এপ্রিল ২২, ২০২৪ ১৮:১৬ Asia/Dhaka

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষ মানুষ হিসেবে সমান ও একই ধরনের মানবীয় সম্মানের অধিকারী। নারী রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রসহ অন্য অনেক ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তানের সুশিক্ষা ও প্রতিপালন নারীর সবচেয়ে বড় ও মহান দায়িত্ব। ঘরের বাইরে নারী সমাজ-সেবামূলক বা অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকাসহ যে কোনো ভূমিকা রাখতে সক্ষম ও প্রয়োজনে তাদেরকে সেসব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে বলেও মনে করে ইসলাম। তবে এ মহান ধর্মের দৃষ্টিতে নারীকে সর্বাবস্থায় নৈতিক পবিত্রতা ও ঘরের বাইরে তৎপরতা চালানোর সময় পোশাকে ও আচরণে ইসলামী শালীনতা বজায় রাখতে হবে। পারিবারিক জীবনে নারী হচ্ছে প্রশান্তির উৎস। সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তারা পুরুষের সহযোগী। জ্ঞান-গবেষণায়ও তারা হতে পারেন সভ্যতা ও জাতিগুলোর অগ্রগতির অন্যতম প্রধান শক্তি। আর সভ্যতার চাকা তখনই এগিয়ে যাবে যখন নারী- সমাজ নৈতিকতা ও শালীনতার সীমানা রক্ষা করে চলবেন। 

মুসলিম সভ্যতা নৈতিক দিক থেকে পবিত্র ও লজ্জাশীল নারী সমাজের সহায়তায় খুব দ্রুত সব ধরনের সাফল্য অর্জন করে উন্নতির চরম শিখরে উঠতে পারে। আর তাই পাশ্চাত্যের অনৈতিক ও পরিবার-বিধ্বংসী  বস্তুবাদী সভ্যতা নারীর হিসাব বা শালীন পোশাকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শত্রুতায় নেমেছে। অন্যদিকে  ইসলামী শালীন পোশাকে আকৃষ্ট হয়ে অনেক পশ্চিমা নারী ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।

ইসলাম অবিবাহিত নারী ও পুরুষকে চারিত্রিক ও নৈতিক পবিত্রতা বজায় রাখতে বলে এবং আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও পোশাকেও এই পবিত্রতা বজায় রাখার ওপর জোর দেয়।  নারী ও পুরুষের মানসিক প্রশান্তির জন্য এ বিষয়টি জরুরি ও অপরিহার্য। সামাজিক পরিসরে দৃষ্টিকটু বা উত্তেজক পোশাক ও উত্তেজক কথা-বার্তা বা অঙ্গভঙ্গি নারী-পুরুষের স্বাভাবিক কাজকর্মের পথে বাধা হয়ে দাড়ায়। আর বিয়ের বাইরেই শারীরিক চাহিদা মেটানোর বিষয় যদি সহজ বা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে পড়ে তাহলে অনেকেই আর বিয়ের প্রতি তথা বৈধ দাম্পত্য জীবন ও পরিবার গড়ে তোলার প্রতি আগ্রহী হবেন না। ফলে মানব-প্রজন্মের বিস্তারও হয়ে পড়বে বিপন্ন।  

নারী প্রকৃতিগতভাবে কোমল প্রকৃতির। তাই ইসলাম নারীর অধিকার রক্ষায় এগিয়ে এসেছে। ইসলাম স্ত্রীর ওপর স্বামীর ও স্বামীর ওপর স্ত্রীরও জুলুমের কঠোর বিরোধী। পরিবারে স্ত্রীর ওপর স্বামীর যেমন কিছু অধিকার আছে তেমনি স্বামীর ওপরও স্ত্রীর অনেক অধিকার রয়েছে। ইসলাম এই অধিকারগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রেখে বিধান দিয়েছে। স্বামীর অধিকার লঙ্ঘন করলে যেমন স্ত্রীকে পরকালে জবাবদিহি করতে হবে তেমনি স্বামীও যদি স্ত্রীর অধিকার লঙ্ঘন করেন তাহলেও তাকে শাস্তি পেতে হবে পরকালে। পরিবারে নারীর প্রশান্তিদায়ক ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে স্বামীর জন্য যেমন স্ত্রী প্রশান্তির উৎস তেমনি স্ত্রীর জন্যও স্বামী প্রশান্তির উৎস। অর্থাৎ তারা পরস্পরের জন্যই পরস্পরের প্রশান্তির উৎস। নারী ও পুরুষ পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং তারা পরস্পরের সহযোগী। পরস্পরের কাছে প্রশান্তি পেতে হলে তাদেরকে হতে হবে পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত ও অনুরাগী। স্ত্রীর দয়া ও কোমলতা স্বামীকে যোগায় প্রশান্তি, অন্যদিকে স্বামীর শক্তিমত্তা স্ত্রীকে দেয় প্রশান্তি ও নিরাপত্তার অনুভূতি। বিয়ের বন্ধন ও পরিবার গঠন ছাড়া এইসব সৌভাগ্য অর্জন করা নারী ও পুরুষের জন্য সম্ভব হয় না। নারী ও পুরুষের জন্য  পরিবার গঠন ও সন্তান-সন্ততি নেয়া পারস্পরিক ভালোবাসা জোরদারের প্রধান চালিকাশক্তি।   

স্বামী যদি নিজেকে পরিবারের একচ্ছত্র মালিক ভাবেন ও স্ত্রীকে ভাবেন তার দাসী বা কর্মচারী তাহলে সেখানে পারস্পরিক ভালবাসা জন্মাতে পারে না। একইভাবে স্ত্রী যদি স্বামীর ওপর সাধ্যের চেয়েও বেশি কাজ বা দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে চান বা তার কাছ থেকে স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করেন তাহলে তাও হবে জুলুম। আর এর বিপরীতে তারা যদি হন পরস্পরের স্বার্থের বিষয়ে অল্পে তুষ্ট থাকেন তাহলে সেখানে আসবে প্রশান্তি ও সমৃদ্ধি। স্বামী ও স্ত্রীর প্রেমহীন সম্পর্ক বা দাম্পত্য জীবন সন্তানদের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে তারা ভবিষ্যতে বিয়ে করতে আগ্রহী হবে না। স্ত্রীর ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা স্বামীকে যোগায় ক্লান্তি ও হতাশার মধ্যে আশার অনুপ্রেরণা। অন্যদিকে স্বামীর পৃষ্ঠপোষকতাও স্ত্রীর জন্য জীবনের নানা ক্ষেত্রে হয় উৎসাহের উষ্ণ উৎস।  স্ত্রীরা যে কেবল স্বামীদের পার্থিব বিষয়েই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম তা নয় তাদের ভালোবাসা স্ত্রীরা যে কেবল স্বামীদের পার্থিব বিষয়েই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম তা নয় তাদের ভালোবাসা স্বামীদের ঈমান জোরদারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মহানবী (সা) ও হযরত খাদিজা ছিলেন আল্লাহর ইবাদাতের ক্ষেত্রেও পরস্পরের সর্বোত্তম সহযোগী বা সাহায্যকারী। একইভাবে হযরত আলী ও হযরত ফাতিমা (সা. আ)ও ছিলেন এক্ষেত্রে সবার জন্য আদর্শ। 

আদর্শ পরিবার গঠনের জন্য ও সংসারকে সুখময় করার জন্য স্বামী ও স্ত্রীর উচিত পরস্পরের ভুল-ত্রুটিগুলোর ব্যাপারে ক্ষমাশীল হওয়া এবং পরস্পরের দোষ-ত্রুটিগুলো ঢেকে রাখা।  প্রতিশোধস্পৃহা বা জিঘাংসা কেবল হিংসা ও প্রতিহিংসাই জাগিয়ে তোলে। কখনও কখনও সামান্য বা খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েও একরোখা মনোভাব ও নিজেকে নির্ভুল ভাবার চেষ্টা কিংবা নির্ভুল হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা বড় ধরনের অশান্তি ডেকে আনতে পারে। তাই স্বামী ও স্ত্রী উভয়েরই উচিত  শান্ত ও উদার মেজাজ নিয়ে পরস্পরের ভুলগুলো অগ্রাহ্য করা ও নিজে সঠিক পথে থাকলেও তা তাৎক্ষণিকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা না করা। একজনের রাগ ও উত্তেজনা যখন কমে যাবে কেবল তখনই ভুল শোধরানোর চেষ্টা করতে হবে।# 

পার্সটুডে/এমএএইচ/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন


 

ট্যাগ