতি পশ্চিমাদের রক্তচক্ষু অতীতেও ছিল এখনও আছে।

তো জনাব আমিনুল ইসলাম শান্ত সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তুরুস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। এটি উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

পার্সটুডে/জিএআর/১৫

 

ট্যাগ