ডিসেম্বর ২০, ২০২৩ ১৭:১২ Asia/Dhaka

"গাজায় ঘৃণ্য ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠীর ইসরাইল অভিমুখী জাহাজ আটকে দেয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এরফলে ইসরাইলের কর্মকাণ্ড নিয়ে তাদের ভাববার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এবং তাদের ওপর এর প্রভাব পড়েছে।"

রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক ফজল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের গাজায় ইসরাইলি হামলা ও হত্যাযজ্ঞের কারণে বিবেকবান মানুষ কঠিন আঘাতের মধ্যে বা ট্রমার মধ্যে দিনযাপন করছে। ফলে এটা যত দ্রুত সম্ভব হলে এই মুহূর্তে বন্ধ করার যে ইরানি আহ্বান সেটাকে আমি অবশ্যই স্বাগত এবং অভিনন্দন জানাই।

পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। এটি গ্রহণ করেছেন সিরাজুল ইসলাম, উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব ড. তারেক ফজল, গাজা যুদ্ধ বন্ধ এবং মানবিক ত্রাণ সরবরাহ করার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সম্প্রতি একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় কিন্তু তাতে ভেটো দিয়েছে আমেরিকা যার কারণে প্রস্তাবটি পাস করা যায়নি। আমেরিকার এই ভেটো দেয়ার ঘটনাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

ড. তারেক ফজল: ধন্যবাদ আপনাকে। গাজার এই মর্মান্তিক বাস্তবতার পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোসহ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যে ভেটো দিয়েছে সেটা এক কথায় জঘন্য, অগ্রহণযোগ্য এবং ঘৃণ্য একটি আচরণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে মানবাধিকারের কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে সেই কথার সাথে শতভাগ সাংঘর্ষিক। এটি একটি ন্যক্কারজনক আচরণ। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে, মানব ইতিহাসে জঘন্য, ন্যক্কারজনক এবং অগ্রহণযোগ্য আচরণ হিসেবে তালিকাভুক্ত হবে।

রেডিও তেহরান: জ্বি তারেক ফজল, নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভেটো দেয়ার পর ইরান প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছে, গাজায় যে ইসরাইলি আগ্রাসন চলছে তা এখনই বন্ধ করা না হলে মধ্যপ্রাচ্যে যেকোন সময় এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। আপনি কি এই ধরনের কোনো ঝুঁকি দেখছেন?

ড. তারেক ফজল: ধন্যবাদ আপনাকে। ইরানের যে আশঙ্কা-মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ন্ত্রণ অযোগ্য বাস্তবতা তৈরি হবে সেটা বাস্তবে কতটা হবে সেটি এখনই নিশ্চিতভাবে বলতে পারিনা তবে ইরানের আশঙ্কাকে আমি খুবই গঠনমূলক মনে করি। এইজন্য গঠনমূলক মনে করি কারণ-এরমাধ্যমে গাজা পরিস্থিতিকে ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণের আওতায় রাখার একটা আগ্রহ এবং দাবি আছে। আর এ দাবি যত দ্রুত ও নিষ্ঠার সাথে মানবিক বিবেচনার সাথে নিশ্চিত করা যাবে ততই ফিলিস্তিনের জন্য মঙ্গল এবং বিশ্ববাসীর জন্য মঙ্গল। গাজাবাসীর প্রতি যে বর্বর গণহত্যা চালানো হচ্ছে সেই পরিস্থিতিতে বিশ্বের বহু মানুষের ঘুম নষ্ট হচ্ছে। বিবেকবান মানুষ কঠিন আঘাতের মধ্যে বা ট্রমার মধ্যে দিনযাপন করছে। ফলে এটা যত দ্রুত সম্ভব হলে এই মুহূর্তে বন্ধ করার যে ইরানি আহ্বান সেটাকে আমি অবশ্যই স্বাগত এবং অভিনন্দন জানাই।

রেডিও তেহরান:  অধ্যাপক তারেক, গাজা উপত্যকায় যে যুদ্ধ চলছে তার প্রতিবাদে ইয়েমেনের হুথি সমর্থিত সরকার বিশেষ কিছু ভূমিকা নিয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- লোহিত সাগরে ইসরাইলি জাহাজ আটকে দেয়া এবং ইসরাইল অভিমুখী যেকোন জাহাজের গতিরোধ করার ঘোষণা দেয়া। এর ফলাফল কি হতে পারে বলে আপনার মনে হয়?

ইসরাইল অভিমুখী জাহাজ আটকে দেয়ার ঘোষণা

ড. তারেক ফজল: জ্বি ধন্যবাদ। ইয়েমেনের হুথি জনগোষ্ঠী সমর্থিত সরকার লোহিত সাগরে  ইসরাইল অভিমুখী জাহাজ আটকে দেয়ার বা গতিরোধ করার যে ঘোষণা দিয়েছে সেটি তাদের দিক থেকে খুবই কার্যকর উদ্যোগ। ইসরাইল মানববিধ্বংসী যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তা থেকে বিরত রাখার জন্য, আটকানোর জন্য হুথিদের এই ঘোষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। তাদের কিছু কিছু কাজ প্রভাব ফেলছে ইসরাইলিদের ওপর। পুনরায় তাদেরকে ভাববার ক্ষেত্রে বলা চলে হুথিদের উদ্যোগ চাপে ফেলছে। হুথি-ইসরাইলিদেরকে আরও কতটা চাপে ফেলতে পারবে সে বিষয়ে হয়তো দ্বিধা আছে কিন্তু তাদের যে ঘোষণা এবং উদ্যোগ এগুলো সবই ইতিবাচক ও প্রশংসারযোগ্য। বিশ্বের অনেক দেশ তাদের এই উদ্যোগ এবং সক্ষমতাকে স্বীকার করছে, হিসাবের মধ্যে ধরছে। হুথিদের উদ্যোগ- বিশ্বমানবতার পক্ষে আমরা যারা আছি, মানুষকে মানুষ হিসেবে আমরা যারা বিবেচনা করছি, ঘৃণ্য ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে আমরা যারা, জঘন্য মানব পশু ও বর্ণবাদী বিবেচনার বিরুদ্ধে আমরা যারা আছি-তাদের জন্য এটি আনন্দের খবর। হুথিদের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই এবং আশা করতে পারি যে হুথিদের উদ্যোগ, চেষ্টা এবং সক্ষমতা যেন সফল হয়।

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক তারেক ফজল, সাক্ষাৎকারের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি।  আচ্ছা,অনেকে বলছেন, গাজা সংকটের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ভেতরে একটা ঐক্য প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। এমন কোনো সম্ভাবনা আপনি দেখছেন কিনা?

ড. তারেক ফজল: দেখুন, ঐক্য প্রচেষ্টা এবং হামাসের মরিয়া উদ্যোগের সূত্রে মরে যাওয়া ফিলিস্তিন ইস্যু যে আবার জেগে উঠেছে, বেঁচে উঠেছে এবং সক্রিয় হয়েছে এটা গুরুত্বপূর্ণ। এইসুত্রে কথিত আরব রাষ্ট্রগুলো, পার্শ্ববর্তী আরব রাষ্ট্রগুলো অথবা কাছের দূরের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো কতটা ঐক্যবদ্ধ হবে কিংবা হতে পারবে এবং কতটা মানবতা এবং ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে তারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে সে বিষয়ে প্রচুর দ্বিধা আছে। আমরা এ বিষয়ে গুরুতর দুঃখজনক অনৈক্য দেখেছি। আমরা দেখেছি কথিত সক্ষমতাপূর্ণ মুসলিম দেশগুলোর অক্ষমতাকে। এরআগে ঐক্যের সব লক্ষ্য অকার্যকর হয়েছে এবং মুসলিম জাতি, মুসলিম দেশের জন্য ক্ষতিকর হয়েছে-তেমনটি আমরা দেখেছি। এখন আপাতদৃষ্টিতে তাদের মধ্যে সামান্য ঐক্যের যে হাওয়া আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটা বেগবান, শক্তিশালী ও কার্যকর হোক তেমনটিই আমরা আশাকরি। কিন্তু এখনই এটিকে নির্ভরযোগ্য অবস্থান মনে করার ক্ষেত্রে আমার দ্বিধা আছে। কিন্তু আশাবাদ পুরোটাই আছে। আশাবাদী হতে চাই পাশপাশি মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এই ইস্যুতে যথেষ্ট ঐক্যবদ্ধ হবে এবং সক্ষমতার সাথে দানবিয় ও পাশবিক ইসরাইলকে তারা থামিয়ে দেবে এবং সংযত করতে সক্ষম হবে।

রেডিও তেহরান: তো অধ্যাপক ড. তারেক ফজল চলমান গাজা যুদ্ধ নিয়ে রেডিও তেহরানের আলাপনে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ড. তারেক ফজল: আপনাকেও ধন্যবাদ।

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২০

 

ট্যাগ