আগস্ট ০৭, ২০২৩ ২২:১৭ Asia/Dhaka

আমরা কেউই ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নই। ভুলের মাত্রাটা কারো কম, কারো বেশি। এ কারণে আমাদের ভুল শুধরে নিতে হয় কখনো কখনো আত্মসমালোচনার মাধ্যমে, আবার কখনো অন্যের পরামর্শ গ্রহণ করে। সবচেয়ে ভালো পরামর্শটা সবচেয়ে কাছের মানুষদের কাছ থেকে আসবে এটাই স্বাভাবিক।

বিয়ের পর প্রতিটি মানুষ এমন একজন বন্ধুর সান্নিধ্য পান যিনি অন্য পরিবার থেকে আসেন এবং শিক্ষা-সংস্কৃতিতেও ভিন্নতা থাকে। তবে এক সময় অন্য পরিবার থেকে আসা মানুষটিই সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হয় এবং আস্থার আসনটি জয় করে নেয়। স্বামী-স্ত্রী হয়ে ওঠেন একে অপরের পরিপূরক। অন্যদের চেয়ে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের ভালো-মন্দ দিক সম্পর্কে বেশি অবহিত থাকেন। শারীরিক-মানসিক সব ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে মাত্রায় ঘনিষ্ঠতার সুযোগ থাকে তা অন্যদের ক্ষেত্রে কখনোই সম্ভব নয়। এ কারণে স্বামী-স্ত্রীই পরস্পরকে শুধরে দিতে পারেন সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বাস্তব জীবনে এই ভুল-ত্রুটি ধরতে গিয়েই ঘটে নানা বিপত্তি। আমরা অনেকেই এই ভুল-ত্রুটি শুধরে দিতে গিয়ে নিজেরাই বড় বড় ভুল করে বসি। 

কেউ কেউ সমালোচনা করেন বা ভুল ধরেন অন্যকে অপমান করার জন্য। এটা সমস্যার একটা বড় কারণ। এমন মানুষেরা সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটানোর চেয়ে এ ধরনের কাজের মাধ্যমে সম্পর্কে তিক্ততা ক্রমেই বাড়িয়ে তুলেন। কেউ কেউ অন্যকে ছোট করে, খোঁচা দিয়ে কথা বলে এক ধরনের বিকৃত আনন্দ পান। এটা ভয়াবহ। মনে রাখতে হবে নিজের স্ত্রী বা স্বামীকে ছোট করলে নিজেকেও ছোট হতে হয়। এটা অনেকে বুঝতে পারেন না। ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার ভারসাম্য থাকা দাম্পত্যে জরুরি। অন্যের স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে তুলনা করলে স্ত্রী বা স্বামীকে অপমান করা হয়। অনেকে বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন। তারা বুঝতে চান না, দাম্পত্য জীবনে বাহ্যিক সৌন্দর্য সবকিছু নয়, মনের সৌন্দর্য খুঁজে দেখার চেষ্টা করতে হবে। মনের মিল হলে, পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ তৈরি হলে যে সুখ পাওয়া যায়, তা অন্য কিছু দিয়ে সম্ভব নয়। অনেকে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের পোশাক নিয়েও অহেতুক বাড়াবাড়ি করেন। কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় উপযুক্ত পরিবেশে নিজের পছন্দ বা অপছন্দের বিষয়টি শেয়ার করেন না। স্ত্রী বা স্বামী যদি নিজের পছন্দ বা অপছন্দের বিষয়টি পরস্পরকে বুঝিয়ে বলেন তাহলে তা অনেক বেশি ভালো ফল দেবে।

যেকোনো সমালোচনা হতে হবে গঠনমূলক। গঠনমূলক সমালোচনার অর্থ হলো ব্যক্তির ভালো ও মন্দ দু'টি দিকই তুলে ধরতে হবে এবং এর উদ্দেশ্য হতে হবে ব্যক্তির উপকার করা, ব্যক্তির ভুল শুধরে দিয়ে তাকে আরও উন্নত বৈশিষ্ট্যের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। অন্যভাবে বলা যায়, গঠনমূলক সমালোচনার উদ্দেশ্য কখনোই কোনোভাবেই অন্যের ক্ষতি করা বা অন্যকে অপমান করা নয়। এটা বলা যেতেই পারে যে, স্বামী-স্ত্রী  হচ্ছে পরস্পরের সবচেয়ে কাছের, তারা পরস্পরের সব কিছু সম্পর্কে অবহিত। পরস্পরের মানসিক-শারীরিক সমস্যাসহ সব বিষয় সম্পর্কে তারাই সবচেয়ে বেশি জানে। কাজেই একজন ব্যক্তি সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানা অপর কোনো ব্যক্তি যখন কোনো মন্তব্য করেন বা কোনো পরামর্শ দেন তখন সাধারণত তা অনেক বেশি নির্ভুল হয়। কাজেই একজন স্বামী বা স্ত্রীই পরস্পর সম্পর্কে সবচেয়ে সঠিক বিচার-বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হন এবং গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারেন। তবে গঠনমূলক সমালোচনা করার আগে ব্যক্তির প্রতিক্রিয়ার ধরণ সম্পর্কে অবহিত থাকা জরুরি।

আপনি যখন আপনার স্বামী বা স্ত্রীর গঠনমূলক সমালোচনা করবেন তখন অবশ্যই সময় ও পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় নেবেন। ধরুন, আপনার স্বামী বা স্ত্রী সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটিয়ে ক্লান্ত অবস্থায় বাসায় ফিরেছে ঠিক এ সময়ই আপনি তার ভুল শুধরে দেওয়া শুরু করলেন। এটা কি ঠিক হবে? কখনোই নয়। ভুল শুধরে দিতে চাইলে তাকে এমন সময় কথাগুলো বলতে হবে যখন সে ব্যস্ত বা ক্লান্ত নয়। যেকোনো ক্লান্ত মানুষই সহজেই রেগে যেতে পারেন। এছাড়া সমালোচনা বা ভুল শুধরে দেওয়ার সময় অবশ্যই ধৈর্য সহকারে শান্তভাবে কথা বলতে হবে। আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলা যাবে না।

এটা ঠিক যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক বন্ধুত্বের হবে এবং একজন আরেকজনকে সব কথা অকপটে বলতে পারবেন। কিন্তু সম্পর্কটা যতটাই বন্ধুত্বের বা কাছের হোক না কেন, সময় ও পরিস্থিতি বুঝে কথা না বললে মনোমালিন্য হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে। এছাড়া কিছু কথা না বলাই ভালো, যা আপনার দাম্পত্যে ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে। কোনো কোনো মানুষ কিছু বিষয়ে ভুল ধরাকে একদম সহ্য করতে পারেন না। এমনটি হলে ঐ প্রসঙ্গটিকে আপাতত এড়িয়ে চলুন। অন্যান্য ভুল শুধরানোর পর সুযোগ হলে সেদিকে এগোন। পুরো বিষয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধার বিষয়টিকে মাথায় রাখুন।

গঠনমূলক সমালোচনা বা ভুল শুধরাতে গিয়ে অতীত টেনে আনবেন না। তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে, পরিবেশ নষ্ট হতে পারে।  মনে রাখবেন, আপনি কথা বলছেন সমস্যার সমাধান ও ভুল শুধরানোর জন্য, একে অন্যকে দোষ দেয়ার জন্য নয়।

আপনার স্ত্রী বা স্বামী যদি আপনার গঠনমূলক সমালোচনা করে, তাহলে ধৈর্য ধরে চুপ থাকুন। অযথা তার কথার উত্তর দিয়ে ঝামেলা বাড়াবেন না। মনোযোগ দিয়ে কথা শোনার চেষ্টা করুন। আপনার যদি কথাগুলো শুনতে শুনতে রাগ খুব বেড়ে যায় তাহলে কয়েক বার গভীরভাবে শ্বাস নিন। প্রয়োজনে স্বামী বা স্ত্রীকে বলে আলোচনায় একটু বিরতি নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনার চেষ্টা করুন, এরপর আলোচনা আবার শুরু করুন। অপর পক্ষকে অহেতুক থামিয়ে দেবেন না। তাকে বলুন এই মুহূর্তে তোমার কথাগুলোতে ভালোভাবে মনোযোগ দিতে পারছি না, একটু সময় দাও। আমি কিছু সময় পর তোমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনব। কাউকে রাগের সময় ভুল শুধরে দিতে যাবেন না। রাগের সময় কোনো ধরনের উপদেশ শুনতে কেউই পছন্দ করেন না বরং এগুলো শুনলে তার রাগের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তাই রাগ কমার পর তাকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করুন।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ