জুন ২৬, ২০২৩ ১৬:৩৬ Asia/Dhaka

অনেক বাবা-মা ব্যস্ততা অথবা ক্লান্তির কারণে তাদের সন্তানদের সঙ্গে খুব একটা সময় কাটান না এবং তাদের সঙ্গে খুব বেশি কথা বলেন না। এই অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য এমনভাবে দিনের কর্মসূচি সাজানোর চেষ্টা করুন যাতে বাসায় ফিরে বউ-বাচ্চাদের সঙ্গেও কিছুটা সময় কাটানো যায়।

তাদের সঙ্গে কথা বলা বা তাদের কথা শোনা খুবই জরুরি। শিশু সন্তানদেরকে কেনাকাটা, ঘর পরিষ্কার করা এবং রান্না করার মতো কিছু সহজ কাজে অবশ্যই সম্পৃক্ত করুন। এর ফলে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং স্বাধীনচেতা মনোভাব জোরালো হবে। তাদের জন্য নির্ধারিত নীতিমালায় প্রয়োজনে পরিবর্তন আনতে হবে, অতি কঠোরতা পরিহার করতে হবে। শিশুরা কোনো দায়িত্ব ভালোভাবে সম্পন্ন করলে তাদেরকে ধন্যবাদ জানান, উৎসাহ দিন। অন্যদিকে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে তাদেরকে বকা-ঝকা না করে তাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করে দিন।

ধরুন আপনার সন্তান হঠাৎ পার্কে যেতে চাইছে। আপনি দেখলেন যে, সে তার হোম ওয়ার্ক সম্পন্ন করেনি। 'কেন তুমি এখনও হোম ওয়ার্ক করনি অথবা তুমি কেন কখনোই কোনো কাজ সময় মতো করো না'- এ ধরণের বাক্য ব্যবহার না করে ইতিবাচক বাক্য ব্যবহার করুন। তাকে বলুন- আমি খুব খুশি হবো তুমি যদি তোমার হোম ওয়ার্ক আগে শেষ করে পরে পার্কে যাও। আর এটা করলে তুমি নিশ্চিন্তে বেশি সময় পার্কে থাকতে পারবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, শিশুকে বোঝান আপনি তার পাশে আছেন, আপনি তার ভালো চান। শিশুদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা গড়তে প্রতিদিনের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা লিখে রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। কম বয়স থেকেই এই অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে বেশি সফলতা আসবে। এর ফলে সন্তানের জীবনে শৃঙ্খলা আসবে।

আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, শিশুকে রেগে গিয়ে কখনোই বলবেন না যে, 'তুমি দায়িত্বজ্ঞানহীন'। এর ফলে শিশু ভাবতে শুরু করে সে আসলেই দায়িত্বজ্ঞানহীন, সে ভাবতে থাকবে আসলেই তার মধ্যে দায়িত্বশীল হওয়ার যোগ্যতা নেই। এমন দৃষ্টিভঙ্গি একবার গড়ে উঠলে তাতে পরিবর্তন আনা কঠিন। কাজেই এমন নেতিবাচক শব্দ প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে। সত্যিই যদি শিশু দায়িত্বজ্ঞানহীন হয় তাহলেও তাকে এমন ভাষায় বলা যাবে না, তাকে দায়িত্বশীলতা শেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

সন্তানদের মধ্যে আরও কিছু গুণে গুণান্বিত করার চেষ্টা করতে হবে যা তাদেরকে দায়িত্বশীল হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আপনি আপনার সন্তানদেরকে তাদের নিজের কাছে নিজেকে সৎ থাকতে বলুন। তাদেরকে শেখান যে, তারা আসলে যা নন, নিজেকে যেন তা হিসেবে কখনোই তুলে ধরার চেষ্টা না করে। নিজের কাছে সৎ থাকলে যে কোনো কাজেই আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়। সৎ থাকলে আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায় বহু গুনে। এছাড়া সন্তানদেরকে শেখান তারা যাতে প্রতিটি কাজের জন্য নিজের কাছে নিজে জবাবদিহি করে। সারাদিন কি কি কাজ করেছে এবং কেন করেছে সেটা নিজের কাছে প্রশ্ন করতে হবে। নিজের কাছে নিজে সচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।

নিজের ব্যার্থতার জন্য অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। আসলে যতক্ষণ অন্যকে দোষারোপ করা হবে ততক্ষণ নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারা যাবে না। সবার মন কিন্তু জানে সে কি করেছে। তাই সব কাজের জন্য অন্যকে দোষ না দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ভুলগুলো খুঁজে বের করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।  কোনো খারাপ কাজ করার পেছনে অজুহাত দেয়ার অভ্যাস দূর করতে হবে। অজুহাত হলো নিজের দায়িত্ব এড়ানোর একটি ফন্দি। তাই নিজের কাছে সৎ থাকার জন্য অজুহাত দেয়ার অভ্যাস বন্ধ করতে হবে। সততাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে।  আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র ইসলাম ধর্মেও আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বয়োজ্যেষ্ঠ ও বয়ঃকনিষ্ঠ সবার প্রতি পারস্পারিক দায়িত্ববোধকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাবা-মায়ের কথা শোনা এবং তাদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা মানুষের একান্ত কর্তব্য। পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনকে সহায়তা করা এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করাও একান্ত কর্তব্য। কর্তব্যপরায়ণ মানুষ পাড়া-প্রতিবেশীর বিপদে-আপদে সাহায্য-সহযোগিতা করে এবং প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না।

দায়িত্বশীল মানুষ সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব ও সহপাঠীদের সঙ্গে অপ্রীতিকর কর্মকাণ্ড ও দ্বন্দ্ব-কলহ করে না, তাদের মধ্যে ছাড় দেওয়ার মনোভাব থাকে প্রবল। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলাও জরুরি। এছাড়া শিক্ষার্থী বন্ধুদের বই, খাতা, কলম, পেনসিল না থাকলে এগুলো দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করাও দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। বাবা-মা যেমন সন্তানের লালন-পালন করেন, তেমনি শিক্ষকও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে তোলেন, তাই শিক্ষকদের যথাযথ শ্রদ্ধা করা, তাদের কথা শোনা জরুরি। ধনী লোকরা দরিদ্র-অসহায়দের সাহায্য করবে এবং গরিবরা ধনীদের সহযোগিতা করবে এটাও সমাজের জন্য জরুরি। এ অবস্থায় অনাথ, মিসকিন, দুস্থ ও হতদরিদ্র ব্যক্তিদের সর্বাত্মক সাহায্য-সহায়তা করা অপরিহার্য। এসব কর্তব্যের কথা সন্তানদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। মানব সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য যে এই বিষয়গুলো যে জরুরি তা তাদেরকে বোঝাতে হবে। 

পরিবারের সন্তানসহ সবাইকে বুঝতে হবে দায়িত্বশীলতা ও কর্তব্যপরায়ণতার পরিধি অনেক বিস্তৃত। একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার আকাঙ্ক্ষা সবার মধ্যেই থাকে। এ কারণে একজন মানুষ তার নিজের খেয়ালখুশি অনুযায়ী চলতে পারে না, কেবল নিজের খেয়ালখুশি মতো চললে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস সম্ভব নয়। সমাজের সবার সুবিধার্থে কর্তব্যনিষ্ঠ হতে হয়। শুধু ঘরে বসে অলস জীবনযাপনের কোনো অর্থ হয় না। কাজকর্ম ছাড়া অলসভাবে জীবনযাপনে কোনো কল্যাণ নেই। সব মিলিয়ে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে সব মানুষেরই পারস্পারিক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। পবিত্র ইসলাম ধর্মেও এ বিষয়ে বারবার জোর দেওয়া হয়েছে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ