জুলাই ২২, ২০২৩ ২১:০৯ Asia/Dhaka

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও'র মতে, জীবন দক্ষতা হলো নিজেকে মানিয়ে নেয়া এবং ইতিবাচক আচরণের সক্ষমতা যা ব্যক্তিকে তার দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জগুলো কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম করে তোলে। এই দক্ষতা আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটাতে এবং সমস্যা মোকাবিলা করতে এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে।

জীবন দক্ষতা এবং জীবিকা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এক নয়। জীবন দক্ষতা হলো ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির বা সমাজের সর্ম্পক বিষয়ক দক্ষতা যা বিভিন্ন সমস্যা উত্তরণে সাহায্য করে। এটি হলো ব্যক্তির নিজ জীবনের বা মনোগত সমস্যা ও সংকট উত্তরণের দক্ষতা। আর এ দক্ষতার চর্চা শিশুকাল থেকেই শুরু হওয়া উচিত। কারণ, এ দক্ষতা মানুষের অন্তর্নিহিত সকল শক্তি ও সম্ভাবনার বিকাশ ঘটিয়ে জীবনের সকল ক্ষেত্রে সফল হওয়ার ভিত্তি তৈরি করে দেয়। জ্ঞান, অনুশীলন, ইতিবাচক মানসিকতা এই তিনটির সম্মিলন ঘটলে দক্ষতা অর্জন করা যায়, যা ব্যক্তির আচরণে প্রকাশ পায়। জীবন দক্ষতা ধারণাটি সুস্বাস্থ্যের সাথেও সম্পর্কিত।

এই দক্ষতাগুলো শিশু-কিশোরকে স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক আচরণ করতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ পরিহার করতে অভ্যস্ত করে তোলে, এর ফলে নানা রকম রোগের সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকা যায়। এখানে সুস্বাস্থ্য শব্দটি শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক এই ত্রিমাত্রিক অবস্থাকে নির্দেশ করে।  জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা একজন মানুষকে আত্মসচেতন ও আত্ম বিশ্বাসী হতে, তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সূক্ষ্ম ও সৃজনশীল চিন্তনে কার্যকর যোগাযোগ সৃষ্টিতে, সুস্থ সম্পর্ক গড়তে, অন্যের প্রতি সহমর্মী হতে এবং চাপ ও আবেগ মোকাবিলায় সমর্থ করে তোলে। এর ফলে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এর চর্চা জরুরি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের শিক্ষা দেওয়া হলে একজন  শিক্ষার্থী ইতিবাচক আচরণ আত্মস্থ করার মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ ও বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। জীবন দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষা শিক্ষার্থীকে সুরক্ষামূলক আচরণ করতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ পরিহার করতে সমর্থ করে। শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা ও মানসিকতার মধ্যে ভারসাম্য বিধান করে শিক্ষার্থীর আচরণিক পরিবর্তন ঘটায়। এ শিক্ষা প্রদানে অংশগ্রহণমূলক ও শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শেখানো-পদ্ধতি জরুরি। কারণ, এ শিক্ষা কর্মসূচীর মধ্যেই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য ব্যবস্থা সন্নিবেশিত থাকে।

জীবন দক্ষতা-ভিত্তিক শিক্ষা সন্তান ও অভিভাবক এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটায়। এর ফলে বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়, উপস্থিতির হার বেড়ে যায় ও শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমে যায়। এ শিক্ষা শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধন করে এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে সক্ষম, সুস্থ, দক্ষ, নীতিবান ও বিচার বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলে সুষ্ঠু সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। জীবন দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষার সার্বিক উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর আধুনিক জীবন ও সমাজ সম্পর্কে সচেতন করা এবং সফলতা লাভের জন্য আত্মবিশ্বাসী করে তোলা। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিকূলতা থেকে উত্তরণে সক্ষমতা অর্জন এবং শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ সবল ও নিরাপদ জীবনযাপন করা। জীবন ও দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষার বিষয়বস্তু প্রধানত জীবনের সমস্যা ও বিপদের সাথে সম্পর্কিত। এই বিষয়বস্তু, স্থান, কাল, পাত্র সামাজিক মূল্যায়ন, রীতিনীতি ও গোষ্ঠীর প্রত্যাশা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

বর্তমানে কিশোর-কিশোরীরা তাদের প্রাত্যহিক জীবনে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয় সেগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক- কিছু সাধারণ সমস্যা ও পরিস্থিতি যেগুলি বিশ্বব্যাপী সকল কিশোর-কিশোরীকেই মোকাবিলা করতে হয়। যেমন- মাদকাসক্ত হওয়ার ঝুঁকি, বিভিন্ন যৌনরোগ ও এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি, বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়। সহিংসতা এবং সন্ত্রাসের কবলে পড়া। কিন্তু কিছু সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ দেশ, স্থান ও সময় ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যেমন শিশু পাচার ও শিশুশ্রম, শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন, যৌন হয়রানি, বাল্যবিবাহ, যৌতুক ও অকাল গর্ভধারণ, পুষ্টিহীনতা, সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং স্বাস্থ্য সেবার অপ্রতুলতা, জঙ্গিবাদ, জেন্ডার বৈষম্য ইত্যাদি। প্রধানত উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশের শিশু কিশোরদের এসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা বেশি করতে হয়।

বিশ্বব্যাপী ও অঞ্চল বিশেষে বিরাজমান সমস্যা উভয় ক্ষেত্রেই জীবন দক্ষতা কার্যকর সমাধান দেয়। এছাড়া বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু যেমন অটিজম আক্রান্ত বা শারীরিকভাবে অসমর্থ এমন শিশুদের সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রেও জীবন দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষা অত্যন্ত কার্যকর। এসব শিশুর স্বাবলম্বী জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় মনো-সামাজিক এবং মনো-দৈহিক দক্ষতাগুলো জীবন দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে। একারণে শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এসব শিশুর নানা রকম চাহিদা পূরণের বিষয়টি জীবন দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষার আওতাভুক্ত। যেহেতু জীবন দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার অন্যতম উপায়, সেহেতু এই শিক্ষা কর্মসূচির সাথে সমাজ কল্যাণ বা সমাজ কর্ম বিষয়ক কর্মসূচির সম্পৃক্ততা আছে। জীবন দক্ষতার মূলে রয়েছে সমস্যা সমাধানের কৌশল আয়ত্ত করা। যারা জীবনের সমস্যা মোকাবেলায় সমস্যার উপযুক্ত সমাধান দিতে পারে, সাধারণত তারা অন্যান্য মানুষের তুলনায় বেশি আত্মবিশ্বাসী হয় এবং কম চাপের মধ্যে থাকে। 

শিশু-কিশোর বয়স থেকেই তাদের মধ্যে জীবন দক্ষতা তথা সমস্যা সমাধানের দক্ষতার বীজ বপন করতে হবে। আপনার এবং আপনার সন্তানের জীবন দক্ষতা বাড়াতে প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন। আপনি সন্তান বা শিক্ষার্থীকে যেসব বিষয় শেখানোর চেষ্টা করবেন সেগুলো হলো- ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে, যেখানে না বলার দক্ষতা সেখানে না বলতে হবে। যেমন- কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্য কোনো ধর্মীয়, জাতি, গোষ্ঠী বা শ্রেণীর মানুষের প্রতি সহিংস বা উগ্র আচরণে না বলা এবং জড়িত না হওয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক কোন কাজে অংশগ্রহণ না করা। অসাধু পন্থা অবলম্বনকে না বলা। মাদককে না বলা। অসামাজিক কর্মকাণ্ড যেমন- ঝগড়া, মারামারি, চুরি, ছিনতাই, অপহরণ ইত্যাদি-কে না বলা।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।