নভেম্বর ১৯, ২০২৩ ১৫:১০ Asia/Dhaka
  • ইরানি প্রবাদ: শিকার না করা ভালুকের চামড়া বিক্রি করো না

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজ আমরা শুনবো ইরানের প্রাচীন একটি প্রবাদের গল্প। প্রবাদটি হলো: শিকার না করা ভালুকের চামড়া বিক্রি করো না।

এই প্রবাদের পেছনের গল্পটি এরকম: দুই বন্ধু ভালুক শিকার করার কথা ভাবলো। সে অনুযায়ী তারা একদিন তাদের বন্দুক নিয়ে ভালুক শিকারের উদ্দেশে পাহাড়ে গেল। সারাদিন ভরে তারা ভালুকের সন্ধানে কাটালো কিন্তু একটা ভালুকেরও দেখা পেল না। রাতও হয়ে এলো।

তাই এক বন্ধু অপর বন্ধুকে বললো: রাত ঘনিয়ে আসছে। ঘরে ফিরে যাওয়াই ভালো। জবাবে বন্ধু বললো: সারাদিন ধরে ভালুক শিকারের জন্য এতো কষ্ট করলাম এখন খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাবো? এক কাজ করলে কেমন হয়! আমরা না হয় পাশের গ্রামে রাতটা কাটিয়ে দিই! কাল আবার ভালুক শিকারে নেমে যাবো, কী বলো! অপর বন্ধু জবাবে বললো: এখানে থাকতে হলে তো খাবার দাবারের ব্যাপার আছে, ঘুমানোর জায়গারও ব্যাপার আছে। যেখানেই যাই না কেন খেতে হলে, থাকতে হলে তো টাকার প্রয়োজন আছে। আমাদের কাছে তো টাকা নেই সুতরাং চলে যাওয়াই ভালো। দ্বিতীয় বন্ধু বললো: এটা তো কোনো সমস্যা না। ভালুক শিকার করে চামড়া বিক্রির টাকা থেকে বাসস্থান এবং খাবারের টাকা পরিশোধ করে দেবো। এই চিন্তা করে দুই বন্ধু পাশের পার্বত্য গ্রামে গেল। একটা ঘরের দরোজায় টোকা দিলো এবং সেই ঘরের মালিকের সঙ্গে কথাবার্তা বলে রাত কাটালো। খাওয়া-দাওয়া যাই মিলেছে, খেয়ে দেয়ে ঘরের মালিককে বললো: ভালুক যেটা আমরা শিকার করবো সেটার চামড়াটা তোমার কাছে বিক্রি করবো। চামড়ার যা দাম হয় তা থেকে তোমার ঘরের ভাড়া আর খাবারের টাকাটা কেটে রেখে বাকি টাকা আমাদের ফেরত দেবে। পরদিন দুই শিকারী বন্ধু ঘর থেকে বেরিয়ে পার্বত্য জঙ্গলের দিকে পাড়ি জমালো। পার্বত্য উপত্যকায় চমৎকার একটি ঝরনাধারা ছিল।

ওই ঝরনাধারার পাশে গাছের নীচে একটু বিশ্রাম নিয়ে শিকারের জন্য প্রস্তুত হবার চিন্তা করলো তারা। তারা জানতো যে ভালুকের যখন তৃষ্ণা পায় তখন তারা এই ঝরনাধারায় নেমে আসে পানি খেতে। সেই সুযোগের সন্ধানে তারা বেশ কিছু সময় নিরিবিলি সেখানে কাটালো। ভাগ্য ওদের প্রসন্নই মনে হলো। জোহরের সময় হতে না হতেই দূর থেকে ভালুকের মাথা দেখতে পাওয়া গেল। দুই বন্ধু একজন আরেকজনের দিকে ইঙ্গিত দিলো। অপেক্ষা করতে লাগলো তারা ভালুকের আরো কাছে আসার। হাতের নাগালে এলেই শিকার করবে তারা। ভালুকটা বেশ বড়োসড়ো এবং তরতাজা ছিল। যে বন্ধুটির হাতে বন্দুক ছিল সে বন্দুকধারী বন্ধুটিকে বললো: বিশাল এই ভালুকটিকে শিকার করা কিন্তু সহজ হবে না, যথেষ্ট বিপজ্জনক হবে।

বন্ধুটি আরও বললো: আমার কাছেও যদি বন্দুক থাকতো তাহলে ভালো হতো, দু'জন মিলে একসঙ্গে শিকার করা যেত। বন্দুক না থাকায় কিছুটা ভয়ও পাচ্ছি। বন্দুকধারী বন্ধু বললো: ভয় হলো মৃত্যুর ভাই। তুমি তো ভালুককে ভয় পাচ্ছো। তাহলে কোন সাহসে ভালুক শিকার করতে এসেছো? কেন তাহলে গতকাল বলেছো ফিরে যাবে না, এখানেই কোথাও থাকবে এবং শিকার করে চামড়া বিক্রি করবে! শিকার করার আগেই ভালুকের চামড়া বিক্রির চিন্তা? যেখানে আছো সেখানেই থাকো! শুধু আমার দিকে খেয়াল রেখো যাতে ভালুকের দফা রফা করতে পারি। বন্ধু বললো: ঠিক আছে। কিন্তু ভালুক যখন কাছে এগিয়ে এলো এমন ভয় সে পেলো যে ভালুক শিকার করে চামড়া বিক্রির স্বপ্ন মন থেকে মিটে গেল।

আস্তে আস্তে সে যেখানে ছিল সেখান থেকে পিছু হটে গেল। বন্ধুর কথা ভুলে গিয়ে তাড়াতাড়ি বড় একটা গাছ বেয়ে উপরে উঠে গিয়ে পাতার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখলো। ভালুক ধীরে ধীরে কাছে আসতে লাগলো। বন্দুকধারী শিকারী বন্ধু ভালুকের ওপর তার তীক্ষ্ণ শিকারী দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখলো। বন্দুকের বাঁট কাঁধে ঠেকিয়ে ভালুকের দিকে বন্দুক তাক করলো সে। ট্রিগারে হাত রাখলো যাতে প্রথম সুযোগেই গুলি করতে পারে। হঠাৎ করেই তার মাথায় একটা চিন্তা এলো। ভাবলো অপর একটি ভালুক আবার পেছন দিক থেকে পানির প্রবাহের দিকে আসছে না তো? নিশ্চিত হবার জন্য সে তার বন্ধুকে ডেকে বললো: সাবধান! খেয়াল রেখো পেছন দিক থেকে অপর কোনো ভালুক এদিকে আসছে না তো!

বন্ধু গাছের ডালে বসেই জবাব দিলো: চিন্তা করো না, আমি খেয়াল রাখছি। গাছের ওপর থেকে বন্ধুর গলা শুনে বন্দুকধারী শিকারী বন্ধু বুঝলো-ভয়ে তার সাথী তাকে ফেলে রেখে আশ্রয় নিয়েছে গাছের উপরে। একাকি ওতো বড়ো ভালকের সামনে নিজেকে অসহায় মনে হলো এবং ভয়ও পেলো সে। বন্ধুর আচরণে কষ্ট পেয়েও ভালুককে গুলি করার জন্য প্রস্তুত হলো সে। এরইমাঝে ভালুক ঝরনার পাশে এসে গেল। বন্দুকধারীকে দেখলো কিন্তু ভয় পেলো না ভালুক। শিকারী বন্ধু আরও বেশি ভয় পেলো। বন্দুক দিয়ে গুলি করতেই পারলো না সে। তার হাত-পা কাঁপতে শুরু করলো। আনমনেই ট্রিগারে তার হাত চলে গেল। তার মুখে খিঁচুনি ভাব এসে গেলে এবং গুলি করে বসলো। হাত কাঁপার কারণে গুলি তো ভালুকের গায়ে লাগলো না। ভালুক বিরক্ত হয়ে বন্ধুকধারীর কাছে গেল। শিকারী মরার মতো পড়ে গেল মাটিতে। ভালুক নাকি মরার ওপর চড়াও হয় না। ভালুক তাকে শুঁকে দেখলো। মরা ভেবে ছেড়ে দিলো এবং ঝরনাধারায় নেমে পানি খেয়ে চলে গেল।

গাছে ওঠা বন্ধু এবার নেমে এসে বললো: ভাল্লুক তোমার কোনো ক্ষতি করে নি, আলহামদু লিল্লাহ! মরার মতো শুয়ে পড়া বন্ধু কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো: চলে গেছে? বলেই উঠে বসলো। বন্ধুকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে গাছে ওঠা বন্ধু মজা করে বললো: ভালুক তোমাকে কানে কানে কী বলেছিলো! বন্দুক হাতে নিয়ে এবার সে জবাব দিলো: দুটি কথা বলেছিলো: ভীতু কাপুরষকে বন্ধু বানাবে না। আর বলেছিলো: শিকার না করা ভালুকের চামড়া বিক্রি করো না।

পার্সটুডে/এনএম/১৯/১১৫

মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ

ট্যাগ