জুলাই ২৪, ২০২৩ ১৬:১৫ Asia/Dhaka

কেউ কেউ আছেন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলেই সেটাকে সমাধানের অযোগ্য হিসেবে গণ্য করেন। এ ধরণের মনোভাব, সমস্যা সমাধানের পথে সর্বপ্রথম বাধা। এর কারণ হলো আপনি যখন কোনো একটা সমস্যাকে সমাধানের অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করবেন তখন তা সমাধানের ইচ্ছা, আগ্রহ ও শক্তি হারিয়ে ফেলবেন।

কিন্তু আপনি যদি সমস্যাটাকে সমাধানের অযোগ্য মনে না করে তা সমাধানে উদ্যোগী হন তাহলে দেখবেন কাজটি সহজ হয়ে যাচ্ছে। জীবনে সমস্যা থাকবেই। কিন্তু সেই সমস্যা যেন আমাদেরকে পরাজিত করে না ফেলে। এ কারণে সমস্যার মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে নিজেকে পরাজিত নয় বরং বিজয়ী করার জন্য কাজ শুরু করতে হবে। ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার করতে হবে। 'এটা অসম্ভব', 'এটা সমাধানের অযোগ্য'- এ ধরণের শব্দ বা বাক্যের বদলে বলতে হবে 'আর একটু চেষ্টা করতে হবে', 'এভাবে না হলে অন্যভাবে হবে'। এর ফলে মস্তিষ্কে ইতিবাচক বার্তা যাবে। আত্মবিশ্বাস আর আশা সৃষ্টি হবে। মনে রাখতে হবে, সমস্যায় পড়াটা দুর্বলতা বা অক্ষমতার পরিচায়ক নয়। আপনি যদি সমস্যার বিষয়ে নিজের নেতিবাচক মনোভাব চিহ্নিত করতে পারেন তাহলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং যৌক্তিক চিন্তা ও মনোভাব গ্রহণে তা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সমস্যার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব গড়তে কয়েকটি উপায় অবলম্বন করতে পারেন। সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার পর আপনার মনে যে নেতিবাচক চিন্তা উঁকি দিচ্ছে তা লিখে ফেলুন। এরপর এই নেতিবাচক চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গিটা নিয়ে একটু ভাবুন। ভেবে দেখুন আসলে এমন দৃষ্টিভঙ্গি কতটা সঠিক। এরপর মনে মনে এমন ব্যক্তিকে খোঁজ করুন যার জীবনে কোনো ধরণের সমস্যা নেই অথবা কোনো দিন কোনো ঝামেলায় পড়েনি। আপনি কি এমন কোনো ব্যক্তি খুঁজে বের করতে পারবেন? খোঁজ নিয়ে দেখুন আপনার আশপাশের মানুষগুলোর মধ্যে কত শতাংশ মানুষ সমস্যামুক্ত। যাইহোক আপনাকে সমস্যা নয় বরং ভাবতে হবে সমাধান নিয়ে। মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, মস্তিষ্ক যদি সমস্যা নিয়ে ভাবে, তবে সমাধান বের করতে তার অসুবিধা হয়। কারণ, সমস্যায় ফোকাস করা মানে মস্তিষ্কে নেতিবাচক চিন্তা ঢোকা। ফলে ভয়, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি নেতিবাচক আবেগ মস্তিষ্কের কাজকে ব্যাহত করে। এছাড়া, সমাধান না ভেবে 'কার দোষে এই সমস্যাটা হলো' এ ধরণের চিন্তাও কোনো উপকারে আসে না। এগুলোর বদলে সমস্যা দূর করার উপায় কি হতে পারে, কার কাছে পরামর্শ নেয়া যায়, কোথায় এই সমস্যার সমাধান থাকতে পারে- এগুলো নিয়ে চিন্তা করুন।

তবে সমস্যাটাকে পুরোপুরি ভুলে গেলে চলবে না। সমস্যা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। অনেকেই আছেন সমস্যায় পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘাবড়ে যান এবং বলতে থাকেন, 'আমি এক মহা ঝামেলায় পড়ে গেছি'। ছোট সমস্যাকেও নিজের জন্য বড় করে তোলেন তারা। এ ধরণের প্রবণতা পরিহার করতে হবে। যেকোনো সমস্যা প্রথমে সহজ ভাবে দেখার চেষ্টা করুন। এরপর যদি সহজ সমাধান না পান-তবে জটিল উপায়ের কথা ভাবুন। অতীতে এমন কোনো সমস্যায় পড়েছেন কিনা তা ভেবে দেখুন এবং এ ধরণের সমস্যাকে কীভাবে মোকাবেলা করেছিলেন তা স্মরণ করুন। পাশাপাশি এর আগে যারা এ ধরণের সমস্যায় পড়েছেন এবং তার সমাধান করতেও সক্ষম হয়েছেন তাদের সাহায্য নিতে পারেন, তাদের অভিজ্ঞতা আপনার কাজে লাগতে পারে। এর পাশাপাশি সমস্যার গোঁড়ায় যাওয়ার চেষ্টা করুন। এমনও হতে পারে আপনি যেটাকে সমস্যা ভাবছেন, সেটা আসলে মূল সমস্যা নাও হতে পারে।

খুব সাধারণ একটা সমস্যাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছি। ধরুন, আপনি প্রতিদিন দেরি করে অফিসে যান।  শত চেষ্টার পরও দেরি হয়েই যায়। আপনি হয়তো ভাবলেন, আপনার নিয়মিত রুটে জ্যাম বেশি পড়ে।  কিন্তু রুট বদলেও আপনি দেরিতেই অফিসে যাচ্ছেন।  এক্ষেত্রে সকালে ওঠার  পর  কি কি করেন- তার একটা লিস্ট করুন।  এরপর একে একে ভাবুন- কোন কাজে আপনি কত সময় ব্যয় করেন। এমনও হতে পারে, আপনি সকালের নাস্তায় বেশি সময় কাটান অথবা ঘুম থেকে উঠতে দেরি করেন। এইসব কারণে বাসে উঠতে উঠতে জ্যামের সময় চলে আসে। হয়তো সমস্যা জ্যামে নয়, বাসে ওঠার সময়ে। এর সমাধান হতে পারে, ঘুম থেকে পনেরো মিনিট আগে ওঠা, অথবা অফিসে পৌঁছে নাস্তা করা।  এতে করে আপনি জ্যাম শুরু হওয়ার আগেই বাস ধরতে পারবেন। একটি সমস্যার উৎস প্রথমে যা মনে হয়, তা না-ও হতে পারে।  তাই যে কোনও সমস্যার গোঁড়ায় যাওয়ার চেষ্টা করুন। এর ফলে সমস্যাটা সম্পর্কে ভেবে-চিন্তে এবং এর উৎস সম্পর্কে জেনে-বোঝে সমাধানের পদক্ষেপ নিতে পারবেন।

নানা ধরণের আইডিয়া পর্যালোচনার পর আপনি সবচেয়ে উপযুক্ত সমাধানসূত্রটি অনুসরণের চেষ্টা করবেন। এ কারণে আপনাকে একটি তালিকা তৈরি করে নিতে হবে, যেখানে সম্ভাব্য সব সমাধানসূত্র থাকবে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। হাস্যকর বা অবাস্তব মনে হলেও সমাধানসূত্রটিকে তালিকায় স্থান দিন। কোনো আইডিয়াকেই বাদ দেবেন না। তালিকা করার ফলে আপনি প্রতিটি সমাধান নিয়ে আলাদা আলাদা করে ভাবতে পারবেন।  তা না হলে, চিন্তা করার সময়ে একটির সাথে আরেকটি তালগোল পাকিয়ে যেতে পারে। এরপর তালিকায় থাকা একটি আইডিয়া কাজ না করলে, অন্য আইডিয়া নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাবেন। এক ভাবে না এক ভাবে সমাধান হবেই। এছাড়া অনেক সময়ে এমন সমস্যা দেখা দেয়- যার সমাধান আগে আপনি করেননি বা আপনার আশেপাশের কেউ কখনোই এমন সমস্যায় পড়েনি। এই অবস্থায় বসে না থেকে নিজেই সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করতে হবে। এ অবস্থায় নিজের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগান। উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমাধানের একটা উপায় নির্ধারণ করে নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী এগোতে হবে। এ ক্ষেত্রে ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটি বিষয় হলো, তাড়াহুড়ো করা যাবে না, ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা মাফিক এগোতে হবে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ