সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩ ১৪:৫৩ Asia/Dhaka

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজ আমরা শুনবো প্রাচীন একটি গল্প। গল্পটি হলো:

এক লোকের বেশ বড়োসড়ো একটা বাগান ছিল। প্রাচীনকালের কথা। ওই বাগান বিচিত্র ফলে ভরপুর ছিল। একদিন সকালবেলা বাগানের মালিক গেল বাগান দেখাশোনা করতে। বাগানে ঢুকতেই লোকটি বুঝতে পারলো কেউ একজন একটি বড় গাছের ডালে বসে নিশ্চিন্তে ফল ছিঁড়ে ছিঁড়ে ব্যাগে ঢোকাচ্ছে। 


বাগানের মালিক এই দৃশ্য দেখে অবাক হলো। একটা অপরিচিত লোক এভাবে নিজের বাগানের মতো ফল ছিঁড়ছে, খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার। মালিক চীৎকার করে লোকটিকে ডাকলো। বললো: কে তুমি? লজ্জা করছেনা তোমার? এই দিনের বেলা ফকফকা সূর্যালোকে তুমি কোনোরকম অনুমতি না নিয়ে আমার বাগানে ঢুকে ফল ছিঁড়ছো! এতো কষ্ট করে আমি এই বাগানের পরিচর্যা করলাম আর তুমি নির্লজ্জের মতো পরিশ্রমের ফল লুট করে নিয়ে যাচ্ছো? বেগানা ফল চোর লোকটি তবু নির্বিকার। সে নিজের মনের খুশিতে আগের মতোই ফল ছিঁড়তে লাগলো। মালিকের উচ্চস্বরের কথা শুনে ঠাণ্ডা মাথায় একবার নীচের দিকে তাকালো। বাগানের মালিকের অবিরাম কথা শুনে
সে বললো: জি! বেগানা ফল চোর বাগানের মালিকের কথার জবাব ঠাণ্ডা মাথায় দিলো। বললো: আমি আল্লাহর বান্দা। আল্লাহর বাগান থেকেই আমি ফল খাচ্ছি। এই বাগান এই ফল তো আসলে আল্লাহরই দান। বাগানের মালিক একথা শুনে রেগে গেল। চীৎকার করে বললো: কী বলছো এইসব? আমার বাগান থেকে ফল ছিঁড়ে নিচ্ছো আর আজেবাজে কথা বলছো? এইসব বাজে কথা বলার মানে কী? ফল চোর এবার বললো: আমি তো আমার কথা বলেছি। তুমি যেহেতু জানতে চাচ্ছো আবারও বলছি। 

চোর আবারও বললো: এই বাগান আল্লাহর। আর আমি আল্লাহরই একজন বান্দা। তো এক বান্দা তার আল্লাহর বাগান থেকে ফল ছিঁড়ছে-এতে দোষ কোথায় দেখলে তুমি? তোমারই বরং লজ্জাবোধ করা উচিত এ কারণে যে এক আল্লাহর বান্দাকে আল্লাহরই বাগান থেকে ফল ছেঁড়ার জন্য তার ভুল ধরছো, দোষ খুঁজছো এবং তার সমালোচনা করছো। বাগানের মালিক চোরের এই অবস্থা দেখে তার ছেলেদের ডাকলো। ছেলেরা বাবার ডাক শুনে দ্রুত তার কাছে এলো। বাবা বললো: একটা দড়ি নিয়ে আসো! দড়ি আনা হলো। বাবা বললো: যাও, ওই লোকটাকে গাছের উপর থেকে নীচে নামিয়ে আনো। ছেলেরা তাই করলো। লোকটাকে গাছের নীচে নামিয়ে আনলো। বাগানের মালিক তারপর ছেলেদের বললো: লোকটাকে এখন গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখো! ছেলেরা ফল বাগানের একটি গাছের সঙ্গে ফল চোরকে বেঁধে রাখলো। বাগানের মালিক মাটিতে একটা লাঠি খুঁজে পেল। ওই লাঠিটা দিয়ে ফল চোরকে মারতে শুরু করে দিল। কেননা এখনই মারার সুযোগ। নৈলে এই সুযোগ আর নাও আসতে পারে। ফল চোরকে পেটাতে লাগলো বাগানের মালিক।


বাগানের মালিক ফল চোরকে বেধড়ক মারছিল। চোর মারের আঘাতে যন্ত্রণায় হাউমাউ করে কোঁকাতে লাগলো। হঠাৎ চোর বেশ উচ্চস্বরে চীৎকার করে বলে উঠলো: এই যে! তুমি আমাকে এভাবে মারছো কেন? কী কারণে এরকম নির্দয়ভাবে মারছো? লজ্জা করে না-আল্লাহর বান্দা হয়ে আমাকে তুমি মারছো! চোরের পিঠে হাতে মারতে মারতে বাগানের মালিক জবাব দিলো: আমি আল্লাহর বান্দা! আল্লাহর লাঠি দিয়ে আল্লাহর বান্দাকে মারছি! ফল চোর এ কথা শুনে চীৎকার করে বলে উঠলো: মানে কী? এসব কথা বলে কী বোঝাতে চাচ্ছো? বাগানের মালিক বললো: আমার কথার মানে তো বলেই দিলাম। সমস্যা আবারও বলছি যাতে তুমি ভালো করে বুঝতে পারো!  আমি আল্লাহর সৃষ্ট বান্দাগণেরই একজন। তুমিও আল্লাহর সৃষ্ট বান্দাগণের একজন। এই লাঠিটাও আল্লাহরই লাঠিগুলোর একটি। এখন যা হচ্ছে তা হলো: আল্লাহর বান্দাদেরই একজন আল্লাহরই লাঠিগুলোর মধ্য থেকে একটি লাঠি দিয়ে আল্লাহরই বান্দাদের একজনকে পেটাচ্ছে। অতএব সমস্যা কোথায়? তুমি কেন খামোখা চীৎকার চেঁচামেচি করছো, ক্ষোভ দেখাচ্ছো? প্রতিবাদ করছো? তোমার কি লজ্জা বলে কিছু নেই? তুমি আমার কাজকে ভুল মনে করছো? আবার আমার কাজের জন্য আমার সমালোচনা করছো, দোষ ধরছো? 

হা হা হা যেমন ফল চোর তেমনই ফল বাগানের মালিক। চোরের বাটপারিপূর্ণ কথার যথার্থ জবাবই দিলো বাগানের মালিক। ফল চোর যখন বুঝতে পারলো তার নিজের কথার কারণেই সে ধরা খেয়েছে এবং ফল বাগানের মালিক তার কথারই পাল্টা জবাব দিচ্ছে তখন সে নত হয়ে গেল। চীৎকার করে বলে উঠলো: হে আল্লাহর বান্দা! এবার একটু থামো! আল্লাহর জন্য একটুখানি থামো! আমি যে কাজ করেছি তার জন্য আমি অনুতপ্ত। আমি তওবা করছি, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি এরকম কাজ আমি জীবনে আর কখনও করবো না। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও! বাগানের মালিক চোরের তওবা এবং প্রতিশ্রুতিতে সদয় হলো এবং চোরের হাত-পা খুলে দিয়ে তাকে মুক্ত করে দিলো।#

পার্সটুডে/এনএম/১৩/৯৪
মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ

ট্যাগ