এপ্রিল ১৫, ২০২৪ ২১:০৬ Asia/Dhaka

বর্তমান যুগে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি অতীতের তুলনায় অনেক ব্যাপক হওয়ায় সমাজে নারী ও পুরুষের সুস্থ সম্পর্কও অতীতের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

শিল্পায়ন, শহরায়ন ও নগরায়ন বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন গণ-লেনদেন-কেন্দ্র যেমন, অফিস-আদালত, কল-কারখানা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, স্কুল-কলেজ, বাজার ও বিনোদন-কেন্দ্রগুলোতে নারী ও পুরুষের উপস্থিতি আগের তুলনায় ক্রমেই বাড়ছে। ফলে যুগোপযোগী ধর্ম হিসেবে নারী-পুরুষের সম্পর্কের সীমারেখার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি জানার গুরুত্বও মুসলমানদের জন্য বেশ জরুরি।  ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের রয়েছে দুটি প্রধান দিক: শরীর ও আত্মা। নারী ও পুরুষের পারস্পরিক যোগাযোগ মানুষের মন বা আত্মা এবং শরীরের জন্য যেন ক্ষতিকর না হয় সে লক্ষ্যেই ইসলাম কিছু সীমা-রেখা বা বিধি-বিধান মেনে চলার ওপর জোর দেয়। তাই মুসলিম ও অমুসলিম পরপুরুষ বা পরনারীর সঙ্গে যোগাযোগ বা সম্পর্ক বিষয়ে মানবীয় প্রকৃতির ধর্ম ইসলামের দিক-নির্দেশনাগুলো খুবই যৌক্তিক, নিখুঁত এবং মানব-প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। দেশ, জাতি ও পরিবারগুলোর সুরক্ষার জন্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থতা ও উন্নতির জন্য এইসব বিধি-বিধান মেনে চলা অপরিহার্য। 

পরনারী ও পরপুরুষের পারস্পরিক যোগাযোগ যাতে কোনো পক্ষের জন্য ক্ষতিকর না হয় এবং উভয়েই তাদের স্বার্থ ও কল্যাণ থেকেও বঞ্চিত না হয় সে লক্ষ্যে প্রণীত ইসলামী-বিধি নিষেধগুলো মুসলিম বা অমুসলিম নাগরিকদের জন্যও স্বাধীনতার পরিপন্থী নয়। ইসলামের হিসাব বা পর্দার বিধানের উদ্দেশ্য হল নারী ও পুরুষ তাদের যোগাযোগ, কথা-বার্তা এবং দেখা-সাক্ষাৎকে যেন নিষিদ্ধ প্রবৃত্তিপনার কদর্যতা ও পাপ থেকে মুক্ত রাখতে পারে। স্বামী বা স্ত্রী না হয়েও নারী ও পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা বা লাগামহীন সম্পর্ক সুস্থ সামাজিক সম্পর্কের পরিপন্থী। এর ফলে সমাজে বিয়ের হার কমে যায় এবং পরিবার ব্যবস্থা বিপর্যয়ের শিকার হয়। পাশ্চাত্যে নারীকে সব ক্ষেত্রে এমনভাবে টেনে আনা হয়েছে এবং তাদের পোশাকের সংস্কৃতিকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে তারা যেন পুরুষের ভোগ-বিলাসের বা তাদের গণ-বিনোদন-সামগ্রী মাত্র। মাদকাসক্তি ও অ্যালকোহল সেখানে নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার চেয়েও জোরালো। ফলে পশ্চিমা সমাজে পরিবারগুলো ধ্বংসের মুখে রয়েছে। নারীকে এই বন্দিদশা থেকে মুক্ত করা জরুরি। নারী একজন শিক্ষক, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, পরিচালক বা বড় ব্যক্তিত্ব হতে পারেন শালীনতা বজায় রেখেই। তবে নারীর সবচেয়ে বড় পরিচয় হল তারা মাতা, বোন ও স্ত্রীর জাতি। তারা পুরুষের গণ-ভোগের সামগ্রী নন। 

যে সমাজে নারীরা হয়ে পড়ে পুরুষের গণ-ভোগের সামগ্রী বা গণ-যৌনতায়নের মাধ্যম কিংবা যেখানে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সীমানার বাইরেও পর পুরুষ ও পর-নারীর মধ্যে যৌন-আবেদনময় সম্পর্ক চর্চার সুযোগ দেয়া হয় সেখানে পরিবার-ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হতে বাধ্য। ফলে দেখা যাবে যে বিয়ের প্রতি পুরুষদের আর আগ্রহ নেই। ফলে কমে যাবে জনসংখ্যা ও যুব প্রজন্মের সদস্য সংখ্যা। মুসলিম সমাজের অফিস-আদালতে ও অন্য যে কোনো স্থানে নারী-পুরুষদের এমন পোশাক পরা বা আচরণ করা উচিত নয় যা বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিকে প্রলুব্ধ করতে পারে অনৈতিক আচরণের দিকে কিংবা যা নর-নারীর প্রতি অসম্মানজনক দৃষ্টির  কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। 

বর্তমান যুগে বেশি শোষিত হচ্ছে পশ্চিমা নারী সমাজ

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক পুরুষ ও নারীকে হতে হবে ন্যায়-বিচারকামী এবং দৃষ্টি ও পোশাককে রাখতে হবে শালীন ও সংযত। পুরুষ নারীর তুলনায় দৈহিকভাবে শক্তিশালী এবং সমস্যা মোকাবেলায় দৃঢ় মনোবলের অধিকারী তাই নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও ক্ষমতাগুলো পুরুষের হাতেই থেকেছে যুগে যুগে।  ফলে দুর্বল নারীর ওপর সবল পুরুষ কখনও আগ্রাসী ভূমিকা রাখতে তথা নারীকে অপব্যবহার করতে সক্ষম হয়। রাজা-বাদশাহ, ধনী ও বলদর্পী শ্রেণীর পুরুষ তাদের ক্ষমতা, পদ ও অর্থকে অপব্যবহার করে শোষণ করেছে নারীকে। যুগে যুগে বড় বড় রাজ-দরবারের রাজা ও আমীর-ওমরাহদের হেরেমে শোষিত হয়েছে কত শত-সহস্র নারী তার সঠিক সংখ্যা জানা হয়তো কখনও সম্ভব হবে না। অন্যদিকে বর্তমান যুগে বেশি শোষিত হচ্ছে পশ্চিমা নারী সমাজ। তারা পশ্চিমা কোনো দেশেই আর নিরাপদ নন। পশ্চিমা দেশগুলোর কোনো কোনো রাষ্ট্রপ্রধানও জড়িয়ে পড়ছেন যৌন নানা অনাচার ও ব্যভিচারে। যেমন, নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিভ-টুগেদারের মাধ্যমে তথা বিয়ে না করেই সন্তানের মা হয়েছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন অনেক নারী।    

ব্রিটেনে মেডিক্যাল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে সিনিয়র পুরুষ সার্জন ও সহকর্মীদের মাধ্যমে নারী সার্জন, ডাক্তার ও নার্সরা ধর্ষিত এবং যৌন নির্যাতন ও নিগ্রহের শিকার হচ্ছে! অপারেশন থিয়েটারের মতো অতি-সংবেদনশীল স্থানে এবং অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে অর্থাৎ আইন প্রণয়নের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নারী সাংসদরাও ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে! তাহলে পশ্চিমা দেশগুলোর কোথাও নারীর নিরাপত্তা নেই। হিসাব ও শালীনতা না থাকার এবং অবাধ যৌনতার অমোঘ পরিণতি  হচ্ছে ঠিক এটাই। পারস্পারিক সম্মতির ভিত্তিতে বিবাহবহির্ভূত সেক্স হচ্ছে যিনা ব্যভিচার যা পাশ্চাত্যের সমাজে স্বাভাবিক বিষয়! এটা ফ্রি সেক্স নামেও পরিচিত। অনেক পাশ্চাত্যপন্থীর দাবি হল সমাজ থেকে পর্দা বা হিসাব উঠিয়ে দিয়ে ফ্রি সেক্সের প্রবর্তন করলে নারী নির্যাতন ইত্যাদি হবে না বা অনেক অনেক কমে যাবে! কিন্তু বাস্তবে কী তা হয়েছে পাশ্চাত্যে ? ধর্ষণ ও নারী নিগ্রহ ও নির্যাতন মোটেও কমে নি। বরং দিন কে দিন তা বাড়ছেই এমনকি ব্রিটেনের হাসপাতাল গুলোর অপারেশন থিয়েটারে নারী সার্জন ও নারী সদস্য ধর্ষিত এবং অস্ট্রেলিয়ার সংসদের মহিলা সদস্যরা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের মাধ্যমে যৌন নির্যাতন ও নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। #

পার্সটুডে/১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন

ট্যাগ