আগস্ট ১৪, ২০২৩ ১৮:২২ Asia/Dhaka

প্রতিশোধপরায়নতা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। এমন অবস্থায় একজন আরেকজনের দোষ-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার পর অপরজনও চেষ্টা করতে থাকেন স্বামী বা স্ত্রীর সামনে এটা প্রমাণ করতে যে, সমালোচনাকারী নিজেও একই দোষে দুষ্ট। এমন করতে গিয়ে অনেক সময় পরস্পরের অতীত বিরোধগুলো আবার সামনে এসে পড়ে এবং পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়। এ কারণে পাল্টাপাল্টি আচরণ পরিহার করতে হবে।

পরস্পরের ভুল-ত্রুটিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। মনে রাখবেন মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, নতুন করে যাতে ভুল না হয় সেদিকে নজর দিন। জীবনসঙ্গীর ভুল শুধরে দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি পরামর্শ:

আমরা অনেক ক্ষেত্রেই জীবনসঙ্গীর দোষ-ত্রুটি শুধরে দিতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের টেনে আনি। এই কাজটি করতে যাবেন না, তাহলে আপনার উদ্দেশ্য সফল হবে না। আপনি আপনার সঙ্গীর যত সমালোচনাই করুন না কেন, তার পরিবার নিয়ে সমালোচনা করার দরকার নেই। এক সময় আপনার জীবনসঙ্গী নিজেই তার পরিবারের দোষ-ত্রুটিগুলো উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। এটা নিয়ে আপনার বেশি মাথা ঘামানোর দরকার নেই। আগে নিজেরা সংশোধন হোন তাহলে অন্যদের দোষ-ত্রুটি সঠিকভাবে উপলব্ধির যোগ্যতা ও সামর্থ্য বাড়বে। আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন, আপনার জীবনসঙ্গী ভুল করলে তা ধরিয়ে দিয়ে শুধরে দেওয়ার দায়িত্ব আপনার। তবে তার মানে এই নয় যে, সবসময় তার সকল কাজের কোনো না কোনো খুঁত বের করে তাকে আপনি আঘাত করবেন। আপনি তার বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু বলুন তা আপনার জীবনসঙ্গী কখনই আশা করেন না, বরং তিনি মনে করেন আপনি সবসময় তার পাশে থাকবেন।

আপনার জীবনসঙ্গীর কাজকে সমর্থন করুন। তার কাজের প্রশংসা করুন। তার মানে এই নয় যে, তাকে খুশি করতে তার ভুলেরও প্রশংসা করবেন। তবে ভুল শুধরাতে গিয়ে আপনি শুধুমাত্র নিজের প্রাধান্য খোঁজার চেষ্টা করবেন না, এতে উল্টো ফল আসতে পারে। আপনি যদি আপনার জীবনসঙ্গীর ভুল শুধরাতে চান তাহলে হুট-হাট সমালোচনার অভ্যাস ত্যাগ করুন। তার ভালো দিকগুলোর প্রশংসা করুন। সব সময় তার খারাপ দিক নিয়ে কথা বলবেন না। আপনি যদি জীবনসঙ্গীর ভুল ধরার জন্য কোনও না কোনও ছুতো খুঁজতেই থাকেন, তবে এই কথা মেনে নিতে হবে যে, আপনি আপনার সঙ্গীকে শত্রুই ভাবেন মনে মনে। কিন্তু সুখী হতে চাইলে দুজনে মিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে। দাম্পত্য জীবনে পরস্পরকে হেয় করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া মানে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারা। দুজনকেই চেষ্টা করতে হবে যাতে সম্পর্কটা সরল ও মজবুত থাকে।

পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কোনোভাবেই কল্যাণকর নয়। নারী ও পুরুষের মধ্যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় কিছু পার্থক্য রয়েছে যা সবাইকে মেনে নিতেই হবে। এর একটি হলো নারীদের মাসিক বা পিরিয়ড। অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ সময় নারীদের আচরণে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। সেটি বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করুন। মাসিকের সময় অনেক মেয়ের শরীর বেশি খারাপ হয়। এই সময়ে স্ত্রীকে অন্য সময়ের চেয়ে আরো বেশি সহায়তা করা জরুরি। এ সময় তার জন্য কোনো ধরণের মানসিক চাপ তৈরি করা উচিত নয়। এই সময় স্ত্রীকে ভুল শুধরে দিতে না যাওয়াই ভালো। মাসিক-কালীন অনেকেরই বাড়তি ঝামেলা ও সমালোচনা একদম সহ্য হয় না। এ সময় গঠনমূলক সমালোচনা করলেও তার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। মাসিককালে আপনার স্ত্রী শুয়ে-বসেই সময় কাটিয়ে দিতে পারেন। সেটা নিয়ে অভিযোগ বা সমালোচনা করবেন না।

স্বামী- স্ত্রী যে কারো ভুল হতে পারে। তবে এই নিয়ে অহেতুক চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলবেন না। বরং চেষ্টা করুন শান্ত মাথায় ভুল শুধরে দেওয়ার। যে ভুলগুলো হয়েছে সেগুলোকে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরুন। তবে এই কাজে যেন ভুল খোঁজা নয় বরং শুধরে দেওয়ার মানসিকতা স্পষ্ট থাকে। এতেই দেখবেন আপনার জীবনসঙ্গী নিজের ভুল বুঝতে পেরে শুধরে নেয়ার চেষ্টা করছেন। আর দুই জনেরই উচিত ভুল স্বীকার করে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। আপনি যদি আপনার ভুল বুঝতে পারেন তাহলে নির্দ্বিধায় বলে ফেলুন- 'আমি ভুল করেছি, আমাকে মাফ করে দাও'। এটুকু কথাতেই মুহূর্তেই রাগ মিলিয়ে যেতে পারে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল স্বীকার করার এমন প্রবণতা অনেক কম, অথচ এতে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বেরই প্রকাশ ঘটে। তাই ভুল হলে আন্তরিকতার সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নিজের ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করুন। এতে দুর্বলতা নয়, উদারতা প্রকাশ পায়। সম্পর্ক আরও সুন্দর ও নির্ভেজাল হয়ে ওঠে।

কোনো মাধ্যম ছাড়াই জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন এবং ক্ষমা চেয়ে নিন। নিজের ভুল স্বীকার করতে গিয়ে আকার-ইঙ্গিতে কাউকে দোষারোপ করতে যাবেন না। বারবার যেন একই ভুল না হয়, সে ব্যাপারে পূর্ণ সতর্ক থাকুন, একই ভুল বারবার করলে আপনার জীবনসঙ্গী আপনার ওপর আস্থা রাখতে পারবেন না, উল্টো আপনি হবেন হাসির পাত্র। যে ভুল করেছেন সেটার কারণে যদি কোনো সংকট তৈরি হয়ে থাকে তা মেনে নিয়ে সমাধানের পথ খুঁজুন। মনে রাখবেন ভুল স্বীকার মানুষের মর্যাদাকে ছোট করে না বরং তার মহত্ত্বকে ফুটিয়ে তোলে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ