আগস্ট ২৩, ২০২৩ ২১:২৫ Asia/Dhaka

বর্তমানে ইন্টারনেট ভিত্তিক যোগাযোগ এতটাই বেড়েছে যে, এটা কয়েক বছর আগেও ছিল অকল্পনীয়। অনলাইন ভিত্তিক যোগাযোগের আধিপত্যের কারণে এ ক্ষেত্রে অনেকেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কেউ কেউ যোগাযোগ করতে গিয়ে উল্টাপাল্টা আচরণের সম্মুখীন হচ্ছেন। অনলাইনের যোগাযোগের কারণে নানা ভুল বোঝাবুঝি এবং সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। আজ আমরা অনলাইনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কী ধরণের সতর্কতা জরুরি তা তুলে ধরব।

ইন্টারনেট ভিত্তিক যোগাযোগটার সূচনা ঘটেছে প্রধানত ইমেইলের মাধ্যমে। ১৯৯০ এর দশকে ইমেইলের মাধ্যমে কাছের ও দূরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ এক নতুন মাত্রা পায়। এর অনেক ভালো দিক ছিল এবং এখনও আছে। ইন্টারনেটের ব্যবহার ও গতি বাড়ার কারণে ইমেইলের ব্যবহার এতটাই বেড়ে যায় যে, সব ইমেইলের জবাব দেওয়াটাও অনেকের পক্ষে দুরূহ হয়ে ওঠে। কর্মক্ষেত্রে এই বাস্তবতা ছিল একেবারেই অনস্বীকার্য। ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ এখন একটু পুরনোই হয়ে গেছে। এখন অনলাইনে যোগাযোগ সার্বজনীন হয়ে গেছে বেশিরভাগ দেশে। করোনা বা কোভিড-১৯ মহামারির শুরু হওয়ার পর অনলাইন যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা বেশি উপলব্ধি হতে শুরু করে। অফিসের বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীই বাসায় বসে যোগাযোগ ও কাজের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। সময়ের সাথে সাথে যোগাযোগের পরিমণ্ডল বেড়েছে। বিভিন্ন সমাজের, বিভিন্ন মতের এবং বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের ভিন্ন ভিন্ন আদর্শ ও মতামত অনলাইনে প্রকাশ করছেন। এতে করে খুবই স্বাভাবিক নিয়মেই তাদের কথা-বার্তায় ও আচরণে আমরা বিচিত্রতা দেখা যাচ্ছে।

এটা ঠিক যে, অনলাইনে যোগাযোগের কারণে আমরা বিশ্বব্যাপী বন্ধু খুঁজে পেয়েছি এবং দাপ্তরিক, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজের গতিও বেড়েছে। সময়ের অপচয় কমেছে। তবে এই সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর কৌশল জানতে হবে। এই সুযোগ যাতে আমাদের জন্য বাড়তি ঝামেলার কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে- মানুষের সাথে মানুষের চিন্তা, চেতনা, বিশ্বাস, মতামত কিংবা আচরণের পার্থক্য যেন সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বিনষ্ট না করে। বিভিন্ন মত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখার জন্যে আমাদের কী করা উচিত তা জানতে হবে। কথা, কাজে ও আচরণে সতর্ক হতে হবে। 

অনলাইনে কোনো মন্তব্য প্রকাশের আগে একটু খেয়াল রাখবেন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ছোট করা হচ্ছে কিনা বা আপনার কথাতে কারো প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পাচ্ছে কিনা। কেননা আপনার বক্তব্য যদি কোনো ব্যক্তির অনুভূতিতে আঘাত আনে তাহলে স্বভাবতই তিনি বিরক্ত হবেন এবং প্রতিক্রিয়াও দেখাতে পারেন। এমতাবস্থায় আপনি সহনশীল আচরণ প্রদর্শন করতে অপারগ হলে পারস্পরিক অসম্মানের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। যখন কথা বলবেন বা লিখবেন তা যেন অবশ্যই সুস্পষ্ট হয়, আপনার বক্তব্যের কারণে যাতে কোনো ধরণের ভুল বোঝাবুঝি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বাস্তব জীবনে যেকোনো কিছু বলা বা করার ক্ষেত্রে শুরুতে আমরা ভেবে নিই যে, সেই কথা বা কাজ অন্য কোন ব্যক্তির বিরক্তির কারণ বা ক্ষতির কারণ হবে কিনা। অনলাইন মাধ্যমেও যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে ঠিক একই ভাবে এসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমরা মানুষের কল্যাণে এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবো মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরিতে নয়। তাহলে দেখবেন আমাদের আচরণের মধ্যে নেতিবাচকতা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।

আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের বিশ্বাসের এবং মতের মানুষ পাশাপাশি বাস করে। আপনার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে অন্য সবার দৃষ্টিভঙ্গি মিলতেই হবে এমন ধারণা করাটা অনুচিত। সমাজে বৈচিত্র্য খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। এই বৈচিত্র্য মেনে নিয়ে আমাদের সকলের মতামত, বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। এতে করে আপনি অনলাইন এবং অফলাইন সব জায়গাতেই তিক্ততা এড়িয়ে চলতে পারবেন।

যে কোন মন্তব্য, ছবি, ভিডিও বা যে কোনো তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নেবেন যাতে কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ রটানো, সম্মানহানি বা অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মত ব্যাপার না ঘটে। এছাড়া, কারো ব্যক্তিগত বিষয় যা সে প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এমন বিষয় যাতে প্রকাশিত না হয় সে ব্যাপারেও সচেতন থাকা দরকার। অনেকেই আছেন যারা নিজের ছবি অনলাইনে প্রকাশ করতে চান না, তাদের প্রতি সম্মান জানান এবং তাদের অনুমতি ছাড়া ছবি প্রকাশ করবেন না। অনুমতি ছাড়া কোনো গ্রুপে কাউকে অ্যাড করবেন না। পাসওয়ার্ড বা গোপনীয় তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকুন। হ্যাকারসহ দুর্বৃত্ত শ্রেণীর কারণে ইন্টারনেট জগতে গোপনীয়তা রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। (মিউজিক)

কোনো ইস্যুতে মতের মিল না হওয়া এবং তার জন্যে তর্ক-বিতর্ক হওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এক্ষেত্রে আপনি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে পরিচিত বা অপরিচিত কারো সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। কেননা ব্যক্তিগত আক্রমণ বা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-মতের প্রতি আক্রমণ না করে যুক্তি দিয়ে সুন্দরভাবে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করলে পারস্পরিক সম্মান বজায় থাকবে। আপনার বক্তব্যের বিষয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আসবে সেটাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়ার চেষ্টা করুন। আপনার নিজের ধর্ম, মত, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিচয়ের জায়গা থেকে কিছু প্রচার করার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই অন্য কোন বিশ্বাসের মানুষকে না বুঝে আঘাত দেয়া হয়ে যায়। এমন অনেক উদাহরণ আপনার চারপাশে আপনি দেখতে পাবেন। এজন্য এই ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকা দরকার। যেকোনো তথ্য আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে সব সময় সতর্ক থাকা জরুরি। আপনি অবশ্যই ভদ্র ও শোভন উপায়ে এবং রাষ্ট্রীয় আইন মেনে আপনার ধর্ম, আদর্শ বা সংস্কৃতি প্রচার করতে পারেন। এতে করে পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় থাকে। অন্যথায় তিক্ততা বাড়বে, অসম্মান বাড়বে এবং সংঘাত বাড়বে। আমাদের মনে রাখা উচিৎ কারো চিন্তা, আদর্শ বা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কথা বললে যে কারোরই খারাপ লাগতে পারে। এ বিষয়েও সতর্ক থাকুন।

অন্য কারো ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলার ক্ষেত্রে সচেতন থাকবেন। আপনার সাথে তার সম্পর্ক বিবেচনা করে আচরণ প্রদর্শন করবেন। ইনবক্সে বা কমেন্টে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে কাউকে বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকুন। পরিচিত বা ঘনিষ্ঠ কেউ না হলে সম্বোধনের ক্ষেত্রে ‘আপনি’ ব্যবহার করবেন। অপরিচিতদের ক্ষেত্রে কখনো ‘তুমি’ বা ‘তুই’ সম্বোধন করে কথা বলা উচিত না। কোনো ব্যক্তির সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে তার ধর্ম, সংস্কৃতি, জাতিগত পরিচয়, ভাষা, লিঙ্গ, শারীরিক বা অন্য কোন প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদির জন্য কোন বৈষম্য না করে সবাইকে সমানভাবে দেখা এবং সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। কারও বৈচিত্র্য বা ভিন্নতার জন্য কোন ধরনের আক্রমণ, বিদ্বেষ বা বৈষম্য করা অনুচিত। কারো শারীরিক বৈশিষ্ট্য বা পরিচয়কে সামনে নিয়ে আসা উচিত নয়। পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় না রাখতে পারলে অনলাইন বা বাস্তব জীবনে কোথাও স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখা সম্ভব না।

পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অনলাইন যোগাযোগকে আর উপেক্ষা করার উপায় নেই। কাজেই উপেক্ষা নয়, সতর্কতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ