সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৩ ১৯:৩৪ Asia/Dhaka

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজ আমরা শুনবো প্রাচীন একটি ইরানি গল্প। গল্পটি এরকম:

প্রাচীনকালের কথা। জটলা বেঁধে বহু মানুষ পরস্পরে কথা বলছিল। আড্ডায় যা হয় আর কি! কার কোথায় কী হয়েছে, কে কী করেছে, কোন জিনিসের দাম বেড়েছে, কেন বেড়েছে, জীবন যাপন কতোটা কঠিন হয়ে পড়েছে, কার অসুখ হয়েছে আর কীভাবে সৃস্থ হয়ে উঠেছে-ইত্যাদি কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে মোটামুটি সকলেই কথা বলছিল। এরকম আড্ডায় কথা সবাই বলতে চায়, শুনতে চায় কম।

তবে মুশকিল হলো এরকম আড্ডায় যে উপস্থিত থাকে না তার ব্যাপারে শুরু হয়ে যায় অপচর্চা যাকে আমরা গীবৎ বলি। খুবই খারাপ একটা অভ্যাস এটা। একজন ঠিক ওই কাজটাই করছির। অনুপস্থিত ছিল যে তার ব্যাপারে আজেবাজে মন্তব্য করতে শুরু করে দিলো। আড্ডার মাঝে একজন অভিজ্ঞ দরবেশ ছিলেন। ওই দরবেশ গীবৎকারীর ওপর রেগে গেলেন এবং প্রতিবাদ করে বসলেন। বললেন: তোমাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই। তুমি কি কখনো বেগানাদের সঙ্গে মানে অচেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছো?

যে লোকটি তাদেরই বৃত্তেরই একজনের ব্যাপারে আজেবাজে কথা বলছিল দরবেশের কথায় আশ্চর্য হয়ে গিয়ে বললো: যুদ্ধ? যুদ্ধ বলতে আপনি ঠিক কী বোঝাতে চাচ্ছেন? দরবেশ বললেন: বোঝাতে চাচ্ছি তুমি কি কোনো কাফেরের বিরুদ্ধে কখনো যুদ্ধে অংশ নিয়েছো? গীবৎকারী বললো: না। আমি এখন পর্যন্ত ঘর, শহর বা আশপাশের বাইরে কোত্থাও যাই নি। দরবেশ দু:খ করে তার দিকে তাকিয়ে বললেন: তোমার মতো হতভাগ্য আমি আর দেখি নি। গীবৎকারী লোকটি দরবেশের কথায় অবাকও হলো, বিরক্তও হলো। জানতে চাইলো: আপনি কী বলতে চাচ্ছেন-খুলে বলুন! এরকম রহস্য করে বলছেন কেন? কেউ যুদ্ধে না গেলে কিংবা কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ না করলে হতভাগ্য হয়ে যায়?

দরবেশ বললেন: তুমি নিজেই বলেছো কাফের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধে তুমি অংশগ্রহণ করো নি। তার মানে ইসলামের শত্রুরা তোমার হাত থেকে নিরাপদ। তোমার পক্ষ থেকে তাদের ওপর কোনোরকম বিপদ বা আঘাতের সম্ভাবনা নেই। কেননা ঘরের চার দেয়ালের বাইরে তুমি তেমন একটা পা বাড়াও নি। অথচ ঘরে বসে বসে তুমি তোমার এক মুসলমান ভাইয়ের বিরুদ্ধে অপলাপ করেছো, গীবৎ করেছো, আজেবাজে কথা বলেছো। তার মানে মুসলমানরা তোমার কথার তীর থেকে নিরাপদ নয়। গীবৎকারী লোকটি এ কথা শুনে গভীর চিন্তায় পড়ে গেল। দরবেশ লোকটি তাকে বললেন: জেনে রাখো! পরিচিত কারও সম্পর্কে গীবৎ করতে গেলে দুইটি জিনিস তার বন্ধুবান্ধবের জন্য হারাম। প্রথমটি হলো তার সম্পদ ভোগ করা দ্বিতীয়টি নোংরাভাবে তার নাম উচ্চারণ করা।

দরবেশ লোকটি এবার আড্ডার অন্যান্য লোকদের দিকে ফিরে বললেন: এই গীবৎকারীর কথায় তোমরা কান দিও না! তার সঙ্গে কথাও বলো না! কেননা এখন সে যেভাবে অনুপস্থিত বন্ধুর বিরুদ্ধে গীবৎ করে বেড়াচ্ছে অন্য কোনো জায়গায় তোমাদের বিরুদ্ধেও একই কাজ করবে। গীবৎকারী নিজের কথার জন্য অনুতপ্ত হলো। সে বললো: আমি এই মুহূর্তে তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এরপর আর কখনো গীবৎ করবো না এবং কখনো কারও দুর্নাম করবো না। দরবেশ বললেন: চমৎকার! গীবৎ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে খুব ভালো কাজ করেছো। সবসময় মনে রেখো! কখনোই কারও গীবৎ করবে না। তবে তিন জনের ব্যাপারে গীবৎ করলে সমস্যা নেই, গুনাহ হবে না।

প্রথমজন হলো জালেম বাদশাহ যে জনগণের ওপর অত্যাচার চালায়। তার অত্যাচারের খবর সবার কাছে পৌঁছানো দরকার যাতে সবাই তার জুলুম অত্যাচারের কথা জানতে পারে এবং বাদশাহর অত্যাচার থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। দ্বিতীয়জন হলো এমন উদাসীন ব্যক্তি যার ব্যাপারে গীবৎ করে তার মান-সম্মান, খ্যাতি কেড়ে নেওয়ার আগে সে নিজেই তার কাজের মাধ্যমে নিজের মান-সম্মান কেড়ে নিয়েছে। তৃতীয় ব্যক্তিবর্গ হলো এমন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট যারা বাজারের পণ্যের দাম নিজেদের সুবিধামতো বাড়ানো কিংবা কমানোর বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। এই দলের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে।

হ্যাঁ গীবৎকারী দরবেশের কথা শুনে বললো: আপনি ঠিকই বলেছেন। সত্যি বলতে কী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা মানে যারা শলা-পরামর্শ করে পণ্যের দাম বাড়ায়-কমায় তারা চোরের চেয়েও খারাপ। আমি এ বিষয়ে বুঁদ হয়ে শোনার মতো চমৎকার একটা গল্প শুনেছি। ওই চোরটা ছিল মরুভূমি কিংবা পার্বত্য অঞ্চলের চোর। পাহাড়িয়া এলাকায় অথবা মরুভূমিতে সে মুসাফিরদের মালামাল চুরি করে নিয়ে যেত। রাতের বেলায় ব্যবসায়ী কাফেলার পথ রোধ করে তাদের মাল-সামানা লুট করে নিতো। একদিন এই নিষ্ঠুর দস্যু শহরে গেল কিছু জিনিসপত্র কিনতে। নিজের এবং তার দলের জন্য খাবার-দাবার প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনসপত্র কিনতে একটা মুদি দোকানে গেল সে।

তো চোর লোকটার যা কিছু প্রয়োজন ছিল দোকানদারকে দিতে বললো। দোকানদার সবই দিলো কিন্তু ওজনে প্রায় অর্ধেকই কম দিয়েছে। চোর বিষয়টা লক্ষ্য করলো। ওই লুটেরা লোকটি বাজারের অলিগলিতে চীৎকার করে মানুষজন জড়ো করলো। লোকজন সমবেত হলে সে বললো: আমি একজন চোর। রাতের অন্ধকারে আমি চুরি করি। ব্যবসায়ী কাফেলার পথ রোধ করে মালামাল লুট করি। কিন্তু এই অসাধু মুদি দোকানদার দিনের আলোতে সবার সামনে নির্বিঘ্নে চুরি করে। মাপে কম দেয়। সে তো আমার চেয়েও শতগুণ খারাপ চোর। ওর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।#

পার্সটুডে/এনএম/৩/৯২
মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ