আগস্ট ২৬, ২০২৩ ১৪:২৮ Asia/Dhaka

নারী ও পুরুষের সমানাধিকারের শ্লোগান পাশ্চাত্যে এমন সময় জোরদার হয় যখন সেখানে ঘটেছিল শিল্প বিপ্লব এবং ঘটেছিল দুই দু'টি বিশ্ব যুদ্ধ।

প্রায় শত বছর আগে মার্কিন ঐতিহাসিক ও দার্শনিক উইল ডুরান্ট ১১ খণ্ডে লেখা 'সভ্যতার কাহিনী' বা দ্য স্টোরি অফ সিভিলাইজেশান শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন, নারী স্বাধীনতা শিল্প বিপ্লবের পরিণতি... একশ বছর আগে ইংল্যান্ডে একজন পুরুষের জন্য কাজ পাওয়া ছিল বেশ কঠিন। কিন্তু পুঁজিপতিরা তখন সস্তা শ্রম খুঁজছিলেন। সরকার তখন এমন ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছিল যাতে নারী ও শিশুরা স্বেচ্ছায় কলকারখানায় যায়।

কিন্তু এই নীতির ফলে পাশ্চাত্যে অর্থনৈতিক পণ্য ও ভোগ্য পণ্য উৎপাদন বেড়ে গেলেও মূল্যবোধের ক্ষেত্রে দেখা দেয় অবক্ষয় এবং নারী সমাজের অপব্যবহারের কারণে পরিবার-ব্যবস্থা হয়ে পড়ে নড়বড়ে! এ ছাড়াও তালাকের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পারিবারিক অনৈতিকতা ও সামাজিক সমস্যা বৃদ্ধির মত নানা সংকটও জোরদার হয়ে ওঠে।  এভাবে নারীকে সমান অধিকার দেয়ার নামে তাদেরকে ঘর থেকে বের করে এনে সর্বত্র শোষণের শিকার করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং এ ধরনের তৎপরতা সফল হয়েছে কথিত নারীবাদী আন্দোলনের সহযোগী ভূমিকার কারণে। 

নারীবাদী আন্দোলনের সমর্থকরা বলেন, মেয়েরা বিয়ে করার ফলে এবং মা হওয়ার কারণে সমাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ তৎপরতায়, জ্ঞান চর্চায় ও সাংস্কৃতিক তৎপরতায় পিছিয়ে পড়েন বা এসব থেকে পুরোপুরি দূরে থাকতে বাধ্য হন। তারা গর্ভধারণকে নিরুৎসাহিত করেন ও গর্ভপাতের স্বাধীনতার সমর্থক। মার্কসবাদী ধারার নারীবাদীরা শ্রম বাজারে আকৃষ্ট হওয়ার পর স্বেচ্ছাধীন গর্ভপাতকে বৈধতা দেয়া হয়। আর এভাবে মাতৃত্বের বিরুদ্ধে শুরু হয় নারীবাদীদের লড়াই।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৫ জন নারীর একজন হন ধর্ষিত

এভাবে আঘাত আসছে পরিবার ব্যবস্থার ওপর এবং মাতৃত্ব, মাতৃস্নেহ ও সন্তানকে সুশিক্ষিত করার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হয়ে পড়ছে উপেক্ষিত। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির মতে এভাবে নারীর প্রতি সহায়তার নামে নারী জাতির প্রতি এবং মানুষের প্রতি করা হয়েছে সবচেয়ে বড় জুলুম ও বিশ্বাসঘাতকতা। পশ্চিমাদের কথিত নারী স্বাধীনতা আসলে নারীকে দাসী ও যৌন দাসীতে পরিণত করেছে এবং স্বাধীনতা ও মানবতাকে করেছে উপহাস!  অন্য কথায় পাশ্চাত্য নারীকে স্বাধীনতা দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং নারীজাতির প্রতি হয়ে পড়েছে ঋণী!

সস্তায় নারীর কাছ থেকে শ্রম আদায়ের পুঁজিবাদী কৌশলের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে পশ্চিমা নারী সমাজ। নারী যাতে কলকারখানায় বেশি সময় দিতে পারে সে জন্য পরিবারে ও ঘরে তাদের উপস্থিতি বা ভূমিকা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। নারীবাদী বা ফেমিনিস্টরা এটাই বোঝানোর চেষ্টা করেন যে নারীকে স্বাধীনতা পেতে হলে শিশুদের যত্ন নেয়ার কাজ ও স্বামীদের সেবার কাজ থেকে মুক্ত হতে হবে! অথচ ইসলামী চিন্তাধারা অনুযায়ী নারী সমাজ সন্তান জন্ম দিয়ে ও মায়ের স্নেহময়ী ভূমিকা পালনেই সবচেয়ে বেশি প্রশান্তি পেয়ে থাকেন।

ইউরোপীয় নারী অধিকার বিষয়ক কর্মী স্যালি ক্লাইন 'Women, Passion and Celibacy'  বা 'নারী, ভালোবাসা ও কুমারিত্ব' শীর্ষক বইয়ে বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে আমরা (পশ্চিমা) নারী সমাজ যা পেয়েছি তা আমাদের স্বাধীনতা নয়, বরং যা ঘটেছে তা হল পুরুষদের স্বাধীনতাকে বৈধতা দান। আমরা তথা নারী সমাজ হয়েছি বলির শিকার বা কুরবানি। আমরা হারিয়েছি নিরাপত্তা, ফলে পুরুষরা যেভাবে খুশি সেভাবে আমাদের ব্যবহার করছে  ও ভোগ করছে!  

পাশ্চাত্যে সাম্রাজ্যবাদীরা কথিত নারী স্বাধীনতাকে করেছে যৌন লালসা ও মুনাফাকামিতার মাধ্যম। নারী সেখানে নানা পণ্য, সেবা কার্যক্রম ও ভোগ্য পণ্যের বিজ্ঞাপন হিসেবে হচ্ছে ব্যবহৃত! সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডার্ম শহরে নারী, জীবন ও স্বাধীনতা তথা যান, জিন্দেগি ও অজাদি শীর্ষক শ্লোগানের প্রতি সমর্থন দেয়া হয়েছে! অথচ কেউ কি জানে বহু বছর ধরে এই শহরে বহু নারী পতিতা হিসেবে মানসিক সংকটের শিকার! পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য বহু যৌন-বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে এই শহরের রেড লাইট নামক এলাকাগুলোয়! লাল রঙ্গের আলোক-সজ্জিত শো-কেসে সাজিয়ে রাখা হয় পতিতাদের এবং তাদের বাধ্য করা হয় নানা ধরনের যৌন-আবেদনমূলক অঙ্গ-ভঙ্গী করতে। আমস্টারডার্মের অন্যতম আকর্ষণীয় কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয় এইসব প্রদর্শন কেন্দ্র!  নেদারল্যান্ডসে পতিতাবৃত্তি বৈধ পেশা হিসেবে স্বীকৃত। দুহাজার সন থেকে সেখানে যৌন-বিনোদন কেন্দ্রগুলো অপরাধী নানা সংস্থা ও সরকারী সংস্থাগুলোর সবচেয়ে লাভজনক আয়ের অন্যতম প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে। তাই এইসব নারীদের প্রদর্শনের জন্য বিশেষ শো-কেস গড়ে তোলা হচ্ছে!

পাশ্চাত্যে সাম্রাজ্যবাদীরা কথিত নারী স্বাধীনতাকে করেছে যৌন লালসা ও মুনাফাকামিতার মাধ্যম

স্কেপটিক্স রিসার্চ সেন্টারের রিপোর্ট অনুযায়ী, নেদারল্যান্ডসের ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ পতিতা প্রকৃতপক্ষে যৌনদাসী এবং তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে এই পেশায় কাজ করতে। এছাড়াও, আমস্টারডামে এই পেশার উচ্চ আয়ের কারণে, অন্যান্য ডাচ শহরে অধ্যয়নরত বিপুল সংখ্যক মহিলা শিক্ষার্থী ছুটির দিনে আমস্টারডামে যায় এবং যৌন পরিসেবা প্রদানকারীদের মাধ্যমে পতিতাবৃত্তিতে জড়িত হয়। তবে আমস্টারডামের স্থানীয় জনগণের খুব কম সংখ্যকই এইসব পতিতার কাছে যান। তারা এই নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীলও নন। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেসরকারি সংস্থা এবং মানবাধিকার কর্মীদের কিছু প্রচেষ্টা ও চাপ সত্ত্বেও, ডাচ সরকার পতিতাবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ বা সীমাবদ্ধ করার জন্য কোন আইন প্রণয়ন করেনি এবং এই কার্যক্রমগুলো স্বাভাবিক হয়ে গেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নেদারল্যান্ডসে মানব পাচার এমন একটি বিষয় যা বিশেষভাবে নারী ও মেয়েদের ক্ষতি করছে। যারা মানব পাচারের শিকার, তাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ অবৈধ তৎপরতার শিকার।  ২০১৭ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মানব পাচার মনিটরিং ও প্রতিরোধ বিষয়ক কার্যালয় নেদারল্যান্ডসকে মানব পাচারের শিকার-এমন উল্লেখযোগ্য  দেশগুলোর তালিকায় স্থান দিয়েছে। এই দেশটিতে প্রতি বছর ছয় হাজারেরও বেশি মানুষ মানব-পাচারকারীদের মাধ্যমে পাচারের শিকার হন। এদের দুই তৃতীয়াংশ তথা প্রায় চার হাজার জনকে যৌন দাসত্বের শিকার করা হয়।

নেদারল্যান্ডস-এর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ যৌন দাসত্বের শিকার এবং তাদের এক উল্লেখযোগ্য অংশই নারী। বেশ কয়েক দশক ধরে এ অঞ্চলের মেয়ে শিশুরা মুনাফাকামী চক্রের অপরাধের বলি হয়। আমস্টারডার্মের রেড-লাইট অঞ্চলগুলোর সব নারীর সঙ্গেই অশ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণ করা হয়। বেশিরভাগ পতিতাই অন্তত কয়েকবার যৌন সহিংসতা ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কেবল নেদারল্যান্ডসই যে এইসব তিক্ত বাস্তবতার শিকার তা নয়, ব্রিটেন, জার্মানি ও  ফ্রান্সসহ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই এইসব সমস্যায় জর্জরিত। মোটকথা পাশ্চাত্য নারীকে পণ্য ও হাতিয়ার হিসেবেই দেখে।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ