সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩ ১৮:৩৩ Asia/Dhaka

অন্যের প্রশংসা করা অথবা কোনো কাজ বা আচরণের মাধ্যমে অন্যের কাছে নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা অত্যন্ত সহজ একটি কাজ হলেও আমরা তা সচরাচর করি না। আমাদের মধ্যে এ ক্ষেত্রে কৃপণতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এই সুঅভ্যাসটা গড়তে পারলে আপনি নিজেও উপকৃত হবেন এবং অন্যরাও আরো ভালো কাজ করতে বেশি উৎসাহিত হবে।

শিশুদের প্রশংসা দিয়েই শুরু করতে পারেন। আপনি আপনার সন্তানের সুন্দর আচরণ দেখলেন। ছেলে আপনার হাতে চুমু খেলো কিংবা বাবার জুতা এগিয়ে দিল। ছেলের প্রশংসা করুন। আপনার মেয়ে আপনার জন্য একটা নতুন ছবি এঁকেছে, আপনাকে সুন্দর করে সালাম দিচ্ছে। সাথে সাথে তার প্রশংসা করুন। আপনার ছোট ছোট বাচ্চাদের ওপর কৃতজ্ঞতা বা ভালো কাজের প্রশংসা এমনই মহৌষধের মতো কাজ করবে যে, এটি পেলে ওরা মাতৃভক্ত ও পিতৃভক্ত হবে। আর এটি না পেলে ওরা যে জেদি হয়ে উঠতে পারে। সবার ভালো কাজের প্রশংসা করুন। এতে মানুষ কাজ করার আগ্রহ পাবে ও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবে।

পরিচিত কেউ নতুন পোশাক পরেছে, তার প্রশংসা করতে পারেন। আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে তাকে তার সন্তানদের লালন-পালন ও শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি যত্নবান দেখলেন। তার প্রশংসা করুন। এভাবে অন্যের ভাল দিকগুলো লক্ষ্য করুন এবং বিচক্ষণতার সাথে তার প্রশংসা করুন। আপনার মুগ্ধতা প্রকাশ করুন। আপনি কারও সাথে তার গাড়িতে উঠেছেন কিংবা ট্যাক্সি ভাড়া করেছেন। গাড়ির ভেতরটা পরিচ্ছন্ন দেখতে পেলেন। কিংবা গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে চালকের দক্ষতা আপনার নজর কাড়ল। আপনি এই দক্ষতার প্রশংসা করতে পারেন।

আসলে পরিচিতজন বিশেষকরে প্রিয়জনের প্রতি প্রশংসাসূচক কয়েকটি বাক্য ছুঁড়ে দেওয়া বেশ অভিবাদনযোগ্য হলেও, অনেকে তা করেন না। এই অভ্যাস দাম্পত্য সম্পর্ক যেমন ভালো রাখে, ঠিক তেমনই পরিবার, বন্ধু এমনকি কর্মস্থানেও আপনার প্রতি মানুষের মনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। অন্যের প্রশংসা করা খারাপ কোনো বিষয় নয়, তবে যেন তা অতিরঞ্জিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সব সময় চেষ্টা করুন মন খোলে সঙ্গী, বন্ধু, সহকর্মী, ভাই-বোন কিংবা পরিজনের মধ্যে যারা আপনার প্রিয় তাদের প্রতি সম্মান দেখান ও কাজের প্রশংসা করুন।

কারো প্রশংসা পেলে আপনি যেমন আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন ও খুশি হন, ঠিক তেমনই আপনার প্রশংসা বাক্যও অন্যকে উৎসাহিত করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভালো কাজের জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তি প্রশংসারে দাবিদার। আপনি যাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, তাদের প্রতিও আন্তরিকতা প্রদর্শন করুন। আপনি যখন অন্য কারো প্রশংসা করবেন, তখন দেখবেন অন্যরাও আপনার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখবে। তারাও আপনার চারপাশে থাকার চেষ্টা করবেন। প্রকৃতপক্ষে, প্রশংসা করার ক্ষমতা হলো অনেকটা নেতৃত্ব দেওয়ার মতোই! কারণ যারা অন্যের প্রশংসা করেন তাদের মধ্যকার ইতিবাচক রূপ সবাই পছন্দ করেন বলেই এমন ব্যক্তিদের কাছাকাছি থাকতে চান অন্যরা।বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা অন্যের প্রশংসা করতে পারেন তাদের মধ্যে নেতিবাচকতা কম। আর এ কারণে তারা প্রদাহজনিত বিভিন্ন সমস্যাতেও যেমন- স্থূলতা ও উচ্চ রক্তচাপে কম ভোগেন।

অন্যদিকে যারা অন্যের প্রশংসা করতে পারেন না কিংবা মিশতে পারেন না কারো সঙ্গে, তাদের মধ্যকার নেতিবাচক মনোভাব স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এতে একাকীত্বে ভোগেন তারা, যেটি একসময় বিষণ্ণতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শুধু সামনাসামনি নয়, পেছনেও অন্যের প্রশংসা করুন, অন্যের ভালো দিক নিয়ে কথা বলুন। আমরা যদি কারো সামনে অন্যকে নিয়ে ভালো কথা বলি, অন্যের প্রশংসা করি তবে তাতে নিজের ভালো দিকটিই ফুটে উঠে। আর যে মানুষ আপনার সামনে অন্যের ভালো দিক নিয়ে আলোচনা করতে পারে সে নিশ্চয়ই আপনার অনুপস্থিতিতে অন্যের নিকট আপনারও ভালো দিকগুলো নিয়েই কথা বলবে। এটাই তার ব্যক্তিত্ব, চমৎকার এক ব্যক্তিত্ব। এছাড়া, তার এমন আচরণে ভালো মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের পরিচয় বহন করে যা খুবই প্রশংসনীয়।

প্রকৃতপক্ষে, কাউকে নিয়ে ভালো কথা বললে মনের মধ্যে ভালো অনুভূতিও আসে। নিজেকে ফ্রেশ মনে হয়। কিন্তু আমরা তো গীবত করেই মজা পেতে চাই। অথচ আসল মজা হচ্ছে কারো ভালো দিক নিয়ে কথা বলা যা হিংসামুক্ত এক অন্তরের বার্তা দেয়।

একজন মানুষের খারাপ গুণ থাকতেই পারে। কিন্তু তবুও মানুষের যতই খারাপ গুণাবলী থাকুক না কেন তার কিছু না কিছু তো ভালো গুণাবলী আছেই। ফলে আপনি তার খারাপ গুণাবলীর সমালোচনা না করে যদি ভালো গুণাবলীর প্রশংসা করেন তবে হয়তো আপনার এই প্রশংসা কোনোভাবে তার কর্ণকুহরে পৌঁছালে সে তার খারাপ গুণাবলীকে ভালো গুণাবলীতে রূপান্তরিত করার উৎসাহ পাবে। যার দরুন আপনাদের সম্পর্কের দৃঢ়তা আরো বেড়ে যাবে। অপরদিকে, কাউকে নিয়ে মন্দ কথা বললে আর কোনোভাবে যদি ওই ব্যক্তির কানে গিয়ে তা পৌঁছায় তাতে কিন্তু সম্পর্কের মধ্যে প্রবল ফাটল তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এভাবেই আস্তে আস্তে সম্পর্কের দূরত্ব বাড়তে থাকে যা অনেক সময় ভয়ানক শত্রুতায় রূপ নেয়। আজকের সমাজে এমনটাই তীব্রভাবে লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া, গীবতকারীর মনের মধ্যে সবসময় একটা ভয় কাজ করে যে, সে যার সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলেছে সে কোনোভাবে তা জেনে গেল কি-না। এমন ভয় তার মনের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করে, তাকে অশান্তিতে রাখে। অর্থাৎ একজন গীবতকারীকে নানাভাবে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় যা একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারা যায়।

মানুষ কিন্তু সবসময় প্রশংসিত হতে চায়। প্রশংসিত হওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। একজন মানুষের উপযুক্ত প্রশংসা করলে সে আরো ভালো কিছু করার উৎসাহ উদ্দীপনা পায়। ফলে আমরা কারো গীবত তথা মন্দ দিক নিয়ে সমালোচনা না করে বরং ভালো দিকটাই নিয়ে যেন কথা বলি। এটাই যেন আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়। মনে রাখবেন, কারো গীবত করে কাউকে পরিবর্তন করা যায় না। বরং তাতে সে আরো বিগড়ে যাবে। অর্থাৎ এতে ইতিবাচক পরিবর্তন না হয়ে নেতিবাচক পরিবর্তন হবে। ইতিবাচক পরিবর্তন করতে হলে তার যথোপযুক্ত প্রশংসা দিয়েই পরিবর্তন করতে হবে, ভালোবাসা দিয়ে পরিবর্তন করতে হবে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বিশুদ্ধ পদ্ধতি।

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ