সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩ ১৭:১৩ Asia/Dhaka

যেসব স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে ধন্যবাদ জানান এবং একে অপরের কাজের প্রশংসা করেন তাদের মধ্যে দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে সন্তুষ্টি বেড়ে যায়। সব সময় এটা মনে রাখতে হবে যে, প্রশংসা করার মাধ্যমে কেবল এক পক্ষ লাভবান হয় না বরং উভয় পক্ষই তা থেকে উপকৃত হন। কারণ, আপনি যখন কারো প্রশংসা করেন তখন প্রশংসিত ব্যক্তির মধ্যে আনন্দ অনুভূতি তৈরির পাশাপাশি আপনার ভেতরেও জ্ঞাতসারে অথবা অজ্ঞাতসারে প্রশান্তির জন্ম নেয়।

জীবন সংগ্রামে সবারই নানা ব্যস্ত থাকতে হয়, সেকারণে আমরা সাধারণত জীবনসঙ্গীর প্রতি খুব একটা মনোযোগ দিতে পারি না অথবা মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করি না। সাধারণত বিয়ের প্রথম দিকে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী থাকলেও সময়ে সাথে সাথে তা মিলিয়ে যেতে থাকে। সময় যতই গড়াক পরস্পরের প্রতি যাতে মনোযোগ হ্রাস না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পরস্পরের ভালো কাজের প্রশংসা করুন। এর মধ্যদিয়ে পরস্পরের প্রতি মনোযোগ ও ভালোবাসা বাড়তে থাকবে।

স্বামী বা স্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো বা প্রশংসা করার কাজটা যেন কোনোভাবেই কঠিন হিসেবে গণ্য না হয়। এটাকে স্বাভাবিক ও সাধারণ কাজ হিসেবে নিতে হবে। এটাকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। সুযোগ পেলেই জীবনসঙ্গীর প্রশংসা করুন। বাস্তবতা হলো, আপনার জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রে জীবনসঙ্গী হচ্ছে আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি। আপনার সুখে-দুঃখে প্রথম যিনি এগিয়ে আসেন তিনি হলেন আপনার স্বামী বা স্ত্রী। প্রশংসা বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নানা উপায় রয়েছে। গতানুগতিক উপায়েই তা করতে হবে এমন কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। আপনি সৃজনশীল পন্থা ব্যবহার করতে পারেন। ভালোবাসা-মাখা একটা বার্তার সঙ্গে ছোট্ট একটা উপহার দিয়েও আপনার স্বামী বা স্ত্রীর মনে ভেতরে বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে পারেন। অনেক দামি উপহারই হতে হবে তা কিন্তু নয়। এতে আপনার প্রতিও আপনার জীবনসঙ্গীর ভালোবাসা বাড়বে, সন্তানেরা তা দেখে নিজেরাও তা আত্মস্থ করবে  এবং ভবিষ্যতে তারা তাদের নিজেদের জীবনে কাজে লাগাবে।

সুন্দর ও সফল দাম্পত্য জীবন সবারই কাম্য। এ জন্য পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক জরুরি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে জীবনসঙ্গীর প্রশংসা করা বা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, একটা ভালো উপায়। আপনাকে আপনার স্বামী বা স্ত্রীর সামনে এটা তুলে ধরতে হবে যে, আপনি তার প্রতি কৃতজ্ঞ এবং আপনি তাকে গুরুত্ব দেন। আপনার এমন আচরণ তার মধ্যে আশা-উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে। আসলে একটু মাথা খাটালেই বোঝা যায়, বিনা খরচে আমরা জীবনসঙ্গীকে খুশি করতে পারি। আপনি কী কারণে আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে গুরুত্ব দেন, কেন সে আপনার কাছে সব সময় প্রায়োরিটি পায়, সেসবের একটা তালিকা তৈরি করে আপনার জীবনসঙ্গীকে দিতে পারেন। এটাও প্রশংসা করার একটি মাধ্যম। দেখবেন আপনার তৈরিকৃত তালিকা দেখে আপনার জীবনসঙ্গী খুশি হয়ে যাবে এবং তার মধ্যে জীবন সম্পর্কে আরও বেশি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে, ভালো কাজে তার আগ্রহ আরো বাড়বে। 

কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আরেকটি উপায় হলো, জীবনসঙ্গীর আবেদন-অনুরোধকে গুরুত্ব দেওয়া। তার পছন্দ-অপছন্দকে সম্মান করা। কর্মব্যস্ততায় সারাদিন কেটে যায় আমাদের। এ কারণে সবচেয়ে কাছের মানুষটার মনের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠে না। স্বামী বা স্ত্রীর মনের অবস্থা বুঝে তাকে সুখে-দুঃখে সাপোর্ট দিতে হবে। তাহলে জীবনসঙ্গী বুঝবে আপনি তাকে কতটা ভালোবাসেন, কতটা গুরুত্ব দেন। আপনি যে তাকে গুরুত্ব দেন তা কাজের মাধ্যমেও প্রকাশ করুন। তাকে সময় দিন। স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে সুন্দর ও সুস্থ সম্পর্ক অটুট রাখার জন্য অবশ্য সময় ব্যয় করতে হবে। পরস্পরকে সময় দিতে হবে। সময় না দিয়ে দাম্পত্য জীবনে সম্পর্কের উন্নয়ন, ইতিবাচক পরিবর্তন এবং পূর্ণতা সম্ভব নয়। সময় দেওয়া মানে এমন নয় যে, আপনি জীবনসঙ্গীকে কোথাও নিয়ে গেলেন এবং এরপর আপনি অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আপনি জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটান এবং মুখে ও কাজে প্রমাণ করুন তার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত আপনার কাছে মূল্যবান। মোবাইল ফোন সামনে থেকে সরিয়ে রাখুন। যতটুকু না হলেই নয় কেবল ততটুকু সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করুন। বাকি পুরো সময়টা জীবনসঙ্গীর সঙ্গে কাটান এবং নানা উপায়ে তার প্রশংসা করুন।

কখনো কখনো একটি শব্দ অর্থাৎ ধন্যবাদ বলে দায়িত্ব শেষ করি আমরা। আপনার স্বামী বা স্ত্রী যখন একটা খুব সাধারণ ভালো কাজও করে তখনও তাকে একটু সময় নিয়ে ভালোবাসা-মাখা শব্দ প্রয়োগ করে ধন্যবাদ জানান, এই কাজটার ফলে আপনি বা পুরো পরিবার কীভাবে উপকৃত হচ্ছে বা হবে, সম্ভব হলে সেটাও একটু বলুন। ধরুন আপনার জীবনসঙ্গী এমন একটা কাজ করলো যার ফলে আপনাদের দাম্পত্য জীবনের কোনো একটা সমস্যার সমাধানের পথ কিছুটা হলেও উন্মুক্ত হয়েছে। এ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা তুলে ধরে তার এই কাজের প্রশংসা করুন। এই প্রশংসা হতে হবে অবশ্যই মন থেকে, লোকদেখানো হওয়া উচিত নয়। এমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা যাবে না যে, তার দায়িত্ব ছিল তাই সে করেছে। পরস্পরের মধ্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপনই যথেষ্ট নয়। ঘরের অন্য সদস্যদের সামনেও প্রশংসা করুন। আপনার জীবনসঙ্গী যে কষ্ট করছে এবং অনেক কিছু অর্জন করছে সেটার প্রশংসা অন্যদের সামনেও করুন। এর ফলে আপনার জীবনসঙ্গীর ভেতরে আপনার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আরো বাড়বে।

কোনো একটি কাজের ব্যাপারে আপনি যেভাবে প্রত্যাশা করেছিলেন, কাজটি ঠিক সেরকম নিখুঁতভাবে সম্পন্ন না হলেও জীবনসঙ্গীকে কাজটি করে দেওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান। আমরা অনেকেই অন্যের প্রশংসা করতে অভ্যস্ত নই। সবচেয়ে সহজ এই কাজটি আমাদের কাছে অনেক কঠিন বলে মনে হয়। স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকার কারণে উভয়ই পরস্পরের দোষ-ত্রুটিগুলো সম্পর্কে জেনে যায় যা পৃথিবীর আর অন্য কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়। কেউ যদি সংসার জীবনকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ না করে তাহলে তার কাছে মনে হবে তার জীবনসঙ্গী দোষ-ত্রুটিতে পরিপূর্ণ। কিন্তু কেউ যদি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বিষয়টা দেখে তাহলে তার কাছে মনে হবে তার জীবনসঙ্গীর গুণের শেষ নেই। আমাদেরকে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে, সব কিছুকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে হবে। তাহলেই প্রশংসা করাটাও আমাদের জন্য সহজ হয়ে উঠবে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ