জুলাই ২৬, ২০২৩ ২১:১১ Asia/Dhaka

সবাই সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, সমালোচনা সহ্য করার দক্ষতাটি নিজস্ব মানসিক সক্ষমতার উপর নির্ভর করে। যারা মানসিকভাবে দক্ষ এবং অনেক মানসিক চাপের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন, তাদের জন্য সমালোচনা সহ্য করা সহজ হয়।

সমালোচনা সহ্য করতে পারলে একজন ব্যক্তি মানসিকভাবে অনেক দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং অন্যদের সাথে তার সম্পর্ক ও যোগাযোগ দৃঢ় হয়। বাড়ে সামাজিক প্রভাবও। সাধারণত সমালোচনার মুখে পড়লেই আমরা আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে চলে যাই। এটাই স্বাভাবিক। তবে সমালোচনার মুখে হতাশ হলে চলবে না। সমালোচনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করলে তা আপনার কর্মের সৌন্দর্যকে আরও প্রস্ফুটিত করে তুলবে নিঃসন্দেহে। আসলে কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। ভুল হলে সমালোচনা হতেই পারে। এই সমালোচনাকে পুঁজি করে আপনি নিজের ভুল শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এর ফলে আপনার জন্য কাজগুলো আরও সুন্দর-সুচারুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এ কারণেই সমালোচনার মুখে পড়লে ভেঙে পড়া উচিৎ নয় বরং মাথা ঠাণ্ডা রেখে সমালোচনাকারীর কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত।

সমালোচনা শুনুন, তবে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। অর্থাৎ যুক্তি খণ্ডন করবেন না, তর্ক করবেন না, এমনকি আপনার খারাপ লাগাও প্রকাশ করবেন না। তবে তার বক্তব্য বিবেচনায় নেওয়ার আশ্বাস দেবেন। তাহলে সমালোচনাকারী ক্ষুব্ধ না হয়ে আশাবাদী হয়ে উঠবে এবং সম্মানিতবোধ করবে। সমালোচনামূলক কথা কানে আসতেই যদি আপনার মন-মেজাজ গরম হয়ে যায় তাহলে আপনি ঐ ব্যক্তির কথা সঠিকভাবে শুনতে ও বুঝতে ব্যর্থ হবেন। এর ফলে সমালোচনার বিষয়ে আপনার যৌক্তিক অবস্থান যেমন তুলে ধরতে পারবেন না তেমনি নিজের ভুল সংশোধনের জন্য কোনো তথ্যও সংগ্রহ করতে পারবেন না। সমালোচনাকারীর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার পর হাসিমুখে তাকে বুঝিয়ে দিন যে, তার বক্তব্যের বিষয়টি আপনি বিবেচনায় নেবেন। সমালোচনা শোনার পর অন্তত ২০-৩০ মিনিট নিজেকে অন্য কোনো জগতে ব্যস্ত রাখুন, সমালোচনা সংক্রান্ত বিষয়ে একদম ভাববেন না। ২০-৩০ মিনিট পার হওয়ার পর পরিবেশ যখন শান্ত হয়ে আসবে তখন বিষয়টি নিয়ে ভাবুন। বাস্তবতার আলোকে বিষয়কে দেখার চেষ্টা করুন এবং সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন।

সমালোচনাকারী যে পয়েন্টে আপনার সমালোচনা করেছে ঠিক সেটা নিয়েই ভাবুন, আপনার পুরো ব্যক্তিত্বকে নিশানা করা হয়েছে এমন ভাবনা থেকে দূরে থাকুন। সমালোচনার পর শারীরিক প্রতিক্রিয়া বন্ধ করার জন্য ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন। সমালোচনা সহ্য করার সক্ষমতা বাড়ানোর আরেকটি উপায় হলো, সমালোচনাকারীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত হওয়ার চেষ্টা করা। এ কারণে সমালোচনার তাৎক্ষণিক জবাব দেওয়ার প্রয়োজন নেই, বিষয়টিকে আদৌ গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা তা আগে ভেবে নিন। কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন। বোঝার চেষ্টা করুন সমালোচনাকারী যেসব বিষয়ে আপনার সমালোচনা করেছে সেগুলো নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আপনার আছে কিনা? যে ব্যক্তি সমালোচনা করেছে তার দৃষ্টিভঙ্গি কি সত্যিই আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিনা? আপনি সমালোচনাকারীর সঙ্গে কোনো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছেন কিনা? আপনি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার পর বুঝতে পারবেন আসলেই সমালোচনাটি নিয়ে ভাবা উচিত কিনা অথবা ভাবলেও কতটুকু গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত।

আপনার বিশ্বস্ত ও কাছের কারো সঙ্গে সমালোচনার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারেন, তার কাছে পরামর্শ চাইতে পারেন। সমালোচনার বিষয়ে আপনার বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির মতামত ও পরামর্শ নিতে পারেন। আরেকটি কাজ করুন। সমালোচনা শোনার খাতায় লিখে সেগুলো বিশ্লেষণ করুন। ভালো কিছু থাকলে গ্রহণ করুন এবং আপনার উপযোগী না হলে বাদ দিন। অতিরিক্ত চাপ নেবেন না। সমালোচনাকে অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হলেও কোন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সমালোচনাকারীকে ক্ষমা করে দিন, তাহলে মন থেকে অনেক চাপ কমে যাবে। কখনোই সব সমালোচনাকে গুরুত্বহীন ভাববেন না এবং সেগুলোকে উড়িয়ে দেবেন  না। কাউকে ছোট করে না দেখার মানসিকতা কোনোভাবেই ভালো নয়। হতে পারে যিনি সমালোচনা করছেন তিনি কোনো একটা বিষয়ে অনেক ভাল জানেন। বাস্তবতা হচ্ছে, অহংকার ত্যাগ করলে সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা ও দক্ষতা অনেক বেড়ে যায়। যারা এক বা একাধিক বিষয়ে নিজেদের বড় ও অভিজ্ঞ মনে করেন তারা সাধারণত সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না।

সমালোচনা ভালো, যতক্ষণ না সেটি ব্যক্তিগত আক্রমণ হয়ে দাঁড়ায়। এটিকে আপনি ইতিবাচকভাবে নিয়ে সেটাকে কাজে লাগাতে পারেন এতে উন্নতিই হবে। ধরুন আপনি লেখালেখি করেন, আপনার বন্ধু আপনার লেখা পড়ে বললো লেখাটি ভালো হয়নি। সেটিকে আপনি খারাপ হিসাবে গ্রহণ না করে বরং ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করুন। বন্ধুকে জিজ্ঞেস করুন, কেন ভালো লাগেনি তার ? কি কি করলে লেখার মান আরও উন্নতি হতে পারতো ?পরামর্শ নিন, সেটাকে ব্যবহার করুন এবং আবার লিখুন। এতে লেখার উন্নতি হবে। যে পরামর্শ গুলোকে আপনি কোনোভাবেই ইতিবাচকভাবে নিতে সক্ষম হবেননা, সেগুলোকে সাধারণভাবে উপেক্ষা করুন। ধরুন, আপনার বন্ধু লেখার উন্নতির পরামর্শ না দিয়ে বললেন যে, তোমার লেখার মান কোনো দিনই ভালো হবে না। লেখালেখি ছেড়ে দাও। এমনটি হলে, তার পরামর্শ শোনার পর একটু হাসি দিয়ে সেখান থেকে কেটে পড়ুন। তার সমালোচনাকে এড়িয়ে যান।

সমালোচনার উদ্দেশ্য যদি ভালো হয়, তাহলে তা অবশ্যই মঙ্গলজনক। তবে অনেকেই অসৎ উদ্দেশ্যে এটা করে থাকেন।  এ ধরণের ব্যক্তিরা এমন যে, তাদের মনের মতো কোন কাজ না হলেই; তারা আপনার সমালোচনা করবে, তর্ক করতে থাকবে, আপনাকে নিয়ে ভুল, বিকৃত এবং অতিরঞ্জিত কথা বলতে থাকবে। এরপরও ভালো কাজগুলো চালিয়ে যেতে হবে।

তবে মাঝে-মধ্যেই নিজের কাজের বিশ্লেষণ নিজেই করুন এবং অভিজ্ঞ ও ভালো মনের মানুষের মূল্যায়ন শোনার চেষ্টা করুন। এর ফলে আপনার কাজ আরও বেশি সুন্দর হবে এবং সমালোচনার মাত্রা কমে যাবে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ