জুলাই ৩১, ২০২৩ ১৩:২৬ Asia/Dhaka

আত্মসমালোচনা সবার জন্যই জরুরি। তবে কেউ কেউ আত্মসমালোচনা করতে গিয়েও ভুল করে বসে। আত্মসমালোচনার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি অনেক বেশি সহায়তা করে তাহলো উপযুক্ত জ্ঞান। এ কারণে সব সময় মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়।

আপনি যতবেশি পড়াশোনা করবেন, জানবেন এবং জ্ঞান অর্জন করবেন ততবেশি নিজের দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন। পড়াশোনা ও জ্ঞান অর্জন করলে একটা পর্যায়ে বিবেকবান মানুষের কাছে মনে হতে থাকে, তিনিতো আসলে তেমন কিছুই জানেন না! কোনো কিছুই নিয়েই গর্ব করার অবস্থায় তিনি নেই। আরেকজনের চাইতে নিজেকে বড় মনে করার কোনো কারণ তখন আর তিনি দেখতে পান না। কোন একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে আমরা যখন আবার চিন্তা করবো, তখন আমাদের নানা ভুল আমার সামনে চলে আসবে। আমরা যদি নাই-ই জানি যে, কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক তাহলে আমাদের আত্মসমালোচনাটা পূর্ণতা পাবে না। বিজ্ঞজনেরা গুণী ব্যক্তিদের আত্মজীবনী পড়তে বলেন এবং তাঁদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক আচার-আচরণ নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে বলেন। তাদের মতে, সফল আত্মসমালোচনার ক্ষেত্রে এগুলো খুব ইতিবাচক প্রভাব রাখে।  

রাতে যখন ঘুমাতে যান তখন আত্মসমালোচনা করুন। এই সময়টা আত্মসমালোচনার জন্য বেশ উপযুক্ত। এ সময় অন্য সব চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেকে নিয়ে ভাবুন, আজকে সারাদিন কি করলেন, গতকাল কেমন ছিল, এই সপ্তাহে কি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন, এই মাসে কোন কিছু কি মনে চাঞ্চল্যর সৃষ্টি করেছিল! তখন দেখবেন অনেক কিছু মনে পরবে, অনেক জিনিস ভাবিয়ে তুলবে আপনাকে, তখন চিন্তা করবেন যে কাজটি কেমন ছিলো, আবার যদি এরকম ঘটে তাহলে কি আগের মতই কাজটি করতেন নাকি অন্য কিছু, এভাবে ভাবলে দেখবেন অনেক কিছুই আপনার কাছে সঠিক, আবার অনেক কিছুই বেঠিক মনে হবে। এভাবে আপনি আপনার নিজের সমালোচনা করে নিজের ভুল ত্রুটিগুলো শোধরাতে পারবেন। তবে কোন কারণেই অতিরিক্ত ভাবতে যাবেন না, সবকিছুই সীমার মধ্যে থাকা ভালো। নিজের জীবন ও কর্ম পর্যালোচনা করতে গিয়ে নিজেকে তুলনা করতে যাবেন না, তাহলে আপনার চিন্তা নেতিবাচক পরিণতিতে গিয়ে ঠেকতে পারে। 

অনেকেই আত্মসমালোচনা করার ফুরসত পান না। সারাদিন নানা বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থেকে রাতে বিছানায় যাওয়ার পরপরই ঘুমিয়ে পড়েন। মাত্রাতিরিক্ত ব্যস্ততাও ভালো নয়। আপনার শরীর ও মনকে বিশ্রামের সুযোগ দিন। এই সুযোগে আত্মসমালোচনার মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটাও পালন করে নিন। মনে রাখতে হবে, আত্মসমালোচনা না করলে আপনার উন্নতি ও অগ্রগতিও থেমে যেতে পারে, কারণ আত্মসমালোচনা না করলে নিজের ভুল সংশোধন করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং মানুষ অহংকারী হয়ে ওঠে। আত্মসমালোচনাকে অনেকেই নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করানোর সঙ্গে তুলনা করেন। আত্মসমালোচনা করলে দেখবেন আপনার অনেক ছোটখাটো ভুল-ত্রুটিও আপনার কাছে ধরা দিচ্ছে। আত্মসমালোচনা করলে আপনি হয়তো বুঝতে পারবেন আপনার কথা বলার ধরণটাই শালীন নয়, আপনি অহেতুক হাসেন। এ অবস্থায় আপনি নিজের ব্যক্তিত্বকে আরও মসৃণ ও উজ্জ্বল করার সুযোগ পাবেন। 


নিজের দোষ ত্রুটিকে, নিজের থেকে আলাদা করতে পারার চেয়ে বড় সাফল্য খুব কমই আছে। নিজের একটা দোষকে সঠিক প্রমাণ আমরা অনেক সময় হাজারটা যুক্তি খুঁজি। আমাদের অনেকের মধ্যেই নিজের নেতিবাচক দিকটাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার এবং অন্যের ক্ষেত্রে চুলচেরা বিশ্লেষণে মশগুল হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। আত্মসমালোচনা তখনি সফল হবে যখন আমরা নিজের দোষ-ত্রুটির পেছনে যুক্তি দাঁড় না করিয়ে তা সংশোধনের চেষ্টা করব। আমাদের অনেকের মধ্যে কোনো কিছু নিয়ে একটু গভীরভাবে চিন্তা করারই অভ্যাস নেই। সৃষ্টিকর্তা যে আমাদেরকে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনার ক্ষমতা দিয়েছেন তা আমরা অনেকেই কাজে লাগাই না। আমরা নিজের কাছে নিজে প্রাথমিক কিছু প্রশ্ন করা থেকেই বিরত থাকি। প্রাথমিক ও মৌলিক কিছু প্রশ্ন উত্থাপন ও এসবের উত্তর খোঁজা সবার জন্য জরুরি এবং এসব প্রশ্ন আপনার আত্মসমালোচনা করার যোগ্যতাকে শানিত করবে। প্রথম প্রশ্নটি হলো, আপনি কে? এই পৃথিবীতে আপনাকে কেন আনা হয়েছে? কিভাবে এসেছেন? কি উদ্দেশ্যে এসেছেন? আপনাকে কে বানিয়েছে? এই পৃথিবীতে তো কোটি কোটি প্রজাতির প্রাণী আছে সেসব না হয়ে কেন আপনাকে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হিসেবে আনা হয়েছে? আপনার দায়িত্ব কী?

যখন আপনি এসব নিয়ে চিন্তা করবেন তখন আপনি নিজেকে উপলব্ধি করতে পারবেন, নিজেকে নিয়ে অনেক কিছু জানতে পারবেন। আপনি এসব নিয়ে চিন্তা-ভাবনার পর মানুষ হিসেবে নিজের দায়িত্ব ও সীমাবদ্ধতাগুলো সম্পর্কে সচেতন হবেন তখন আপনি সহজেই অপ্রয়োজনীয় কাজ ত্যাগ করতে সক্ষম হবেন।  কোনো কাজ করার আগে আপনি ভাবতে শিখবেন, কাজটি অন্যের জন্য কোনো ক্ষতি বয়ে আনছে কিনা অথবা এই কাজের চূড়ান্ত পরিণতিটা কী হতে পারে। মৌলিক কিছু প্রশ্ন নিয়ে আপনার চিন্তা-ভাবনা, আত্মসমালোচনা এবং আত্মশুদ্ধিকে সহজ করে তুলবে। 

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ