সুঅভ্যাস গড়ার উপায় নিয়ে ধারাবাহিক অনুষ্ঠান
সুন্দর জীবন-পর্ব ৬৫ (দাওয়াতে ধনী-গরিব সমান)
কেউ দাওয়াত দিলে অতি জরুরি কোনো কাজ না থাকলে অথবা বিশেষ কোনো সমস্যা না থাকলে দাওয়াত গ্রহণ করা উচিত। দাওয়াত গ্রহণ করতে না পারলে ভদ্রভাবে দাওয়াতকারীকে আন্তরিকতার সঙ্গে বুঝিয়ে বলতে হবে যে, অনেক আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও দাওয়াতে উপস্থিত থাকতে পারছেন না, উপস্থিত হতে পারলে অনেক ভালো লাগত।
ধনী-গরিব সবার দাওয়াত সমান চোখে দেখা উচিত। নিমন্ত্রণ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে নিমন্ত্রণকারীর সামাজিক মর্যাদার বিষয়টি এড়িয়ে চলা উচিত। যিনি দাওয়াত দিলেন তিনি সমাজের চোখে বড় না ছোট, মানুষ তাকে সম্মানের চোখে দেখে কি না- এগুলো বিবেচ্য নয়; বরং আন্তরিকতাই আসল বিষয়। হৃদয়-ভরা ভক্তি নিয়ে যদি সমাজের অতি দরিদ্র কোনো মানুষও দাওয়াত দেয় তবুও তা গ্রহণ করা উচিত। একজন অত্যন্ত ধনী ব্যক্তির আন্তরিকতাহীন দাওয়াতের তুলনায় তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজ থেকে খাবারের কোনো পদ ঠিক করে দেওয়া শিষ্টাচার নয়। যদি মেজবান নিজেই দুই-তিন ধরনের মধ্যে কোনো একটিকে নির্বাচন করতে বলে, তাহলে সবচেয়ে সহজটি গ্রহণ করা ভালো।
মেহমানিতে যে খাবার সামনে হাজির করা হয় তা গ্রহণ করতে হবে। খাবারের দোষ না ধরে যথাসম্ভব প্রশংসা করতে হবে। প্রশংসার পাশাপাশি মেজবানের জন্য দোয়া করা উচিত। খাবারের মান যা-ই হোক না কেন, মেজবানের আন্তরিকতাটুকু হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করা মেহমানের জন্য জরুরি। এটা মেজবানের অধিকার। আপ্যায়ন যদি সাধারণ খাবার দিয়েও হয়, কিন্তু তাতে যদি মেজবানের সাধ্যমতো আন্তরিকতার মিশেল থাকে তাহলে এটাও অনেক তৃপ্তিকর। মেহমান যখন খাবার খাবে, তখন মেজবানকেও তার সঙ্গে খাওয়ার জন্য অনুরোধ করবে- এটা শিষ্টাচার, এটা ভদ্রতা। দাওয়াতের আয়োজনকারী অর্থাৎ মেজবান যদি মেহমানের খুবই ঘনিষ্ঠ কেউ হন তাহলে মেহমান একটু পীড়াপীড়িও করতে পারেন। কিন্তু এতে আবার মেজবানের কোনো ক্ষতি হয়ে যায় কি না- সেদিকটিও অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। সাধারণত এ ধরণের আয়োজনে মেজবান অনেক ব্যস্ত থাকেন, এ কারণে তার পক্ষে মেহমানদের সঙ্গে বসে খাওয়া সম্ভব হয় না।
আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বল্প সময়ের জন্য কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে খাবার খেয়ে চলে আসি, তবে এমন আত্মীয় বা বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতেও আমরা যাই যেখানে গিয়ে আমরা আরও দীর্ঘ সময় অবস্থান করি, কখনো কখনো রাত্রি যাপন করি। তবে মনে রাখতে হবে, যার বাড়িতেই মেহমান হিসেবে যাওয়া হোক না কেন দ্রুত সেখান থেকে ফেরার চেষ্টা করতে হবে। মেজবানের বাড়িতে তিন দিনের বেশি সময় অবস্থান না করাই শ্রেয়। সবার সামর্থ্য এক রকম নয়, তবে মেজবানের বাড়িতে বেশি দিন অবস্থান করলে নানাভাবে মেজবান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, আর্থিক ও মানসিক কারণে অসন্তুষ্ট হতে পারেন। যার বাড়িতে মেহমান হিসেবে যাবেন তার কর্মব্যস্ততা ও দায়িত্বের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। সতর্ক থাকুন যাতে আপনার কারণে তার স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনে ব্যাঘাত না ঘটে। আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা মেজবানের দায়িত্ব নিয়ে কথা বলব। যিনি কাউকে দাওয়াত বা নিমন্ত্রণ করেন তিনি হচ্ছেন মেজবান। মেজবানের করণীয় হলো আন্তরিকতার সঙ্গে দাওয়াত দেওয়া। লোক দেখানোর জন্য দাওয়াত না দিয়ে মন থেকে দাওয়াত দিতে হবে।
অতিথি আপনার বাড়িতে বা অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছার পর মেজবান হিসেবে অবশ্যই তাকে স্বাগত জানান এবং আমন্ত্রণ গ্রহণ করে দাওয়াতে অংশ নেওয়ার জন্য তাকে আরেক বার ধন্যবাদ জানান। আপনার এই উষ্ণ অভ্যর্থনা মেহমানকে পুরো সময় ধরেই এমন এক ইতিবাচক অনুভূতি দেবে যা পুরো আয়োজনের উপরই ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। অতিথিদেরকে এমন সময় আসতে বলতে হবে যখন খাবার প্রস্তুত থাকে। মেহমান বা অতিথি আসার পর খাবার পরিবেশনে দেরি না করা উচিত। খাবো না- মেহমানের পক্ষ থেকে এমন শব্দ উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবার তুলে নেয়া ভদ্রতা নয়। মেহমানকে আরো খাবার গ্রহণে অনুরোধ করুন, এতে আন্তরিকতা ফুটে ওঠে। কেউ আপনার বাড়িতে বা দপ্তরে বেড়াতে গেলে অতিথিকে এমন প্রশ্ন করবেন না যা বিব্রতকর। অতিথি খাবে কিনা- এই প্রশ্ন না করে তার সামনে খাবার হাজির করুন। তিনি খেলে তো খেলেন; না খেলে পরবর্তীতে আপনারা খান অথবা অন্য কাউকে দিয়ে দিন।
মেহমানদের সঙ্গে ভদ্রভাবে কথা বলুন। কথা বলার ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করুন। সব মেহমানকে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করুন। বিশেষ অতিথিদেরকে একটু বেশি সময় দিতেই হয়, কিন্তু সেটা যেন কোনোভাবেই দৃষ্টিকটু না হয়। আর মেহমান চলে যাওয়ার সময় মেজবানের পক্ষ থেকে তাকে এগিয়ে দেওয়া শিষ্টাচারের অংশ। যেকোনো ভোজ-আয়োজন বা অনুষ্ঠানের আগে থেকেই একটা পরিপক্ব পরিকল্পনা থাকা জরুরি। আয়োজনের সময়, স্থান, খাবার তালিকা, অনুষ্ঠানস্থলের সাজ-সজ্জার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আগে থেকেই পরিকল্পনা করুন, অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন। তাহলে মেজবান হিসেবে দায়িত্ব পালন কঠিন বলে মনে হবে না। অন্যদের সহযোগিতা নিন, তাহলে এর ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না, ক্লান্তিও আসবে না।#
পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।