আগস্ট ৩১, ২০২৩ ১৯:১৭ Asia/Dhaka

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজ আমরা শুনবো প্রাচীন একটি প্রবাদের গল্প। প্রবাদটি হলো: আখরোট গাছ কত্তো বড়ো আর খরবুজা গাছ আল্লাহু আকবার।

এই প্রবাদের পেছনে মজার একটি গল্প আছে। গল্পটি এরকম: আমরা জানি অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী কিংবা খালি পাত্র বাজে বেশি। এর অর্থ হলো কম জ্ঞানী কিংবা মূর্খরা সাধারণত নিজেদেরকে খুব জ্ঞানী মনে করে। যে সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই মূর্খরা সে ব্যাপারেও নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি বা মতামত প্রকাশ করার চেষ্টা করে। এমনকি তারা সমালোচনাও বেশিই করে থাকে। এগুলো গাধামির লক্ষণ।

হ্যাঁ গাধা। আমাদের আজকের প্রবাদটি গাধাকে নিয়েই। এক গাধা একদিন একটা বাগানের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলো। যেতে যেতে তার নজর পড়লো খরবুজা খেতের ওপর। খরবুজা গাছ তো দেখেছেন নিশ্চয়ই। কুমড়া গাছের পাতার মতো বড় বড় পাতা মাটির ওপরেই লতিয়ে বিস্তৃত হয়। সেই সরু লতায় বিশাল বিশাল খরবুজা ধরে। গাধা ওই খরবুজা দেখে খুব খুশি হয়ে গেল। আনন্দে আপনমনে বলতে শুরু করলো: কী চমৎকার খরবুজা লতা। কী অদ্ভুত! কীরকম নাজুক এবং সরু লতা অথচ কতো বড়ো বড়ো খরবুজা তার। গাধা ভাবতে ভাবতে একটু ঘাস লতাপাতা খেয়ে একটা বড় আখরোট গাছের নীচে গিয়ে তার ছায়ায় খানিক বিশ্রাম নিতে চাইলো। হঠাৎ আখরোট গাছ কথা বলে উঠলো।

গাধাকে বললো: আহ হা! এটাই কি বন্ধুত্বের নিয়ম? সালামও তো দিলে না! কুশলও জিজ্ঞেস করলে না। সোজা মাথা নীচু করে চলে এসেছো আমার ছায়ায় আর অমনি বিশ্রাম নিতে শুরু করে দিয়েছো। প্রত্যেক বস্তুরই কিছু নিয়ম-নীতি আর শিষ্টাচার আছে। একটু সৌজন্যবোধ, কৃতজ্ঞতা-এসব শিখে নেয়া মন্দ নয়। আমি বছরের পর বছর ধরে কষ্ট করে করে একটু একটু করে বেড়ে উঠে আজ এতোটা বড়ো হয়েছি, ছায়াময় বৃক্ষে পরিণত হয়েছি। রাতারাতি তো এমনটি হয়ে যাই নি।

গাধা তো এসব কথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না বা অভ্যস্থও না। সে তাকালো আখরোট গাছের শাখার দিকে, পত্র-পল্লবের দিকে। গলায় সজোরে আরররর…আররর শব্দ তুলে বললো: তোমাকে আবার বৃক্ষও বলে নাকি! লজ্জা হয় না তোমার? তুমি তো কেবল বিস্তারিত পাতা-পল্লবের ছায়াই দিতে জানো। যাও খরবুজা ক্ষেতে গিয়ে তার লতার মতো গাছের কাছ থেকে শিখে আসো! তোমার উচ্চতার এক সহস্রাংশও সে উঁচু নয়। তারপরও সে তার সরু এবং নরম লতা থেকে কতো বড়োসড়ো ফল দেয় পৃথিবীবাসীকে। আর তুমি? এতো শক্ত ও মজবুত তুমি, হাজারো শাখা-প্রশাখা তোমার, মিলিয়ন মিলিয়ন পাতা। অথচ ফল দাও কীরকম?

এতো বড়ো বৃক্ষ হয়ে কীরকম ছোট্ট ছোট্ট ফল দাও তুমি? আর খরবুজা লতা কতো বড় ফল দেয়। বোঝাই যায় ওই ছোট্ট ফল নিয়ে কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছো তুমি! সে কারণে অন্যদেরকে সবসময় ছায়া দিয়ে বেড়াও! আখরোট গাছ গাধার কথা শুনে বিরক্ত হলো। সিদ্ধান্ত নিলো গাধাকে এমন শিক্ষা দেবে যাতে সারাজীবন মনে রাখে। আখরোট গাছ কিচ্ছু বললো না। অপেক্ষা করতে লাগলো কখোন গাধার ঝিমুনি আসে। হ্যাঁ, এরইমধ্যে গাধার ঘুম এসে গেল। ঘুমের মাঝেই আখরোট গাছের অনেক উপর থেকে একটা আখরোট তার মাথার ঠিক মাঝখানে পড়লো।

আস্ত আখরোটের আকার অনেকটা ছোট আমড়ার মতো তবে এর চামড়া বেলের চামড়ার মতো ভারি এবং শক্ত। সুতরাং গাধা ঘুমের ভেতরেই চীৎকার চেঁচামেচি করে উঠলো। ও…হ! মাথা ফেটে গেল। আমার মাথায় কী পড়লো এটা, আহ..ওহ্! আখরোট গাছ গাধার চীৎকার চেঁচামেচি শুনে হেসে উঠলো। গাধাকে বললো: এ এমন কী! কিছুই তো না! আমার একটা ছোট্ট ফল তোমার মাথায় পড়েছে মাত্র। গাধা বললো: যেটাই পড়ুক না কেন, আমার মাথা ভীষণ ব্যথা করছে। আখরোট গাছ বললো: হ্যাঁ এবার একটু ভাবো তো! তুমি যেরকম ভেবেছিলে, সব ভাবনা-চিন্তা যদি বাস্তবে সত্যি হতো, তাহলে কী হতো?

গাধা আখরোট গাছের ইঙ্গিতপূর্ণ কথাটা বুঝে উঠতে পারলো না। সুতরাং ব্যাখ্যা করে বলতে হলো। আখরোট গাছ বললো: আমার ফল যদি ওই খরবুজার মতো বিরাট আকৃতির হতো এবং আমার ছায়ায় বিশ্রাম নিতে আসা ঘুমন্ত কারও মাথায় পড়তো তাহলে কী অবস্থা হতো? ওরকম বিশাল আকৃতির আখরোট কারও মাথায় পড়লে সে তৎক্ষণাৎ মরে যেত না? কী বলো তুমি?

গাধা এবার তার লম্বা কান দুটোসহ বেশ কয়েকবার মাথা নাড়ালো। তারপর বললো: আসলে সবকিছুই তার নিজস্ব জায়গায়, নিজের স্বরূপেই ভাল এবং উপযুক্ত। তোমার ফলের আকার ছোট হওয়াটাই ভালো এবং যুক্তিযুক্ত। সৃষ্টিকর্তা যাকে যেরকম আকার দিয়ে সৃষ্টি করেছেন সেটাই যথার্থ-আমরা খুব কমই বুঝি। এই ঘটনার পর থেকে যখনই কেউ কাউকে তুলনা দিয়ে অনুপযুক্ত বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে চায়, তখনই এই প্রবাদটি বলা হয়: বলে: আখরোট গাছ কত্তো বড় আর খরবুজা গাছ আল্লাহু আকবার।#

পার্সটুডে/এনএম/৩১/৯১
মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ