সুঅভ্যাস গড়ার উপায় নিয়ে ধারাবাহিক অনুষ্ঠান
সুন্দর জীবন-পর্ব ৬৪ (বিয়ের দাওয়াত)
আমরা আজ বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হওয়ার পর যেসব আদব বা শিষ্টাচার মানা উচিত সেসব নিয়ে কথা বলব। দাওয়াতে আপনাকে নির্ধারিত সময় রক্ষা করতে হবে। মেজবান যখন আপনাকে যেতে বলবে সে সময়ই উপস্থিত থাকার চেষ্টা করুন। দেরি করার জন্য কোন অজুহাতের খোঁজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আপনি দেরি করলে আপনার দাওয়াতকারীর উপর চাপ সৃষ্টি হবে। অন্য অতিথিরাও তা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
কেউ কেউ অবশ্য বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে গিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হন। এটাও মেজবান বা আয়োজকদের জন্য বিরক্তির কারণ হতে পারে। বিয়ের অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে এমন স্থানে বসুন, যাতে করে দাওয়াতকারী পরিবার ও অন্য অতিথিদের অসুবিধা না হয়। আবার এত দূরেও বসবেন না, যাতে আপনার জন্য পরিবেশনকারীদের কষ্ট করতে হয়। অন্যের জন্য সংরক্ষিত আসন পরিহার করে বসুন। প্রয়োজনে সেখানে যারা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন তাদেরকে নিজের পরিচয় দিয়ে প্রশ্ন করুন, আপনার কোথায় বসা উচিত।
বিয়ের আকদ তথা বিয়ে পড়ানোতে উপস্থিত থাকলে চুপ করে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করুন। নবদম্পতির জন্য দোয়া করুন এবং তাদেরকে সরাসরি শুভেচ্ছা জানান। বর বা কনের সম্মতি ছাড়া তাদের ছবি তোলা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা প্রচার করা থেকে বিরত থাকুন। অনেক বর ও কনে আছেন যারা নিজের ছবি বা ভিডিও অন্যত্র প্রচার করতে চান না। কাজেই তাদের অনুমতি ছাড়া এমন কিছু করলে তারা মনে অনেক কষ্ট পেতে পারেন। এছাড়া, মনে রাখতে হবে বিয়ের দাওয়াত শুধু খাওয়ার জন্যই নয়, বরং এটির পরিধি আরো বিস্তৃত। দাওয়াতকারী বা তার পরিবারের কারো সাথে সাক্ষাত করুন এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করুন। নববিবাহিত দম্পতির জন্য আপনার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানান এবং তাদের দাম্পত্য জীবন যাতে সুখী হয় সেই দোয়া ও প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করুন। খাবার পরিবেশন করা হলে আগে বৃদ্ধ ও শিশুদের খাবার নিতে দিন। প্রয়োজনে খাবার বেড়ে নিতে তাদের সহায়তা করুন। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ীই খাদ্যগ্রহণ করুন। মধ্যপন্থা ও বিবেচনাবোধ বজায় রাখুন।
অতি মাত্রায় খাবার খেয়ে অন্যদের জন্য সংকট সৃষ্টি করবেন না। প্রয়োজনের অধিক খাদ্য নিয়ে নষ্ট করার থেকে অল্প খাবার নিয়ে সম্পূর্ণ খেয়ে অন্যদের নেওয়ার সুযোগ দেওয়াই উত্তম। অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার নিয়ে তা প্লেটেই রেখে দেন। এ কারণে এ ধরণের অনুষ্ঠানের খাবারের ব্যাপক অপচয় হয়। সর্বত্রই অপচয় রোধ করার নীতি অনুসরণ করুন। সঙ্গে শিশু-কিশোর থাকলে তাদেরকে খাবার নেওয়ার সময় সহযোগিতা করুন এবং তাদেরকে বলুন যাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার প্লেটে না নেয়। প্লেটের খাবার শেষ করে প্রয়োজনে কয়েক বার খাবার সংগ্রহ করুন। এর ফলে অপচয় হবে না। খাবারের কোন অসুবিধা হলে সমালোচনা করার থেকে বরং চুপ করে থাকুন। কেননা, আপনার জন্য আয়োজকরা তাদের সর্বোচ্চই চেষ্টা করেছেন এবং আপনার সমালোচনাতে কোন কিছুই পরিবর্তিত হয়ে যাবেনা। বরং যদি সম্ভব হয়, তবে আয়োজকদের আয়োজনের প্রশংসা করুন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই যেকোনো আয়োজনেই আয়োজকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন খাবারকে সুস্বাদু করার। এ জন্য তাদেরকে অনেক কষ্ট করতে হয়।
আপনাকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য দাওয়াতদানকারীর প্রতি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। যিনি বা যারা আপনাকে দাওয়াত দিয়েছেন, খাবারের ব্যবস্থা করেছেন তাদেরকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাবেন। এটা শিষ্টাচারের লক্ষণ। যেকোনো বিচারেই মেজবানেরা ধন্যবাদ পান। যেকোনো দাওয়াত আয়োজনেই অনেক কষ্ট করতে হয়। অর্থ খরচের পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক যে শ্রম ব্যয় করতে হয় তা কিছুটা হলেও পূরণ হয় ধন্যবাদ প্রাপ্তি এবং মেহমানদের সদাচরণ ও ছোটখাটো উপহারের মধ্যদিয়ে। নবদম্পতির নতুন জীবনের শুরুতে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় কোন বস্তু বা বই অথবা নগদ অর্থ উপহার প্রদান করুন। উপহার প্রদানের মধ্য দিয়ে নবদম্পতির জন্য আপনার শুভ কামনাই প্রকাশিত হয়। আয়োজকদের সাথে সাক্ষাত ও খাবার গ্রহণ শেষে ভদ্রভাবে বিদায় নিন। অহেতুক অলসভাবে অবস্থান করে আয়োজকদের কষ্টের কারণ হওয়া থেকে বিরত থাকুন। অবশ্য আয়োজক যদি আপনার খুব কাছের হয় তাহলে তাকে সহযোগিতার প্রস্তাব দিন। আয়োজন শেষে নানা জটিলতা থাকে, অনেক কিছু গোছাতে হয়-সেসব কাজে সাহায্য করতে পারেন।
আপনি কোনো অনুষ্ঠান বা ভোজ সভায় যদি ভালো আচরণ করেন তাহলে এর মধ্যদিয়ে আপনার ব্যক্তিত্বই ফুটে উঠবে।
যেকোনো অনুষ্ঠান বা উৎসবে গিয়ে সবার সঙ্গে সদাচরণ করার চেষ্টা করুন। এমন কোনো প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করবেন না যা আনন্দময় পরিবেশকে তিক্ত করে তোলে। রাজনীতি ও ধর্ম সংক্রান্ত যেসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে সেগুলো নিয়ে কথা উঠাবেন না। এসব বিষয় এড়িয়ে চলুন। একজন মেহমান হিসেবে আপনাকে সব সময় চেষ্টা করতে হবে যাতে পরিবেশটা উৎসব মুখর থাকে, কোনো কারণে যাতে কেউ কষ্ট না পায়। আপনি অনুষ্ঠানটাকে নিজেদের মধ্যে বন্ধন শক্তিশালী করার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। আপনার কোনো আত্মীয় বা বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন যাচ্ছে আপনি এই অনুষ্ঠানে এসে তার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলে সম্পর্কটা আবারও আগের যায়গায় নিতে যেতে পারেন। এমন পরিবেশে বন্ধুত্ব বা সম্পর্ককে জোড়া লাগানো সহজ। কারণ সবাই এ ধরণের অনুষ্ঠানে কিছুটা হলেও ভদ্র আচরণ করার চেষ্টা করেন। এ ধরণের পরিবেশে সম্পর্ক জোরদার করা সহজ।
অপরিচিত মেহমানদের সঙ্গে পরিচিত হোন। অপরিচিত-পরিচিত সবার সঙ্গে এমন বিষয় নিয়ে কথা বলুন যেগুলোতে আপনাদের দু'জনেরই আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া কথা বলার সময় সতর্ক থাকুন এবং অপর পক্ষকেও কথা বলার সুযোগ দিন। কোনো বিষয়ে অন্য পক্ষ আগ্রহ না দেখালে সেই আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসুন এবং অন্য কোনো প্রসঙ্গে যাওয়ার চেষ্টা করুন। চোখ-মুখের ভাবভঙ্গি দেখে সহজেই ব্যক্তির আগ্রহ বা অনাগ্রহ বোঝা যায়। অনুষ্ঠানে কারো বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করবেন না। কারো বিরুদ্ধে কথা বলবেন না। গুজব রটানো থেকে বিরত থাকুন। অনুষ্ঠানস্থলের সাজসজ্জা, খাবারের মান এসব নিয়ে কথা বলাও উচিত নয়। মনে রাখতে হবে অনুষ্ঠানস্থলে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা ও নানা বয়সের মানুষের উপস্থিতি থাকে। সেখানে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে আচরণ করা শিষ্টাচার নয়।
পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।