জুলাই ২৮, ২০২৩ ১৫:২৭ Asia/Dhaka

যে বৈশিষ্ট্যটি হুসাইনী আন্দোলনকে মহতী ও পবিত্র করেছে তা হলো ইমাম হুসাইনের (আ.) দূরদর্শিতা ও উন্নত চিন্তাধারা।

ইবনে আব্বাস, ইবনে হানাফিয়া,ইবনে উমর প্রমুখ হয়তো পুরোপুরি নিষ্ঠার সাথে ইমামকে (আ.) কারবালায় যেতে নিষেধ করছিলেন। কিন্তু হুসাইন (আ.) যা দেখেছিলেন তারা তা দেখতে পাচ্ছিলেন না। কিন্তু ইমাম হুসাইন (আ.) সবকিছুই দিনের আলোর মতো দেখছিলেন। তিনি একাধিকবার বলেছেন: ওরা আমাকে হত্যা করবেই;আর আল্লাহর শপথ করে বলছি যে,আমার হত্যার পর ওদের অবস্থা বিপন্ন হবে। এ ছিল ইমাম হুসাইনের (আ.) তীক্ষ্ণ দূরদর্শিতা। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির ভাষায় যে জিহাদ সহজ সেই জিহাদে মানুষ দলে দলে যোগ দেন এবং সবাই তাদেরকে বাহবাও দেন। কিন্তু যে জিহাদ কেবল শাহাদাতের জন্য ও শ্বাসরুদ্ধকর ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যে জিহাদে যোগ দিতে ভয়ে মানুষ শিউরে ওঠে সে জিহাদে হাসি মুখে শরিক হওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ।  

ইমাম হুসাইন (আ.) এক মহান ও পবিত্র আত্মার নাম। যার রয়েছে মহান আত্মা, সে শুকনো রুটি খেয়ে তৃপ্ত হয়,তারপর ঐ সামান্য আহার শেষে সারারাত জেগে আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন হয়। নিজের দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র গাফলতি করলে ভয়ে তাঁর শরীর কাঁপতে থাকে। যার আত্মা মহান সে আল্লাহর পথে ও মহান লক্ষ্যে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে চায়। আর এ পথে যখন সফল হয় তখন আল্লাহর শোকর করে। আত্মা মহান হলে আশুরার দিনে,এক শরীরে তিনশ’ ক্ষত সহ্য করতে হয়। যে শরীর ঘোড়ার পায়ে পিষ্ট হয় সে একটি মহান আত্মার অধিকারী হওয়ার অপরাধেই জরিমানা দেয়, বীরত্ব,সত্য-প্রেম এবং শহীদী আত্মার জন্যই জরিমানা দেয়। এই মহান আত্মা বলে ওঠে আমি আমার রক্তের মূল্য দিতে চাই।

কেন যাকে তাকে শহীদ বলা হয় না? শহীদ শব্দটি ঘিরে কেন এতো পবিত্রতার আবেশ? কারণ শহীদ এক মহান লক্ষ্যকে অনুসরণ করে। শহীদ সে ব্যক্তি যে নিজ ঈমান ও আকীদা রক্ষায় প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে, যে নিজের জন্যে তো নয়ই বরং মনুষ্যত্ব ও মানবতার স্বার্থে,সত্য ও হাকিকতের স্বার্থে মহান আল্লাহর পথে চরম দুঃখ-দুর্দশা এমন কি মৃত্যুকেও সাদরে বরণ করে নেয়। শহীদ তাঁর বুকের রক্ত দিতে চায় যেমনভাবে একজন মহান ধনী তাঁর ধনকে সৎপথে দান-খয়রাত করে । সৎপথে ব্যয়িত প্রতিটি পয়সা যেমন লক্ষ -কোটি পয়সার মতো মূল্য লাভ করে তেমনি শহীদের প্রতি ফোটা রক্ত লক্ষ-কোটি ফোটায় পরিণত হয়। অনেকে হয়তো নিজ চিন্তাশক্তির মূল্য দিয়ে একটি আদর্শিক গ্রন্থ বা একটি উপকারী শিল্প উপহার দেয়। কিন্তু শহীদরা তাদের রক্ত দিয়ে মানবের শান্তি ও কল্যাণের পথকে সুনিশ্চিত করেন।

আমরা আজ যারা মুসলমান হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি তারা সবাই  শহীদদের প্রতি ঋণী

অনেকে হয়তো ধারণা করতে পারে যে, একজন লেখক বা একজন ধনী কিংবা একজন শিল্পীর সেবাই সবচেয়ে বেশী। কিন্তু  এ ধারণা একবারেই ভুল। শহীদদের মতো কেউই মানবতার সেবা করতে পারে না। শহীদরাই সমস্ত কন্টকময় পথ পেরিয়ে মানবতার মুক্তি ও স্বাধীনতাকে বয়ে নিয়ে আসে।শহীদরাই ন্যায়-নীতিবান ও শান্ত সমাজ গড়ে দিয়ে যায় যাতে জ্ঞানীর জ্ঞান, লেখকের কলম, ধনীর ধন, শিল্পীর শিল্প সুস্থ পরিবেশে বিনা বাধায় বিকাশ লাভ করতে পারে এবং মানবতা নিশ্চিন্তে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে। শহীদরাই প্রদীপের মতো একটি পরিবেশকে আলোকিত করে রাখে যাতে সবাই অনায়াসে পথ চলতে পারে।

পবিত্র কুরআন রাসূলুল্লাহকে (সা.) একটি প্রদীপের সাথে তুলনা করেছে। প্রদীপ ছাড়া জগত অন্ধকার, নীরব-বধির ও অচল। ইমাম হুসাইনের (আ.) রক্তের প্রতি নবীজীর (সা.) উম্মত ঋণী। আজকে ইবনে সিনা-ইবনে সিনা হতো না, শেখ সাদী-শেখ সাদী হতো না, জাকারিয়া রাজী-জাকারিয়া রাজী হতে পারতো না যদি শহীদরা তাজা রক্ত খরচ করে ইসলামের চারাগাছকে সজীব না করতেন, ইসলামী সভ্যতাকে বাঁচিয়ে না রাখতেন। তাদের সমস্ত অস্তিত্বে একত্ববাদ, খোদাভীতি, ন্যায়পরায়ণতা, সৎসাহস আর বীরত্বে ভরপুর। তাই আমরা আজ যারা মুসলমান হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি তারা সবাই এ শহীদদের প্রতি ঋণী।

ইতিহাসের অনেক স্মরণীয় পুরুষই খুব কঠোর ও অসহায় পরিস্থিতির শিকার হয়ে আফসোস ও অভিযোগ নিয়ে প্রকৃতি বা স্রস্টার ওপর ক্রুদ্ধ হন। যেমন দিগ্‌বিজয়ী নেপোলিয়ন নানা কারণে রণক্ষেত্রে পরাস্ত হয়ে বলেছিলেন : হায় প্রকৃতি! তুমি আমাকে এভাবেই মারলে!  ইমাম হুসাইন (আ) আশুরার রাতে বস্তুগত দিক দিয়ে পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েন। শত্রুকে পরাজিত করার বিন্দুমাত্র আশা নেই বরং অতিশীঘ্রই তিনি তাঁর সঙ্গী-সাথীসহ শত্রুদের হাতে খণ্ড-বিখণ্ড হবেন এটিই নিশ্চিত হয়ে ওঠে। কিন্তু ইমাম হুসাইন (আ.) সবকিছু বুঝতে পেরেও মৃত্যুকে নির্ঘাত জেনেও আশুরার রাতে কী বলছেন? তিনি সঙ্গী-সাথীদেরকে সমবেত করলেন যেন যে কোনো বিজয়ীর চেয়েও তার মানসিকতায় উজ্জ্বলতার ঢেউ খেলে যাচ্ছে! তিনি বললেন : আল্লাহর জন্য সর্বোত্তম প্রশংসা! সুখে ও দুঃখে তোমারই প্রশংসা করছি! হে আল্লাহ তোমার প্রশংসা করছি আমাদেরকে নবুওতের ঘরানার সম্মান দিয়েছ বলে এবং কুরআনের ও ধর্মের বিধি-বিধানের জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছ বলে!

 এতসব মহাবিপদেও ইমাম হুসাইনের (আ.) কথা ও কাজ ছিল এমনই যেন সব কিছু তাঁর অনুকূলে আছে এবং সত্যি -সত্যিই সবকিছু তাঁর অনুকূলে ছিল। কারণ, এ পরিস্থিতি একমাত্র তাঁর জন্যেই দুঃখবহ ও প্রতিকূল, যে কেবল দুনিয়া ও ক্ষমতা চায় আর ব্যর্থ হয়ে এখন মৃত্যুর প্রহর গুণছে। কিন্তু যাঁর সবকিছুই আল্লাহর জন্যে, এমন কি যদি হুকুমতও চান তাহলেও তা আল্লাহর জন্যই চান এবং জানেন যে আল্লাহর পথেই এগিয়ে এসেছেন তাহলে তাঁর কাছে তো এ পরিস্থিতি অবশ্যই অনুকূল। এজন্যে তিনি আল্লাহর কাছে শোকরগুজারী-ই তো করবেন। ইমাম হুসাইনের আন্দোলনের গোঁড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ছিল কেবলই পৌরুষত্ব, বীরত্ব, সত্যানুসরণ এবং সত্য-প্রেম যা কোনো গোত্র বা দেশে সীমাবদ্ধ নয়, এতে কোনো ‘‘আমিত্ব’’ ও আত্মস্বার্থ নেই। সবই আল্লাহর জন্য ও আল্লাহর পথে। তিনি এ পথে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত  অটল ছিলেন।

যুদ্ধ-ক্লান্ত ইমাম হুসাইন (আ.) যখন শেষ তির খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন তখনও কেবলার দিকে ফিরে পরম শান্তিতে বললেন : হে আল্লাহ! আপনার বিচারে আমি সন্তুষ্ট, আপনার আদেশের প্রতি আমি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পিত, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই হে অসহায়দের সহায়।’ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের মুহূর্ত যতই ঘনিয়ে আসছিল ততই খোদাপ্রেমের তীব্রতায় ইমামের চেহারা উজ্জ্বলতর ও প্রশান্ততর হচ্ছিল।  

ইমামের শহীদ-হওয়া সঙ্গীরাও ছিলেন ঈমানের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব্যক্তিত্ব। ইমামের প্রতি তাদের মধ্যে গভীর ভালবাসা ছিল প্রকাশ্য কিংবা সুপ্ত। তাই মহান আল্লাহর পরিচালিত আত্মত্যাগের নানা কঠিন পরীক্ষায় তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অবিচল থাকেন, অথচ ইমাম হুসাইন তাদের সবাইকে বলেছিলেন যে তারা ইচ্ছা করলেই প্রকাশ্যে বা রাতের আঁধারে তাঁকে ছেড়ে চলে যাওয়া যাওয়ার ব্যাপারে স্বাধীন। তারা দুর্বল ইমানদারদের চিন্তার বিপরীতে বিপদের কঠিন পাহাড় ও অনিবার্য মৃত্যু দেখেও একজন শ্রেষ্ঠ ও পরিপূর্ণ মানুষের পৌরুষোচিত সংগ্রামে অংশগ্রহণের গৌরব হাতছাড়া করতে চাননি। খোদা-প্রেমের ক্ষেত্রে একনিষ্ঠতাই তাদেরকে শেষ পর্যন্ত মহান সংগ্রামের পথে অবিচল রেখেছে। ইসলাম ও এর কর্ণধার ইমামের প্রতি তাঁদের ভালবাসা ছিল কিংবদন্তীতুল্য।

আসলে ইমাম হুসাইনের নেতৃত্বে সংঘটিত এ মহাবিপ্লব ইসলামেরই পরিপূর্ণ চিত্রের প্রতিচ্ছবি।  কালের মহাপাখায় এ মহাবিপ্লব ইসলামেরই সব দিককে জানার এবং সবগুলো মহৎ গুণ চর্চার কেন্দ্র-বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কারবালা ও আশুরা একত্ববাদ বা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, ইসলামী নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ,  খোদাপ্রেম ও ইসলামী আদর্শের জন্য চরম ত্যাগ-তিতিক্ষা, চরম ধৈর্য, চরম দৃঢ়তা, মানবতা, মহত্ত্ব, বীরত্ব, বিশ্বস্ততা, মহানুভবতা, মুক্তিকামিতা , সততা, আধ্যাত্মিকতা ও আত্ম-সংশোধনের নানা দিক শেখার এক মহান বিশ্ববিদ্যালয়। সমস্ত মানবতার কল্যাণই ছিল ইমাম হুসাইনের মহাবিপ্লবের টার্গেট। একত্ববাদ, সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা, সমতা, সহমর্মিতা এবং এ ধরনের মনুষ্যত্বের জন্য অপরিহার্য হাজারো উপাদানকে সুপ্রতিষ্ঠা  করাই ছিল এ মহাবিপ্লবের কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য। এ কারণে ইমাম হুসাইন (আ) সমস্ত মানুষের ও সবাই তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।

আসলে রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রতিচ্ছবিই ইমাম হুসাইনের (আ.) মধ্যে দেখা যায়। মুসলমানরা ঈমান শব্দটি কতই শুনেছে কিন্তু বাস্তবে কমই দেখেছ। ইমাম হুসাইনের (আ.) দিকে তাকালেই এই ঈমানের প্রতিফলন দেখতে পায়। মানুষ অবাক হয়ে বলতে বাধ্য হয় যে,মানুষ কোথায় পৌঁছতে পারে!! মানুষের আত্মা এত অপরাজেয় হতে পারে!! তাঁর দেহকে খণ্ড -বিখণ্ড করা হয়, যুবক পুত্রকে তাঁর চোখের সামনে ছিন্ন-ভিন্ন করা হয়, তৃষ্ণার চোটে আকাশের দিকে চেয়ে যার চোখ অন্ধকার হয়ে আসে, পরিবার-পরিজনদেরকে একই শিকলে বেঁধে বন্দী করা হয়, সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হন। কিন্তু যে জিনিস অক্ষয় হয়ে রয়ে গেছে তা হলো ইমাম হুসাইনের (আ.) সুউন্নত অপরাজেয় আত্মা। এ আত্মার কোনো ধ্বংস নেই। মানুষ যদি ইমানদার হয়, একত্ববাদী হয়, যদি আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে এবং পরকালে বিশ্বাসী হয় তাহলে একাই বিশ-ত্রিশ হাজার সুসজ্জিত সৈন্যকে মানসিকভাবে পরাস্ত করতে পারে। এটি কি নজিরবিহীন মহাশিক্ষণীয় বিষয় নয়? পৃথিবীতে একজন লোক খুঁজে বের করুন, যে ইমাম হুসাইনের (আ.) মত দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে পড়েও মাত্র দুটো শব্দ ইমাম হুসাইনের (আ.) মতো বলতে পারে!।

ইমাম হুসাইনের (আ.) রক্তের প্রতি নবীজীর (সা.) উম্মত ঋণী।

ওমর ইবনে সাদ তার সেনাদের হৈ-হল্লুড় করতে বলে যাতে ইমামের ভাষণে কেউ প্রভাবিত না হন কারবালার ময়দানে!আশুরার দিনে ইমাম হুসাইনের রণ-দক্ষতা সম্পর্কে শত্রু পক্ষেরই বর্ণনাকারীরা বলেছে: তাঁর মত একক ও অদ্বিতীয় রণকুশলি আর দেখি নি। যখন চতুর্দিক থেকে শত্রুরা তাঁকে পরিবেষ্টন করেছে এবং তাঁর সমস্ত সন্তান সন্ততি, আত্মীয় স্বজন ও সঙ্গী সাথিকে হত্যা করেছে তখনও তিনি নির্ভীক, সাহসী, শক্তিশালী, ধৈর্যশীল ও দৃঢ় সংকল্প হিংস্র সিংহের মতো প্রতিরোধ চালিয়ে গিয়েছেন ... পদাতিক সৈন্যরা তাঁর আক্রমণে এমনভাবে ডান ও বাম দিকে ছুটে পালাচ্ছিল যে, মনে হচ্ছিল, নেকড়ের আক্রমণ থেকে ছাগল-ছানার পাল ছুটে পালাচ্ছে !  বলা হয় কেবল ইমামের হাতেই প্রায় দুই হাজার শত্রু সেনা নিহত হয়েছিল। অবশেষে কয়েক হাজার শত্রু সেনা ইমাম হুসাইনকে ঘিরে ফেলে তাঁর দিকে বৃষ্টির মত তীর বর্ষণ শুরু করে এবং এক পর্যায়ে তিনি বর্শা ও তরবারির আঘাতে মাটিতে পড়ে যান। তাঁর জামা একশত বা তারও বেশী তীর, বর্শা এবং তরবারির আঘাতের চিহ্ন বহন করছিলো।

 ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদাতের দিন আকাশ এত কালো হয়ে গিয়েছিলো যে, দিনের বেলা তারা দেখা গিয়েছিলো। যে কোন পাথর তুললে তার নিচে তাজা রক্ত দেখা যেত। আরও বলা হয় আকাশ লাল হয়ে গিয়েছিলো তাঁর শাহাদাতে এবং সূর্য পীচের মত কালো। ফলে মানুষ মনে করেছিলো যে কিয়ামতের দিন চলে এসেছে। অনেকেই আজাবের আশঙ্কা করছিলেন।

বর্ণিত আছে যে, নবী পরিবারের নারীদের তাঁবু থেকে টেনে বের করে তাঁবুগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। নবী পরিবারের নারীদের মাথার চাদর ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিলো, তারা ছিলেন খালি পায়ে এবং বন্দীদের মত সারি বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। তারা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং তারা বলেছিলেন, “আল্লাহর শপথ, আমাদেরকে হুসাইনের শাহাদাতের জায়গাটিতে নিয়ে চলো।” যখন তাদের দৃষ্টি শহীদদের উপর পড়লো তারা বিলাপ করতে শুরু করলেন এবং তাদের চেহারায় আঘাত করতে লাগলেন। আলী (আ.) এর কন্যা যায়নাব হুসাইনের (আ.) জন্য কাঁদছিলেন এবং শোকাহত কণ্ঠে বলেছিলেন, “হে মুহাম্মাদ, আকাশের ফেরেশতাদের সালাম আপনার উপর, এ হলো তোমার হুসাইন, যে নিহত হয়েছে, যার শরীর রক্তে ভিজে গেছে এবং তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে, আপনার কন্যারা বন্দী হয়েছে, আপনার বংশকে হত্যা করা হয়েছে। বাতাস তাদের উপর ধুলো ফেলছে। আমি আল্লাহর কাছে অভিযোগ করি....

বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর শপথ, হযরত যায়নাবের এ কথাগুলো শুনে প্রত্যেকেই, হোক সে বন্ধু অথবা শত্রু, কেঁদেছিলো। এরপর শিশু কন্যা সাকিনা (আ.) তাঁর পিতা হুসাইনের দেহ জড়িয়ে ধরেন এবং বেদুইনরা চারিদিকে জমা হয় ও তাকে হুসাইনের লাশের কাছ থেকে টেনে সরিয়ে নেয়। কিয়ামত পর্যন্ত মহান আল্লাহর অভিশাপ পড়ুক তাদের ওপর যারা মহানবীর পবিত্র বংশধরদের ওপর বিভিন্ন সময়ে জুলুম করেছেন। সবাইকে জানাচ্ছি আবারও গভীর শোক ও সমবেদনা। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

 

 

ট্যাগ