সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ ১৪:৩৫ Asia/Dhaka

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজ আমরা শুনবো প্রাচীন একটি প্রবাদের গল্প। প্রবাদটি হলো: বন্ধুই বন্ধুর চামড়া কাটে। এই প্রবাদের পেছনের গল্পটি হলো:

দুই তরুণ ছেলে একজন আরেকজনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল, প্রতিযোগীও ছিল বলা যায়। আরেকটু স্পষ্ট করে বলা যায় পরস্পরের শত্রু ছিল তারা। তাদের একজনের বাবা ছিল মুদি দোকানদার। অপরজনের বাবা ছিল চিকিৎসক। একদিন ওই দুই তরুণ একটি ক্রসিং পয়েন্টে এসে পরস্পরের মুখোমুখি হলো।

স্বাভাবিকভাবেই দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলো। তার থেকে ঝগড়া এবং গালিগালাজ শুরু হয়ে গেল। অনেকটা মোরগ লড়াইয়ের মতো অবস্থা যেন। আশেপাশের লোকজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবরা যতোই চেষ্টা করলো তাদের ঝগড়া থামাতে কোনো কাজ হলো না। দুই তরুণই মোটামুটি সমান সমান শক্তির অধিকারী ছিল। সুতরাং কেউ কাউকে ছাড় দিলো না, হাতে রকাছে যে যা পেলো তাই দিয়ে মারামারি করে দু'জনই আহত হলো। মারামারির ফল হলো দুজনই আহত হয়ে রক্তাক্ত হয়ে, ক্লান্ত হয়ে শেষ করলো ঝগড়া। পাশের লোকজন দুই তরুণকেই কাঁধে তুলে ক্লিনিকে নিয়ে গেল। ক্লিনিকে নেয়ার পর ডাক্তার দ্রুত দুই তরুণের আহত স্থানগুলো পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। এই ডাক্তার ছিল তরুণদের একজনের বাবা। ব্যান্ডেজ শেষে ডাক্তার বললো: কাল থেকে প্রতিদিন আমার কাছে আসবে। তোমাদের ব্যান্ডেজ পাল্টাতে হবে। যদি না আসো আহত স্থানে পচন ধরতে পারে। সেটা খুবই বিপজ্জনক হবে। সুতরাং পরদিন থেকে দুই তরুণেরই দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ালো দৈনিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে ব্যান্ডেজ পাল্টানো। ডাক্তার নিজের ছেলের কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নিতো না। কিন্তু মুদি দোকানদারের ছেলের কাছ থেকে নিতো। সুতরাং দোকানদার প্রতিদিনই ডাক্তারকে ভালো পরিমাণ টাকা দিতো ব্যান্ডেজ করার জন্য।

এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেল। তারপর এমন একটা ঘটনা ঘটলো যা কেউ চিন্তাও করতে পারে নি। ঘটনাটা হলো ডাক্তারের ছেলের জখমের ঘা-টা দিনে দিনে ভালো হচ্ছিল কিন্তু দোকানদারের ছেলের ঘা-টা ভালো তো হচ্ছিলই না বরং আরও খারাপ হতে লাগলো। এই পরিস্থিতি দেখে দোকানদারের মনটা খারাপ হয়ে গেল। হওয়াটাই স্বাভাবিক। সুতরাং দোকানদার চিন্তা করলো ছেলেকে অন্য কোনো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। কিন্তু ওই এলাকায় আশেপাশে আর কোনো ডাক্তার ছিল না। অগত্যা দোকানদার ডাক্তারের কাছেই গেল এবং বললো: তোমার ছেলের জখমটা তো আস্তে আস্তে সেরে উঠছে কিন্তু আমার ছেলের জখম দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে-কারণটা কী?

বিবরণ দিয়ে ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলো আমার ছেলের জখমটা কেন ভালো হচ্ছে না, আপনার ছেলের জখম তো ভালো হয়ে গেল। ডাক্তার বললো: ডাক্তার সবার বন্ধু, তার কাজ হলো চিকিৎসা করা। ডাক্তারের কাছে নিজের সন্তান আর পরের সন্তান বলে কোনো ভেদাভেদ নেই। তোমার ছেলে নিশ্চয়ই আমার নির্দেশগুলো ঠিকমতো মেনে চলে নি। এ কারণেই হতে পারে তার জখমটা ভালো হয় নি। দোকানদারের কাছে ডাক্তারের কথাগুলো সত্য বলে মনে হয় নি। কোনো না কোনো অজুহাত দেখিয়ে সে তার আহত ছেলেকে অন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে দেখালো। সেই ডাক্তার দোকানদারের ছেলের জখম ভালোভাবে দেখে বললো: কেন ডাক্তার দেখাও নি? নিজেই ছেলের জখমের চিকিৎসা করেছো?

দোকানদার বললো: না, ব্যাপারটা এমন নয়। আমাদের এলাকায় একজন ডাক্তার আছেন। সেই ডাক্তারই আমার ছেলের চিকিৎসা করেছেন। ডাক্তার বললো: এটা কী করে সম্ভব, ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করানো সত্ত্বেও এতদিন পর জখম আগের মতোই রয়ে গেল! জখমের ওপর নতুন চামড়া বিস্তৃত হলো না! ডাক্তারের সব কথাই শুনছিলো আহত ছেলেটা। সে বিষয়টা বুঝতে পারলো। ক'দিন পরপরই আমার জখমের ওপর চামড়ার প্রলেপ লাগতো কিন্তু আমাদের মহল্লার ডাক্তার চামড়া টেনে ছিঁড়ে ফেলে বলতো: এভাবে দ্রুত ভালো হয়ে যাবে। ডাক্তার বললো: এমন করতো কেন? দোকানদার তাদের মহল্লার ডাক্তারের খেয়ানত বুঝতে পেরে নিজের ছেলে এবং ডাক্তারের ছেলের জখম হবার ঘটনা খুলে বললো। এও বললো যে মহল্লার ডাক্তার বলেছে: ডাক্তারের কাছে আপন-পর বলে কিছু নেই।

বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ এই কথাটি বললো: ডাক্তারের কাছে আপন-পর বলে কিছু নেই। ডাক্তারের কাছে সবাই সমান। তাছাড়া ওই ডাক্তার ছিল দোকানদারের বন্ধু। সব কথা শোনার পর নতুন ডাক্তার মুদির ছেলের ক্ষতের দিকে তাকিয়ে একটু বিস্মিত হলো। দোকানদারের দিকে তাকিয়ে বললো: আপনার বলেছেন মহল্লার ডাক্তার আপনার বন্ধু, তাই না?। দোকানকার বললো: জি ডাক্তার! নতুন ডাক্তার বললো: আপনার মহল্লার ডাক্তারের বন্ধুত্ব তো বাইরে দেখানোর বন্ধুত্ব। ভেতরে ভেতরে সে আপনার বন্ধু নয়। কারণ ওই ডাক্তার আপনার ছেলের চামড়া কেটে দিয়েছে।  এ কথা শুনে মুদি দোকানদার অবাক হয়ে গেল। মনে মনে কষ্টও পেলো। কেননা, সে বন্ধু হলেও চিকিৎসার খরচ কিন্তু ঠিকই দিয়ে গেছে। তারপরও এরকম কাজ করলো ডাক্তার!

এই ঘটনার পর থেকে, যখন কেউ কারো প্রকাশ্যে বন্ধুত্ব আর ভেতরে শত্রুতা সম্পর্কে কথা বলতে চায় তখনই তারা বলে: "বন্ধুই বন্ধুর চামড়া কাটে।"

পার্সটুডে/এনএম/১৭/৯৫
মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ

ট্যাগ