আগস্ট ১৪, ২০২৩ ১৮:২২ Asia/Dhaka

কাউকে রাগের সময় ভুল শুধরে দিতে যাবেন না। রাগের সময় কোনো ধরনের উপদেশ শুনতে কেউই পছন্দ করেন না; বরং এগুলো শুনলে তার রাগের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তাই রাগ কমার পর তাকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করুন। যাইহোক আমরা আজকের আলোচনার শুরুতেই সমালোচনার আগে অন্যের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া ভেবে দেখার পরামর্শ দিচ্ছি।

গঠনমূলক সমালোচনা করার আগে অবশ্যই এ বিষয়ে আপনার স্বামী বা স্ত্রীর সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার ধরণ কী হতে পারে, তা মাথায় রাখুন। ঝগড়া বেধে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে তা এড়িয়ে যান এবং আরও বেশি উপযুক্ত সময় খুঁজতে থাকুন। এটা আপনাকে অনেক বেশি সহযোগিতা করবে। আপনার স্বামী বা স্ত্রী আপনার সমালোচনা করলে সাথে সাথে জবাব দেওয়ার বা প্রতিক্রিয়া দেখানোর দরকার নেই। হয়তো আপনি ভাবছেন তার কথার উত্তর না দিলে সে হয়তো ভাববে আপনি তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেননি অর্থাৎ তাকে গুরুত্বই দেননি।

হ্যাঁ, এমন আশঙ্কা থাকলে আপনি আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে এভাবে বলুন- তুমি যেসব কথা বলেছ সেগুলোর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। আমি তোমার কথাগুলো গুরুত্ব দিয়ে শুনেছি। তোমার বক্তব্য নিয়ে আমি চিন্তা করব।

এরপর আপনি সত্যি সত্যিই আপনার জীবনসঙ্গীর বক্তব্য নিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে চিন্তা-ভাবনা করুন। ভেবে দেখুন সত্যিই তার বক্তব্যগুলোর সঙ্গে আপনি একমত কিনা, সে কি আপনার উন্নতির জন্য কথাগুলো বলেছে নাকি কেবলি আপনাকে কষ্ট দিতে চেয়েছে? যদি আপনার কাছে মনে হয় যে, আপনার স্বামী বা স্ত্রী সঠিক কথাই বলেছে তাহলে আপনি নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করুন এবং সেভাবে পরিবর্তন আনতে শুরু করুন।

কিন্তু আপনি যদি আপনার স্বামী বা স্ত্রীর বক্তব্য বা সমালোচনার সঙ্গে একমত হতে না পারেন তাহলে চেষ্টা করুন একটা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে কথা বলতে। নিজের অমত বা বিরোধিতার পক্ষে যুক্তিগুলো শান্তভাবে তুলে ধরুন। একইসঙ্গে অপর পক্ষের কথাও শোনার চেষ্টা করুন। আপনি যখন স্বামী বা স্ত্রীকে নিজের পক্ষে যুক্তিগুলো তুলে ধরবেন তখন অবশ্যই দু'টি বিষয় মেনে চলার চেষ্টা করবেন। এক- যতটুকু সম্ভব 'তুমি' শব্দটি কম ব্যবহার করবেন। বারবার যদি আপনি বলতে থাকেন- তুমি, তুমি, তুমি তাহলে আপনার জীবনসঙ্গীর এমন ধারণার জন্ম নেবে যে, আপনি তাকে দোষারোপ করছেন। আপনার জীবনসঙ্গী যদি দোষীও হয়ে থাকে তারপরও এভাবে আক্রমণাত্মক সুরে কথা বলবেন না তাহলে আলোচনার পরিবেশ নষ্ট হবে।  দ্বিতীয় বিষয় হলো- প্রতিটি বাক্যের শুরুতে 'তুমি' শব্দের স্থলে 'আমি' শব্দটি ব্যবহারের চেষ্টা করবেন। 'তুমি সব সময় এই আচরণের মাধ্যমে আমাকে খেপিয়ে তোল'-এভাবে না বলে আপনি বলতে পারেন- 'আমি তোমার এই আচরণে অসন্তুষ্ট'।

সব সময় মনে রাখবেন নারী ও পুরুষের কথা বলার ধরণে জন্মগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। সাধারণত পুরুষেরা কম কথা বলেন এবং কথা বলার চেয়ে শুনতেই বেশি পছন্দ করেন। অন্যদিকে নারীরা কথা বলতে বেশি পছন্দ করেন, তারা কথা শোনার চেয়ে বলতে ভালোবাসেন। নারীরা চান পুরুষেরাও তাদের মতো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখাক, কিন্তু পুরুষেরা সাধারণত নীরব থাকেন এবং মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন। নীরবতা বা তাৎক্ষণিক তীব্র প্রতিক্রিয়া-এর কোনোটিই উপযুক্ত পন্থা নয় বরং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে শান্তভাবে নিজের মনঃকষ্টের কারণ তুলে ধরুন। শান্তভাবে পরস্পরের বক্তব্য তুলে ধরুন এবং অপর পক্ষের কথাও মনোযোগ দিয়ে শুনুন।

এভাবেই সাধারণত বেশিরভাগ ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে যায়। পরস্পরকে বোঝানোর চেষ্টা করুন দুই জনেরই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে কিন্তু দুজনেই পরস্পরের মঙ্গল চান, সুখে-শান্তিতে থাকতে চান। পরস্পরের ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি এড়িয়ে সুখ টেকসই করাই হতে হবে উভয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। এর ফলে সন্তানরাও সুখী হবে, তাদের জন্যও সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি হবে। তারাও আপনাদের আচরণ দেখে সুন্দর আচরণ রপ্ত করবে। প্রতিশোধ গ্রহণের মানসিকতা দূর করতে হবে। আপনার স্বামী বা স্ত্রী আপনার কথাকে গুরুত্ব দেয় না বলে আপনিও তার কথাকে গুরুত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানাবেন-এমনটা হলে চলবে না। অথবা আপনার কথা শোনে না বলে আপনিও তার কথা শুনবেন না, এটা বোকামি। কারণ এ ধরণের আচরণ আপনাদের দাম্পত্য জীবনের সমস্যার সমাধান তো করবেই না বরং সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলবে। অনেক দম্পতির মধ্যে আলোচনা মানেই একে অপরের ওপর প্রাধান্য বিস্তার বা তর্কে জেতার প্রতিযোগিতা।

প্রতিশোধপরায়নতা সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। এমন অবস্থায় একজন আরেকজনের দোষ-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার পর অপরজনও চেষ্টা করতে থাকেন স্বামী বা স্ত্রীর সামনে এটা প্রমাণ করতে যে, সমালোচনাকারী নিজেও একই দোষে দুষ্ট। এমন করতে গিয়ে অনেক সময় পরস্পরের অতীত বিরোধগুলো আবার সামনে এসে পড়ে এবং পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়। এ কারণে পাল্টাপাল্টি আচরণ পরিহার করতে হবে। পরস্পরের ভুল-ত্রুটিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। মনে রাখবেন মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, নতুন করে যাতে ভুল না হয় সেদিকে নজর দিন। অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে, তবে অতীতকে টেনে এনে বর্তমানকে ধ্বংস করা যাবে না।

দাম্পত্য জীবনে গোপনীয়তা রক্ষা করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা বিষয়ে মনোমালিন্য হতে পারে, কথা কাটাকাটি হতে পারে, পারস্পরিক সমালোচনা হতে পারে। এগুলো পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে অথবা বাইরের মানুষের কাছে বলা যাবে না। আপনার নিজের এবং আপনার স্বামী বা স্ত্রীর পরিবারের কারো সঙ্গেই এসব বিষয় শেয়ার করবেন না। এর ফলে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের সন্তানদের বিষয়ে অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে থাকেন, এ কারণে তারা এগুলোকে সহজেই মেনে নিতে পারেন না। এর ফলে সমস্যার সমাধানের পরিবর্তে সম্পর্কটা আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। আপনাকে দাম্পত্য জীবন থেকে সরে আসতেও উসকানি দিতে পারে তারা।

যদি মনে করেন, আপনার স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে সমালোচনা সহ্যের ক্ষমতা খুবই কম এবং পরস্পরকে শুধরে দিতে গিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে তাহলে আপনারা অবশ্যই একজন মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। পারিবারিক কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে অনেকেই ভালো ফল পান। সংশ্লিষ্ট ডাক্তারেরা এ বিষয়ে যেসব পরামর্শ দেবেন সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করবেন। আমরা সচরাচর শারীরিক সমস্যা হলেই ডাক্তারের কাছে যাই, কিন্তু মনের সমস্যার জন্যও ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত তা বুঝতে চাই না। মনে রাখবেন, আমাদের মনেরও অসুখ হতে পারে।  সব সময় মন খারাপ থাকা, নানা ধরণের উৎকণ্ঠা, অবসাদ, ছোটোখাটো বিষয়েও অতিরিক্ত চিন্তা-এগুলো মনের কিছু সমস্যা। এর জন্যও প্রয়োজনে ডাক্তার দেখাতে হবে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ